আমার মায়ের তিনখানা পুত্র। মিলটন, মেরিন, আরেকজনের নাম বলা যাবে না। সিক্রেট।
যাই হোক, আমার মায়ের কোন কন্যা নেই বলে তার অশেষ দুঃখ। আমরা তার ঘরের কোন কাজে সহায়তা করতে পারি না বলে তাকে প্রায়শই নিজের মাথা চাপড়িয়ে মেয়ের জন্য দুঃখ প্রকাশ করতে দেখা যায়। তবে সামনে তার জন্য আরও দুঃখ অপেক্ষা করছে বলে আমার ধারণা। কারণ, নিজের মেয়ে যাই হোক,তাকে মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু অন্যের মেয়ে কেমন হবে তা তো ঠাহর করা বেশ মুশকিলই বটে,তার উপর সেই মেয়ের মনভাবের সাথে আম্মুর মনোভাব না মিললে তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ আমার বাসা থেকেই শুরু হবে। আম্মুকে বুঝানো বেশ কষ্টকর যে, নিজের মেয়ে থাকলে তাকে তো বিদায় দিতে হত।কষ্ট পেতে হত। কিন্তু তার তিনখানা গুনধর (!) পুত্র তো তাকে তিনখানা রেডিমেট কন্যা উপহার দিবেই। তাই দুঃখ কিসের?
কোথাও পড়েছিলাম, জান্নাতে যখন নিচু স্তরের কোন জান্নাতির সাথে উচু স্তরের জান্নাতির দেখা হবে, কোলাকুলি হবে বা শুভেচ্ছা বিনিময় হবে তখন, দুইজনের মাঝেই এমন অনুভূতি হবে যে, তাদের নিজ নিজ জান্নাতই সেরা।অন্যেরটা পচা। তেমনি, সকল সন্তানের কাছে তার মা-ই সেরা। আর অন্যের মায়েরা পচা।
জান্নাতের সাথে মায়ের কি অদ্ভুত মিল।
মুকুটের নিচে যে থাকে সে-ই মুকুটের সম্মানে সম্মানিত হয়। আর মায়ের পায়ের নিচেই তো জান্নাত। তাই জান্নাতের সম্মানে মা সম্মানিত হয় না, মায়ের সম্মানেই জান্নাত সম্মানিত হয়।
এই মাকে ছেড়ে থাকা বড়ই কষ্টের।
আমার মায়ের সাথে আমার প্রথম দেখা জন্মের পর। ছোট বেলায় মাকে অনেক জ্বালিয়েছি, এখনো জ্বালাই। যাদেরকে যাদেরকে জ্বালিয়ে তৃপ্তি পাওয়া যায়, তাদের মাঝে মা অন্যতম। এই তৃপ্তিটার নাম হল, বাদশাহি তৃপ্তি।
খুব একটা বদমাইশ ছিলাম না, তবে আমার ছোটবেলার একটা বড়সর ছোট সময় গিয়েছে আম্মুর মাইর খেয়ে। মনে হয় মাইর দেওয়ার জন্য আম্মুর হাত নিশপিশ করতো। তবে একথা সত্য আম্মু অকারণে কখনো মার দেন নাই। একটা সময় হঠাৎ করেই আম্মু আমাকে মার দেওয়া বন্ধ করে দেন। তারপর থেকে মার খাওয়ার জন্য আমার পিঠ নিশপিশ করে।
মা দিবসের প্রচলনকারী হলেন আনা জার্ভিস। তিনি আন্তর্জাতিক মা দিবস সমিতি তৈরি করেছিলেন আর মা দিবসের প্রচলন করেছিলেন। ১৯১৪ সাল থেকে মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার এটা পালন করা হয়। তবে দেশ এবং জাতিভেদে বিভিন্ন দিনে পালন করা হয়ে থাকে। উইকিপিডিয়া থেকে জানুন মা দিবস সম্পর্কে
মাকে নিয়ে আজ মুখে ফেনা তোলাদের মাঝে আমিও একজন, তবে এই মা মা যেন ফেবুতেই ম্যা ম্যা না হয়, এই কথাটি মাথায় রাখা ভালো। আর মা দিবস মানে শুধু মাকে ভালোবাসা নয়, সেই সাথে মা জাতি মানে নারী জাতিকেও সম্মান দেওয়ার উদ্দেশ্য এই দিনটির।
ফার্মগেটে সন্ধ্যা নামলেই নেমে পড়ে শুধু চোখ খোলা বোরখা পড়া রমণীরা। হতে পারে তারা উপার্জন করে অতি অসৎ উপায়ে। কিন্তু যেই টাকাটা তারা উপার্জন করে সেই টাকা দিয়ে তারা মেকাপ বক্স কেনে না, কেনে দু মুঠো চাল আর ডাল। তার ঘরেও আছে সন্তান আছে,ক্ষুধার অভিশাপ। সেও মা, কিংবা বোন। বলছি না তাকে ঘরে তুলে আদর যত্ন করুন, কিংবা বলছি না তাকে ভালো বলুন। শুধু বলছি তার দিকে খারাপ দৃষ্টিতে তাকানোর আগে তাদের দিকে কথা ভাবুন যারা এদের ব্যবহার করে,তারা কত খারাপ একবার ভাবুন। এদের গালি না দেই,বা কটূক্তি না করি।
বাসে কোন মা উঠলে আমরা যেন তার জন্য সিট ছেড়ে দেই,মহিলা সিট দখল করে নিচু মানসিকতার প্রকাশ যেন না করি। কোন মায়ের বোঝা না বইতে পারি অন্তত যেন দৃষ্টিতে যেন সাহায্যের আবেদন থাকে। স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করি, "পিতামাতাকে তুমি সেভাবেই লালন পালন কর যেমনিভাবে তাঁরা আমাদের ছোটবেলায় করেছেন। "
মা, তুমি আমার মা,
ত্রিভুবনে নেই তোমার কোন তুলনা।
মাকে নিয়ে কিছু ফ্যাক্ট...
source
এই দেশটাও কিন্তু আমাদের মা। আমরা যেন এই মায়ের এমন সন্তান না হই, যারা বলে, হেই ডূড, হাউ আর ইউ কিংবা '৫২ তে যুদ্ধ আর '৭১ রে মারামারি হয়েছে ।
আসুন একবার হলেও গর্ব করে বলি,
ধনধান্য পুষ্প ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা
তাহার মাঝে আছে দেশ এক সকল দেশের সেরা
ও সে স্বপ্ন দিয়ে তৈরি সে যে স্মৃতি দিয়ে ঘেরা
এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি
সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি
সে যে আমার জন্মভূমি, সে যে আমার জন্মভূমি।।
আর বলি...
আমার সোনার বাংলা
আমি তোমায় ভালবাসি।