সাদিয়ার চাকরিটা খুব দরকার।
হোক সেটা সামান্য একটা অপারেটরের কাজ। ইন্টারভিউ দিয়ে বেশ খুশিই ছিল।
পেয়েও গেল চাকরিটা। কিন্তু এত দরকার হওয়া সত্ত্বেও চাকরিটা আর করা হলনা।
তার বাবার চিকিৎসার জন্য চাকরিটার দরকার ছিল। আজ সেই বাবাই তো তাকে দুঃখের সমুদ্রে ভাসিয়ে দিয়ে হারিয়ে গেছে অজানা পল্লীতে কি হবে আর এই চাকরি দিয়ে যেটা তাকে বার বার তার বাবার কথা মনে করিয়ে দিবে??
সাদিয়া একদম একা হয়ে গেল। জীবনের কাছে সে যেন বার বার শুধু হেরেই যাচ্ছে। আজ যেন সে শুধু বেঁচে থাকার জন্য বেঁচে আছে। জীবনে অশ্রু তাকে আর ও একবার হারিয়ে দিল!
স্বপ্ন দেখতে ভয় পায় যদি সেই স্বপ্ন তাকে আবার একবার জীবনের কাছে হার মানিয়ে দেয়!!
বেচেঁ থাকার তাগিদে ২টা টিউশন নেয়। তাদের বাসায় গিয়ে পড়ায়।
সব কষ্ট ভুলে তার দিনগুলো বেশ কেটে যাচ্ছিল।
একদিন হঠাৎ সাদিয়া লক্ষ্য করলো কেউ একজন তার পথ অনুসরন করছে।
সাদিয়া একা একা থাকে সে কিছুটা ভয় পায়। একটা মেয়ের এই ব্যাপারে ভয় পাওয়াটা অস্বাভাবিক কিছুনা। আজকাল মেয়েরা যতই সাবলম্বী হোকনা কেন... যতই অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াক না কেন একটা মেয়ের সবচেয়ে বড় দূর্বলতা হচ্ছে সে মেয়ে।
( কেউ দয়া করে ভাববেন না আমি মেয়েদের ছোট করছি বা তাদের বিরুদ্ধে কিছু বলছি।)
সাদিয়া কয়েকদিন ঘরের বাইরে যায়নি। দর্ভাগ্যবশত তার একটা টিউশন চলে যায়। বাকি আরেকটা না আবার চলে যায় সেই ভয়ে সে আবার রীতিমত পড়াতে যাওয়া শুরু করে।
সাদিয়া এখনো বুঝতে পারে সেই কেউ একজন আজও তার পিছু ছাড়েনি।
কিন্তু সাদিয়া কখনো জানার চেষ্টা করেনি কে তার পথ অনুসরন করছে।
হয়তোবা সেই অশ্রুর কাছে আরেক বার নতুন করে হেরে যাবার ভয়ে।
সাদিয়া দেখতে আহামরি সুন্দর ছিলনা। ছিলনা তার কোন দামি সাজ পোশাক যা অতি সাধারনকেও অসাধারন করে তুলেতে পারে।
সাদিয়া সাধারনের মাঝে ছিল আরও বেশি সাধারন।দেখতে ছিল প্রকৃতির মত। তার মধ্যে ছিল একধরনের কোমল স্নিগ্ধতা। একেবারে ফুলের মত পবিএ তার মন। নীলাম্বরীর মত ছিল তার মনাকাশ।
তার এই স্নিগ্ধতা আর মনের পবিএতা তাকে সাজিয়ে তুলতো নতু রূপে।
সেই স্নিগ্ধতায় আজ কিসের ভয়ের ছাপ? কোন সে ভয়? কে লুকিয়ে আছে সেই ভয়ের আড়ালে?
এই অজানা ভয়কি বদলে দিবে সাদিয়ার জীবন?
এই ভয়টাকে সাথী করেই চলতে থাকে সাদিয়ার জীবন।
বেশ কিছুদিন পর সাদিয়া হঠাৎ লক্ষ্য করে সেই অজানা ভয়টা তার পিছে নেই।সে মোটেও স্বস্তি পেলনা বরং আরও চিন্তিত হল।
সেইদিন ঘরে ফিরে সে খুব অবাক হয়ে গেল। সে তার দরজার পাশে ২টা বেলী ফুলের মালা আর ১টা নীল খাম পেল।তার বুঝতে বাকি রইল না যে সেই অজানা ভয় আজও তার পিছু ছাড়েনি।
অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও ওই ২টা বেলী ফুলের মালার ওপর থেকে তার চোখ সরাতে পারলোনা। খুব প্রিয় এই ফুলটা তার। ওই মূহুর্তে মেয়েটিকে অসম্ভব সুন্দর লাগছিলো। চোখে ভয় আর ঠোটের কোনে একটু হাসি যেন মায়াবিনীর এক কোমল রূপ। মালাগুলি আর খামটা তুলে নিলো সে।তবুও সে একটি বারের জন্যও খুলে দেখলো না কি আছে সেই খামের ভেতর।
হঠাৎ একটা ভয় তাকে ঝাপটে ধরলো সে বুঝলো সেই অজানা ভয় আজ তার ঘরও চেনে।
পরদিন ঘরে ফিরে আবারও ২টা মালা আর একটা খাম পেল সে। আজ আর অবাকও হলনা ভয়ও পেলনা। তুলে নিল জিনিস দুটি।এভাবে প্রতিদিন কেউ তার জন্য রেখে যেত দুটি বেলী ফুলের মালা আর একটা নীল খাম। সাদিয়ার সেগুলো তুলে নেয়া অভ্যাসে পরিনত হয়ে গেল। কিন্তু একটা চরম সত্য মানুষ এক কৌতূহল প্রিয় তবুও সেএকটি বারের জন্যও খুলে দেখলো না কি আছে সেই খামের ভেতর।
একটা সময় এল যখন সাদিয়া বুঝতে পারলো নিজের মনের অজান্তেই সে অপেক্ষা করছে সেই ২টা বেলী ফুলের মালা আর একটা নীল খামের।
কিন্তু কেন??তবে কি আজ সাদিয়া সে অজানা ভয়টাকেই আপন করে নিয়েছে??
এভাবে কেটে গেল ২৯ দিন।
৩০দিন-----------------
আজ ২২ অক্টোবর। সাদিয়ার জন্মদিন।
অনেক আগে বাবার দেয়া একটা নীল শাড়ি পরেছে সে আজ। হাতে নীল কাঁচের চুঁড়ি। কপালে ছোট্ট নীল একটা টিপ। চোখে কাজল। অপরূপা লাগছে তাকে। নীলাঞ্জনা, সুরঞ্জনা কিংবা কোন কল্পপুরীর রাজকূমারীর সাজকেও হার মানিয়ে দেয় এই পবিএ স্নিগ্ধ কন্যার অপূর্ব সাজ।
শুধু একটাই শূন্যতা খোপায় নেই তার প্রিয় বেলী ফুলের মালা।।।
কেন এই আধো সাজ?????
আজ ঘরের বাইরে যায়নি সে। আজ যেন শুধু ওই ২টা বেলী ফুলের মালা আর নীল খামের অপেক্ষা।
আজ সে প্রতিজ্ঞা করেছে সেই বেলী ফুলের মালা খোপায় পরে সবগুলো নীল খাম হাতে করে নিয়ে মুখোমুখি হবে এতদিনের সেই অজানা ভয়ের।
হয়ত বা এই ভযকে বরণ করে নেবে আজ।
তাইতো এত অপেক্ষা.........
অপেক্ষার প্রহর যেন শেষ হয়না........
কেটে যাচ্ছে একটি একটি করে মুহূর্ত।সকাল গড়িয়ে দুপুর.. তারপর রাত.......সকাল.. কিন্তু কোথায় সে বেলী ফুলের মালা আর নীল খাম??!!
তবে কি পাওয়ার আগেই............ তবে কি পূর্নতা পাবেনা সাদিয়ার সাজ??
স্থির থাকতে পারলোনা সে একটি মুহূর্তের জন্যও। দৌড়ে ঘরে ঢুকেই সবকটা খাম হাতে নিয়ে বসে পড়লো মাটিতে।
পড়তে শুরু করলো একটা একটা করে...................
২২সেপ্টেম্বর...
এই আমার প্রথম চিঠি। জানিনা পড়বে কিনা। হয়তো ভাবছো অসম্ভব খারাপ একটা মানুষ আমি কিন্তু আজ এতদিন ধরেযে কথাগুলো তোমাকে একপলক দেখার মধ্যে আটকে ছিলো,তোমার জন্য কাঠফাটা রোদে দাড়িয়ে অপেক্ষার মধ্যে আটকে ছিল থা তোমাকে বলে নিজেকে সব প্রশ্নের উওর দিয়ে মুক্ত হতে চাই আমি। কে জানে হয়তো সামনে এসে বলার সুযোগ হবেনা কখোনো। জানিনা কোন মালীর আমানত তুমি, এও জানিনা তুমি স্বপ্ন নাকি সত্যি। শুধু এতটুকু জানি কোন এক কঠিন বাস্তবতায় হয়তো একদিন আমার ছিলে হয়তো আবার আমার হবে।
.........................
২৩ সেপ্টেম্বর.....
তোমার কোনো উওরের আশা করিনি। করেও কি লাভ?? একটা ঠিকানাবিহীন চিঠির উওর দিবেই বা কি করে?কে জানে হয়ত একদিন এই
ঠিকানাবিহীন চিঠির মত আমিও হয়ত ঠিকানাবিহীন হয়ে অনেক দূরে কোনো সাগর পাড়ের গোধূলীতে সাগরের আছড়ে পড়া ঢেউয়ের মাঝে তোমার অপেক্ষায় পার করে দিব জীবনের বাকিটা সময়।
...........................
২৪সেপ্টেম্বর....
বিশ্বাস করো কখনোই তোমার পথে ভয় হয়ে আসিনি আমি।হ্যাঁ তবে নিজেকে বানিয়ে ছিলাম কাঁটা তবে তোমার পথের নয় তোমার গায়ের। যাতে করে কেউ হাত দিয়ে নষ্ট করতে না পারে এমন সুন্দর একটা ফুলকে। হয়তোবা এই অধিকার ছিলোনা আমার। ক্ষমা কোরো।
২৫ সেপ্টেম্বর....
আজও আমি জানিনা কে তুমি? কোন গল্পের চরিএ ? নাকি কোন সাধারনের মাঝেও অসাধারন এক নারী?
তবে শুধু এইটুকুই জানি একদিন তোমার ঠোটের কোনের একটুকরা পবিএ হাসিতে হারিয়ে ফেলে ছিলাম নিজেকে। আজও সেই হাসি কড়া নাড়ে আমার হৃদয় মন্দিরে।
২৬সেপ্টেম্বর...
তুমি কি সাড়া দিবেনা। একবারও খোঁজার চেষ্টা করলেনা? জানার চেষ্টা করলেনা কে আমি???আমি প্রতিদিন যেন এক পা এক পা করে পিছিয়ে যাচ্ছি তোমার কাছ থেকে।
তবে কি আমি হেরে যাবো নিজের কাছে????
২৭সেপ্টেম্বর....
আমার প্রতিটি গোধূলী ক্ষণ কাটে তোমার প্রতীক্ষায়। মাঝে মাঝে শুনতে পাই নূপুর পায়ে কারোও কাছে আসার শব্দ। তাকাতেই মিলিয়ে যায় মুহুর্তে।
তুমি কি আসবেনা কখনোই???
তবে কি তোমার প্রতীক্ষা শুধুই মরিচীকা????
............................
২৮সেপ্টেম্বর....
তুমি যদি চাও সরে আমি। চলে যাবো অনেক দূরে। তবুও একটি বার সাড়া দিয়ে এই অতৃপ্ত হৃদয় কে তৃপ্ত কর।
আজ বলতে কোনো সংকোচ নেই.... ভালোবাসি তোমাকে....
হ্যাঁ ভালোবাসি তোমাকে। আমার এই ভালোবাসার বিনিময়ে কিছুই চাইনা।
শুধূ একটি বার নীল শাড়ি পরে, খোপায়ঁ আমার দেয়া বেলী ফুলের মালা সাজিয়ে, নুপূর পায়ে কোনো এক গোধূলী বেলায় আমার পাশে এসে দাড়িও। আমি শুধু একটি বার আমার ভালোবাসাকে আমার মত করে দেখতে চাই। এতেই আমার তৃপ্তি।
কি আসবে তো???
ভয় পেওনা কখনো ভালোবাসার বিনিময় চাইতে আসবোনা। আমি তোমাকে ভালোবাসি তার বিনিময়ে তোমাকেও আমাকে ভালোবাসতে হবে এমনতো কোনো শর্ত নেই। তুমি শুধু আমাকে তোমায় ভালোবসতে দিও। দিবে তো??
২৯সেপ্টেম্বর......
একবার যদি ভালোবাসো তবে আমার হৃদয় মন্দিরের দেবী করে রাখবো তোমায়। তোমাকে কোনো মিথ্যে আশ্বাস দিতে পারবো না। এও বলতে পারবোনা পৃথীবির সব সুখ এনে দিব তোমার পায়ে কিংবা শাহজাহানের মত তাজমহল গড়ে দিবো তোমাকে। আমার কিছুই নেই তোমাকে দেয়ার মত শুধু আছে এক আকাশ ভালোবাসা।
তবে হ্যাঁ আর যা-ই কিছু হোক তোমার খোপা সাজাতে ২টি বেলী ফুলের মালা যে করেই হোক এনে দিব তোমাকে। এতটুকুই হয়তো আমার সাধ্য।
৩০সেপ্টেম্বর.....
সাতটা দিন পেরিয়ে গেল। আজও একটি বারের জন্য খোজার চেষ্টা করলে না আমাকে???
আজ শুধুই অপেক্ষা.............
তুমি না আসলে ফিরে যাবো নিঃশব্দে।
তবুও গোধূলীতে তোমার অপেক্ষায় থাকবো................
(১-২০)অক্টোবর...........
আজও তোমার অপেক্ষায় প্রতিটি মুহুর্ত। ভূল করেও যদি একবার আসো............
২১অক্টোবর.........
আজ আমি চলে যাচ্ছি সেখানে, যেখান থেকে এসেছিলাম পিপাসার্ত একটা হৃদয় নিয়ে। আমার প্রতিটি গোধূলী কাটবে তোমার আশায়। জানি তুমি আসবেনা।
তবুও বলি পাষাণী ভালোবাসি শুধুই তোমায়।
নিজেকে ব্যার্থ ভেবে সে ফিরে গেল তার সাগর বেলার গোধূলীতে।
সে আর গোধূলী বেলায় নতূন করে কারো ফেরার অপেক্ষা করেনা।
যে চোখে ছিল একদিন ছিল স্বপ্নের অভিসার আজ সেই চোখে তিথির অধিকার। আজ সাগরের বুকে শুধূই ভাঙ্গনের শব্দ।
আজ তার মনের সব কষ্ট গাংচিল হয়ে উড়ে যায় আকাশে...... দূর থেকে বহু দূরে।
সাদিয়ার দু'চোখে বাঁধ ভাঙ্গা নদীর স্রোতের মত বয়ে চলছে অশ্রুর ফোয়ারা।ভয় ভেবে আরও একবার হেরে গেল সে জীবনের কাছে। হেরে গেল নিজের কাছে।এ কোন খেলা খেলছে জীবন তার সাথে??? এ কেমন বিষাদ ভালোবাসার?
আজও প্রতিদিন সাদিয়া অপেক্ষা করে ২টি বেলী ফুলের মালা আর একটা নীল খামের।
আজও প্রতি ২২অক্টোবর নতুন করে সাঁজে নীলাম্বরীর মত করে। অপেক্ষা করে তার। সে আসবে বেলী ফুলের মালা নিয়ে। সাজিয়ে দিবে সাদিয়ার শূন্য খোপা।
শুধুই অপেক্ষা হয়তো গোধূলী থেকে ওকে মনে করে নয়তো ভূল করে হলেও এক বার ফিরে আসবে তার অচেনা ভালোবাসা কিংবা সেই অজানা ভয়।
আজও শুধু অপেক্ষা...............
ফিরে আসবে সে? পূর্ণ করে দিবে সাদিয়ার আধো সাঁজকে, পূর্ণ করে দিবে সাদিয়ার জীবন কে।
পূর্ণ করে দিবে সাদিয়াকে।।।।
(কিছু বন্ধুদের অনুরোধে ও পড়ার সুবিধার্থে পুরো গলপটা একসাথে দিলাম। )