রাজকুমার হিরানীর বিখ্যাত সিনেমা থ্রী ইডিয়টস দেখার পর প্রথমে আমার মাথায় ঢুকছিলো যে "আমার প্যাশন কি?"
ফারহানের তার বাবারে দেয়া সেই আবেগী ডায়ালগ গুলা মনে আছে? "বাবা আমি ইঞ্জিনিয়ার হইলে খুবই খারাপ একজন ইঞ্জিনিয়ার হব।... আর যদি ফটোগ্রাফার হই তাহলে অল্প টাকা ইনকাম করলেও খুশী থাকব"
এরপর সিনেমার শেষে পরিচালক দেখিয়েছেন সবাই নিজের প্যাশন ফলো করে বহুত বড় বড় আদমী হয়ে গেছে।
এই ফিলিম দেখার পর অনেক ছেলেপেলেকেই দেখছি প্যাশন খোঁজার পেছনে লেগে গেছে, আবার প্যাশন অনুযায়ী পথে যেতে না পেরে হতাশায় বেঁকাত্যাড়া হয়ে গেছে।
এই প্যাশন বিষয়টারে আমার কাছে প্রেমিক প্রেমিকার পীরিতির মত মনে হয়। তারা বিয়া করার আগ পর্যন্ত ভাবে,
"একজন একজনরে না পাইলে বাঁচবোনা। আর বিয়া করতে পারলে "এই সাদা কালো শহরে লাল নীল সুখের সংসার" গড়ে ফেলবে।" কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় বিয়ার কয়েক বছরের মধ্যে তাদের সম্পর্ক অন্য কাপলদের চেয়েও অসহ্য পর্যায়ে গেছে। আর বিয়ে করতে না পারলে ভাবে, "তাদের বিয়ে হলে বুঝি তারাই পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী কাপল হইত"।
প্যাশন জিনিসটাও অনেকক্ষেত্রে এমনই। প্যাশন অনুযায়ী চাকরি বা একাডেমীক সাব্জেক্ট না পাইলে, মনে হয় এ চাকরী পাইলে দুনিয়া উল্টায়া পালাইতাম।
কিন্তু দেখা যায় চাকরীতে গেলে এই প্যাশন জিনিসটাই বেশীদিন থাকে না। প্যাশনেট পাব্লিকরা খুব বেশী ঝামেলার সাথে ডিলও করতে পারেনা। লোকে বলে কাজের প্রতি প্যাশন থাকলে কঠিন সময় গুলা আপনি সহজে পার করতে পারবেন। কিন্তু এই ক্ষনস্থায়ী প্যাশন যখন হারিয়ে যায় তখন আপনি যে কাজের প্রতি খুব দ্রুত আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন এটা কেউ বলেনা।
অন্যদিকে সফলতার পেছনে ছোটা ব্যক্তিরা আগে থেকে মানসিকতা রাখে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে সফল হবার, তারা সব ঝামেলার সাথে ডিল করার মানসিকতার থাকে, অধিক স্পিরিট সম্পন্ন। যারা তাদের ভালবাসার জায়গাটা নিয়া কাজ করে তাদের মধ্যে সফলতার পেছনে ছোটার স্পৃহাও তেমন কাজ করেনা।
ফারহানের ডায়ালগটা মনে করায়া দেই "আমি অল্প টাকা ইনকাম করলেও খুশী থাকব" যদি প্যাশন টিকে থাকে অনেক সময় এটাই হয়। অনেক প্যাশনেট অভিনেতারে দেখে থাকবেন অভিনয় তাদের ধ্যানজ্ঞান কিন্তু আজীবন ভর সেই মঞ্চেই পইড়া আছে।
একবার কই যেন পড়ছিলাম এক বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা লিখছেন যে তার উপর তার বসের ইন্সট্রাকশন ছিল যে কখনো প্যাশনেট প্রজেক্টের জন্য লোন দিবানা। যেমন এক ব্যাক্তি যদি স্পোর্টস প্যাশনেট হয় এবং সে যদি তার প্যাশনের বসে একটা স্পোর্টস ষ্টোর দিতে চায় তাহলে তাকে লোন দিবানা। কারন সে মূলত ব্যবসা করতে আসে নাই হি ইজ ইন দ্যা বিজনেস ফর রং রিজন।
কিন্তু ঐ স্পোর্টস প্যাশনেট ব্যক্তি যদি একটা ফাস্টফুডের স্টোরের বিজনেস করতে চায় তবে তাকে ধার দাও। এই ইন্সট্রাকশন যেই বসের দেয়া এ লাইনে ওনার তিরিশ বছরের অভিজ্ঞতা ছিল।
আসুন এবার কয়েকটা উদাহরণ দেখি।
শাহরুখ খান।
শাহরুখ ছোট বেলা থেকে কখনোই অভিনেতা হইতে চাননি। হকি খেলার প্রতি প্যাশনেট ছিলেন; তার ইচ্ছা ছিল স্পোর্টসম্যান হওয়ার। কিন্তু এক সময় পিঠের ইঞ্জুরিতে পড়েন এবং ডাক্তার ঘোষণা করে দেন যে হকি খেলা আর তার দ্বারা সম্ভব না। তখন তিনি ভাবলেন থিয়েটারে একটু লাক ট্রাই কইরা দেখি। আর তার পরিশ্রম, ওয়ার্ক এথিকস দিয়ে আজ তিনি বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় অভিনেতাদের একজন, আর পৃথিবীর মধ্যে দ্বিতীয় রিচেষ্ট এক্টর।
সফল ছোটবেলা থেকে প্যাশন থাকতে হবে এমন কথা নাই। আমাদের সাকিব আল হাসানও ক্রিকেট এর প্রতি প্যাশনেট ছিলেন না ছোটবেলা থেকে তার আগ্রহের জায়গা ছিল ফুটবল। আর তিনি এখন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। এমন অসংখ্য উদাহরণ পাবেন চারপাশে যারা আগের প্যাশন ছাড়াই সফল হয়েছেন।
এরমানে আমি বলতে চাইনা যে প্যাশনেট কেউ কখনোই সফল হয়না। প্যাশনের কোন দরকার নাই। বলতে চাই আমাদের সামনে প্যাশন বিষয়টাকে ওভাররেটেড হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। সব সফল ব্যক্তিই বয়ান দিতে থাকেন "ফলো ইওর প্যাশন"। আর পোলাপান ভাবে প্যাশন না থাকলে সফল হওয়াই যাবে না। এই ওভাররেটিং এর দরুন বহু ছেলেপেলেরে দেখছি ছোটবেলা থেকে ডাক্তার হতে চাইছে তাই এখন ম্যাডিকেলে চান্স না পায়া হতাশ হয়ে পড়ে আছে, প্রোগ্রামিং ভাল্লাগে তাই ভার্সিটিতে কম্পিউটার সায়েন্স না পেয়ে ক্যারিয়ারের সব আশা ছেড়ে দিছে। আর চাকরী ক্ষেত্রে তো এটা অহরহ দেখা যায় যে আগ্রহ সহকারে কাজ না করার কারন হিসেবে পছন্দের চাকরী না পাওয়াকে দুষছে।
প্যাশন কোন কাজের মধ্যে নাই। প্যাশন আছে আপনার ভেতর। ঐ কাজটার প্রতি আমি প্যাশনেট বলে ওটা করতে পারলেই যে আপনি সফল হবেন এমন কোন কথা নাই আরো অনেক ফ্যাক্টর লাগে, আপনি যে কাজ করছেন তাও আপনি আপনার পরিশ্রম, এথিকস দিয়ে সফল হতে পারেন। আর আপনার কি মনে হয় শাহরুখ, সাকিব যাদের কথা বললাম এরা তাদের কাজ না ভালবেসেই সফল হয়েছেন!
উহু।কখনো না!
তাই আপনি যে কাজ করছেন তাকেও ভালবাসতে পারেন। পরিণত করতে পারেন আপনার প্যাশনে।
শেষ করি শাহরুখ খানের একটা উক্তি দিয়ে "Do what you love. if you are doing something then you better love it"[
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৯:৫৫