ধর্ম নিয়ে কথা বার্তা বলা আমি প্রায় ছেঁড়েই দিয়েছি। এতে হয় কি!! ব্যাক্তিগত সম্পর্ক গুলোয় ভাঙ্গন ধরে। সামাজিক কোন পরিবর্তন ঘটলেও ঘটতে পারে। কিন্তু ব্যাক্তিগত জীবনটা বিষিয়ে ওঠে। আর যেহেতু গণমাধ্যমে কাজ করি। তাই বিতর্কিত বিষয় গুলো এড়িয়ে জীবনযাপন করাটা জরুরী। সিদ্ধান্তে উপনিত হয়েছি যে, কি দরকার লেখার? এর থেকে বরং নিজের যা বিশ্বাস, নিজের যা আলো, সেগুলো নিজে নিজেই চর্চা করলে তো হয়ে গেল। আর বড় জোর নিজের সন্তানদের সঠিক পথটা দেখিয়ে গেলেই হল। তাতে অন্তত আর যাই হোক শত্রু বৃদ্ধি হবে না। কিন্তু না আমি ভুল ভেবেছিলাম।
ছোট বেলা থেকেই আমার উচ্চারণ জনিত সচেতনতা ছিল। এখনো আছে। তাতে হয়কি, কণ্ঠের ওঠা নামার কারনে শব্দের সাউন্ড বেশ মধুর হয়। ছোট বেলা থেকেই আমি সালাম দেই, স্লামালাইকুম বলে। আর ইসলাম শব্দটি উচ্চারণ করতে গিয়ে "ই" বর্ণটি দ্রুত উচ্চারণ করি। তাতে সমস্যা হয় পরবর্তী বর্নগুলোতে একটা ধাক্কা অনুভুত হয়। কিন্তু শুনতে খারাপ লাগে বলে আমার মনে হয়নি।
সেদিন এক বিদেশী মহিলার সাথে স্কাইপ মিটিং করছিলাম। বিষয় ব্লগার হত্যা। মিটিংটি চলার সময় একজন আবিষ্কার করল আমি ঠিক ইসলাম উচ্চারণ করছি না। তা হলে কি করছি? করছি "স্লাম"। তিনি আমার স্লামালাইকুম থেকে আবিষ্কার করলেন [স্লাম+আলাইকুম=স্লামালাইকুম] আর [ ইসলাম এর 'ই' বাদ দিয়ে আবিষ্কার করলেন 'স্লাম'] । বিষয়টা তখন আর আমার ব্যাক্তিগত থাকল না। তার অনুভূতিতে আঘাতের পর্যায়ে চলে গেল। এই নিয়ে সে তো আমার সাথে তুমুল কান্ড করে বসল। কি করল তা আর নাই বা বলি।
ইসলাম শব্দটিকে বিশ্বব্যাপী নানা ভাবে উচ্চারণ করতে আমি দেখেছি। যেমনঃ ইসলাম, ইজলাম, ইছলাম, ঈজলাম ইত্যাদি। কেউ কেউ শুধু সালাম বলে সম্বোধন করে, কেউ কেউ আসসালামুয়ালাইকুম বলে। কেউ বলে ওয়ালাইকুম। মূল বিষয়টা হল আমি পরের সাথে কানেক্ট হতে পারলাম কি না এটাই মুখ্য। বিশ্বব্যাপী আজ এটাই প্রাক্টিস হচ্ছে। আর আমরা??
ব্যাপারটা বেশ অদ্ভুত। দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় আমি ব্যাঙ্গালরে থেকেছি। সাউথ ইন্ডিয়ান ভাষা সম্পর্কে যারা নুন্যতম আইডিয়া রাখেন তারা নিশ্চই জানেন যে, তাদের ইংলিশ উচ্চারণ কত বিদঘুটে। যেমনঃ ফ্রেন্ড=ফ্রেন্ডা, ফুড=ফুড্ডা, কাম=কাম্মো । আসলে বাঙ্গালিরই যত সব বাড়াবাড়ি।
যে ছেলেটি আমার সাথে সেই রাতে এরোগেন্ট ব্যাবহার করল, সে কিন্তু এই শহরেরই একটি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। শেষ পর্যন্ত শিক্ষাটা আসলে সার্টিফিকেতেই থেকে গেল। আফসোস।
আমি শকড হয়েছি এটা ভেবে যে, একটা তরুণ তার মস্তিষ্কে কতোটা নেগেটিভ চর্চা করতে পারলে সম্ভব এই দুটো শব্দের মাঝ থেকে "স্লাম/বস্তি" আবিষ্কার করা?? ঠিক যেন, রবীন্দ্রনাথের দাড়িতে লুকিয়ে থাকা ইসলাম, মেসির হাটু গেঁড়ে দাঁড়ানোর মাঝে ইসলাম, হাতের পাঞ্জার মাঝে আল্লাহু আর কুরবানির মাংসে আল্লাহু লেখা খোঁজার মত মানসিকতা।
যদি ইংরেজি 'স্লাম' শব্দের বাংলা অর্থ হত তাজমহল/ কোহিনূর তা হলে সে কি আচারন করত সেটা ভাবার চেষ্টা করছি।
এরা আমার দেশের ভবিষ্যৎ। এদের অনুভূতি আছে। তাতে আঘাতও লাগে। কারনে তো লাগেই আবার অকারনেও লাগে। ভাবছি দুনিয়ার সকল অনুভূতি জনিত আঘাত কেন আল্লাহ্ শুধু এই জাতীকে দিল?? একবার ভেবে দেখুন অনুভূতির আঘাত আজ কোথায় পৌঁছে গেছে?? আমার ব্যাক্তিগত জীবনও আজ আপনার অনুভূতির বাজারে পণ্য হয়ে গেল। হায়রে অনুভূতি। তুই টিকে থাক। আমি না হয় বিলিই হলাম।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:২৫