somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফিরে দেখা- পর্ব ১

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১১ ভোর ৪:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বানিয়াজুরি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাস-ওয়ানের বাংলা পরীক্ষা। প্রশ্ন ছিল: “পাঁচটি ফলের নাম লিখ”। আমি লিখলাম, “আম, বড়ই, কাঁঠাল, কাঁচামিঠা আম, মুসাম্বি”। সেই প্রশ্নে আমাকে ৫ এর মধ্যে ৩ দিলেন ম্যাডাম। বয়স তখন ৫। এসব ব্যাপারে বিন্দুমাত্রও টেনশিত নই। কিন্তু, আমার আম্মু পরীক্ষার খাতা নিয়ে ম্যাডামের কাছে গিয়ে প্রতিবাদ জানালেন: “‘মুসাম্বি’ তো একটা ফলের নাম। অনীক তো ঠিকই লিখেছে!” স্যার-ম্যাডামরা গোলটেবিল বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত নিলেন, যে আম্মুকে ১ সপ্তাহ সময় দেয়া হবে। তিনি যদি এ সময়ের মধ্যে শিক্ষকদেরকে মুসাম্বি খাওয়াতে পারেন, তাহলে আমাকে আরো ১ নম্বর দেয়া হবে। এটা মোটেও কোন কঠিন ব্যাপার ছিল না। আমার বিমান কর্মকর্তা চাচার সুবাদে আমাদের বাসায় প্রায়ই মুসাম্বি সহ অনেক বিদেশী ফল আসত। পরের দিনই আম্মু মুসাম্বি নিয়ে টিচার্স রুমে গিয়ে উপস্থিত। আর আমার নম্বর ৯২ থেকে বেড়ে ৯৩ হল।

বানিয়াজুরি কোন মফস্বল নয়, একেবারেই অজপাড়াগাঁ। একটা মাত্র প্রাইমারী স্কুল। আর ছাত্র-ছাত্রীরাও পার্ট-টাইম। অর্থাৎ, ধানচাষ বা ধান-কাটার মরসুমে এরা স্কুল করেনা, তারপর আবার এসে ক্লাসে যোগ দেয়। ফলাফল- সবাই মোটামুটি ১টা ক্লাস পাস করতে গড়ে ২/৩ বছর সময় নেয়। এমনতর সহপাঠী(!)দের সাথে পড়ালেখা করা খুবই চ্যালেন্জিং ব্যাপার। ক্লাসে প্রথম বেঞ্চিতে না বসলে ব্ল্যাকবোর্ড দেখা যায়না। আর ক্লাসের বেঞ্চিগুলোও এত দৈত্যাকৃতির ছিল, যে আমি অনায়াসেই বেঞ্চির নীচে দিয়ে আসাযাওয়া করতাম। হিসু লাগলে আমার কখনো সহপাঠীদের বিরক্ত করতে হতনা।

প্রাইমারি স্কুলে আমার দ্বিতীয় সপ্তাহ। ক্লাস চলাকালে প্রথমবারের মত আমার হিসু পেল। ক্লাস নিচ্ছেন সিরাজ স্যার। (সবচেয়ে কড়া টিচার। সব্বাইকে খুব পেটাতেন ইয়া-মোটা একটা বেত দিয়ে। আমার বাবা গ্রামের এত বড় অফিসার, তারপরও আমার মাথায় একবার ফুটবল দিয়ে আঘাত করেন!) আমি ভয়ে ভয়ে স্যারকে বললাম, ‘স্যার! হিসু লাগসে!’ স্যার ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকালেন। ‘কি লাগসে?’ ‘হিসু...’ স্যার কিছুতেই বুঝতে পারলেননা। বারবার আমি ‘হিসু, হিসু’ করতে থাকলাম, আর স্যারও বারবার আমাকে জিজ্ঞেস করতে থাকলেন। ততক্ষণে আমার প্রাণ যায় যায়। ক্লাসের এতগুলো মেয়ের সামনে যদি প্যান্টে হিসু করে দেই, তাহলে তো মানইজ্জত বলে আর কিছু থাকবেনা! প্রাণপণে হাত দিয়ে ওটা চেপে ধরলাম, যাতে কিছুতেই হিসু না বেরোয়! তখন স্যার বুঝলেন। ‘ও! প্রস্রাব করবা! যাও, যাও!’ আমিও পড়ি কি মরি করে ছুটলাম। এরপর থেকে আর কখনো স্কুলে ‘প্রস্রাব’কে ‘হিসু’ বলিনি।

আমি কোনভাবেই আমার দৈত্যাকৃতির সহপাঠীদের সাথে কোন খেলায় এঁটে উঠতাম না। ফলে, আমার টিফিন পিরিয়ড কাটানোর একমাত্র উপায় ছিল সহপাঠিনীদের শরণাপন্ন হওয়া। যতদূর মনে পড়ে, আমি মূলত ওদের সাথে ফ্রিসবি খেলতাম। মাঝে মাঝে অকারণে মাঠের মধ্যে ছুটোছুটি করতাম, ছোঁয়াছুঁয়ি টাইপের কিছু একটা খেলতাম বোধ হয়। এর মধ্যেই একদিন এক বান্ধবী আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল; আমি হাঁটুতে চোট পেলাম। সবাই আমাকে ধরাধরি করে হেডস্যারের কাছে নিয়ে গেল, আর সমস্বরে ওই মেয়ের নামে নালিশ জানাতে থাকল। সে সময় আমার আম্মুও টিচার্স রুমে উপস্থিত ছিলেন।

হেডস্যার আমাকে খুব স্নেহ করতেন। তাঁর অন্যতম শখ ছিল আমাকে বিভিন্ন ইংরেজী শব্দের অর্থ জিজ্ঞেস করা। আমি যখন সেগুলোর উত্তর একটা একটা করে দিতে থাকতাম, তখন তাঁর আনন্দের সীমা থাকত না। তিনি আমাকে নানা রকম প্রশ্ন করতেন, আর আমার শিশুসুলভ উত্তর শুনে খুব আনন্দ পেতেন। এবারও তিনি আমাকেই প্রশ্ন করলেন: ‘বলোতো অনীক! ওকে কি শাস্তি দেওয়া যায়?’ অনেক চিন্তা করেও কোন উপযুক্ত শাস্তির কথা মনে আনতে পারলাম না। শেষে বলে বসলাম, ‘এইবারের মত মাফ করে দেন স্যার!’ এরপরে শুধু মনে আছে, হেডস্যারের গগনবিদারী উচ্চৈস্বরের হাসি। কিংকর্তব্যবিমূঢ় আমি আম্মুর দিকে চেয়ে দেখলাম, আম্মুও হাসছে মিটিমিটি।

একদিন বাংলা ক্লাসে এক ম্যাডাম (নাম ভুলে গেছি) পাঠ্য বই থেকে প্রশ্ন করলেন, ‘তোমার বাড়ির পাশ দিয়ে যে নদী বয়ে গেছে, তার নাম কি?’ কেউ উত্তর দিতে পারল না। সবাই ত্বরা ব্রীজের নাম জানে, কিন্তু ব্রীজের নিচের নদীটার নাম কেউ জানেনা! আমি উত্তর দিলাম, ‘ম্যাডাম, কালীগঙ্গা নদী!’ ম্যাডাম বোধ হয় আমার উত্তর শুনে একটু অসন্তুষ্ট এবং অপমানিত বোধ করলেন। এ গ্রামের মেয়ে তিনি। আমি ছাড়া ক্লাসের সবাই এখানকার স্থানীয়। অথচ কেউ পারলনা এ উত্তর দিতে! মেঘের মত কাল মুখ করে আমাকে নির্দেশ দিলেন ক্লাসের সবার কান মলে দিতে। আমি তো মরে গেলেও এ কাজ করতে পারব না! চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম। কোন কুক্ষণে যে এ প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়েছিলাম! শেষে ম্যাডাম শাসালেন, যদি আমি এটা না করি, তাহলে সবাইকে বলবেন একবার করে আমার কান মলে দিয়ে যেতে! ওই অপমান আমার সইবেনা! শেষে আমি ধীরে ধীরে উঠে এসে একে একে গোটা পঞ্চাশেক ছাত্রছাত্রীর কান মলে দিলাম। তখন যেন আমি লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যাচ্ছিলাম। বাসায় ফিরে আম্মুকে এ কথা জানাতেই তিনি পরের দিন স্কুলে তুলকালাম কান্ড করলেন। যে ছেলেকে আজ পর্যন্ত তিনি উঁচু স্বরে কথা বলা শেখাননি, সে পুরো ক্লাসের কান মলে দিয়েছে- এটা তিনি মেনে নিতে পারেননি।

স্কুলের ধারে একটা নদী ছিল। হয়ত সেটা নদী নয়, একটা খাল কিংবা বিল মাত্র। কিন্তু আমার কাছে ওটা নদীই। সে নদীর কিনারে বসে বসে ঝিরঝির হাওয়া প্রাণভরে উপভোগ করতাম। আমার সামনে দিয়ে চলে যেত বালিভর্তি ডুবুডুবু ইঞ্জিন নৌকা। মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখতাম আর অবাক হতাম- নৌকাগুলো ডুবছেনা দেখে। কিছু পালতোলা নৌকা, ডিঙি নৌকা আর যাত্রীবাহী ইঞ্জিন নৌকাও চলত। গ্রাম্য বালক-বালিকার অবাধ সাঁতার; ত্রিকোণ বাঁশের ফ্রেমে তৈরি জালে জেলেদের মাছ ধরা। এ অপূর্ব শিল্পকর্মের অবতারণা বুঝি শুধুই আমার জন্যে। আমার আশেপাশের সবকিছু সে শিল্পকর্মের অংশ। একটা দিগন্তজোড়া ক্যানভাসে রংবেরঙের ড্রয়িং। আমি সবকিছুর মাঝে বসে আছি একমাত্র দর্শক!

খুব ভয় পেতাম বর্শা-নিক্ষেপ খেলাটাকে। গ্রামের হাই-স্কুলের ভাইয়ারা আমাদের মাঠে এসে মাঝে মাঝে এ খেলা প্র্যাক্টিস করত। সে সময় আমাদের স্কুলঘর থেকে বের হওয়া মানা ছিল। দরজায় দাঁড়িয়ে সভয়ে দেখতাম, কিভাবে আসুরিক শক্তিতে তারা আকাশের দিকে ছুঁড়ে দিচ্ছে সে বর্শাগুলো। অনেক্ষণ ধরে বাতাস কেটে কেটে দূরে কোথাও গিয়ে মাটিতে গেঁথে যাচ্ছে সেগুলো। নিষেধ না থাকলেও, আমি কখনোই সে সময় মাঠে যাবার সাহস পেতাম না!

বানিয়াজুরি গ্রামে আমার শৈশব কেটেছে। অনেক কিছুই হয়ত মনে নেই। তবে মনে আছে সিদ্দিক নামের কুৎসিৎ চেহারার বাড়িওয়ালা, তার বোন পরম স্নেহশীলা আঞ্জু আপু (যতদূর মনে পড়ে- তার কাছে আমি প্রথম আরবী শেখা শুরু করি), আর ডাইনি বুড়ি ‘আঞ্জুর মা’। আঞ্জুর মা নামক মহিলাটি আমাদের পরিবারের অনেক দেখভাল করেছেন। আমাকেও অনেক আদর করতেন। কিন্তু, কেন যেন আমি রুপকথার গল্পের কুটিল ডাইনি বুড়ির সাথে তাঁর চেহারার মিল খুজে পেতাম। কোনদিন তাঁর সাথে আমার সখ্যতা হয়ে ওঠেনি। আমার বাবা খুব ভাল মুরগীর বাচ্চার ডাক নকল করতে পারতেন। এক রাতে তিনি এই ডাকে আঞ্জুর মা-কে কনফিউজ্‌ড করে দিয়েছিলেন। সে বুড়ি ঘর থেকে বেরিয়ে এসে হারিয়ে যাওয়া মুরগীর বাচ্চা খুঁজতে শুরু করে দিয়েছিল!

আরো মনে আছে রঞ্জিৎ কাকা, রতন কাকা, এবং তাঁদের পুরো পরিবার। পুরো গ্রামে আমার সবচেয়ে পছন্দের দু’টি জায়গা ছিল রঞ্জিৎ কাকা আর অমূল্য কাকার বাসা। পুজোর দিনগুলোতে আমি সারাদিন এ দুটো বাসায় কাটাতাম। সব সম্পন্ন হিন্দু বাড়িতেই ছিল ব্যাক্তিগত মন্দির। মুগ্ধ হয়ে দেখতাম কারিগররা কিভাবে দক্ষ হাতে তুলির আঁচড়ে মূর্তির গায়ে ফুটিয়ে তুলছে চোখ-নাক-মুখ! নিছক কাদামাটির মূর্তি পরিণত হচ্ছে দশভূজা দূর্গা কিংবা বিরাট শিশু গণেশে। মুসলমান হওয়ায় আমার মন্দিরে এবং রন্ধনশালায় প্রবেশ নিষেধ ছিল। রন্ধনশালার প্রতি কোন আগ্রহ ছিল না মোটেই। কিন্তু সুযোগ পেলেই মন্দিরের প্রবেশপথে দাঁড়িয়ে পর্দা সরিয়ে দেখতাম দেব-দেবীদের। গণেশ দেখে মুগ্ধ হতাম, আর কালীমা কে দেখে শিউরে উঠতাম। সব হিন্দু বিয়েতেই নিমন্ত্রণ পেতাম আমরা। কিন্তু, কোন মাংস-জাতীয় জিনিস খাওয়া ছিল নিষেধ, হালাল-হারাম প্রশ্নে। এ ব্যাপারটা বুঝতে পেরে রঞ্জিৎ কাকা পরবর্তীতে মুসলমান কসাইকে গিয়ে মুরগী আর ছাগল জবাই করাতেন প্রত্যেক অনুষ্ঠানে।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার-পুত্র অমূল্য কাকা ভেনাস জুয়েলার্সের মালিক। রঞ্জিৎ কাকাও সেখানেই চাকরি করছেন আমার বাবার অধীনে চাকরির মেয়াদ শেষ হবার পর থেকে। রতন কাকা আমার জীবনের সুপারহিরো। রঞ্জিৎ কাকার ছোট ভাই। সম্ভবত স্কুল-কলেজের কোন একটা জায়গায় এসে পড়ালেখার পাট চুকিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর প্রধান কাজ ছিল আমাকে বাইসাইকেলের ক্যারিয়ারে বসিয়ে পুরো গ্রাম টইটই করে ঘুরে বেড়ানো। রতন কাকার চোখ দিয়ে আমি প্রথমবারের মত জগৎটাকে দেখতে শুরু করি। মটরশুঁটির ক্ষেতে বসে খোসা ছাড়িয়ে কাঁচা মটরশুঁটি খাওয়া, গজার মাছের দীঘির পাড়ে বসে ঐ পিশাচ-মাছের কল্পনায় শিউরে ওঠা আর বানের পানিতে ডুবুডুবু পুরো গ্রাম ভেলায় চড়ে ঘুরে বেড়ানো। সে স্মৃতি কখনো ভোলার নয়।

মনে আছে বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলাকে কেন্দ্র করে আমাদের গ্রামের ভয়াবহ রায়ট। ভারতের কোথায় কোন একটা মসজিদ ভাঙা পড়ল- সেটাতে আমাদের গ্রামের হিন্দুদের কি দোষ, সেটা আজো বুঝতে পারিনি। গ্রামের সবক’টি সম্পন্ন হিন্দু পরিবার তাদের সব অলঙ্কার আর মূল্যবান জিনিস আমাদের বাসায় জমা রেখে গিয়েছিল। আর ধর্মের ধ্বজাধারী মাস্তানরা যখন লাঠি আর মশাল হাতে পুরো গ্রাম টহল দিচ্ছিল, তখন শুধু মুসলমান বাসা বলেই বোধ হয় আমাদের বাসায় আসেনি একবারও। আসলে দুটো রুম ভর্তি করা টিভি, ভিসিআর, আর সোনা-রূপার অলঙ্কার দেখে তারা কি করত, বলা মুশকিল। সে দুঃসময় কেটে যায় একদিন। ততদিনে গ্রামের সব মন্দির ধুলোয় মিশে গেছে। কিছু কিছু হিন্দু জীবন্ত দাহ হয়েছেন। কারো কারো কাছে শুনেছি অবিশ্বাস্য ভাবে বেঁচে যাবার অদ্ভুত কাহিনী। তখন আমার বয়স সাড়ে পাঁচ। আমার সপ্নের মত সুন্দর শৈশবে বাস্তবতার প্রথম ধাক্কা।

এ গল্পে সাহানা ফুপিদের কথা না বললেই নয়। আমাদের ২য় বাড়িওয়ালা, লেবু কাকা’র স্ত্রী। তাঁদের ছেলেমেয়ে- নাহিদ আপু, তৌহিদ আপু আর ওয়াহিদ ভাইয়া। বাড়ির পাশের পুকুরঘাট আর পুকুর পাড়ের দেবদারু গাছ। আমার সাঁতার শেখার সংক্ষিপ্ত এবং ব্যর্থ চেষ্টা। ডিমে তা-দেয়া মুরগী দেখতে গিয়ে মাথায়-হাতে ঠোকর খাওয়া। বৃষ্টি হলে কাদার মধ্যে ফুটবল খেলা। রাতের বেলায় তৌহিদ আপু কালিজিরা দিয়ে ভুনা খিচুড়ি রাঁধত। কাঁচা পেঁয়াজ আর সরিষার তেল দিয়ে মাখিয়ে খেতাম সে অমৃত। মনে আছে মিশু-কে। মিশু ছিল একটা গরুর বাছুর। পশু হয়েও আমার হৃদয়ের একটা বড় স্থান দখল করে ছিল সে।

মায়া আপা ছিলেন আমার সবচেয়ে প্রিয় টিচার। একদিন তিনি আমাদের বাসায় এলেন তাঁর পরমা সুন্দরী কন্যাকে নিয়ে। স্বর্গ থেকে ডানাকাটা পরী যেন মর্ত্যে নেমে এসেছে। আমি মায়া আপাকে দেখে উৎফুল্ল হয়ে ছুটে গেলাম, আর স্মৃতি আপু কে দেখেই ভর করল রাজ্যের লজ্জা। (মায়া আপার মেয়েকে আমি যে কেন আপু ডাকতাম, সে আমি নিজেই জানিনা!) পর্দার আড়ালে অবস্থান নিলাম। পর্দার ফাঁক দিয়ে বারবার দেখলাম ওকে। যতই দেখি আশ মেটেনা। একটা মানুষ এত সুন্দর হয় কিভাবে? সেদিন আমি কিছুতেই ওর সামনে যাইনি। কেন, জানিনা। কিন্তু কিছুদিন পর স্কুলের বটগাছের নীচে আমাকে পাকড়াও করে স্মৃতি আপু। পালানোর জায়গা না পেয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকলাম। গলা শুকিয়ে কাঠ। ‘তুমি অনীক না? তুমি আমাকে চিন?’ অনেক কষ্টে মাথা নাড়লাম। ওর দিকে তাকালাম না! কিভাবে তাকাবো? ওর দিকে তাকালেই আমার সবকিছু ওলটপালট হয়ে যায় যে! সেদিন অনেকক্ষণ ধরে বটগাছের নীচে বসে স্মৃতি আপু আমার সাথে গল্প করে। ধীরে ধীরে বরফ গলে। স্মৃতি আপু হয়ে ওঠে আমার সবচেয়ে ভাল বন্ধু। জোছনা রাতে রজনীগন্ধার বাগানের পাশে বসে সে গাইতো ‘মায়াবন বিহারিনী হরিণী! গহনস্বপনসঞ্চারিণী!’ সেদিন যেন কোথায় হারিয়ে গেছে। স্মৃতি আপু নিউ ইয়র্কে থাকে। আমেরিকা এসেছি চার মাস হল। এখনো নিউ ইয়র্ক যাইনি। এতদিনে বুড়ি হয়ে গেছে বোধ হয়। ওর মেয়েও এখন ক্লাস টেনে পড়ে। টেলিফোনে আপুকে বলেছি, ‘তোমাকে আমি কখনো দেখতে চাইনা। তুমি এত সুন্দর ছিলা, এখন তোমাকে দেখলে আর ভাল্লাগবেনা’। আমি কিন্তু মুখিয়ে আছি! প্রথম সুযোগ পাওয়ামাত্র স্মৃতি আপুকে দেখতে যাব। কখনো মনে হয়, স্মৃতি আপুই হয়ত আমার জীবনের প্রথম প্রেম! যাহ! সে কি করে হয়? ৫ বছরের একটা ছেলে আবার প্রেমের কি বোঝে? প্রেম কাকে বলে- সেটা কি আজো বুঝতে পেরেছি? মনে হয় না!

মনে আছে ড্যানিয়েল কাকা (কিছুদিন আগে গত হয়েছেন তিনি)। আমাদের কাজের বুয়া মায়া’র মা-র বদ্ধমূল ধারণা, যে খ্রীষ্টানরা কুকুরের মাংস খায়। ড্যানিয়েল কাকাকে তাই দুই চক্ষে দেখতে পারতনা সে। কাকা আসলেই চিৎকার করে বলে উঠত: “কুত্তার মাংস রানতাসি। আসেন, খাইয়া যান!” ড্যানিয়েল কাকা আমাকে এক পা তুলে বিচিত্র ‘ঢ্যাং তোল, ঢ্যাং তোল’ নাচ শিখিয়েছিলেন। আমাদের বাসার কোন ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র নষ্ট হয়ে গেলে আমরা দু’জনে মিলে ওগুলো ঠিক করতাম। তিনি খুব নোংরা থাকতেন। একদিন আব্বু তাঁর কাছে চিরুনী চাইতেই তিনি বলে উঠলেন, “চুল সাফ করবেন, না চিরুনী সাফ করবেন?”

সে সময় আমার বাবার বস্ ছিলেন আসলাম কাকা। প্রায়ই আমাদের বাসায় আসতেন। তখন কেবল বিয়ে করেছেন। আমি যেন কি মনে করে তাঁকে ‘শশুর’ ডেকে ফেললাম। অনেকদিন পরে তিনি আমাকে কপট হতাশার ছলে বলেছিলেন, “বাবা, অনেক চেষ্টা করেও তো একটা মেয়ে বানাইতে পারলামনা!” অন্যদিকে আমি আবার কঙ্কন মামীকে (আমার সেজ মামী) শাশুড়ী ডাকা শুরু করেছি! ছোটবেলায় তো অতশত বুঝতাম না! কিন্তু, দিয়া-র জন্ম হবার পর থেকে আমি ওই ব্যাপারটা নিয়ে বেশ বিব্রত বোধ করেছি! আজ নির্দ্বিধায় বলতে পারি, কঙ্কন মামী আমার সবচেয়ে ফেভারিট মামী, আর দিয়া আমার সবচাইতে প্রিয় ছোট বোন। আমার জীবনের সহোদরার অভাব পূরণ করেছে সে।

মনে আছে ৯২’এর বন্যা। জ্ঞান হবার পর আমি প্রথম বন্যা দেখলাম। তখন আমাদের বাসা ছিল মালভূমির মত উঁচু একটা জায়গায়। বাসা থেকে বেরোতে হলে ঢাল বেয়ে অনেকটা নীচে নেমে রাস্তায় উঠতে হত। রাস্তার পাশে ছিল একটা ছোটখাট মাঠ, মাঠের একপ্রান্তে একটা আমগাছ। আরেক পাশে একটা প্রকান্ড গাছের গুড়ি, ব্যাঙের ছাতা দিয়ে ঢাকা। আর ছিল ছোট্ট একটা ডোবা। সে রাতে আমাদের বাসায় অনেক মেহমান আসার কথা। ওদের আসতে দেরি হচ্ছিল দেখে আমাকে আম্মু খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিলেন। মনে আছে, ঘুমোনোর আগে বারান্দার গ্রীল দিয়ে মুখ বের করে ঠান্ডা বাতাস উপভোগ করেছিলাম। আর আলো-আঁধারির খেলায় দেখেছিলাম বাসার সামনের ছোট্ট মাঠটাকে। মাঝরাতে হাসির কলরোলে ঘুম ভেঙে গেল। চোখ কচলে বিছানা থেকে নেমে বসবার ঘরে এসে দেখলাম মেহমানদের সমাগম। কিছুক্ষণ আমার প্রিয় মানুষগুলোর কোলে বসে থেকে হেঁটে হেঁটে চললাম বারান্দার দিকে। বাইরে তাকিয়ে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারলাম না! চারদিক পানিতে থৈথৈ করছে! তিন-চার ঘন্টার মাঝে এত পানি কিভাবে কোথা থেকে এল, জানিনা। সেদিন জানলাম, বন্যা কাকে বলে। কিছুদিন পরে বাড়ির সিঁড়ির সামনে একটা কচ্ছপকে হামাগুড়ি দিতে দেখেছি। জীবনে প্রথম কচ্ছপ দেখলাম। নদীর পানি উপচে উঠে লোকালয়ে চলে এসেছে। তার সাথে নিয়ে এসেছে তার বিচিত্র জীববৈচিত্র! কিছুদিনের মধ্যেই রাজমিস্ত্রী ডেকে ঘরের সব দরজায় প্রায় দেড়ফুট উঁচু সিমেন্টের দেয়াল তুলে দেয়া হল বন্যার পানি আটকানোর জন্য। এদিকে ল্যাট্রিন উপচে বেরিয়ে আসছে দুর্গন্ধময় নোংরা পানি। সে দিনগুলি খুব ভয়াবহই ছিল।

একদিন আম্মু খুব অসুস্থ ছিলেন। আমাকে রোজকার মত জোর করে মেরে ধরে খাওয়ানোর চেষ্টা করছিলেন। আজ যেহেতু তাঁর গলায় আজ জোর কম, আর আমার পিছু পিছু দৌড়াতেও পারছেন না, তাই আমিই জয়ী হলাম। কোন কথা না শুনে এক দৌড়ে বেরিয়ে গেলাম বাইরে। পেছন থেকে সিঁড়ির ওপর দাঁড়িয়ে আম্মু ডাকছিলেন- ‘অনীক! অনীক!’ কিছুক্ষণ পরে ফিরে এসে দেখি আম্মু সেই সিঁড়ির ওপর সংজ্ঞাহীন পড়ে রয়েছেন, আর কিছু প্রতিবেশিনী তাঁর মাথায় পানি ঢেলে দিচ্ছেন। আম্মু সেবার সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত আমি দারুণ অপরাধবোধে ভুগেছিলাম।

একদিন হঠাৎ বাসার বারান্দায় আলনা’র নীচে একটা কেঁচো-আকৃতির বস্তু দেখা গেল। ভাল করে দেখতে না দেখতেই সেটা দুরন্ত বেগে কোথায় যেন মিলিয়ে গেল! অভিজ্ঞজনেরা বললেন, ও গোখরো সাপের বাচ্চা! সেটাকে পুরো বাড়ি তন্নতন্ন করে খুঁজে মেরে ফেলা হল। কোন না কোন ভাবে একটা বাচ্চা গোখরো হয়তো বাসায় এসে ঢুকেছিল। কিন্তু, সবার টনক নড়ল যখন আমি খেলতে খেলতে খাটের নিচে দ্বিতীয় গোখরো-শাবক আবিষ্কার করলাম! সেদিনই ওঝা ডেকে আনা হল। সে ওঝা এসে বাড়ির মেঝের চাড় তুলে ফেলল। দেখা গেল, মেঝের নীচের গর্তে চার চারটি ডিম। তিনটি ফুটে বাচ্চা বেরিয়েছে, আরেকটি নষ্ট। গুণে গুণে তিনটি সাপের বাচ্চা মেরে ফেলেই তবে ক্ষান্ত হলেন গ্রামের গুরুজনেরা।

আমাকে ঠিকঠাক কায়দা, আমপারা, এবং তারপর কোরান শরীফ পড়া শেখানোর দায়িত্ব ততদিনে বানু আপুর কাছে ন্যস্ত হয়েছে। বানু আপু সম্ভবত মাদ্রাসার ছাত্রী ছিল। যখন মানিকগঞ্জ থেকে বাবার এনজিও’র কার্যক্রম শেষ হয়ে যায়, এবং বাবার পোস্টিং নাসিরনগরে হয়, তখন আমি অনেককে কাঁদতে দেখেছি। সবার আগে কেঁদেছিল বানু আপু। যেদিন থেকে সে এই খবরটি পায়, সেদিন থেকে আমাকে আর আরবী পড়ায়নি সে। সারা দিন এসে আমাদের বাসায় বসে থাকত। থেকে থেকেই কাঁদত। আমাকে ও অনেক আদর করত। বিদায়ের দিন আমার হাতে একটা খাতা ধরিয়ে দেয়। খাতাটায় সে অনেকদিন ধরে আরবী পড়ার সব নিয়মকানুন লিখেছে। যেদিন আমাদের চলে যাবার খবর পেয়েছে- সেদিন থেকে। আমি নাসিরনগরে বিভিন্ন মসজিদের একাধিক ইমাম-মুয়াজ্জিন তথা হুজুরদের কাছে আরবী শিখেছি। কিন্তু, সবসময় আমার সম্বল ছিল ওই খাতাটি। পড়তে গিয়ে কোথাও সন্দেহ হলেই খাতাটি উল্টে নিয়মগুলো দেখে নিতাম। কিভাবে কোথায় খাতাটি একদিন হারিয়ে যায়, জানিনা। আমেরিকা আসার আগে বানিয়াজুরি গিয়েছিলাম। বানু আপার হদিস আর মিলবে কোথায়? বাকি মানুষগুলোও যেন কেমন বদলে গেছে। ১৭ বছর তো আর চাট্টিখানি কথা নয়! কিন্তু অবাক করা ব্যাপার হল, আমি সেখানে গিয়ে আমার শৈশবের গন্ধ পেয়েছি। ওই কয়েক ঘন্টা যেন এক লহমায় শেষ হয়ে গিয়েছিল। একঝুড়ি ভালবাসা নিয়ে ঢাকায় ফিরেছিলাম।

বানিয়াজুরীতে আমার শৈশবের ৪-৫ বছর কেটেছে। ৬ বছর বয়সে আমরা বানিয়াজুরী ছাড়ি। কাজেই, আমার স্মৃতিতে হয়তো শুধু শেষের দুই-আড়াই বছর আছে। এর আগের কিছু মনে নেই। কিন্তু সে স্মৃতি আমার সারা জীবনের পুঁজি। জীবন চলার পথে অনেক জায়গায় থেকেছি। অনেক মানুষের সাথে আত্মার বন্ধনে জড়িয়েছি। আজ আমার অনেক রক্ত-সম্পর্কের আত্মীয়ের অভিযোগ, যে আমি তাঁদের কাছ থেকে দূরে দূরে থাকি কেন? কি করে বোঝাই? একেবারেই অনাত্মীয় বহু মানুষ তাদের নিঃস্বার্থ ভালবাসায় আমার হৃদয় কানায় কানায় ভরিয়ে তুলেছে বছরের পর বছর। সে হৃদয়ের আর কোন স্থান অবশিষ্ট নেই! যদিওবা থেকে থাকে, শহরের কুটিল, স্বার্থপর এবং অসম্ভব জটিল মানসিকতার মানুষগুলোকে আমি কোনভাবেই সেখানে জায়গা দিতে পারবনা! কারণ, তাহলে তা আমার মায়া আপার অপমান! সে আমার রতন কাকার অপমান! সেটা হবে আমার নিজের অস্তিত্বের প্রতি অপমান!
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে অক্টোবর, ২০১১ রাত ৯:৪৫
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×