-আমাকে বিয়ে করবেন?
-কাকে বলতাছেন?
-আপনাকে ।
- ঐ মাইয়া,জানো,আমি কে?
-না জানি না । শুধু বলেন,আপনি আমাকে বিয়ে করবেন কিনা?
-তুমি জানো?আমি এই এলাকার বড় ভাই । সবাই আমাকে ডরায় । দাদার বয়সী মানুষ পর্যন্ত আমাকে সালাম দেয় । আর তুমি কোন পুঁচকে মেয়ে,কি সব আবোল-তাবোল বলতাছো ।
-আপনি যেই হন,যাই হোন,আমাকে বলেন,আমাকে বিয়ে করবেন কিনা?
-দেখো মাইয়া,আমি কিন্তু এখনো চেতি নাই । আমি চেতলে কিন্তু সর্বনাশ হয়ে যাবে ।
-ধুর!আপনাকে যা বলছি সেটার জবাব দেন । আর এমন বাজেভাবে কথা বলবেন না । শুদ্ধ ভাষায় কথা বলবেন ।
-কিসের জবাব?হু? আর আমি এমনেই কথা বলি,আমাকে জ্ঞান দিবা না ।
-আমাকে বিয়ে করবেন?
-ইসসিরে,আমার মাথা কিন্তু গরম হয়া যাইতেছে । তোমার সমস্যাটা কি বল তো দেখি ।
-আমার কোন সমস্যা নাই । আপনি কেবল বলেন,আমাকে বিয়ে করবেন কিনা?
-ইসস,আমি আর পারতাছি না । ঐ কেউ এরে লয়ে যা তো । দূর করে দে আমার সামনে থেকে ।
-প্লিজ,বলেন না,আমাকে বিয়ে করবেন কিনা?আমার হাতে সময় খুব কম ।
-কও কি?AIDS হইছে নাকি?কোথায় অকাম-কুকাম করে আসছো?
-ধুর!কি আজে-বাজে কথা বলেন । আমাকে দেখে কি আপনার খারাপ মনে হয়?
-না,সেটা তো মনে হয় না । তুমি দেখতে হেবি সুন্দরী,যাকে বলে আগুন সুন্দরী,যারে দেখলেই মনে আগুন জ্বলে উঠে । তবে সুন্দরীদের মাথায় ছিট থাকে । রত্নারো ছিল ।
-রত্না কে?আপনার GF?
-কি কইলা তুমি?তুমি ভাগবা?
-প্লিজ বলেন না,আমাকে বিয়ে করবেন কিনা?আমার পরশু বিয়ে।
-তোমার পরশু বিয়া,আবার আমারে বিয়া করার জন্যে অত্যাচার করতাছো,আমার মাথায় তো কিছু ঢুকতাছে না । আসল ঘটনা খুইল্লা বলো দেখি ।
-আমার বাবা অনেক আগেই মারা গিয়েছেন । চাচাদের সংসারে মা দাসীর মত খেটে আমাকে বড় করেছেন । এখন চাচারা নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য আমাকে এক ধনী মাতালের সাথে বিয়ে দিতে চান । চান আর কি পরশু বিয়ে ঠিক করে রেখেছেন । আমার মায়ের বাঁধা দেওয়ার কোন ক্ষমতা নাই । তাই মা আমাকে বলেছেন,অন্য কাউকে বিয়ে করে পালিয়ে যেতে । কিন্তু আমি কোথাও কাউকে পাচ্ছি না । আপনাকে আমার মনে ধরেছে । তাই আপনাকে বিয়ে করতে চাই ।
-তোমার কস্ট শুনে আমার কলিজা ভিজে গেলো ।
-কষ্টে মানুষের কলিজা ভেজে কি করে?
-মন তো রত্না নিয়ে গেসে। তাই এখন কষ্টে কলিজাই ভরসা।
-বুঝলাম না।
-অত বুঝনের কাম নাইক্কা।তা তোমার নাম কি?
-আকাশী ।
-বাসা কোথায়?
-মিরপুরে ।
-ও ।
আমির আকাশীকে তার বাসায় রেখে আসে । আকাশী যদিও বাধা দিচ্ছিল,কিন্তু এইবার আমির তার বড়ভাইগিরি দেখালো ।
আমির মনে মনে বলে,সুন্দরীদের কথা বিশ্বাস করতে হয় না । তারা কঠিন ছলনাময়ী । রত্নার মতো । তাদের চোখে মায়া থাকে । দুনিয়া ভুলানো মায়া । রত্নার মতো । যে ঐ মায়ায় পড়লে জীবন শেষ । আমার মতো । রত্নারে,আমারে শেষ করে দিলি । জ্বালায়ে-পুড়ায়ে শেষ করে দিলি ।
আকাশীর কথা অনুযায়ী আজকে ওর বিয়ে । ওর চাচারা আমিরকে কঠিনভাবে দাওয়াত দিয়েছে । কি পড়ে যাবে সেটা ঠিক করতে পারলো না,শেষে রত্নার বিয়েতে যে শেরওয়ানী পড়ে গিয়েছিল সেটি পড়ে গেল । যদিও মাথায়া পাগরী ছিল না তবুও শেরওয়ানী পড়ার জন্য অনেকেই তাকে বর ভেবে ভুল করলো । রত্নাও করেছিল ।
আমির শান্তশিষ্ঠভাবে দাওয়াত খেল । তারপর আকাশীকে দেখতে গেল । কনের সাজে তাকে ঠিক রত্নার মতো দেখাচ্ছে । এমনি করে রত্নাও সেজেছিল ।
কাজি আকাশীকে কবুল বলতে বলছে,কিন্তু আকাশী নিশ্চুপ,ঠিক রত্নার মতো । এমন সময় হঠৎ আকাশীর চাচা এসে তার চুলের ঝুটি ধরলো,আকাশীর মা আঁচলে মুখ ঢেকে নিশ্চুপে কাঁদছে । আকাশীর বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে এভাবেই তিনি নিজেকে স্বান্তনা দিয়ে আসছেন । এই কান্নার জলে অনেক কষ্ট থাকে । না বলা কষ্ট ।
এই সময় আকাশী আমিরের দিকে তাকায়,একটা মায়া আছে এই চাহনীতে,নিষ্পাপতা আছে,আছে একটা অভিযোগ । ঠিক এভাবেই রত্নাও তাকিয়েছিল,তারপর..... আমির আর ভাবতে পারে না । স্মৃতি কখনো আনন্দের হয় না । হয় সেটা পীড়াদায়ক হবে নয়তো দীর্ঘশ্বাসের হবে ।
আমির চিৎকার দিয়ে বলে,ঐ,আকাশীর চুল ছাড় বলছি ।
আকাশীর চাচা খানিকটা অবাক হয়ে চুল ছেড়ে দেয় । আমির অনেকটা দৌড়ে যেয়ে,আকাশীর মুঠি থেকে কালো কাঁচের বোতলটা নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেয় ।
-রত্নার মতো তুমিও আমাকে ছেড়ে যেতে চাও নাকি?আমি আর কতো কষ্ট বয়ে বেড়াবো? আর কত জ্বললে তোমরা শান্তি পাবা?ঐ,কাজি আমাদের বিয়ে পড়া ।
আকাশীর চাচারা আমিরকে মারতে তেড়ে আসে । আমিরের সাঙ্গ-পাঙ্গরা জানে সেটা কিভাবে ম্যানেজ করতে হয় । চাচারা অসহায় ভঙ্গীতে চেয়ে আছে,সেটা দেখতে অবশ্য মন্দ লাগছে না ।
কাবিননামায় যখন আমির স্বাক্ষর দিচ্ছে তখন আকাশী মুখ খুললো,তবে যা বললো সেটা হয়তো এইসময় বলার কথা ছিল না । সে বলল,আপনি শুদ্ধ ভাষায় কথা বলছেন!
আমির যা উত্তর দিল সেটার জন্য আকাশী প্রস্তুত ছিল না । আমির চোখ মটকে বলল,একজন বুয়েটিয়ান ইঞ্জিনিয়ারের তো শুদ্ধ ভাষাতেই কথা বলা মানায় ।
-তাহলে বড় ভাই কে?
-ওটাও আমি। তবে সেটা আরেক কাহিনী,পড়ে জেনে নিও ।
আকাশীর মা এখনো আঁচলে মুখ ঢেকে কাঁদছেন,তবে এই কান্নায় একটা আনন্দ রয়েছে,এটা স্বস্তির কান্না । বহুদিন পর তিনি এই কান্নাটা কাঁদতে পারছেন ।
বাহিরে তখন বৃষ্টি হচ্ছে,হঠাৎ বৃষ্টি,প্রকৃতি ধুয়ে নিচ্ছে সব কালিমা,দিয়ে যাচ্ছে আনন্দ । অপার আনন্দ । বসন্ত এলো বলে.......