একবার এক বন্ধুর লগে আলাপকালে কইছিলাম, “ভাবতেছি লেখালেখি বিষয়টারে সিরিয়াসলি নিয়া নিব”। ও বেশ উপহাস কইরা কইল, “ক্যান? সেলিব্রেটি হওয়ার শখ জাগছে?” এরপর ঝাড়া বহুতক্ষণ লেকচার দিল। যার সারমর্ম হইল, এই নির্বোধের দেশে সেলিব্রেটি হইয়া ফায়দা কী?এই জনতা বাহবা দিলেই কী আর না দিলেই কী?
আপনার কাছে তার এই কথাবার্তা অহংকারী মনে হইতে পারে, তবে আমার মনে হইছে, এই অহংকার তারে কিছুটা হইলেও শোভা পায়। ঐ ছেলে আজতক আমার দেখা সবচেয়ে বেশী জ্ঞান ধারণ করা বান্দা (সমবয়সীদের মধ্যে)। তবে চিন্তা-ধারা, মন-মানসিকতা সব কিছুই পশ্চিমমূখী, হয়তো নিজের দেশ নিয়া হতাশ হওয়ার কারণে। আর বাংলাদেশের এখনকার ইয়াং জেনারেশনের আইকনদের দিকে তাকাইলেই বুঝতে পারবেন, আইকন হইতে হইলে এই দেশে খুব বেশী কিছুর দরকার হয় না।
বাংলাদেশের অল্প শিক্ষিত আর একটু বেশি শিক্ষিত (একাডেমীক শিক্ষা না) তরুণ সমাজের মধ্যে খুব বেশী তফাৎ নাই। অল্প শিক্ষিতের একশ টাকার জুতা একটু চকচকা কইরা দিলেই বেশি শিক্ষিতরা এক হাজার ট্যাকা লয়া ঝাপায়া পড়ব। জাস্ট একটু ভালো প্রেজেন্টেশন দিয়াই আপনি মানুষরে কাইত কইরা দিতে পারবেন। আসল জিনিশ কতোটা উন্নত তা দেখার চোখ এখনো ফুটে নাই এলিট জনতার অথবা তেমন জিনিশ আসেই নাই। যাক এই কথা এইখানেই শেষ করি। যে যার ইচ্ছা মতো কনক্লুশন টাইনা নিয়েন।
মুহম্মদ জাফর ইকবালের দেশে ফেরার কথা কই। জাফর ইকবাল বিজ্ঞানী মানুষ, বিশ্বসেরা একটা ইউনিভার্সিটি থেইকা ডিগ্রী লইছেন, বিশ্বের নামজাদা প্রতিষ্ঠানে কাম করছেন, তারপরও দেশে ফিরে আসছেন। এই সিন নিয়া অনেকেই দেখি বেশ রঙচঙ মাখায়া তারে আসমানে তোলেন-কত ভালোবাসা থাকলে তিনি এই কাজ করতে পারেন!
জাফর ইকবালের বিজ্ঞানী পরিচয়ের বাইরেও সবচেয়ে বড় পরিচয় হইছে তিনি একজন থিংকার। হালে জনপ্রিয় হওয়া শব্দে কইলে- তিনি একজন চিন্তক। সমাজ তারে ভাবায়। এটা ভালো জিনিশ। আর চিন্তকদের সবচেয়ে বড় চাহিদা থাকে ইমপ্যাক্ট ফেলা। তারা সুখ স্বাচ্ছন্দ্য, গাড়ি বাড়ি দিয়া খুশী হইতে পারেন না। তারা সমাজে ইমপ্যাক্ট ফেলতে চান। ইমপ্যাক্ট শব্দটা নাম-যশের মতো সস্তা না।
জাফর ইকবালও ইমপ্যাক্ট ফেলতে চাইছেন বইলা আমার মনে হয়। আম্রিকায় তার দ্বারা সেটা হইতো না। আর বর্তমান বাংলাদেশী সমাজে দেখেন, তারে সবচেয়ে ইমপ্যাক্টফুল বান্দা কওয়া যায়। আপনে তারে ভালোবাসতে পারবেন অথবা ঘৃণা করতে পারবেন, কিন্তু তারে ইগনোর করতে পারবেন না। তার এই ইমপ্যাক্ট কতটা ভালো কতটা খারাপ এই নিয়া তর্ক চলতে পারে, কিন্তু তিনি যে এই সমাজে প্রচন্ড ইমপ্যাক্ট ফেলতে সফল হইছেন এটা অনস্বীকার্য।
মোদ্দা কথা হইছে তিনি যা করতে চাইছেন, তাই করছেন। এইখানে বিষয়টারে রঙচঙ মাখানর কিছু নাই। স্যার আপনে আইসা ভুল করছেন, বিদেশ চইলা যান। এইসব পিরীত যারা দেখান, তারা তারে বুঝেন নাই। উনি দয়া কইরা এই দেশে আসেন নাই। চিন্তকরা ইমপ্যাক্ট ফেলার জন্য জানও কোরবানী দিতে পারেন (যদি সেই মাপের শক্ত হয় আরকি।)
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১:১৯