আপনারাই বলুন তো, পাঞ্জাবী পড়া কি অর্থে ক্যাজুয়াল ড্রেস হয়? তাও আবার সেই পাঞ্জাবী যদি হয় লাল সবুজের জাতীয় পতাকার রঙে।
কারো পোশাক আশাক, খাদ্য অভ্যাস বা জীবন যাপনের ঢং নিয়ে কথা বলতে আমি পছন্দ করি না। বলিও না। আমার মতে সবাই স্বাধীন। সে তার নিজ নিজ স্বাধীনতা অনুসারে, রুচি অনুসারে পোশাক পড়বে। তাতে আমি কিছু বলতে যাব কেন? কিন্তু অদ্ভুত ভাবে আমাকে এই ড্রেস কোড জাতীয় ন্যাকামু সহ্য করতে হয় হর হামেশাই।
আমি বাস্তব জীবনে প্রচণ্ড ভাবে আইনের অনুগামী। যদি সে আইন/ নিয়ম মানুষের কল্যাণের হয়। তদ্রুপ ভাবে অর্থহীন/ যুক্তিহীন নিয়ম ভাঙ্গার ক্ষেত্রেও আমার জুড়ি নাই।
আজ ছিল সেমিস্টার ফাইনালের শেষ পরীক্ষাটা। যেহেতু আজ আমার দেশের বুদ্ধিজীবী দিবস। তাই পতাকার রঙে পাঞ্জাবী পড়ে গিয়েছিলাম। পরীক্ষা শেষে হল থেকে বের হতেই দেখা হল BBA ডিপার্টমেন্টের এক স্যারের সাথে। তিনি বেশ ধমকের সুরেই আমাকে বলল- এটা কি জাতীয় পাঞ্জাবী? এটা কেন পড়ে এসেছ?
আমি তাকে খুব নরম সুরেই বললাম- আজ আমার দেশের বুদ্ধিজীবী দিবস। তাই পড়েছি।
তিনি গলার স্বর আরো এক স্কেল উচু করে বললেন- তোমার দেশে কি না কি সেটা তো আমি জানি না। কিন্তু তুমি কেন ক্যাজুয়াল ড্রেস পড়ে পরীক্ষা দিতে আসবে??
ধুম করে মাথায় রক্ত চড়ে গেল। বুঝলাম এই লোকের সাথে ভদ্র কথায় কাজ হবে না। এবার আমিও একটি ঘাড় ত্যারা করেই বললাম- পড়েছি তো কি হয়েছে?? এটা পড়া যাবে না এটা কি কোন রুলস?? কোই আমি তো জানি না।
- এটা তো কমন সেন্সের বিষয়। ফাইনাল পরিক্ষায় এক্সটারনাল আসে গার্ড দিতে। তুমি ক্যাজুয়াল কেন পড়বে??
- স্যার আপনি বোধে হয় ভুলে গেছেন যে আপনি মাঘ মাসের বয়ান পোষ মাসে দিচ্ছেন। আমি মিডিয়ার শিক্ষার্থী। আমার কোন ড্রেস কোড মানতে হয় না। সুতরাং আমি কি পড়ব সেটা একান্তই আমার সিদ্ধান্ত। আর আমাকে পরীক্ষার নাম্বার দেওয়া হবে আমার খাতা দেখে। আমার চেহারা দেখে না।
স্যার এবার বুঝতে পারল যে, এই বেয়াদব ছেলের সাথে কথা বলে কাজ হবে না। দেখলাম এবার গলার স্বর নিচু করেছে। হয়ত এতক্ষণ পর তার হুস এসেছে যে সে ড্রেস নিয়ে কথা বলছে তার জন্য বাংলাদেশীরা অনেক দূর পর্যন্ত যেতে পারে। অবশেষে বাই বলে বিদায় হলাম।
গড প্রমিস, আর একটু বাড়াবাড়ি করলে আমি তাকে হাইকোট দেখিয়ে ছাড়তাম। সত্যিই মাথায় রক্ত চেপে গিয়েছিল। ভালো মত বুঝিয়ে বললাম, আজ আমাদের বুদ্ধিজীবী দিবস। তবুও গারলটার মাথায় ঢুকল না। অথচ এই মানুষটাই কিছুদিন আগে বাংলাদেশের কোন এক প্রায়ভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে বাংলাদেশে লেকচার দিয়ে এসেছেন।
কি জানি হয়ত ডিপার্টমেন্ট প্রধানের কাছে নালিশ দেবে। তাতে আমার ছেড়াই গেল। বাংলাদেশিদের সাথে বারাবারির ফল যে ভালো হয় না এই সবক তাকে শেখাতে হবে একটু। এমন এক ঝামেলা হয়েছিল বাংলাদেশ সচিবালয় গিয়ে। সেদিনও সেই সচিব মহাশয়কে দাঁত ভাঙা জবাব দিয়েছিলাম।
প্রায় শোনা যায় আইলিড কলেজের মিডিয়া ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থীরা সেখানের শিক্ষক দ্বারা নানা ভাবে হ্যারাজ হয় শুধু মাত্র পোশাক নিয়ে। কিন্তু ফিউচারে সেটা হতে দিচ্ছি না। যত দিন আমি আছি। এর পর থেকে ইচ্ছা করেই রোজ পাঞ্জাবী পড়ে কলেজে যাব। ঐ গাড়ল স্যারের মুখ দিয়ে এই ব্যাখ্যা আমি আদায় করে ছাড়ব যে পাঞ্জাবী পড়া কি অর্থে ক্যাজুয়াল?? আর ফর্মাল ড্রেস বিষয়টা কি?? তাকে এটাও বুঝাতে চাই যে, আমি নিজেই নিজের রুলস তৈরি করি। যুক্তিহীন নিয়ম মানতে আমার বোয়েই গেছে।
[ ***দয়া করে লেখা পড়ে সবাই যেন পুরো ভারতীয়দের দোষারোপ করা শুরু করবেন না। এটা নিঃসন্দেহে বিচ্ছিন্ন একটি ঘটনা। অপর দিকে ব্যাঙ্গালরে থাকতে দেখেছি তারা বাংলাদেশী সম্পর্কে অনেক বেশি পজেটিভ। সুতরাং একটি আলাদা ঘটনা দিয়ে সবাইকে বিচার না করাই উত্তম]
[ আর হ্যা ঠিকই ধরেছেন। আমি এরকম বেয়াদবই এবং বেয়াদবই থাকতে চাই।]
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৪৪