somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার কবিতার বই

২৬ শে মার্চ, ২০১২ বিকাল ৩:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কবিতার বই ‘আবছায়া আলো অন্ধকারময় নীল’। প্রকাশক- বিজয় প্রকাশ, প্রকাশকাল- ফেব্রুয়ারী ২০১২, প্রচ্ছদ- নাসিম আহমেদ, পৃষ্ঠা- ৪৮, মূল্য- ৭০ টাকা।

এ বইটির একটি রিভিউ প্রকাশিত হয় দৈনিক সংবাদ-এ। রিভিউটি পড়লে বইটি সম্পর্কে কিছুটা জানা যাবে।

জীবন-মৃত্যুর ধূপছায়া : আবছায়া আলো-অন্ধকারময় নীল
রাজীব কুমার সাহা

শব্দ নিয়ে খেলা করতে ভালোবাসেন কেউ কেউ, ভালোবাসেন শব্দের পর শব্দ সাজাতে, গাঁথতে ভালোবাসেন শব্দের মালা। তেমনই একজন কবি অঞ্জন আচার্য। তাঁর আবছায়া আলো-অন্ধকারময় নীল কবিতার বইটি পড়তে শুরু করে এমন অনুভূতিরই মুখোমুখি হতে হয়। দশক বিভাজনে অঞ্জন আচার্য শূন্য দশকের একজন কবি। বাংলা সাহিত্যের সমৃদ্ধ শাখা কবিতার ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করার জন্যই তাঁর এই অসাধারণ প্রয়াস। তাঁর কাব্যগ্রন্থটির পরতে পরতে যেন সাজানো জীবনবোধের সূক্ষ্ম অনুভূতি। প্রকৃতই মানবিক জীবনের পরিপূর্ণ প্রতিচ্ছবি। পাশাপাশি তাঁর পর্যবেক্ষণ নমুনা সৃষ্টিশীল এবং হৃদয়গ্রাহী। কাব্যগ্রন্থটি তথাকথিত কবিতার বই নয়, বিস্তর ছোট বড় কবিতার সাথে সাথে গোটা বইয়ের পাতায় পাতায় কবি যা একত্র করেছেন তা জীবনবোধের এক লক্ষ্যমুখী অটল অন্বেষণের ফসল। সাধারণভাবে বলা যায় যেকোনো কবিতার বইতে পরিমিতিবোধ খুব জরুরি। অনেক কবির কবিতায় পরিমিতিবোধের বিষয়টি নিতান্তই অবহেলিত থাকে। কেননা অতিমাত্রায় কাব্যাক্রান্তের ফলে কবিতা কখনো কখনো হয়ে উঠতে পারে দুর্বোধ্য। অনেক কবি তাদের কাব্যপ্রতিভার দ্বারা কবিতাকে চমৎকার উপমার সাহায্যে করে তুলতে পারেন অনবদ্য। বর্তমান কাব্যগ্রন্থটিও তার ব্যতিক্রম নয়। বইটিতে মোট কবিতার সংখ্যা ঊনচলিস্নশটি। নামকরণেও কাব্যময়তা পরিলক্ষিত হয় : রাত-দিন দশটা দশ, নাগরিক উদ্বাস্ত্ত, কথার ভূত-ভূতের কথা, ধরাট দেওয়া কথা, মানবিক রসায়ন, নিজস্ব নির্জন আকাশ, সে-ই তো জানে, ভোর ও সন্ধ্যার কথা, দগদগে যুদ্ধদাগ অথবা নিক্রপলিস কথা, অমস্নান অপমান, হরিণবাড়ি উপাখ্যান, অনাগত সমত্মানের নাম, ফেরা অথবা প্রস্থান কথা, অনাথাশ্রম, প্রণীতের প্রতি প্রার্থনা, স্বপ্নবার্তা, তবুও ফিরে ফিরে আসি, বরফযুগের আগুনখেকো মানুষ, ঘুমিয়ে থাকুক শিশু, জিয়নকাঠি, শূন্যপূর্ণপুরাণ, সাদা অন্ধকার চোখ, তাহাদের কথা, পশ্চাতে আগামীকাল, কবিতা-মানুষ, প্রত্নতাত্ত্বিক ঈশ্বর, ঘাম ও বৃষ্টির গান, সেইসব ঘোর-ভাঙা স্বপ্নের দিন, করুণার পাত্র, আপন আপন মানুষ, আবছায়া আলো-অন্ধকারময় নীল, অতীত সংগীত, ভালোবাসা মানে, সড়ক-রাক্ষস, অল্প-স্বল্প-কল্প, গভীর রাতের সাইরেন, গন্ধ, আমাদের অচ্ছুৎ পদাবলি, অজানা মানুষ-কথা। বাস্তবিক অর্থেই মানবিক জীবনবোধের বিচিত্র অনুভূতির এক অপূর্ব সমন্বয় হলো এই আবছায়া আলো-অন্ধকারময় নীল কাব্যগ্রন্থটি। কাব্যগ্রন্থটির কিছু কিছু কবিতার নামকরণে পাওয়া যায় অসাধারণ এক অনুভূতি। এসব কবিতায় কবি ছোট ছোট পরিসরে মানবজীবনের বিচিত্র সব বিষয়ের এক অসাধারণ সংকলন করে পাঠকের সামনে হাজির করেছেন। বিষয় অনুসারে বইটিকে এককভাবে চিহ্নিত করা কঠিন, সে হিসেবে আবছায়া আলো-অন্ধকারময় নীল নামটি যথার্থ সার্থক বলে ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি। বস্ত্তত মানবজীবন, মানবিক রসায়ন, মানবিক সম্পর্কের বিচিত্র রহস্য, ঐতিহাসিক চরিত্র, সামাজিক সচেতনতা এই সব বিষয় মিশিয়ে কাব্যগ্রন্থটিকে আলাদা একটি মাত্রা দিয়েছেন কবি। ফলে বইটি পাঠকালে পাঠক স্বাদের ভিন্নতা এবং রকমফের খুঁজে পাবেন। রহস্যময় কবিতার স্বাদে কাব্যগ্রন্থটি অপূর্ব। কবির নিজস্ব চিমত্মা-চেতনাসমূহ কল্পনার অসীম রাজ্যে গভীরভাবে রেখাপাত করে, যার পরিচয় পাওয়া যায় বেশকিছু কবিতার মধ্যে। কবির বাক্যশৈলীর নিজস্বতা বোঝাতে বইটিতে ব্যবহৃত কিছু কবিতা-শব্দগুচ্ছ প্রাসঙ্গিক বলে মনে করছি- ‘… চোখের কোটরে ক্রমাগত খেলা করে একদল শালুক, চুম্বনের নোনা স্বাদ, কল্পনার ভেজা কাচ, শব্দ মিছিলের সমবেত সেস্নাগান, ভইষা ঘিয়ের আকাশ, বিধবা বালুচর, মাটির স্মৃতিকোষ, চিকন বাতাস, পাড়হীন নির্লেপ জীবন, স্বপ্ন কেনা বেচার হাট, স্বপ্নবাজ ঘুম, প্রশিক্ষিত মূর্খ-দানব, মার্কিন বোমরু বিমানের ডিম ইত্যাদি নানা শব্দের সমাহার দেখা যায়, যা বলে শেষ করা যাবে না। এ রকম আরও অনেক কাব্যময় উজ্জ্বল বাক্য গ্রন্থটির অনেক জায়গায় উপস্থিত। অঞ্জন আচার্যের এ বই পড়তে গিয়ে পাঠকের এমন ধারণা হতে বাধ্য যে কষ্ট যন্ত্রণার কল্পনাতীত সীমায় পোঁছেও মানুষ শেষ পর্যমত্ম মানুষই রয়ে যায়। মানবজীবনে সারাজীবন ধরে অর্জিত তার শ্রেষ্ঠত্বকে কখনো সে জলাঞ্জলি দিতে পারে না। পাশাপাশি সে ভুলে যেতে পারে না তার আত্মগত ও জাগতিক বোধবুদ্ধিকে। তারই বহিঃপ্রকাশ পাওয়া যায় বেশ কয়েকটি কবিতায়। মানুষের যাবতীয় জীবনবোধের কেন্দ্রবিন্দু তার মন আর তার মনে ইরেজার দিয়ে কোনো দিন মোছা যায় না অপমানের দাগ; থেকে যায় তার রেশ। কবির ভাষায়, ‘মানুষ চাইলে একদিন ভুলে যেতে পারে তার ফেলে আসা ভালোবাসার স্বাদ; পারে না, পারে না কোনো দিন মনের ইরেজারে মুছে নিতে অপমানের দাগ।’
কাব্যগ্রন্থটি যেমন বিচিত্র স্বাদের কবিতায় পরিপূর্ণ তেমনি এও ইঙ্গিত দেয় যে, পৃথিবীতে আমরা হয়ত এমন বৈচিত্র্যময় ব্যক্তিত্ব খুঁজে পাব যা আজও স্বপ্নের অতীত। হয়ত এমন একটি মানবিক সংহতি খুঁজে পাব যা পূর্ব সংস্কার, দুঃখ, কষ্ট, ভয়, যন্ত্রণা ও বিতৃষ্ণার কারণে কল্পনাতীত মনে হচ্ছে এখন। ভাষাবৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায়, কাব্যগ্রন্থটির আলাদা আলাদা স্বাদের কবিতার জন্য তার শব্দপরিধি বেশ চমৎকার এবং শব্দচয়ন থেকে উপমাপ্রয়োগ, অলংকার থেকে বক্রোক্তিতে কবি অসাধারণ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। সাথে সাথে পরিস্থিতির প্রসঙ্গ অনুসারে দেখিয়েছেন যথার্থ শব্দের ব্যবহার। গ্রন্থটির প্রথম থেকে শেষ পর্যমত্ম সমাসবদ্ধ কিছু শব্দের নীরব ও সরব উঁকিঝুঁকি টের পাওয়া যায় অর্থের চমৎকার দ্যোতনায়। তা ছাড়া আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো এর অসাধারণ কাব্যিকতা এবং বর্ণনারীতির আদলে বিমূর্ত বিষয় আরও জীবমত্ম করে তোলা। তবে বর্ণনার ব্যতিক্রমী ভঙ্গির কারণে কিছু ছোটোখাটো সীমাবদ্ধতাকেও বেশ ভালোভাবেই অতিক্রম করে কাব্যগ্রন্থটি। গ্রন্থটির আরেকটি যৌক্তিক দিক হলো কবিতাগুলো গ্রন্থনের পরিমিতিবোধ এবং বাক্যবিন্যাসের সুস্পষ্টতা। সেই সঙ্গে যা উলেস্নখ না করলেই নয়, তা তাঁর অনন্যসাধারণ উপমা প্রয়োগ; যেমন : মার্কিন বোমারু বিমানের ডিম, ভইষা ঘিয়ের আকাশ, বিধবা বালুচর, মাটির স্মৃতিকোষ ইত্যাদি। সর্বোপরি কবি তার বক্তব্যকে রুদ্ধ করে গূঢ় ব্যঞ্জনার ব্যাপ্তি ছড়াতে চমৎকার দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।
পরিশেষে সার্বিক দিক বিবেচনায় স্পষ্ট যে, বর্তমান কাব্যগ্রন্থটি কবির কাব্যপ্রতিভা বিকাশের এক দারুণ গ্রন্থন। যা তাঁর প্রত্যেকটি কবিতার গাঁথনির দৃঢ়তায় স্পষ্ট। কঠোর শ্রমসাধ্য এ গ্রন্থটি যেমন আগামী দিনের কবিতা প্রেমীদের কাজে লাগবে তেমনই ভাষার সহজবোধ্যতা, উপমার যথার্থতা এবং মানবীয় ভাবের বিচিত্রতা বিশেস্নষণে পাঠক খুঁজে পাবে নতুন আলোক দিশা। আর তা অনায়াসে সাধারণ পাঠকের জানার আকাঙ্ক্ষাকেও পূরণ করতে সক্ষম হবে। সর্বোপরি এর প্রচ্ছদ, অলংকরণ এবং গুণগতমান বিচারে কাব্যগ্রন্থটি সংগ্রহ করার মতো বলে আমি মনে করি।
কাব্যগ্রন্থ : আবছায়া আলো-অন্ধকারময় নীল; কবি : অঞ্জন আচার্য; প্রকাশনা : বিজয় প্রকাশ; প্রকাশকাল : ফেব্রম্নয়ারি ২০১২; প্রচ্ছদ : নাসিম আহমেদ; পৃষ্ঠা : ৪৮; মূল্য : ৭০ টাকা।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সত্যি বলছি, চাইবো না

লিখেছেন নওরিন হোসেন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:০৮



সত্যি বলছি, এভাবে আর চাইবো না।
ধূসর মরুর বুকের তপ্ত বালির শপথ ,
বালির গভীরে অবহেলায় লুকানো মৃত পথিকের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কি 'কিংস পার্টি' গঠনের চেষ্টা করছেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:১০


শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকেই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামক সংগঠন টি রাজনৈতিক দল গঠন করবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা চলছেই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্থান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্থান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×