মাইল দেড় এক হাঁটার পর দূরে কিছু ঝাপসা হলুদ বাতির আভাস পাওয়া যাচ্ছে, হয়তো ছোট্ট একটি বাজার কিংবা দু চারটে ঘরবাড়ি।
অনিকেতের হাত ঘড়িতে তখন ১০ বেজে ৪৭
শীতের রাতে গ্রামীণ পরিবেশে এই সময়টাকে মধ্যরাত বলা যেতেই পারে।
আরো মিনিট ১৫ হাঁটার পর হলুদ বাতিগুলো চোখে স্পষ্ট ভাসছে, সেই সাথে অনিকেতের মনে আশার আলোও ঝলঝল করছে।
লাস্ট ট্রেন মিস করে পথহারা পথিকের মতোই ক্লান্ত হয়ে ভবঘুরে অনিকেত।
ছোট্ট এ স্টেশনে থাকার মতো কোন ব্যবস্থা নেই!
নেই পকেটে তেমন টাকাও।
হলুদ বাতি জ্বালানো মানুষগুলোই তার এই রাতের শেষ ভরসা।
দরজায় কড়া নাড়তে নাড়তে অবশেষে মধ্যবয়সী এক যুবক বেরিয়ে আসলো।
রাত্রি যাপনের কথা উঠতেই সোজা সাপটায় অনিকেতকে না করে দিল।
অসহায় অনিকেতের মনে মানুষের জন্য ঘৃণা জন্ম নিল।
মধ্যবয়সী সেই মানুষটারই বা কি করার ছিল??
হয়তো তার পাশের গ্রামে একইভাবে কাউকে আশ্রয় দিয়েছিল কিন্তু ভোরের আগেই বেরিয়ে আসলো ধর্ষক,ডাকাত কিংবা খুনী হয়ে।
মানুষের প্রতি মানুষের বিশ্বাসগুলো আজকাল জাদুঘর কিংবা রুপকথার গল্পে পাওয়া যাবে।
বৃষ্টির মতো করে কুয়াশা পড়ছে, বাড়ির পাশেই মসজিদ।
অনিকেত তো অন্য ধর্মের!!
মসজিদে যাওয়া উচিত হবে কি?
নানা প্রশ্ন খেলা করে অনিকেতের মনে।
বিবেক বাঁধা দিচ্ছে কিন্তু পরস্থিতি বাধ্য করছে।
রাতের এমন গল্পগুলো অনেকেরই অজানা।
কালো গাঢ় কালিতে লেখা সেই পৃষ্ঠার কথা কেউ পড়ে না।
এই রাত কাউকে খুনী বানিয়েছে
কেউ আততায়ীদের হাতে এই রাতে খুন হয়েছে।
কেউ এইরাতে কাউকে পাশে পেয়েছে
কেউবা হারিয়েছে।
উদ্বাস্তু সেই ছেলেটা জানে না ভোরের দেখা পাবে কিনা!!
পথহারা পথিকের কাছে এই রাত যেন কপালের ভাঁজের কারণ।
কত স্বপ্ন জন্ম নেয় এই রাতে
কত স্বপ্ন স্বপ্নহারা হয় এই রাতে।
ভোরের সাথে সাথে বিশ্বাস গাঢ় হয় কিন্তু রাতের আঁধারে কোথায় যেন হারিয়ে যায়।
দিনের অপর পৃষ্ঠার গল্পটা মুগ্ধকর না হলেও শিহরিত।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৪২