ওইতো হুইসেল শোনা যাচ্ছে। কটা বাজে? ২ টা। ঠিক-ই আছে। প্রতি ২ ঘন্টা পর পর ট্রেন আসে। চলে আসছে। আমাকে উঠতে হবে।
না গেলে হয় না? যায়ে আর কি হবে। মানুষ দেখতে পাবে। তাদের ব্যাস্থতা দেখতে পাবে। মানুষকে দেখে, তাদের কলাহল দেখে কি তোমার কন লাভ হবে? বরং ঘুমাও, ঘুম হয়না বলেই ঠিকসময়ে অফিসে যাইতে পারোনা কালো তো যেতে দেরি করছ। দরকার নাই ট্রেন দেখার। ঘুমাও এটাই সবচেয়ে ভালো হবে।
আজকের ঘুমটা অনেক গাঢ়ো হইছে। উঠতেই মন চাচ্ছে না। কিন্তু আমাকে যে উঠতেই হবে। ট্রেনটা এখনি থামবে। শত শত মানুষ নামবে। আমি দেখবো। আমাকে যে তাদের দেখতেই হবে----------
তোমার ইচ্ছা পূরন হইছে। দেখ, মন ভরে মানুষ দেখ। কত মানুষ নামলো, কত মানুষ উঠলো তা গোন। আমি নিশ্চিত, রেল কর্তৃপক্ষ যদি জানতে পারে তুমি এই স্টেশনে কত জন মানুষ উঠলো-নামলো তার হিসাব রাখো। তারা নির্ঘাত তোমাকে একটা বেতন ধরায় দিবে। তাও আবার সরকারি বেতন। তোমাকে শুধু কষ্ট করে জানাতে হবে।
আচ্ছা, আজকে-তো অনেক মানুষ আসছে ঢাকা শহরে কি মানুষের সংখ্যা বাড়ে যাচ্ছে?? যাওয়াটাইতো স্বাভাবিক ১,৪৭,৫৭০ বর্গ কিলোমিটারে ২০ কোটি মানূষের বসবাস। প্রতি বর্গ কিঃ মিঃ ১,২৫০ জন মানূষের বাস। এখানে তো মাত্র হাজাত দুয়েক মানুষ। আরো বেশী আসা উচিত। কি বল??
আমারো তাই মনে হয়। আচ্ছা, সত্যি করে বলতো, তুমি আসলে কার জন্য অপেক্ষা কর? কার অপেক্ষায় এই মাঝ রাতে ঘুম ফেলে বারান্দায় অপেক্ষা কর। একটু পর আবার মেন দরজা খুলে অপেক্ষা করবা। কিন্তু কার জন্য এত অপেক্ষা?? কার জন্য এত আশা? সে কে?
আসলে, আমি জানি না। আমি এটাও জানি না আমি কি অপেক্ষা করছি নাকি পাগলামি করছি। তবে হ্যা, আমার অপেক্ষা করতে ভালো লাগে। ভাবতে ভালো লাগে যে, কেউ একজন আসবে। কিন্তু আমি জানি কেউ আসবে না।
তার মানে, তুমি জেনে-শুনে বোকামি করছ??
হ্যা তা তুমি বলতে পার। মানুষ এমন অনেক বোকামি করে। এইযে দেখ, আমি তোমার সাথে কথা বলছি, তোমার কথা শুঞ্ছি। কিন্তু তুমিতো কেউনা, তুমি বলতে আসলে কেউ নেই। আমার মনের অবচেতন অংশ তোমাকে সৃষ্টি করেছে, আমার একাকিত্ব দূর করার জন্য, আমার মনের কথাগুলা ভাগ করের জন্য। তোমার সাথে কথা বলছি ঠিক-ই কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে তোমার কোন অস্তিত্ব নেই। ঠিক সেরকম-ই। কেউ আসবে এটা ভাবতে আমার ভালো লাগে। অপেক্ষা করতে ভালো লাগে তাই অপেক্ষা করি।
হাহাহা, তা অবশ্য ঠিক। কিন্তু আমি আছি বলেই তোমার অস্তিত্ব টিকে আছে। আমি না থাকলে তোমার অস্তিত্ব থাকত না। কি থাকত??
হয়তোবা থাকত না, অথবা থাকত। তোমার সাথে বক-বক করতে ভালো লাগছে না। তবে এটা Sure তুমি মানুষ হইলে প্রতিদিন অন্ত্যত ১০ লাথি খেতে। তোমার কপাল ভালো যে, তুমি বলতে কেউ নেই। তার আসার সময় হইছে দরজা খুলতে হবে। নয়তোবা আবার ফিরে যেতে পারে।
দরজা ধরে বসে থাক, আর কি করবা। অফিসে দেরি করার অপরাদে স্কুলের স্যারের মত যদি বস চিনা বেত দিয়ে পাছার ছাল উঠায়ে দিত, তাইলে আর এই আকাম করতে পারতা না। লক্ষি বাচ্চার মত ঘুমাইতা।
হাহাহা, শাত্বি যে একেবারেই নাই তা বলা উচিত না। কেননা দেরি করলে বেতন কাটে। প্রতি ঘন্টার জন্য ২০ টাকা করে।।
তুমিতো একা মানুষ, তাই টাকার জন্য গরজ নাই। যদি বোউ-পোলাপাইন থাকলে বুঝতা কত টাকা দরকার। তখন ২ ঘন্টা আগে অফিসে যেতা কিছু বেশি আয়ের আশায়। একা মানুষতো সামান্য কিছু টাকা হলেই মাস চলে যায়। আর কিছু সদোস্য থাকলে বুঝতা কত দিনে মাস হয়।।
ঠিক বলছো, এক সময় অনেক টাকের প্রয়োজন ছিল। মাসকে বছর মনে হত। অনেক অপেক্ষার পর বেতনের টাকাটা হাতে পেলে খুশিতে মন ভরে যেত। কিন্তু কিভাবে যান মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে পকেট খালি, আবার ১ তারিখের জন্য অপেক্ষা। হাহাহাহাহাহা... কিন্তু তার পড়ও জীবনে একটা গতি ছিল, একটি উদ্দেশ্য ছিল, আশা ছিল, স্বপ্ন ছিল। কিন্তু এখন----------
তুমি কি শাহানার জন্য অপেক্ষা করছ??
আমি জানি না। তবে আমার মনে হয়, আমি তার জন্যাই অপেক্ষা করি। কেন জানি মনে হয় আমার জীবনে হারিয়ে যাওয়া কোন মানুষ ঠিক সেই ভাবেই আমার কাছে ফিরে আসবে যেভাবে সে আমার জীবন থেকে হারায়ে গেছে। আর এরকম এক রাতে শাহানাই আমাকে ছেড়ে চলে গেছিল।
আচ্ছা আচ্ছা, এজন্যই শুধু রাতের ট্রেনের জন্য তুমি অপেক্ষা কর?? কিন্তু, তুমিতো চরম বোকামি করছ। তুমিতো তোমাকে ধোকা দিচ্ছ। তুমি জান তার স্বামী গত বছর ইতালি থেকে ফিরে এসেছে। তাদের ২ টি সন্তাইও আছে, এবং তারা খুব সুখে আছে। এত কিছু জানার পড়-ও তুমি কিভাবে আশা কর যে, সে
আবার তোমার কাছে ফিরে আসবে??
আমিতো বলিনি সে আসবে। আমি নিশ্চিত সে আর আসবেনা। তার পড়ও আমি আশা করি, আমি স্বপ্ন দেখি, নতুন করে বাঁচার ইচ্ছা করি। চিন্তা কর, সেই ছোটবেলা থেকে। যখন আমি দেখলাম, আমার কন বন্ধু নেই, আমার কোন আপন মানুষ নেই। এমন কেউ নেই যার সাথে আমি কথা বলবো, গল্প করব, আনন্দ-বেদনা ভাগ করব। যখন দেখলাম কেউ আমার সাথে কথা বলতে চায়না, আমার কথা শুন্তে চায়না। ঠিক তখনি আমি তোমাকে সৃষ্টি করলাম, কথা বলার জন্য। কেননা,মানুষ একা বাস করতে পারে না। তার সাথি দরকার। ঠিক তেমনি, জ়ীবনটা যখন এক ভাবে চলছে, জীবনে যখন কোন উদ্দেশ্য নেই, জীবনটা যখন কেবলি বেঁচে থাকার জন্য তখন তাকে নতুন করে ভেবে, তার আশার প্রহর গুনে জীবনে এক নতুন মাত্রা যোগ হচ্ছে। এর বেশি কিছু না।।
হুম, তাতো বুঝলাম। কিন্তু, এভাবে আর কতদিন?? শাহানার জন্য অপেক্ষা করা আর কবর থেকে লাশ তুলে তাকে মানুষের সাথে তুলোনা করার মধ্যে কোন কি পার্থক্য আছে? এর চে ভালো দেখে একটা বিয়ে কর। শেষ বয়সে অন্ত্যত আরাম পাবা।।
আমার স্কুল জীবনে প্রকৃত বন্ধু বলে কাউকে পাইনি। দুই-একজন যা মনে হইছিল, পরে বুঝতে পারছিলাম তাদের প্রয়োজনেই তারা বন্ধু হইছিল। প্রয়োজন শেষে তাদের আর খুঁজে পাইতাম না। এর পর থেকে যারা বন্ধুত্ব হতে আগ্রহ দেখাতো বুঝে নিতাম স্বার্থের জন্য-ই। এর বিকল্প-ও হয়নি। কলেজ লাইফে মেয়েদের দিকে ঝোক আসলো। মনে হইছিল অনেক বড়ো হয়ে গেছি। কিন্তু আমার কাছে তাদেরকে আরো ভঙ্কর মনে হল। বেশ কয়েকবার মনক্ষুন্ন-ও হইছিলাম। তারপর সিদ্ধান্ত নিলাম একাই থাকবো। কিন্তু তা আর হলনা। ভাইয়া জোর করে বিয়ে করে দিল। কিন্তু কি হল, সংসার জীবন গেল মাত্র ২ বছর। সুখস্মৃতি বলতে তেমন কিছুই মনে পরে না। পক্ষান্তরে আর নাই বললাম। আমি আমার ভাগ্যকে মেনে নিছি। হয়তোবা আমি মানুষরুপি কোন জানোয়ার, যার কারনে কেউ আমার সঙ্গি হয়না। সুতরাং নতুন করে আর কিছু ভাবিনি বা ভাব্বোনা।
মনক্ষুন্য বলতে কি মনে ব্যাথা বা ছ্যাকা খাওয়া মিন করছ?? নাকি অন্য কিছু।
কলেজ লাইফের প্রথম দিকে আমি বেশ অনুভম করলাম আমি একা। আমার সঙ্গি দরকার। তখন ভালোবাসা চাইলাম, জীবন সঙ্গি হিসাবে কাউকে বেঁছে নিতে চেষ্টা করলাম। কিন্তু তারা আমাকে নিরাশ করল। অনেকের সাথেই সু-সম্পর্ক হইছিল। কিন্তু একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। প্রয়োজন শেষে তারাও আমাকে ছুরে ফেলে দিল। এটাকে যদি ছ্যাঁকা ধরা হয় তাহলে অনেকবারি এটা আমাকে হজম করতে হইছে।
আহারে, বড়ই করুনাময় কাহিনী শুনাইলা। কিন্তু শেষ বয়সে সন্তানরা তাদের সেবা করে। তোমারতো সে-রকম কেউ নাই। কি করবে সেই সময়ে??
জানিনা, ভাগ্যের কাছে সপর্দ করেছি আমার ভবিষৎকে। তখনি বুঝতে পারবো আমাকে কি করতে হবে।
আচ্ছা, এই অবস্থায় যদি তোমাকে প্রশ্ন করা হয়, "তুমি কি সুখী" এর কি উত্তর দিবে??
সুখের সঙ্গা আমার জানা নাই। তবে "মন যা চায় বাস্তবে তাই করতে পারাকে সুখ বললে" আমি অনেক সূখী।
কিন্তু তুমিতো সে-রকম কিছুই পাওনি। তুমি বন্ধু চইছিলে পাওনি, ভালোবাসা চাইছিলে তাও পাওনি। কিভাবে তুমি সুখী হলে??
হ্যা, তখন হয়তোবা সুখী ছিলামনা। কিন্তু বর্তমানে আমি বলবো আমি সুখী। কেননা, আমার মন চাইছে শাহানার জন্যা অপেক্ষা করতে, আমি অপেক্ষা করতেছি। আমার ইচ্ছা করছে তোমার সাথে কথা বলতে, আমি পারছি। আমার যখন যা করতে ইচ্ছা করছে আমি তাই করতে পারছি। যেমন মনে কর, আজ মন চাচ্ছেনা তাই অফিসে যাচ্ছি না। আমার কিছুই হবে না। কেননা আমি একা। চাকুরি করা আমার জন্য খুবই প্রয়োজন নয়। সেই দৃষ্টিকোন থেকে আমি অবশ্যই সুখী।।
হাহাহা, তুমি মিথ্যে বলছ। তুমিও জান তুমি আসলে সুখী না। তূমি সুখের অভিনয় করছ।
হ্যা, তাও হতে পারে। জীবনের শেষ সময়ে এটাই হয়তোবা সান্ত্বনা। থাকনা, নিজেকে সুখী ভাবি। ভাবতে ভালো লাগছে।
তাতো বুঝলাম, কিন্তু দরজা বন্ধো করছ কেন?? সে এসে ফিরে যাবেতো। মনে হয় পথ ভুলে গেছে। আরেক্টূ অপেক্ষা কর, চলে আসবে।।
তার আসার সময় শেষ। আজ আর আসবে না। এখন তুমিও বিদায় হও। তোমার বক-বক শুন্তে আর ভালো লাগছে না। আমাকে আবার উঠতে হবে। আজকে তারাতাড়ি অফিস যেতেই কবে।
ওইতো শোনা যাচ্ছে, চলে আসছে। ঘড়িটা কোথায় গেল! ঘড়ি দেখতে হবেনা। আমি জানি এখন ভোর ৪ টা। ঘুমটা বেশ গাঢ মনে হচ্ছে। উঠতেই ইচ্ছা করছে না। কিন্তু না, আর দেরি করা যাবে না। এখনি বারান্দায় যেতে হবে----------
****************************
যদি আদৌ কোন পাঠক এই লেখাটি পড়েন তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাইঃ- এখানে নিছক একজন একাকিত্ব মানুষের অর্থহীন কিছু কথা তুলে ধরার চেষ্টা করা হইছে। আপনেরা দয়া করে অন্য কোন অর্থ খুঁজবেন না।।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জানুয়ারি, ২০১১ দুপুর ২:২৬