ভার্সিটিতে আসার শুরুর দিকে একদিন ভার্সিটির লাইব্রেরীতে গেলাম বই রিনিউ করতে। কার্ড দিতেই লাইব্রেরিয়ান একটা রিসিট ধরিয়ে দিয়ে বললঃ
"দুই টাকা জরিমানা হইছে যান ব্যাংকে দিয়ে আসেন"
কেমন লাগে বলেনতো? দুই টাকার জন্য ব্যাংকে!! ঐদিন বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ল্যাব ছিল। আর ব্যাংকে যাওয়া হয়নি। পরদিন ব্যাংকে দুইটাকা দিয়ে রিসিট নিয়ে লাইব্রেরীতে গেলাম। দায়িত্বে থাকা ভাই বলল
"কালকে টাকা দেন নাই! করছেন কি! আজকে তো জরিমানা আরো দুইটাকা বেড়ে গেছে। যান এটা দিয়ে আসেন"
আমার মেজাজ তখন কোন মাত্রার খারাপ হইছে আশা করি বুঝতেই পারছেন। আসলে এই রিনিউ ভার্সিটির ওয়েবসাইট থেকেও করা যায় কিন্তু মোবাইল থেকে তা করতে গেলে প্রায়ই ঝামেলা করে। তাই লাইব্রেরিতেই আসি।আর মাঝে মাঝেই এরকম ঝামেলায় পড়তে হয়।
গজরাতে গজরাতে বন্ধু শোভনকে ঘটনাটা বললাম। এর কিছুদিন পর এক মাঝরাতে ফেইসবুকে শোভনের মেসেজ। "দোস্ত সারপ্রাইজ!" সাথে এটাচড একটা গুগল ড্রাইভ লিংক। লিংকে গিয়ে দেখি একটা apk ফাইল মানে এন্ড্রয়েড এপ। ইন্সটল করে তো আমি পুরো তব্দা খায়া গেলাম। সে ভার্সিটির লাইব্রেরি ম্যানেজার এন্ড্রয়েড এপস বানিয়ে ফেলছে। দুই তিন ক্লিকেই সব কাজ হয়ে যায়। আমার প্রতিক্রিয়া ছিল "কেম্নে সম্ভব ম্যান?"
আর এপটা প্রকাশ করার পর শোভনতো ভার্সিটিতে রীতিমতো সেলিব্রেটি। ওর কাছ থেকে জানতে পারলাম ও ক্লাস নাইন থেকেই প্রোগ্রামিং শেখা শুরু করছে। না কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না। নেট ঘেঁটে বিভিন্ন টিউটোরিয়াল আর বই থেকে নিজে নিজে শিখছে। আর ও এখন সি, সি++, জাভা, পাইথন মোটামুটি সব গুলা প্রোগ্রামিং ভাষাই সে পারে।
ওর কীর্তিকলাপ শুনে আফসোস হল। কম্পিউটার হাতে পেয়ে এতদিন কত আকাম কুকাম করছি অথচ কম্পিউটারের আসল যে কাজ তার কিছুই করলাম না।
"কম্পিউটারে মানুষ গান শোনে, সিনেমা দেখে, চিঠি লেখে, ফেসবুক করে, ইন্টারনেট ঘাঁটাঘাঁটি করে এমনকি চুরিচামারি পর্যন্ত করে কিন্তু হিসাব করে না! অথচ কম্পিউটারে কম্পিউট করার মতো আনন্দ আর কিছুতে নয়, সেটি করার জন্য যেটি জানা দরকার সেটি হচ্ছে একটুখানি প্রোগ্রামিং।
যাহোক "লেট ইজ বেটার দেন নেভার" মাথায় রেখে আমারও ঝোঁক উঠল যেভাবেই হোক প্রোগ্রামিং শিখতে হবে। ঐদিন গিয়েই একটা C প্রোগ্রামিং এর বই সংগ্রহ করে আনলাম। কিন্তু বইটার স্টাইলের সাথে মানিয়ে কিছুতেই চালিয়ে যেতে পারলাম না। কারণ একে ইংরেজীতে হওয়ায় কিছুটা আনইজি লাগত। তার ওপর এতে সব কিছু নিয়ে ডিটেইল আলোচনা ছিল। অথচ প্রোগ্রামিং হচ্ছে পুরো অনুশীলনের ব্যপার। শেষ পর্যন্ত আবার শোভনের দ্বারস্থ হলাম।
ও পরিচয় করে দিল "তামিম শাহরিয়ার সুবিন" নামের সাথে। ওর কথামত রকমারি থেকে সুবিন ভাইয়ের কম্পিউটার প্রোগ্রামিং প্রথম খন্ড ও পাইথন পরিচিতি বই দুটি কিনলাম।
কম্পিউটার প্রোগ্রামিং ১ম খন্ড ইটির ভূমিকাতে জাফর ইকবাল স্যার লিখেছেন:
"ইউনিভার্সিটিতে বা বড় বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রোগ্রামিং শেখানো হয় কিন্তু স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েরাও যে খুব সহজে প্রোগ্রামিং করতে পারে, সেটি অনেকেই জানে না। আমি অনেক দিন থেকেই ভাবছিলাম, স্কুলের ছেলেমেয়েদের জন্য এরকম একটি বই লিখি; কিন্তু কিছুতেই সময় করে উঠতে পারছিলাম না।
ঠিক এরকম সময় আমার ছাত্র সুবিনের এই পাণ্ডুলিপিটি আমার চোখে পড়েছে। আমি অবাক হয়ে লক্ষ করলাম, আমি যে জিনিসটি করতে চেয়েছিলাম সুবিন ঠিক সেটিই করে রেখেছে! স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েদের জন্য একটি প্রোগ্রামিংয়ের বই লিখেছে, খুব সহজ ভাষায়, খুব সুন্দর করে গুছিয়ে।
আমি তার এই চমৎকার বইটির সাফল্য কামনা করি। "
বইটির ফ্ল্যাপে লিখাঃ
বাংলা ভাষায় কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের উপর লেখা বই। বইটিতে প্রোগ্রামিং ভাষা হিসেবে সি (C) ব্যবহার করা হয়েছে। প্রোগ্রামিংয়ের জগতে যারা নতুন, তাদের জন্য বইটি সহায়ক। বইটি ক্লাস নাইন থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী।
আর আমার প্রথমত ভাল লাগছে যে এখানে লেখক মিথ্যা কোন আশ্বাস দেয়নি। "এ বই পড়লেই আপনি প্রোগ্রামিং থেকে শুরু করে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং এ দক্ষ হয়ে উঠবেন" এসব ফাঁকা প্রতিশ্রুতি না দিয়ে লেখক বলেছেন বইটি আপনার জন্য প্রোগ্রামিং জগৎ এর দরজা খুলে দেবে।
বইটির যে বিষয়গুলো আমার কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় লাগছে তা হচ্ছে এটির সহজ ভাষা আর শেখানোর স্টাইল।
যেখানে প্রোগ্রামিং বললেই আমাদের চোখে জটিল আর বিদঘুটে সব কোড ভেসে উঠে সেখানে লেখক এতটা সহজ ভাষায় এবিষয়টিকে উপস্থাপন করেছেন এটি সত্যিই অসাধারণ।
দ্বিতীয়ত এর শেখানোর স্টাইল। অন্যান্য গতানুগতিক বইয়ের মত লেখক এখানে আগে একগাদা থিওরি বা মুখস্ত করার বিষয় দেন নি। বরং আগে এক এক একটা উদাহরণ দিয়ে এরপর এগুলো ব্যাখ্যা করেছেন। এতে চিন্তা করার ক্ষমতা বাড়ে আর একজন প্রোগ্রামার এর জন্য চিন্তা করতে পারাটা খুবই দরকার।
আর প্রোগ্রামিং শেখার ক্ষেত্রে অনেক সময় ব্যয় করতে হয়। আমি নিজে ভাবতাম আর যাই হোক এত সময় নিয়ে ধৈর্য ধরে কোডিং করা আমায় দিয়ে হবে না। কিন্তু সুবিন ভাই এর এ বইটা আমার এ ধারনাকে অনেকটাই ভুল প্রমান করে দিয়েছে।
সি প্রোগ্রামিং শিখতে চাইলে বাংলায় এ অসাধারণ বইটি দিয়ে শুরু করতে পারেন। আর পাইথন শেখার জন্য আাছে একই লেখকের "পাইথন পরিচিতি" বই এবং ডিভিডি।
বইদুটির প্রকাশকঃ
অন্যরকম প্রকাশনী।
কিনতে পারেন নীলক্ষেত থেকে বা রকমারি থেকে
সবশেষে জাফর ইকবাল স্যারের কথায় বলি "ছেলেমেয়েরা গান শোনা, সিনেমা দেখা, চিঠি লেখা, ফেসবুক করা, ইন্টারনেট ঘাঁটাঘাঁটি করার পাশাপাশি আবার কম্পিউটারের মূল জায়গায় ফিরে আসুক – সেই প্রত্যাশায় থাকলাম।"
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ২:৪৮