বাংলাদেশে এক সময়ে এমন সব বণ্ণপ্রাণী ছিল যে আফ্রিকা ও বাজিমাত। বাঘ, হাতি, বনগরু, নীলগাই, গন্ডার, চিতাবাঘ, কুমির, হায়না ইত্যাদি। সিংহের কথা বলবেন তো ওদেঁর কি বাঘ ছিল ? আর কয়েকটি বাদে বেশিরভাগ আফ্রিকান দেশে এক প্রকারের বেশি গন্ডার ছিল না আর এক বাংলাদেশে ছিল তিন প্রকারের গন্ডার। ভারতীয়, যাভান আর সুমাত্রাণ।আর পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো কুমির এর কথা নাই বা বললাম। এক'শ বছর আগেও গভীর বনগুলোতে ছিল এসকল প্রাণীর বাস।
কিন্তু এ সব কিছুই এখন অতীত। নীলগাই চলে গেছে, গন্ডার হারিয়ে গেছে আর হায়না বলতে বই পত্রে '1971 পাক হানাদার বাহিনী' কে বুঝি। আগের জৌলুস ও নেই।এখন বেশিরভাগ বন গুলোতে সাধারণ প্রাণী বলতে বানর, বেজী, কাঠবিড়ালী বা শিয়াল যা আপনি মফস্বল এলাকাতেই মাঝেমধ্যে পাইতে পারেন। তাই আমার কাছে এ সকল 'বণ্ণপ্রাণী অভয়ারন্ন' ঢং মনে হয়। বাড়ীর আঙিনার বেজী দেখতে নেশনাল পারক যাব! বুঝতেই পারছেন আমি কঠিন পাখি প্রেমীও নই তাই যে বনেই যাই প্রথমে গাইড কে প্রশ্ন করি গভীর বনের বিখ্যাত চিতাবাঘ,ভল্লুক নিয়ে আর বেশিরভাগক্ষেত্রেই উত্তর আসে, 'ভাইজান ওইগুলা তো অনেক , , আগেই , , (!)
তবে সবই তো আর গায়েব হয়ে নি। এখনো কিছু গভীর বনের বণ্ণপ্রাণী মহাকষ্টে টিকে আছে। তাদের নিয়েই এ লেখা।
একটা জিনিস বলে রাখা ভাল বাঘ, হাতি ও উল্লুক(লাওয়াছড়া) বাংলাদেশের সবচেয়ে আলোচিত প্রাণীগুলোর মধ্যে পড়ে। এদের কথা না টেনে বরং একটু কম আলোচিত অথচ আরও বেশি বিপন্ন বণ্ণপ্রাণীগুলোর বর্তমান অবস্থা আলোচনা করি
(i)চিতাবাঘ।
বাংলাদেশে এক সময়ে ভালো পরিমাণে থাকলেও বর্তমানে প্রায় হারিয়ে গেছে। নব্বই দশক থেকেই খুব দুর্লভ। তাই অনেকে এটাকে বিলুপ্তির খাতায় তুলতে এক পায়ে খাড়া। কিন্তু আমি মনে করি এরা এখনো বিলুপ্ত না। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে এখনো অতি অল্প সংখ্যক চিতাবাঘ আছে। মূলত সেখানেও বেশিরভাগ অংশে বিলুপ্ত। সুধুমাত্র সাঙ্গু,মাতামুহারি আর কাসালং এলাকাতে দেখা মেলে। বছর তিনেক আগে পায়ের ছাপ দেখা যায় কাসালং এ আর গত বছর এ কেমেরা ট্রেপে বান্দরবানে।(ছবি-১)
সিলেটের রেমা কালেঙ্গাতে থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে আমার ধারণা এগুলো মৌসুমী চিতাবাঘ। হঠাৎ হঠাৎ আস্তানা গেড়ে খাবার না পেয়ে আবার ভারতে চলে যায়।(সেখানের কিছু স্থানীয়দের সুত্র মতে)
(ii)সাম্বার হরিণ।
বাংলাদেশে পাওয়া যায় এমন হরিণ প্রজাতিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড়ো হলো সাম্বার। দুই দশক আগেও সিলেট, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের বনগুলোতে বিচরণ করত। বর্তমানে সিলেট থেকে হারিয়ে গেছে। চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের কিছু বনাঞ্চলে এরা টিকে আছে। পার্বত্য চট্টগ্রামেই বেশি। মূলত এদের শিংএর কদর এশীয় হরিণ গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি। তাই এগুলোর উপর শিকারীরা বিশেষ নজর রাখে। আবার আদিবাসীরাও এদের নির্বিচারে শিকার করে থাকে। বলা যায় দেয়ালে ট্রফি হিসেবে টাঙ্গিয়ে রাখার জন্য এ জাতীয় হরিণ এর শিং-মাথার 'মূল্য' বেশি।
চলবে,,,,,
(এটা আমার প্রথম ব্লগ। তাই কোন ভুল হয়ে থাকলে দুঃখিত । )
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৩৭