একটা সিনে ক্যামেরা চলতে চলতে অর্থহীন ভাবে একটু জার্ক করে গেছে। বা ধরুন নায়িকা ১৯৭১ সালের কাপড় পড়তে গিয়ে ভুল করে ১৯৭৫ সালের ব্লাউজ পড়ে ফেলেছে। অথবা তির্যক করে লাইট ফেললে হয়ত আরও সুন্দর লাগত, কিন্তু লাইট ফেলা হয়েছে সফট করে। এগুলো সিনেমা বিচার না। অদ্ভুত ভাবেই লক্ষ্য করেছি সিনেমা বিচার করতে গিয়ে আমরা একটি নির্দিষ্ট পয়েন্ট নিয়ে অকারন জল ঘোলা করে থাকি। বেশির ভাগ সময়ই সেটা হয়ে থাকে পুরো সিনেমার তুলনায় খুবই সামান্য বিষয় অথবা সেটা হয়ত সিনেমার মূল বিষয়ই না। একারনে আমি একবার বলেছিলাম, সিনেমা কি করে দেখতে হয় সেটাও শেখার আছে। সেই শিক্ষা থেকে আমরা এখনো বহু দূরে।
সাবজেক্টিভ বা অবজেক্টিভ এই দুটি শব্দের মাঝে সমন্বয় সাধন করতে গিয়ে কখনো কখনো সিনেমার উপর অবিচার করা হয় (এটা আমার ব্যাক্তিগত মতামত)। অনেক সময়ই অনেক সমালোচক নিজের সমালোচনাকে অবজেক্টিভ প্রমান করতে গিয়ে একটা অদ্ভুত ব্যালেন্সড করে থাকেন। তাতে মূলত হয় যে সিনেমার বড় বড় ত্রুটি গুলো হালকা ভাবে উপস্থাপিত হয় অথবা দৃষ্টি সীমার বাইরে চলে যায়।
সিনেমার একটা নিজেস্য ভাষা আছে। সেটা শুধু এডিটিং না, শুধু মেকাপ না বা শুধু সাউন্ড না। সব কিছুর সমন্বয় একটি গতি। যা আপনাকে সিনেমার সাথে কানেক্ট হতে সাহায্য করে। দর্শক নিজেও সিনেমার অংশ হয়ে ওঠেন।
প্রতিটা দর্শক বা সমালোচক সমালোচনা করেন একটি নির্দিস্ট দৃষ্টিকোণ থেকে। মূলত বলা যায় তার সিনেমার সাথে বোঝা পড়ার এক্সপেরিয়েন্স থেকে। আমি কখনোই মনে করি না, একজন সিনেমা মেকার কেবলই একজন গল্পকার, একজন দার্শনিক, একজন বিশ্লেষক বা একজন ইন্টার্টেইনার। এগুলো সব কিছুর সমন্বয়েও কেউ ডিরেক্টর হতে পারেন বা এগুলোকে বাদ দিয়েও কেউ ডিরেক্টর হতে পারেন। অদ্ভুত কোন এক কারনে আমরা সিনেমায় গল্প দেখতে চাই। হোক সেটা লিনিয়ার বা নন লিনিয়ার ফর্ম। কিন্তু সিনেমা মানেই কি গল্প? বা সিনেমা মেকার কি গল্প বলতে বাধ্য? গল্প ছাড়া কি সিনেমা পূর্ণতা পায় না? ভেবে দেখার সময় এসেছে। যদি বলি সিনেমা হল পরিচালকের ভাবনা বা তার কথা। তা হলে এটাও সত্য যে, ভাবনা সব সময় শৃঙ্খলা বদ্ধ হয় না। এলো মেলো ভাবনা যদি ভাবনা হয়ে উঠতে পারে তবে এলো মেলো ইমেজের বিন্যাস কেন সিনেমা নয়??
দর্শক সিনেমার সাথে কানেক্ট হওয়ার মানেই কিন্তু বিষয়টা এমন নয় যে দর্শক সিনেমাটা বুঝবেন বা তাদের ভালো লাগবে। কখনো কখনো সিনেমার ইমেজ, সাউন্ড, এডিটিং দ্বারা দর্শকের ইন্দ্রিয়র উপর টর্চার করা অথবা ঘটনার মনস্তাত্ত্বিক বা দার্শনিক বয়ানের সাথে দর্শকের সামঞ্জস্য না হওয়াটাও এক ধরনের সম্পর্ক। মানে পরিচালক যা ফিল করেন, বিষয়টা তাকে যতটা বিরক্ত করে ঠিক সেই বিরক্তি দর্শকের মনে ঢুকিয়ে দেওয়াটাও একটি দুর্দান্ত ক্ষমতা। সব পরিচালকের সে ক্ষমতা থাকেও না।
প্রিয়ডিক সিনেমার ক্ষেত্রে অদ্ভুত ভাবে সব কিছু আমরা বাস্তবের সাথে কানেক্ট করতে চাই। কখনো কখনো এটা ভুল একটা প্রসেস। দৃশ্যমান গল্পের সত্যতা, প্রপ্স, সেট, কস্টিউমের প্রিয়ডের থেকে গল্পের গতি, গল্পের বর্ণনা, গল্পের দর্শনগত বা মনস্তাত্ত্বিক প্রিয়ডও খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু অধিকাংশ সময় এগুলো আমরা এড়িয়ে যাই। একটু সরল করে বললে বলা যায় যে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রিয়ডিক সিনেমা বুনতে বাংলাদেশের মাটিই লাগবে এই ধারনাটা ভুল। ইট কাঠের আজকের লন্ডন শহরে বসেও বাংলাদেশের গণহত্যার দৃশ্য ধারন করা সম্ভব। শুধু লক্ষ্য রাখলেই হল বক্তব্যটা ১৯৭১ এর সাথে যায় কি না। এই যে ঠিক as it is দেখানোর বা দেখার মানসিকতাটা বোধে হয় এসেছে হলিউডের স্টুডিও ফিল্মের ধারনা থাকে। তবে স্বীকার করছি যে, প্রিয়ডিক সিনেমায় as it is দৃশ্যকল্প নির্মাণ দর্শকের কাছে ম্যাসেস পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে ডিরেক্টরের কষ্ট লাঘব করে।
গল্পের ক্ষেত্রে সময়গত নির্দিষ্ট অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ বাদেও কল্পনার সময় বলেও একটি আলাদা সময় থাকতে পারে। যা বাস্তবের সাথে মিলতেও পারে বা নাও পারে। (সংক্ষপ্ত)
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:৫৩