ওয়াশিংটন পোস্ট এর দুজন সাংবাদিক বব উডওয়ার্ড ও কার্ল বার্নস্টাইন। যারা ১৯৭২ সালে "ওয়াটারগেইট কেলেঙ্কারী" ফাঁস করে গোটা বিশ্বব্যাপী ঝড় তুলে দিয়েছিলেন। যার ফলে তখন পদত্যাগ করতে হয়েছিল আমেরিকার তৎকালীন ক্ষমতাধর রাস্ট্রপতি রিচার্ড নিক্সনকে। ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত তাদের দুজনের লেখা "অল দ্যা প্রেসিডেন্টস ম্যান" বইটিতে ওয়াটারগেইট কেলেঙ্কারি ফাঁসের পেছনের গল্পই বলা হয়েছে।বইটি টাইম ম্যাগাজিনের সর্বকালের সেরা বিশটি নন ফিকশন বইয়ের একটি।
বইটিতে দেখানো হয়েছে দুজন সাধারণ সাংবাদিকের এক শিহরণ জাগানো জার্নি যারা তদন্ত করেন বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাবান সরকারের বিরুদ্ধে। এ বইতে তারা তখন ওয়াশিংটন পোস্টের জন্য করা তাদের দুজনের গুরুত্বপূর্ণ রিপোর্টগুলোকে ঘটনাবলীর সাথে সম্পর্কিত করে সাজিয়েছেন, এছাড়াও ধারাবাহিকভাবে সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন সেসময় ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের পদত্যাগ, প্রেসিডেন্ট নিক্সনের রেকর্ডিং টেপ ফাঁস হওয়ার মত ঘটনাগুলো। বইটিতে উডওয়ার্ডের বিখ্যাত গোপন সোর্স Deep Throat (ছদ্মনাম) এর সাথে মিটিং এর বর্ণনাও দেয়া হয়েছে।
ঘটনাটি শুরু হয়েছিল ১৭ জুন ১৯৭২ এ যখন ওয়াটার গেইট হোটেলে ডেমোক্রেটিক দলের জাতীয় কমিটির হেড কোয়ার্টারে এ একটি চুরি হয়েছিল। উডওয়ার্ড ওয়াশিংটন পোস্ট এর জন্য এ ঘটনার তদন্ত করার নির্দেশ পান। একই এসাইনমেন্ট ছিল বার্নস্টাইনেরও। এর তদন্ত করতে গিয়ে তার সন্দেহ হয় যে এটি সাধারণ কোন চুরি নয় এর পেছনে রয়েছে আরো কোন গল্প।
এর কিছুদিন পর ২২শে জুন ১৯৭২ এ তৎকালীন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন বিবৃতি দেন যে "ওয়াটার গেইটের এই বিচ্ছিন্ন ঘটনাটির সাথে হোয়াইট হাউস কোনভাবেই জড়িত নয় "।
তারা দুজনেই "বিচ্ছিন্ন ঘটনা" শব্দদুটি লক্ষ্য করেন। তাদের মনে প্রশ্ন জাগে তবে কি এটি কোন বড় ষঢ়যন্ত্রের অংশও হতে পারে?
একসময় তাদের তদন্তে তারা জানতে পারেন রিপাবলিকানদের একটি গোপন ফান্ডের কথা যা তারা ব্যয় করতো বিভিন্ন অবৈধ উপায়ে ডেমোক্রেটদের নির্বাচনী প্রচারণা বাঁধাগ্রস্ত করার কাজে। যেমনঃ হুমকি দেয়া, ফোনে আড়ি পাতা, গোয়েন্দাগিরি করা ইত্যাদি। কিন্তু তারা এসব বিস্ফোরক তথ্যগুলো প্রকাশ করার মতো উপযুক্ত প্রমান হাতে পাচ্ছিলেন না। এসময় উডওয়ার্ড ভেতরের একজন ব্যক্তিকে পান ইনফরমার হিসেবে। যার ছদ্মনাম ছিল Deep Throat।
তদন্ত চালিয়ে যাওয়ার ফলে কিছুদিন পরে তারা অনেক ব্যক্তির বিস্তারিত জানতে পারেন যাদেরকে রিপাবলিকানদের পক্ষ থেকে টাকা দেয়া হত ডেমোক্রেটদের প্রচারণা বাধাগ্রস্ত করার জন্য। তারা জানতে পারেন আড়ি পাতা হয়েছিল ওয়াটার গেইটে ডেমোক্রেটদের হেড কোয়ার্টারেও। এসব নিয়ে রিপোর্টগুলো লাগাতার প্রকাশিত হতে থাকলো ওয়াশিংটন পোস্টে। এবং হোয়াইট হাউস নিয়মিতই এসবকে বানোয়াট আখ্যা দিতে লাগলো। কিন্তু কখনোই কোন তথ্যের ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে বলতে পারতোনা যে এটি মিথ্যা। একবার এক ভুল বোঝাবুঝির ফলে তারা কিছু ভুল তথ্য প্রকাশ করে ফেলেন এবং হোয়াইট হাউস এর সুযোগ নিয়েই ঝাঁপিয়ে পড়ে ওয়াশিংটন পোস্টের ওপর। রিপাবলিকানরা এটি প্রমান করতে উঠে পড়ে লাগে যে "ওয়াশিংটন পোস্ট" হলুদ সাংবাদিকতা করছে। এরফলে তাদের তদন্ত প্রায় একমাস পিছিয়ে যায়।
এ সুযোগে অন্য পত্রিকাগুলোও এ ঘটনার পেছনে লেগে যায় এবং উদঘাটিত করতে থাকে একের পর এক গোপন তথ্য। "পোস্ট" এর সংবাদের সততাও স্বীকৃতি পায়। আর অনেক ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত হয়ে গ্রেফতার হতে থাকেন। এবং তদন্তের এক পর্যায়ে দেখা যায় এই কেলেঙ্কারিতে জড়িত স্বয়ং প্রেসিডেন্টই।
সত্য উন্মোচনেরএ অসাধারণ রোমান্সকর কাহিনী নিয়েই উডওয়ার্ড এবং বার্নস্টাইনের বই "অল দ্যা প্রেসিডেন্টস ম্যান"। বইটি পড়ার সময় আপনার মনে হবে অসাধারণ টান টান উত্তেজনার কোন থ্রিলার পড়ছেন। অথচ এ ঘটনাগুলো ঘটেছিল বাস্তবেই ।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ১২:০১