স্থান: রোজ হাসর ময়দান
দোজাহানের বাদশাহ, রাজাধিরাজ, মহামহিম ঈশ্বর আরশে আজিমে সমাসীন। বেবাক আদম সন্তানের হাতে তাদের আমলনামা ধরায়া দেয়া হইতেছে। খোদা তাআলা স্বয়ং উপস্থিত থাইকা সব কিছুর তদাকি করতেছেন।
এমন সময় ফিরিশতারা দুই আদমিকে টেনে হিঁচড়ে ঈশ্বরের সামনে নিয়া আসলেন। ঈশ্বরের পায়ে সেজদাবনত হইয়া ফিরিশতারা জানাইলেন,
'হে ঈশ্বর আপনার এই দুই নাদান বান্দা তাদের আমলনামা গ্রহণ করিতেছে না। আপনার কাছে নাকি তাদের ব্যক্তিগত আরজি আছে।'
ঈশ্বর তাদের আরজি জানানোর অনুমতি দিলেন।
এই দুই বান্দার একজন ওমর খৈয়াম, আরেকজন মির্জা গালিব।
ওমর খৈয়াম শুরু করলেন,
"হে মহান ঈশ্বর, আমার আমলনামা নেয়ার আগে আমি আপনার কাছ থেকে কৈফিয়ত দাবি করতেছি।" নাদান বান্দার এহেন উক্তি শুনে ফেরেশতারা চমকায়া উঠলেন। কিন্তু ঈশ্বর তারে চালায়ে যাবার অনুমতি দিলেন।
অনুমতি পাইয়া ওমর খৈয়াম শুরু করলেন। তিনি তার জীবদ্দশায় লেইখা যাওয়া করুণ আকুতির একখান রুবাইয়াৎ তেলাওয়াত করলেন। যার বাংলা করলে দাঁড়ায়
ওগো, আমার চলের পথে তুমি
রাখলে খুঁড়ে পাপের গহর
ব’ইয়ে বিপুল সুরার লহর
ক’রলে পিছল ভুমি!
এখন আমি ঠিক যদি না চ’লতে পারি তালে
শিকল বাঁধা চরণ নিয়ে প্রারব্ধের ওই জালে
ব’লবে না ত’ ক্রুব্ধ অভিশাপে-
পতন আমার হ’লো নিজের পাপে!
খৈয়ামের রুবাঈয়াতের পর থমথমে পরিবেশ। কিন্তু মহামতি ঈশ্বর বিচলিত হইলেন না। তিনি স্মিত হেসে গালিবের দিকে তাকালেন। তার আরজি শুনতে চাইলেন।
মীর্জা গালিব ত্যাঁদড় আদমি। তিনি কইলেন, "আমার পাপের হিসাব নিয়েন না খোদা"
ফেরেশতাগ এইবার ভিমরি খাবার পালা। তারা জিগাইলেন, ক্যান?
গালিব সোজা সাপ্টা জওয়াব দিলেন,
কত না করা পাপের হাহাকার দিলে লয়া ঘুরতাছি, এর থেইকা বড় সাজা আর কি হইবার পারে?
খৈয়ামের রুবাইয়্যাতখানার অনুবাদ নরেন্দ্র দেবের বই থেকে নেয়া
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৩:২৫