শীতের রাতে আমার ঘরের দরজায় ঠক ঠক শব্দ হইলো। দশ মিনিট আগে মূত্র বিসর্জন করে এসে কম্বলটা একটু গরম করছি। এই অসময়ে কে আসলো?
- আকবর ? ও আকবর ?
- কেডায়?
- আরে মুই।
- মুই কেডায়?
- মুই আজমল।
আজমল নতুন বিয়ে করেছে। বিয়ের আসরে একদল চ্যাংটা পোলাপাইন এসে হাজির। বাল্যবিবাহ দেয়া নিষিদ্ধ। র্যাব, পুলিশ, সেনাবাহিনী খবর দিবে বলে পাঁচ হাজার টাকায় বিষয়টা রফাদফা করে বিয়ে করেছিলো আজমল ভাই। মাত্র পাঁচদিন আগের কথা।
তা এখন আমার ঘরের দরজায় হামলা করার কি আবশ্যকতা দেখা দিলো?
- কি চাই?
- তোর ভাবিরে ভূতে ধরছে।
- তুমি থাকতে আবার ভূতে ধইরলো কেমতে?
- ইয়ার্কি করিছ না। জলদি আয়।
কি মুশকিল! নয়া বউরে ভূতে ধরতে গেল কেন! টাইমের আর সময় পাইলো না! কম্বল গরম করা কত কষ্টের কাজ ভূত যদি তা জানতো তবে কি এমন করতো? গিয়া দেখতে হয় কি কাহিনী।
- কেরে তুই?
- ভাবী আমি!
- আমি কেরে গোলামের পুত....
- আমি আকবর ভাবি!
- লুইচ্ছা আকবর?
- ভাবি উল্টা পাল্টা কথা কইলেই যে আপনারে ভূতে ধরছে প্রমাণ হইবো - এমন কিছু কিন্তু না।
- চুপ কর হারামজাদা।
ভাবি তো নয় যে মহাকবি! এই অপমানের একটা শাস্তি দেয়া জরুরি। মোল্লা বাড়ির বউ ছবিতে দেখছি ভূতে ধরলে কালা কুত্তার গু, ছাগলের চনা মিক্স কৈরা খাওয়ায়। পদ্ধতি হেইটা অবলম্বন করমু কিনা তাই ভাবতেছিলাম। ভাবনায় ছেদন ঘটাইলো আজমল ভাই!
- এই আকবর
- জ্বী ভাই
- কি দেখলি?
- খুবই খ্রাপ ভাই। কবি ভূতে ধরছে।
- মানে?
- দেখতাছেন না কেমন কবি গাইতেছে। নির্ঘাত বখাটে ভূত হবে।
- তো এখন কি করবি?
- সিস্টেম আছে। নো টেনশন।
বলিলাম কিছু ধুপ জোগাড় করেন। আর একটা ঝাড়ু দেন। আমি ভিতরে থাকবো সবাই বাইরে থাকবেন। ভূতের চৌদ্দ গুষ্ঠী উদ্ধার কৈরা ছাড়মু। নতুন বাড়ি হওয়ায় খুব সহজেই এসবের ব্যবস্থা হয়ে গেল।
ভিতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলাম।ভাবী দেখি আমার দিকে করুণ নজরে তাকাইলো। আমি ঝাড়ু ঘুরাইতে ভাবি ইশারায় ডাকলো।
- কি হইছে?
- দেবর না আমার ভালো। আমার যাইতে দে।
- মানে?
- আমি এ সংসার করতে চাই না। আমার প্রেমিক আছে। আমারে ওর কাছে যাইতে দে।
- আমার আজমল ভাইর কি হইবো?
- আরেক বিয়া করাইছ।
অদ্ভুত! ভাবি নরম সুরে আমারে ব্ল্যাকমেইল করার ট্রাই করতাছে।
- আমারে লুইচ্ছা কইলেন ক্যান?
- ভূতে ধরলে এমন কইতে হয়।
- পাগলামি না!!
- বিশ্বাস কর ভাই। কোন ভূতে ধরে নাই আমারে। আমি তোরে দশ হাজার টাকা দিবো। তুই আমাকে ভাগতে হেল্প কর। নাহলে ভূতে ধরার অভিনয় করে করে আমি নিজেকে শেষ করে দিবো।
- আইশ্চর্য!
- হুঁ...
- আমি তো জাইনাই গেছি এক্টিং করতাছেন।
- আমি কিন্তু গলায় দড়ি দিমু।
- হুর বাল!
মহা মসিবত! একদিকে আমার আজমল ভাই আরেকদিকে আমার ভাবি আর তার শক্তিশালী পেরেম! মুই এহন কিতা করাম! অবশ্য আজমল ভাইর থেকে দশহাজার টাকার গুরুত্ব কিঞ্চিৎ উপরে আছে নাহলে আমি ভাবির শক্তিশালী প্রেমে কখনোই মনের যোগ দিতাম না।
- আপনার প্রেমিক কি করে?
- ঢাকায় বড় চাকরি করে।
- বিয়া, বাসর রাত এতকিছু হওয়ার পরও সে মেনে নিবে আপনাকে?
- ভালোবাসা এসব দেখে না।
- উরি মাহ্!
- হিহিহি! ^_^
- দশ হাজার টাকা রেডী আছে?
- হুম।
- আর ঐ বেক্কল বেডা কই আছে?
- বেক্কল বইলো না, ও আমার জান।
মরে যাই! মরে যাই! বুড়া প্রেমিক প্রেমিকাদের ন্যাকামি দেখলে আর বাঁচতে ইচ্ছা করে না।
বাইরে গিয়া আজমল ভাইরে কইলাম
- ভাই অবস্থা খুব খ্রাপ।
- ক্যেরে?
- এমন দুষ্টু ভূত আমি আমার সারাজীবনে দেখা মুভিতেও দেখি নাই।
- কি হবে এখন!
- আল্লাহ্ আল্লাহ্ করেন! বাইরে বসে দোয়া দরুদ পড়েন। সকাল হৈলে বড় কোন হুজুর খবর দিতে হবে।
আমার পকেটে দশ হাজার টাকা। মাথায় আমার মাস্টার প্ল্যান। ভাবির নাগর নাকি বাইরে অপেক্ষা করতাছে। তাকে সাধুবাবা সাজায়া পাঠায়া দেই। সকাল হয়ে গেলে ঘটনা ভেস্তে যাইতে পারে। ঘর থেকে বের হইতেই আজমল ভাই কইলো
- কিরে কই যাস?
- দেখি বড় হুজুররে পাই কিনা।
- আচ্ছা যা।
আমি হাঁটা ধরলাম।এক পর্যায়ে ভাবির নাগররে পাইয়া গেলাম। সে দেখি একেবারে সাধুবাবা সেজে আছে। ইয়া লম্বা দাড়ি, চুল।
তারে প্ল্যান বুঝায়া কৈলাম। তারপর আমি জগিং করতে হাঁটা ধরলাম। ভাবনা আসতে পারে আমি সাথে যাচ্ছি না কেন? মুই কি বেক্কল নাকি! আমি ওরে নিয়া যাই! তারপর সকালে আমার নামে শালিশ বসুক। এই ভন্ড সাধুরে আমি কই পাইলাম!
ভাবির নাগর বাড়িতে যাইয়া ভুজুং ভাজুং কৈরা সবার মন জয় কৈরা নিলো। প্ল্যান অনুযায়ী ভাবি সাধুবাবারে দেইখ্যা চিৎকার! চেঁচামেচি শুরু করছে। সাধুবাবা আজমলরে কইলো
- সাংঘাতিক!
- কি? কি?
- বড়ই সাংঘাতিক! ২২ টা ভূত একসাথে এই মহিলাকে নিতে আসছে।
- বলেন কি!!
- হ্যাঁ! এবং এরা সবচেয়ে শক্তিশালী ভূত; ভূত সম্প্রদায়ের মধ্যে।
- এদের তাড়ানো সম্ভব?
- আমি যখন আসছি তখন নির্ভয়ে থাকুন। সব ভাগবে।
- কি কি লাগবে বলুন।
- বেশিকিছু না। এরা ছুটে যাওয়ার সময় যেন কেউ সামনে না পড়ে। সবাই অন্যঘরে গিয়া দরজা বন্ধ করে রাখুন।
যেই বলা সেই কাজ। ভূতের খপ্পরে হায় কে পড়িতে চায়! সবাই দরজা বন্ধ করে ভিতরে দোয়া দরুদ পড়তে লাগলো। এই ফাঁকে সাধুবাবা ওরুফে ভাবির নাগর আর ভাবি ভাগছে।
ফজরের আযান শেষে আমি হুজুরকে নিয়া বাড়ি ফিরলাম। এসে দেখি আজমল ভাই ঘরের সামনে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।
- ভাই কি হইছে?
- তোর ভাবি আর নাইরে!!
- ইনালিল্লাহ্! কিভাবে মরলো?
- মরে নাই! গায়েব হইয়া গেছে নাকি ভাইগা গেছে বুঝতাছি না।
- আপনারা কৈ ছিলেন?
- তুই যে সাধুবাবা পাঠাইছিলি সে আমাদের কইলো দরজা বন্ধ করে অপেক্ষা করতে এই ফাঁকে সে সহ তোর ভাবি হাওয়া হইয়া গেছে।
- আরে আমি তো কাউরে পাঠাই নাই! আমি তো বলছি হুজুর নিয়া আসবো। মাত্র নামাজ শেষে হুজুর নিয়া আসলাম।
- ওরে আল্লাহরে! আমার বউরে কে নিলো রে...
এরই ভিতর গুঞ্জুন উঠলো আজমল ভাইর বউরে ভূতে নিয়া গেছে, সাধু বাবার সাথে ভাইগা গেছে।
চারমাস পর....
- ভাই মাইয়াডা কেমন দেখলেন?
- পুরাই সুবহানাল্লাহ্!
- বিয়ের তারিখ কি ঠিক করমু?
- আবার জিগায়.....
তবে এই যাত্রায় আর ভুল নয়। মেয়ে প্রাপ্ত বয়স্ক, অন্যের প্রেমিকাও না। আজমল ভাইর সুখী পরিবার হবে আশা করছি।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১১:১৭