উপসংহারের প্রথমাংশ
১. বেরেটার মুখোমুখি
সরকারি গোয়েন্দা প্রবাল আর হোমস ফটোগ্রাফার এর ঠিক ৬ ইঞ্চি সামনে সাইলেন্সার লাগানো সেমি অটোমেটিক .৩২ ক্যালিবারের বেরেটা ববক্যাটের মালিককে খুব একটা নিরীহ দেখাচ্ছে না। অস্ত্রটার নকশা করেছে যুক্তরাষ্ট্র আর তৈরি করেছে ইতালি। মাত্র ১২৫ মিলিমিটার আকারের এই অস্ত্র ওজনে ৪১০ গ্রাম। ম্যাগাজিনে থাকে ৭টি বুলেট। তবে সেটা এখনকার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে অ্যাড্রেনালিনের ক্ষরণে দ্রুতলয়ে হাতুরিপেটা হৃদপিণ্ডটা জানান দিচ্ছে যে তারা দুজন এখনো বেঁচে আছে। তবে সেটা কতক্ষণ জানান দেবে সেটা নির্ভর করছে বেরেটার মালিকের উপর।
হোফ (হোমস ফটোগ্রাফার) মিনমিনে স্বরে বলল, 'সাইলেন্সারে কিন্তু কাজ হবে না। বাকিরা ঠিকই শব্দ পেয়ে যাবে।'
বেরেটার মালিক মুখটা সংকুচিত করে বলল, 'আমি জানি সাইলেন্সারের কাজ কি। চুপ থাকলেই আয়ু বাড়বে।'
প্রবাল বলতে শুরু করল, 'সাইলেন্সার খুবই সহজ নীতিতে কাজ করে। সহজ উদাহরণ দেই। বেলুন পিন দিয়ে ফুটো করে দিলে প্রচন্ড শব্দে বিস্ফোরিত হবে। কিন্তু যদি আমি এর মুখের দিক খুলে দেই তাহলে আস্তে আস্তে বাতাস বের হয়ে যাবে, খুব একটা শব্দ হবে না। পিস্তল থেকে বুলেট নিক্ষেপের সময় বুলেটের পিছনে থাকা গান পাউডার খুবই উচ্চ চাপের গরম গ্যাসের একটি তড়িৎ প্রবাহ তৈরি করে বুলেটটিকে ব্যারেল নল দিয়ে তীব্র গতিতে বের করে দেয়। বুলেট যখন পুরোপুরি বের হয়ে যায় তখন ব্যাপারটা হয় বোতল থেকে কর্কের ছিপি খুলে দেওয়ার মত। আর তাই বুলেট বেরিয়ে যাবার পর তার পিছনে থাকা গ্যাস যখন তীব্র গতিতে বের হতে থাকে তখন প্রচন্ড শব্দ তৈরি হয়। সাইলেন্সারের কাজ হল বুলেটটা বেরিয়ে যাবার পর গ্যাসকে প্রসারিত হবার জন্য জায়গা করে দেওয়া। এতে চাপ অনেকটাই কমে যায়, শব্দও কম হয়। তবে শব্দ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রন করা যায় না। কিছুটা ভোঁতা বা শিস দেওয়ার মতো শব্দ হয়।'
প্রবাল কথা শেষ করে খানিকটা শ্বাস ছেড়ে বাকি দুজনার দিকে তাকিয়ে বলল, 'কিছু কি ভুল বলেছি?'
বেরেটার মালিক মুখ শক্ত করে দাঁত চিবিয়ে বলল, ‘যথেষ্ট জ্ঞান দিয়েছিস। এবং আমার ধৈর্য্যের বাঁধও সফলভাবে ভেঙ্গে দিয়েছিস। এখন দুটো শিস শুনে ওপারে গিয়ে লেকচার দিতে থাক।’
প্রবাল হোফের বিস্ফোরিত চোখ দেখে বুঝল, সময় শেষ।
প্রারম্ভ
২. শীষের ময়নাতদন্ত
মর্গ থেকে লাশের ময়নাতদন্তের পর প্রাপ্ত ছোট্ট কালো পেরেকমতোন জিনিস হাতে নিয়ে প্রবাল হোফকে বলল, ‘বলতো এটা কি?’
হোফ জিনিসটা নিয়ে বলল, ‘হুম, এটাতো পেন্সিলের ভাঙ্গা শীষ।’
-এই পেন্সিলের শীষের মালিকের বিবরণ লেখ।
-আমি নিশ্চিত আপনি গাঁজা খেয়েছেন।
প্রবাল গম্ভীর স্বরে বলল, ‘লেখো।’
অনিচ্ছা স্বত্বেও হোফ লিখতে শুরু করল।
প্রবাল ভাঙ্গা শীষটা খালি চোখে তারপর আতশি কাঁচ দিয়ে কয়েকবার কাছে-দূরে টেনে নিয়ে দেখে বলল, ‘এই শীষের মালিকের কাছে একটা স্টিলের স্কেল আছে, মার্জিন টানা খাতায় লেখে, পেন্সিল কাঁটার জন্য শার্পনার ব্যবহার করেন না বরং অ্যান্টিকাটার ব্যবহার করেন, দামি এবং ভালো ব্র্যান্ডের পেন্সিল ব্যবহার করেন, বা হাতি...’
-ওফ, অসহ্য। আমি কেবল অকারণে সময়, খাতার পাতা আর কলমের কালি নষ্ট করছি।
প্রবাল অবাক হবার ভান করে বলল, ‘আমি আবার কোনটা বানিয়ে বললাম!’
-স্টিলের স্কেল, মার্জিন, অ্যান্টিকাটার, দামি ব্র্যান্ড কোনটা সঠিক?
-শীষটা আবার দেখ।
আতসী কাঁচ হাতে নিয়ে হোফ বলল, ‘দেখছি...’
-শীষের প্রস্থ বরাবর লম্বভাবে দাগ দেখতে পাচ্ছ?
-পাচ্ছি।
-ওটা স্টিলের স্কেলের সাথে ঘষা লাগার দাগ।
হোফ চোখ না সরিয়ে বলল, ‘প্লাস্টিক কিংবা চাঁচেরও তো হতে পারে।’
-উহু, প্লাস্টিকের স্কেলের ধার অর্ধবৃত্তাকার তাই দাগ অর্ধগোলাকার হয়, স্টিলের স্কেল আয়তকার, বিধায় কিনারা অর্ধ চতুর্ভুজাকার, তাই শীষের উপর দাগও অর্ধ চতুর্ভুজাকার হয়।
-ও, মার্জিনের ব্যবহার?
-বেশ গভীর দাগ, মানে স্কেলের বহুল ব্যবহার, মানে মার্জিনের ব্যবহার।
-আর...
হোফকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে প্রবাল বলতে থাকলো, ‘শীষটাকে দেখ, যদি শার্পনার দিয়ে কাটা হত তাহলে শীষটা মসৃণভাবে সূচালো আকার ধারণ করতো, কিন্তু দেখ শীষটায় লম্বা লম্বা দাগ মসৃণ দাগ রয়েছে লম্ব বরাবর, যা ধারালো ব্লেডেরই ধারণা দেয়। এক্ষেত্রে অ্যান্টিকাটার বা টাচনাইফই একমাত্র উপাদান। সাধারণ ব্লেড হতে পারতো যদি অত সহজে কাটা না থাকতো, এছাড়া যেহেতু দামি ব্রান্ডের পেন্সিল সেহেতু সস্তা কিছু ব্যবহার না করারই কথা।’
-আপনাকে কে বলেছে এটা দামি ব্র্যান্ড?
-পেন্সিলের শীষ তৈরি হয় গ্রাফাইট আর কাদামাটি দিয়ে। গ্রাফাইটের সাথে কাদামাটি মিশিয়ে শীষ অপেক্ষাকৃত নরম বা শক্ত করা যায়। গ্রাফাইট কম, কাদামাটি বেশি হলে শীষ শক্ত হবে, উল্টো করলে হবে নরম। এছাড়াও উত্তাপ নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। যতো দামি ব্র্যান্ড ততো নিয়ন্ত্রিত মানের গ্রাফাইট আর কাদামাটি মিশ্রন। দামি ব্রান্ডগুলো এসব বেশ নিয়ন্ত্রন করে। ভালো ব্র্যান্ডের শীষ সহজে দাগ কাটে, মসৃণ, খসখসে নয়। যেগুলো গাঢ় সেগুলো গাঢ়ই হবে, আর যেগুলো হালকা সেগুলো হালকাই হবে। এইসব গুণাবলী আমাদের হত্যাকারীর শীষের মাঝে রয়েছে। তোমার যদি ব্যবহারের অভিজ্ঞতা থাকে তাহলে শীষ দেখেই না লিখে বুঝে নিতে পারবা। আর দামি ব্র্যান্ডের পেন্সিলগুলোর মাঝে রয়েছে Blick Studio, Caran d’Ache Grafwood , Faber-Castell, Derwent, Staedtler।
-তবে আর যাই গোঁজামিল দিয়ে বোঝান, এটার মালিক যে বা হাতি তা বোঝাতে পারবেন না।
-লেখক বা হাতি নাকি ডান হাতি তা বোঝা যায় লিখতে লিখতে ক্ষয়ে যাওয়া প্রান্ত দেখে। এই শীষ ডান থেকে বাম দিকে ক্ষয়ে গিয়েছে। দেখো, শীষের ডান প্রান্তটা ক্ষয়ে ক্ষয়ে বাম প্রান্তটা চিড়ের দানার মতো চ্যাপ্টা হয়ে সরু হয়ে গিয়েছে। যা বামহাতি লেখকের প্রমাণ। বুঝলে?
-আজ্ঞে।
-তাহলে আমরা হত্যাকারীর যা যা বৈশিষ্ট্য পেলাম তা হলো, হত্যাকারী বা হাতি, পেন্সিলে মার্জিন টানে, স্টিলের স্কেল আছে, অ্যান্টিকাটার ব্যবহার করেন, দামি এবং ভালো ব্র্যান্ডের পেন্সিল ব্যবহার করেন।
-হু।
-আসো তাহলে হত্যা মামলাটা সমাধান করি।
হোফ বলল, ‘খুনি এবার পালাবে কোথায়?’
৩. রহস্যের ময়নাতদন্ত
চার রুমের এক ফ্ল্যাটে খুনটা হয়েছে। খুন হয়েছে এক ব্যবসায়ী। তার অন্যান্য রুমমেটের মাঝে রয়েছে দুজন চারুকলার ছাত্র, একজন লেখক, একজন ইঞ্জিনিয়ার। চারুকলার ছাত্র দুজন একসাথে থাকে, বাকি দুজন ব্যবসায়ীর মতো আলাদা আলাদা রুমে। ব্যবসায়ীর হৃদপিণ্ড বরাবর পেন্সিল ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমনিতেই গুরুতর আঘাত, তার উপর হৃদরোগী বলে বাঁচার সম্ভাবনা কম ছিল। প্রথম দেখেছে লেখক। তারপর বাকিরা। তারপর পুলিশ। ময়নাতদন্তে লাশের হৃদপিণ্ড থেকে ভাঙ্গা শীষটা পাওয়া যায়। লেখক জানিয়েছে সে রুমে কাজ করছিল, সেসময় কেউ তার নাম ধরে ডাক দেয়। সে ডাক শুনে বাহিরে এলে ব্যবসায়ীর রুম খোলা পায়। রুমে গিয়ে ব্যবসায়ীর লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশকে জানায়।
প্রবাল হোফকে বলতে থাকে, ‘যেহেতু ফ্ল্যাটের সদর দরজা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল আর বাহির থেকে কেউ আসার কোনো চিহ্নও পাওয়া যায় নি তাই বাহিরের কেউ আসে নি বলে ধরে নেওয়া যায়। দরজা বন্ধ থাকলে অন্য রুম থেকে খুব একটা আওয়াজ যায় না। তাই খুনি অনেকটা নিঃশব্দেই খুন করেছে। এদিকে চারুকলার এক ছাত্র সেসময় ভার্সিটি ছিল, তার অ্যালিবাই সেটাই। সুতরাং তাকে বাদ দেওয়া যায়। এখন আসো বাকি তিনজনের উপর ছিপ ফেলা যাক, আর দেখা যাক কার বরশিতে টান পড়ে।’
-ফেলান।
-লেখক আর চারুকলার ছাত্র আর ইঞ্জিনিয়ারের মাঝে লেখক বাহ হাতি। প্রথম সূত্রে তার সুতায় টান পড়লো। তার আর্থিক অবস্থাও খুব একটা ভালো নয়। তিন মাসের রুমভাড়া বাকি। তবে তার চেয়ে পেন্সিলের ব্যবহার বেশি করে চারুকলার ছাত্র। স্কেচের সুবিধার্তে অবশ্যই ভালো ব্র্যান্ড ব্যবহার করে। মাঝারি মানের নেশাখোর।
-আচ্ছা, এমন কি হতে পারে না, লেখক সেই ছাত্রের কাছ থেকে পেন্সিল নিয়ে অকামটা করলো?
-হতে পারে। তবে ছাত্রও খুন করতে পারে। নেশা সর্বনাশা। এছাড়া ইঞ্জিনিয়ারও করতে পারে। আচ্ছা, চল রুমগুলো আরেকবার তল্লাশি করে দেখি। তবে এবার খুঁজবো পেন্সিল, যা আগে খোঁজা হয় নি।
৪. রহস্য যখন নিজেই রহস্য
প্রবালের বাইকে উঠতে উঠতে হোফ বলতে লাগলো, ‘এই বাইকে যাওয়ার চেয়ে আমি হেঁটে গেলেই দ্রুত যেতে পারবো।’
-তাই, যাও। নতুন প্রফেশনাল ক্যামেরা নাকি?
-নাহ। নতুন ফ্ল্যাশগান লাগিয়েছি মাত্র। অনেক শক্তিশালী। বাদ দেন। কোনো ফোর্স নিলেন না কেনো?
-কারণ, আমরা খুনের সোর্স খুঁজতে যাচ্ছি, একটু অন্যভাবে।
***
ফ্ল্যাট ঘুরে এসে সোফায় গা এলিয়ে দিতেই হোফ বলল, 'এটা কোন ধরণের তদন্ত হল? চারুকলার ছাত্রকে দিয়ে একটা ছবি এঁকে নিলেন, লেখকের কাছে থেকে চিঠি।'
প্রবাল সোফায় বসতে বসতে বলল, 'আমার দেখার দরকার ছিল কে কাজের সময় বাম হাত ব্যবহার করে এবং ক্ষেত্র বিশেষে স্কেল ব্যবহার করে। চারুকলার ছাত্রের কাছ থেকে এই বিষয়টা জানতে আমি ওকে দিয়ে একটা মার্জিনসহ স্কেচ ছবি এঁকে নিলাম। আর লেখকের কাছে থেকে মার্জিন সহকারে চিঠি লেখে নিলাম।'
-ও। তা কি বুঝলেন?
-চারুকলার ছাত্র ফ্রি হ্যান্ড ড্রইং করে, পেন্সিল বেশ উন্নত, আঁকার জন্য যেরকম লাগে। মাঝে মাঝে বাম হাত ব্যবহার করছিল। তবে স্কেল তার কাছে নেই, তাই মার্জিনও হাতেই টেনেছে। যদি শুধু পেন্সিলের সূত্র ধরে তার বরশির সূত্রে টান দেই তাহলে সে ফেঁসে যাচ্ছে। কারণ, লেখকের কাছে অত দামি পেন্সিল নেই। আবার লেখক স্কেলে মার্জিন টেনে লেখে, তার কাছে স্টিলের স্কেলও রয়েছে। সেইদিক দিয়ে সে ফেঁসে যাচ্ছে । আবার দুইজনের মাঝে লেখক বামহাতি, যদিও ছাত্রকে বেশ কয়েকবার বাহাত ব্যবহার করতে দেখেছি। তবে সেটা ফ্যাক্ট নয়। তাই এক্ষেত্রেও লেখক ফেঁসে যাচ্ছে। এছাড়া ছাত্রটি পড়াশোনায় বেশ ভালো। আগামী মাসে বৃত্তিতে ফ্রান্স যাচ্ছে। অন্যদিকে লেখকের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। এদিক দিয়েও লেখক ফেঁসে যাচ্ছে। আবার সে সবার আগে দেখেছে! সবদিক দিয়ে অপরাধের পাল্লা লেখকের দিকেই বেশি ভারী। আর...
-আর কি?
-আচ্ছা, ইঞ্জিনিয়ারের তো দেখা পেলাম না। তোমার কাজ তো ছবি তোলা, ওর কোন ছবি আছে?
-বেশকিছু... প্রিন্ট করা নেই, ক্যামেরা থেকেই দেখুন...
প্রবাল দেখতে থাকে। দেখতে দেখতে বলে, ‘হুম, পেয়েছি। আমরা খুনিকে পেয়েছি।’
-কে?
-ইঞ্জিনিয়ার।
-কিন্তু সে তো না বামহাতি, না পেন্সিল ব্যবহার করে, না পেন্সিলে মার্জিন টানে, না আছে স্টিলের স্কেল আছে, অ্যান্টিকাটার ব্যবহার করেন বলেন তো মনে হয় না।
-আমি যা পেয়েছি, তা তুমি দেখ নি। চল।
-কোথায়?
-খুনিকে ধরতে।
৫. ধাওয়া
হোলস্টারে পিস্তল রাখতে রাখতে প্রবাল হোফকে বলল, ‘কোনো ফোর্স নিব না। তুমি আর আমি। যেহেতু পেন্সিল দিয়ে খুন করেছে তারমানে তার কাছে মারাত্মক কোনো অস্ত্র নেই।’
-যদি থাকে?
-আমারো আছে।
-আপনি কি করবেন তা আমার জানা আছে।
ফ্ল্যাটে আসার পরই তারা জানতে পারলো মিনিট দশেক আগে ইঞ্জিনিয়ার দেশের বাহিরে যাওয়ার জন্য বের হয়েছে।
হোফ এটা শুনে বলল, ‘কেস চলাকালীন সময়ে এভাবে কেউ চলে যেতে পারে না।’
-টাকা দিয়ে এদেশে সবকিছুই করা যায়।
-এতক্ষণে মনে হয় এয়ারপোর্টে চলে গিয়েছে।
-উহু, হাতে ১৫ মিনিট সময় আছে।
-আপনার বাইকে ১ ঘন্টা তো লাগবেই।
-কোনো কথা না, দ্রুত চল।
প্রবাল বাইকে এবার ভিন্ন কিহোলে চাবি দিতে দিতে বলল, এটা আমার ছোট ভাইয়ের বিশেষ গ্যাজেট বাইক।
-কে? আপনার বিজ্ঞানী ভাই আসাদ?
-হু, আমাকে শক্ত করে ধর, নইলে উড়ে যাবা। তুফান গতি তুলতে এতে ৫টা ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে, চলে গ্যাসোলিনে। নরমালি এটা ১০০সিসি। কিন্তু এই ভিন্ন কিহোলে চাবি দিতেই এটা ১০৫০ সিসি হয়ে যায়। এত গতিতে দিক ঠিক রাখতে ইঞ্জিনে অক্টাকোর প্রসেসর ছাড়াও হেলমেটে আছে ত্রিমাত্রিক হলোগ্রাফিক ভিশন পদ্ধতি। বাঁক নিতে এতে আছে Upper part & Lower part. উপরের অংশ সবসময় স্থির থাকে, নিচের অংশ ব্যাংকিং এর জন্য প্রয়োজনীয় বাঁক নেয়।
-বকবক না করে চলেন। খুনি, এবার তোমার নিস্তার নেই।
উপসংহারের শেষাংশ
৬. মুখোমুখি
ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া করতে করতে যখন প্রবাল আর হোফ খুনির মুখোমুখি হল তখন খুনির হাতে শোভা পাচ্ছে বেরেটা ববক্যাট। নিরস্ত্র প্রবাল আর হোফের ছয় ইঞ্চি সামনে তাক করা।
কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে যখন প্রবাল হোফের বিস্ফোরিত চোখ দেখে বুঝল, সময় শেষ। তখন প্রবাল বলতে শুরু করলো, ‘তুমি যে আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ার তা জানা ছিল না। স্থাপত্য ডিজাইনে পেন্সিল আর স্কেলের ব্যবহার তোমার চেয়ে নিখুঁতভাবে কে ব্যবহার করবে। আশা করি অ্যান্টিকাটারও তোমার ড্রয়ারে রয়েছে।’
খুনি ইঞ্জিনিয়ার ক্রুর হেসে বলল, ‘অনেক জেনেছিস, এখন উপরে গিয়ে আরাম কর।’
বলেই যখন খুনি ট্রিগারে চাপ দেবে ঠিক তখনই ফ্ল্যাশগানের তীব্র ফ্ল্যাশে খুনির গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট, আর হোফ চোখ মেলে দেখে প্রবাল মাটিতে পড়ে যাওয়া খুনির বুকের উপর বসে এক মোক্ষম ঘুষি দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এরপর প্রবালের মোক্ষম ঘুষি দেওয়ার পর প্রবাল বলছে, ‘আমি প্রবাল, গোয়েন্দা প্রবাল। না কোনো খুন, না কোনো খুনি আমাকে চোখ এড়িয়ে যেতে পারে।’
৭. জবানবন্দি
উত্তম মধ্যমের পর খুনি যা জবানবন্দি দিয়েছিল তা তার নিজের ভাষাতেই দেওয়া হল।
“আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ায় বেশকিছু ডেভেলপারদের সাথে আমার পরিচয় ছিল। জমি কেনাবেচাতেও আমার কিছু হাত থাকায় ব্যবসায়ীকে ঢাকা শহরে জমি কিনে দেবো বলে তার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েছিলাম । কিন্তু সব টাকা মেরে দিয়েছিলাম। অত টাকা ফেরত দেবার মতো অবস্থা ছিল না। প্রায়ই জেলের হুমকি দিত। তবে যেদিন ব্যবসায়ী আমাকে জানের ভয় দেখিয়ে শাসাতে গেল তখন আমি আর স্থির থাকতে পারি নি। আমার কাছে যে পিস্তল আছে সেটা দিয়ে খুন করলে সবাই টের পেয়ে যেত তাই ঘটনার দিন রাগারাগির সময় কাজ থেকে উঠে আসায় হাতের মুঠোয় থাকা পেন্সিল ছিল যা তার বুকে বসিয়ে দেই। তারপর চুপচাপ লেখককে তার রুমের বাহির থেকে ডাক দিয়ে নিজের রুমে চলে যাই, যাতে লেখক খুনি হিসেবে ধরা পড়ে।”
প্রবাল হোফকে বলতে থাকে, ‘যখন খুনি গুলি করার জন্য প্রস্তুত কিন্তু আমরা নিরুপায় তখন দেখলাম তোমার গলায় ক্যামেরার ইনডিকেটর জ্বলছে, বুঝে নিলাম তোমার ক্যামেরা চালু আছে। মাথায় বুদ্ধি এল। কথা বলতে বলতে আমার হাত তোমার ক্যামেরার দিকে নিয়ে গিয়েছিলাম। যখনই সে ট্রিগার চাপ দিতে ধরল তখনই আমি ক্যামেরার বোতাম চাপ দিলাম আর সেই সাথে আকস্মিক তীব্র ফ্ল্যাশ খুনিকে লক্ষ্য ভ্রষ্ট করে দিল। আর আমি তৈরি থাকায় তৎক্ষণাৎ তার উপর চড়াও হয়ে ওকে নিরস্ত্র করি।’
-যদি কিছু হয়ে যেত?
-হত না। আর একটা কথা, আমি আর কখনোই তোমাকে আমার পিস্তল ধার দেব না। সেদিন তোমাকে সাহস দিতে পিস্তলটা না দিলে এত দুর্ভোগ পোহাতে হত না।
-আচ্ছা। আপনি আমার তোলা ছবিতে কি দেখেছিলেন যাতে বুঝেছিলেন সেই-ই খুনি?
-তার হাতের তিনটা ডটের উল্কি। আর এই পেন্সিলে খোদাই করা তিনটা ডট দেখে।
বলেই প্রবাল জিপার লাগানো স্বচ্ছ পলিব্যাগে রক্তাক্ত পেন্সিল দেখাল।
হোফ লাফিয়ে উঠে বলল, 'এটা কোথায় পেয়েছেন? কখন?'
-লেখকের রুমে ড্রয়ারে। পরে যেদিন চিঠি লিখিয়ে আনলাম।
-তার মানে লেখকই খুনি?
-উহু। তিনটা ডট হল মোর্স কোডে একটা অক্ষর S(এস) । ইঞ্জিনিয়ারের নামের আদ্যক্ষর। ইঞ্জিনিয়ারের হাতেই একই উল্কি রয়েছে যা আমি তোমার তোলা ছবিতে দেখে নিশ্চিত হয়েছিলাম। লেখককে খুনি বানাতেই সে লেখকের রুমে রেখে এসেছিল।
-ও। একারণেই বলেছিলেন, “আমি যা পেয়েছি, তা তুমি দেখ নি।”
-হুম। আরেকটা কেস হাতে এসেছে, হাইপ্রোফাইল কেস। চল বেড়িয়ে পড়ি।
বলেই তারা বেড়িয়ে পড়লো নতুন রহস্য উন্মোচনে।
[সমাপ্ত]
বিঃদ্রঃ গল্পটি গত বইমেলায় মেট্রোপলিটন গল্প গুচ্ছ-৩ এ প্রকাশিত।
আমার লেখা আরো কিছু গল্প-
১। ফ্যান্টাসি গল্প: ভূত লেখক
২। জীবনের গল্পঃ আমার মেয়ে
৩। ভাষার গল্পঃ কৃষ্ণচূড়ার ডালে ডালে...
৪। ভালোবাসার গল্পঃ অবাস্তব বাস্তবতা