আমার খুব কাছের এক বড় ভাই এর অসাধারন একটা গল্প..
সালাউদ্দিন মুন্না ভাই এর "সুখ সুখিদের ভালবাসায়" লেখকের অনুমতি সাপেক্ষে পোষ্ট করলাম...
--
----
------
--------
মেয়েটা একা দাড়িয়ে ছিল । আসে পাশে পরিচিত কেউ আছে বলে মনে হলনা । মেয়েটির পরনে ছিল আমার প্রীয় জলপাই রঙের চিক চিকে সেলোয়ার কামিজ । আমি ওর থেকে খুব একটা দুরে নয় , অপেষ্কা করছি আমার এক বন্ধুর জন্য । হঠাত্ করে চোখে চোখ পড়ে গেল । বহুদিন দেখা হয়না ওরকম চোখ , মনে হল কুড়ি বছর ভেজানো ছিল পুরানো দিনের শান্ত দিঘীর জ্বলে । শ্যাম বর্নের মেয়ে সাজগোজ একেবারেই নেই । ভেতরটায় যেন কেমন করে উঠল , একটা শক্ত ফ্রেমের ভিতর
পরিপাটি লেমিনেটেড করা এক কপি ছবি ঠিক ঠাক আটকে গেলে যা হয় । এই কি প্রেম ? প্রেমতো প্রকৃতির মত শীত গৃষ্ম বর্ষা ঝরা পাতা , আবার নতুন কুশি থেকে পাতা ফুল ফল । কেমন যেন একটা শীতল অনুভুতি ক্রমস সুখি করে তুলছে আমাকে । ঐ অচেনা অজানা মেয়েটা আর আমি , মূহুর্তেই আমার পৃথিবী বিশ্ব তথা গোটা সৌরজগতকে এক করে দিল । ভালবাসার কতটা শক্তি থাকতে পারে ? যা হ্রদয়ের সাথে হ্রদয়ে বহুকালের সুখ দুঃখের সাথি , হাজার বছর ধরে এক সাথে বসবাস । আমি একপা দুপা করে মেয়েটির দিকে আগাতেই বুকের ভিতর থর থর কাপুনিতে ঘেঁমে যাচ্ছিল সারা শরীর......।
একদিকে শরীর ঘামছে আবার হ্রদ স্পন্দন হুহু করে বেড়ে চলছে । যে আমি কোনদিন মেয়েদের সাথে কথা তো দুরের কথা সামনেই দাড়াতে পারিনি , সেই অমি কিনা নিজ ইচ্চায় অচেনা অজানা গ্রামের রাস্থায় একটি মেয়ের দিকে দুর্বল শরীর মন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি তো যাচ্চি । এখনো এসব গ্রামে রয়েছে রষ্কনশীল মুরব্বী ধাচের মাতুব্বর যারা সামন্য অপরাধেই পিঠ মোচড়া দিয়ে বেঁধে আম গাছের সাথে ঝুলিয়ে বিচার আচাড় করতে সাচ্ছন্দবোধ করে । মেয়ে ছেলের কোন ব্যাপার হলে তো কথাই নাই গ্রাম শুদ্ধ ঝাপিয়ে পরে । ছেলে মেয়েদের মানুষিকতাও সেভাবেই গড়ে উঠে । আমার তো এখানে কেউ নেই শহর থেকে নিজ গ্রামে ওখান থেকে চার গ্রাম দুরের পখে স্কুল জীবনের এক বন্ধুর কাছে । যার দেখা এখনো মেলেনি ও আসবে সন্ধা নাগাদ , নিয়ে যাবে ওদের বাড়িতে ততষ্কন যদি মেয়েটি চলে যায় । আমার আর বার সইলনা আস্তে ধিরে মেয়েটির সামনে দাড়িয়ে । আমি কিছু বলার আগেই হাসি মাখা মুখে কিছু বলবেন ভাই .. না মানে , আপনাদের বাড়ি কি এখানে , জি এই যে চিকন রাস্তাটা ধরে হাটতে থাকলে কিছুদুর যেতেই আমাদের বাড়ি । চটপটিয়ে পরিস্কার উচ্চারনে কথা বলছে আঞ্চলিকতার লেশ মাত্র নেই গ্রামের মেয়ে আমি অনেকটাই অবাক , তবে কথার সাথে ওর হাসিমাখা মায়াময় সাদামাঠা মুখটা আমাকে ইতিমধ্যেই জানান দিল ভয়ের কোন কারন নাই ।
তো আপনি কোথায় ..?
... এইযে মিরাজদের বাড়িতে আসছি ..
কোন মিরাজ ?
.. ওর বাবা স্কুল টিচার ?
.. দারান দারান সে কি সারাদিন মনিরখাঁনের গান গায় ?
.. হ্যা
.. তাহলে আপনি আমাদের মিরাজ কাকার বন্ধু ..
এবার বলুন কাকা আপনাকে কতষ্কন এখানে দাড় করিয়ে রেখেছে?
.. কেন বলতো ?
,চোখ উচু করে মেয়েটি তাকিয়ে .. দুঃখিত মুখ ফসকে বেড় হয়ে গেল .. না ঠিক আছে মানুষের সব মনের কথা মুখ ফসকেই বের হয় .. কিছুটা হকচাকিয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে ওর চোখের অষ্টপৃষ্ঠে আটকা পড়ে গেল আমার দুচোখ । এবার চোখ নামিয়ে আপনিটা আমার কাছে বিরক্তিকর , বয়সেতো আপনি আমার চেয়ে বড়ই হবেন তুমি করে বলুন ভাল লাগবে । তো কতষ্কন এখানে ..
এই ঘন্টাখানেক ..
মিরাজ কাকাদের বাড়ি চিনেন ..
না ও আসলে এখানকার দোকান বাড়ির ঠিকানা দিয়েছে এখানেই ওর আসার কথা ..
তাহলে কাকা ক্রিকেট খেলতে গেছে , মাঠ এখান থেকে বেশ দুর আসতে আসতে সময় লাগবে , চিন্তা করবেন না আমার ছোট ভাইটাকে পাশের বাজারে পাঠিয়েছি ও আসলেই আপনাকে নিয়া বাড়ির ভিতরে যাব ..
তোমাদের বাড়ি ..
হ্যা , ও আচ্ছা মিরাজ কাকার মেহমান মানে আমাদের বাড়ির VIP মেহমান গেলেই বুঝতে পারবেন ..
আচ্ছা ঐ পুচকেটা তোমার কাকা হলো কি করে ..
এটা একটা মজার ব্যাপার , ঐ যে আমার ভাই এসে গেল চলুন বাড়ির পথে হাটতে হাটতে বলি ..
তোমার নামটাতো বল্লেনা ..
সুখি .. আমার নাম সুখি...।
আপনার বন্ধু সিগারেট ধরিয়ে প্রথমে নিজে পরে বাবাকে দেয় তারা এক কাপ চাও ভাগাভাগি করে ,তাস খেলে ,ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা দেয় কি মজা পায় আল্লাহ্ জানে , বাবাকে সে সাকু ভাই বলে ডাকে । তোমার বাবার নাম কি সাকু .. না তার নাম সাখাওয়াত , কাকার উপর বাবার আনেক ভর্ষা সে আমাদের লোকাল গার্জিয়ান বাবা শহরে ব্যাবসা করায় সেই আমাদের ভাল মন্দ দেখে ।কথা বলতে বলতে অমরা সুখিদের বাড়ির কাছাকািছ চলে আসছি । কিছুটা আধার নামলেও আপছা আলয় দেখি ওদের বাড়ির সামনে অনেক বড় একটা পুকুর সেওলা পরা ঘাট , উঠনটা ছোটখাট মাঠের মত হবে তার একপাশে কুটার মেই গোয়াল ঘর , দুই দিকে শুধু ধানি জমি ,সব মিলিয়ে এ আমার চিরচেনা বাংলা । ওদের ঘরটা টিনের চালার কাঠের ঘর মেঝেটা মাটির ,দষ্কিন বাংলার বেশিরভাগ ঘরগুলো এমনি করা হয় । সুখি ওর মায়ের সাথে আমায় পরিচয় করিয়ে দিল সেতো মহা খুশি মিরাজের বন্ধু শুনে । আমাকে ওর বুড়ো দাদির কাছে বসিয়ে মায়ের সাথে রান্নাবান্নায় ব্যাস্ত হয়ে পড়ল । দাদি একটু চোখে কম দেখে তাতে কি এ বয়সেও তার ঞ্জানের পিপাষা এতটুকু কমেনি ।আমার হাতে একটা বই দিয়ে কাপা কাপা গলায় বলছে দাদুভাই একটু পড়ে শুনাওতো .. এই সুযোগে আমি দাদির কানের কাছে মুখ নিয়া প্রেতাত্বার গল্প শুরু করে দিলাম .. ও সুখি তুই কি বই আনলি বইয়ের ভিতরতো পেত্নি ভরা আমি বুড়া মানুষ ভয় লাগেনা । কতষ্কন আর বুড়ো দাদি ,ভাল লাগছেনা , আমি ওদের রান্না ঘরে গেলাম । সুখির মা একটা বেতের মোড়ায় আমায় বসতে দিল ,নানা গল্পে গল্পে চলছে সময় । অল্প সময়ে পরিবারের সবার সাথে মিশে যাচ্ছি , সুখি তার রুপ আর গুন দিয়ে বাড়ির সব কিছু মাতিয়ে রেখেছে । আমি যতই সবকিছু দেখছি মনে হচ্ছে বহুকাল থেকে যেন সুখিদের সাথে আমার ওঠা বসা । হঠাত্ দরজায় কে যেন কড়া নাড়ল , কে আবার বন্ধু মিরাজ ,কাকার আগমন শুবেচ্ছা স্বাগতম সুখির উল্লাস , গফুর দোকানদারের কাছে খোজ পেয়ে ও এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরে অনেক দিনের জমে থাকা সুখ দুঃখের নানা কথা বলতে বলতে আমরা রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করলাম ।সুখিদের সাথে আমার বনিবনা দেখে মিরাজ বার বার ষ্কেপে যাচ্ছে .. আমি বুঝি এখন আর কেউনা , সুখি বলে , তুমিতো আমাদের বাপের ভাই বাপরে বাপ । সুখি এবার এবার একটা শীতল পাটি নিয়া হাজির .. চলুন আজ পুর্নীমা , উঠনে বসে জোত্সনা দেখব .. উঠনে পাটি বিছাতেই আমি আর মিরাজ চিত হয়ে সুয়ে পড়লাম ,সারাদিনের ক্লান্তিতো একটু অছেই । আমার মাথার কাছে বসে আছে আমার সুখি । চোখের উপরে চাঁদ আর চোখের পাশে সুখি ,এক বেহায়য়া মায়া মন্ত্রে চেঁপে ধরেছে আমায় । বেসুরা গলায় মনের অজান্তে গেয়ে উঠলাম .. হায়রে কি করেছি , কার প্রেমে পড়েছি .. অকালেতে মরেছি ..গোপনেতে মরেছি .,, লজ্জা আদর হয়ে , ঐ চোখে মেথেছে , স্বপ্ন চাদর বুনে .. ঘুমিয়ে সে পড়েছে .. তাই কি অচেতনে ,. অমাকে সে ভেবেছে ...। ..
হঠাত করে সুখির হাত স্পর্শ করে আমার মাথায় ,, বালিশ এনে দেই .. কখন যেন উঠে এসে মাথা দিলাম ওর ভাজ করা হাটুর উপরে ..সুখি নিরব ., এবার জোত্স্না আরো উজ্জ্বল হয়ে উঠল , ঝির ঝিরে বতাসটা আর একটু বেড়ে গেল । হঠাত্ করে মিরাজ কাকা কথা বলে উঠল । আমি আর সুখি ভেবেছিলাম এতষ্কনে সে ঘুমিয়ে পরেছে । জি কাকা , আমিও বন্ধু মিরাজকে বলছি জি কাকা । মিরাজ এবার আমাদের সুখ সুখ ভালবাসায় গদো গদো দেখে খানিকটা আনন্দপূর্ন কৌতহলের ভঙ্গিমায় বলে উঠল .. জানো সুখি আমি জীবনে সবচেয়ে বড় ভুল করেছি কি .. সে আমি জানি বহুবার একথা আমার মাকেও বলেছ আমাকেও বলেছ .. ঠিক আছে আজ শেষ বারের মতো না হয় আমার বন্ধুকে বলছি .. আচ্ছা কাকা বলো .. ভুল নম্বর ১. আমি তোর বাবাকে ভাই ডেকেছি ২. তার সাথে সিগারেট খাই আবার তাস ওখেলি , এক কথায় তোর বাবা আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু , আর এর ফলাফল শুনবিনা .. জি কাকা , আমিও জি কাকা .. ফলাফল হল আমার স্কুল জীবনের বন্ধু আজ আমায় কাকা বলে ডাকছে , হ্যা ডাকছে । ওর কথা শুনে আমরা দুজনে হাসছি আর বলতে বলতে বন্ধু মিরাজ কাকাও হাসছে । সময়টা ছিল স্বপ্ন আর বাস্তবতা এক হয়ে গেলে যা কিছু হতে পারে ঠিক তেমন । সেদিন আনেক রাত অব্দি আমরা জোত্স্না জ্বলে সাতার কেটেছি দুটি প্রান । ঘুম থেকে উঠতে উঠতে সকাল ৯টা । চোখ খুলতেই শুনি উঠন জুড়ে বাচ্চা ছেলে পুলেদের হৈ চৈ চেচামাচি । ঘুম ঘুম চোখে ওদের উঠনে বের হতেই দাখি সে কি কান্ড আমার সুখি সেই সাত সকালে সবাইকে নিয়ে ক্রিকেট খেলছে শুধু তাই নয় কোমড়ে ওড়না পেচিয়ে পেচ বোলিং করছে , আর যে পুচকেটা ব্যাট করছে সে বলে , সুখিবু একটা বাউন্স দেও .. নারে পেটে খুদা এখন পারবনা , এই পোলাপান তোরা সব এখন যা , মেহমানদের নাস্তা দিতে হবে । সুখি এবার আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল , কি মেহমান এত বেলা করে কেউ ঘুম থেকে ওঠে , রাতে কি ঘুম হয়নি .. হিম হতেও পারে আবার নাও হতে পারে .. হি কথায়তো দুষ্ট দুষ্ট ভাব চেহারা দেখলেতো কিছুই বোঝা যায়না , ভালো ভালো । আমি আসলে না পারতে সুখির গভীর নয়নে চোখ ফেলাইনা । কারন আমাকে আর কিছু সময় পরই চলে যেতে হবে প্রথমে মিরাজদের বাড়ি ওর বাবা মার সাথে দেখা করে ওখান থেকে সোজা শহরে , এত মায়ার ভার সইব কি করে তাই বুঝি এত কাছে থেকেও তাকাতে পারিনা আমার সুখির দিকে । (গল্পটা অসুম্পুর্ন রেখেই শেষ করলাম কারন আমি বিশ্বাস করি প্রতিটি পুরুষের মনেই কোন না কোন সুখি ,সুখ ফেরি করে বেড়ায় , যে যার মতো গল্পটা মিলিয়ে নেবেন , শুধু ভুলনা আমায় )