দূরের মসজিদ থেকে মাগরিবের আযান কানে ভেসে আসছে, ঘরে ফেরা পাখির মতো কোচিং শেষে ঘরে ফিরছে অবণী।
গলির মুখে বখাটে তিনটাকে দেখে চোখে মুখে চিরচেনা বিষন্নতার প্রতিচ্ছবি।
প্রতিনিয়ত অকথ্য কথা শুনতে শুনতে আজকাল সয়ে গেছে ,খুব একটা খারাপ লাগে না; কিন্তু অবণী ভেবে পায় না প্রতিদিন এগুলো বলে বখাটে গুলো কি আনন্দ পায়।
ঘরে আছে দুঃসম্পর্কের এক মামা। বাবা মারা যাওয়ার পরপরই এই মামাই তাদের দেখভালো করছেন।
অবণীর বয়স বাড়ার সাথে সাথে মামার মাঝেও কি যেন এক পরিবর্ব্তন এসেছে তা কেবল অবণীই বুঝতে পারে;অন্য কেউ বুঝে না।
পুরুষেরা কি চায় তা বুঝার অসাধারণ এক ক্ষমতা স্রষ্টা কেবল মেয়েদেরই দিয়েছেন,অবণীও ব্যতিক্রম নয়;সবই বুঝতে পারে।
অন্যান্য সব মেয়েদের মতোই অবণীর দুর্বলতাও সামাজিক দ্বায়বদ্বতাতেই,এই দ্বায়বদ্বতার দেয়াল ভেদ করার মতো ক্ষমতা অবণী কেন কোন মেয়েরই নেই।
আজ ছুটির দিন অবণীর কোচিং নেই।
মেয়েদের অলস বিকেলগুলো কাটে কবিতা লিখে, জানালার গ্রিলে কিংবা ছাদের রেলিং ধরে স্নিগ্ধ নীল আকাশ দেখে।
আকাশ দেখার মাঝেও একরাশ ভালোলাগা কিংবা কষ্ট লুকিয়ে থাকে,আকাশ দেখতে দেখতে মাঝে মাঝে কাউকে খুব মনে পড়ে যায়।
অনির কথা এখন খুব হচ্ছে অবণীর। জীবনের প্রথম প্রেম আর যাই হোক চিরতরে ভুলা যায় না।
অনিকে বলতে না পারা অনেক কথা জমে আছে অবণীর বোবা কুঠুরিতে,কিন্তু কুঠুরির দেয়াল কোনদিন ভেদ করা হয়ে উঠেনি।
সহজ সরল চেহারার পেছনেও অনির অন্য একটি চরিত্র কেউ না দেখুক অবণী ঠিকি দেখেছে।
আজো বদ্ব দুপুরের বন্ধ ঘরের আবেগ অবণীকে তাড়া করে।
সেদিনের কান্না বালিশ ব্যতিত কেউ শুনেনি;কেউ না। ।
অলস বিকেল ফুরিয়ে যায়।
রাত ভোর হয়।
এখনো অন্ধকার রাতে অবণী চোখের কোণে জল জমা করে,আবার ভোরের আলোয় সেই জল মুছে ফেলে হাসিমুখে ব্যস্ততায় মিশে যেতে হ্য়।একটি নীরব রাত অনেক কথা বলে।
বাবা না থাকা পরিবারগুলোর মেয়েদের বিয়ে একটু আগেভাগেই হয়ে যায়।
মেয়েগুলো সুন্দরী হলে বিয়ের বাজারে খুব একটা অপেক্ষা করা লাগে না,অবণীকেও অপেক্ষা করতে হলো না।
অনির কথা ভাবতে ভাবতে কাক ডাকা দুপুরে ঘুমের ঘরে তলিয়ে গেছে অবণী,
তাকে জড়িয়ে ধরে আছে তার মামা...
কোন পশুর হিংস্রতা অবণী না দেখলেও বদ্ব ঘরে সেদিন দুপুরে মামার হিংস্রতা সে ঠিকি দেখেছিল।
কিন্তু কিছুই করার ছিল না।
এত কিছুর পরও অবণীকে আবারো কুমারী সাজতে হবে।
কারো বউ সাজতে হবে।
নতুন করে হাসতে হবে।
অবণীর হাসিমুখ আজকাল দেখা যায় না,তবে সে ভালো আছে।
শুধু দুপুর হলেই একটু ভয় পায়;ঘুমের ইন্জেকশানে আবারও শান্ত হয়ে উঠে।
শেকল ভেদ করে মামা কিংবা অনি কেউ কাছে আসতে পারে না;কেউ না। । ।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:৫৭