একথা আমাদের আলোচনার মাধ্যমে সুস্পষ্ট ভাবে ফুটে উঠেছে যে, বিবাহের গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্যসমূহের মধ্যে অন্যতম একটি উদ্দেশ্যহচ্ছে, মানুষের স্বভাবগত চাহিদার পরিপূর্ণতা অর্জন করা। আর এর জন্য আন্তরিকতা এবং পরস্পর পছন্দের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের দাবী রাখে। এজন্যেই বিবাহের পূর্বে পরস্পর পরিচিতি, একে অপরের ব্যাপারে অবগতির বিধান রাখা হয়েছে, যাতে চিন্তাভাবনা করে ভালভাবে বুঝে-সুঝে চুড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌছা যায়। বিবাহের পর যেন পস্তাতে না হয়। চিন্তা-ভাবনার সুযোগ সহায়তার প্রয়োজনে রমনীকে বিবাহের পূর্বে দেখার অনুমতি দেয়া হয়েছে। ইচ্ছা হলে তাকে দেখে নিতে পারে। অথচ ভিন্ন মহিলাকে দেখা শরীয়তে কঠোরভাবে হারাম করা হয়েছে। কিন্তু বিবাহের পূর্বে দেখার অনুমতি দেয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে-
إذا خطب أحدكم المرأة فإن استطاع أن ينظر إلى ما يدعوه إلى نكاحها فليفعل )سنن ابي داود(
যখন তোমরা কোন মেয়েকে বিবাহের ইচ্ছা করো তাহলে সম্ভব হলে বিবাহের জন্য প্রয়োজনীয় গুণাবলি ভাল করে দেখে নাও। মুসলিম শরীফে আছে যে,
عن أبى هريرة قال كنت عند النبى صلى الله عليه وسلم فأتاه رجل فأخبره أنه تزوج امرأة من الأنصار فقال له رسول الله صلى الله عليه وسلم أنظرت إليها قال لا قال فاذهب فانظر إليها فإن فى أعين الأنصار شيئا (اخرجه مسلم)
এক লোক রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে হাজির হয়ে আরজ করলো যে, আমি আনসারী এক মেয়েকে বিবাহ করার ইচ্ছা করেছি। রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকটিকে উদ্দেশ্য করে বলেন। তুমি কি মেয়েটিকে দেখে নিয়েছ? অর্থাৎ দেখে নেয়া প্রয়োজন। কেননা সাধারণত আনসারী মেয়েদের চক্ষু ত্রুটিপূর্ণ হয়।
এই হাদীসের দ্বারা এটাও বুঝা যায় যে, উভয়ের মধ্যে কোন ত্রুটির বিষয় থাকলে- যে কারণে উভয়ের মধ্যে গরমিল হতে পারে- তা বিবাহের পূর্বেই প্রকাশ করে নেয়া এবং আলোচনা করে নেয়া প্রয়োজন। জানার পর সম্মত হলে পরে তিক্ততার অবকাশ থাকে না অন্যথায় অনাকাঙ্খিত অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে।
দেখার পদ্ধতি
এই হাদীসের বিশদ বিবরণে প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস আল্লামা নবভী বলেন, পছন্দ এবং দেখা-দেখির বিষয় বিবাহের প্রস্তাবের পূর্বে হওয়া উত্তম। আর তা মেয়ের অভিভাবকদের অজ্ঞাতে হওয়া ভালো। যাতে অপছন্দ হলে মেয়েপক্ষের লজ্জা এবং কষ্টের কারণ না হয়। মুহাদ্দিস নবভী লিখেন :
ولم يشترط استئذانها ولأنها تستحي غالبا من الإذن ولأن في ذلك تغريرا فربما رآها فلم تعجبه فيتركها فتنكسر وتتأذى ولهذا قال أصحابنا يستحب أن يكون نظره اليها قبل الخطبة حتى ان كرهها تركها من غير ايذاء بخلاف ما اذا تركها بعد الخطبة
“দেখার জন্য মেয়ের অনুমতির প্রয়োজন নেই। কেননা সাধারণত মেয়েরা অনুমতিদানে লজ্জাবোধ করে, তাছাড়া অনুমতি নেয়া কষ্টেরও কারণ হতে পারে। কেননা যদি অনুমতি নিয়ে দেখার পর পছন্দ না হয় আর বিবাহ না হয়, তাহলে তার অন্তর ভেঙ্গে যায়, এবং কষ্ট অনুভব করে। এজন্যে আমাদের উলামাদের মতে প্রস্তাব দেয়ার পূর্বেই দেখে নেয়া ভাল। তাতে যদি বিবাহ না হয় তাহলে তেমন কোন কষ্টের কারণ হয় না। আর প্রস্তাব করে দেখার পর বিবাহ না হলে কষ্টের বড় কারণ হয়।”