somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"বিগ স্টোন ভিলেজ" জ্বালানী সাশ্রয়ী গ্রামঃ যেখানে পরিবেশ সচেতনতা পর্যটনকে প্রমোট করেছে

১২ ই মে, ২০১৬ রাত ১২:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



চীন নিয়ে লেখা আগের পোষ্টঃ চংকিং (Chongqing): চীনা কসমোপলিটন শহরঃ আমার ভ্রমণ বিড়ম্বনা (!)

শেষ দুপুরে সদলবলে আমরা ‘বিগ স্টোন ভিলেজে’ পদার্পণ করলাম! কমলা রোদের আভায় চারদিকে ঝকঝক করছে, বসন্তে সদ্য গজানো গাছের পাতাগুলো এই আলোতে আরোও সবুজ দেখায় আর রাস্তার দুই পার্শ্বের ফুটপাত আর বাড়ীর আঙ্গিনাতে হরেক রকমের বাহারি ফুল যেন রঙের বিজ্ঞাপন দিচ্ছ। সেই সাথে বাড়ীগুলোর ঐতিহ্য গত স্থাপত্য, রঙ আর সামনে ঝুলানো বাহারী ধরনের চৈনিক লন্ঠন আমাদেরকে যেন হঠাৎ মনে করিয়ে দেয় আমরা সত্যিই চীন দেশে এসেছি। গত তিন দিনে আমরা চীনের অত্যাধুনিক শহরে নান্দনিক স্থাপত্যের সুউচ্চ ইমারতমালা, উন্নত কারিগরি ভিত্তিক পরিবহন যোগাযোগ ব্যবস্থা আর বহুতল আয়েশি সরাইখানায় অবস্থানের কারণে মানস চোখে দেখা সেই চীনের সাথে তেমন কোন মিল করতে পারি নাই। আজকের এই চৈনিক ঐতিহ্যগত গৃহ নির্মাণশৈলী আর সাজসজ্জা আমাদের সেই সিনামায় দেখা লাল টালির ছাদ ওয়ালা বাড়ী সহ চৈনিক ছোট ছোট গ্রাম গুলোর কথা মনে করিয়ে দেয়, আমরা আরমোড়া ভেংগে যেন চাঙ্গা হয়ে উঠি।


'বিগ স্টোন ভিলেজে'র বাহারি তোরণ


গ্রামের পঞ্চায়েত অফিস কাম কমিউনিটি সেন্টার

‘বিগ স্টোন ভিলেজে’ আমাদের এটা পূর্ব নিধারিত সফর হওয়ার কারণে গ্রামের মুরব্বিরা আমাদের স্বাগত জানানোর জন্য অপেক্ষা করে ছিল। বাস থেকে নামতেই আমাদের কে তারা দিল-খোলা স্বাগত জানায় আর সমাদর করে নিয়ে যায় গ্রামের পঞ্চায়েতের অফিস কাম কমিউনিটি সেন্টারে। আমাদের আগমনের সন্মানে লাউড স্পিকারে বেশ উচ্চগ্রামে কোন আগমনী সংগীত বাজায় তা আমার কাছে মনে হয়ে যেন শরীরে উদ্দীপনা ছড়ানো এক ধরনের গন-সংগীত। আমাদেরকে সসন্মানে কমিউনিটে সেন্টারে বসানো হয়। গ্রামের মুরব্বি আর নেত্বস্থানীয়রা চীনা কায়দায় বাও করে আমাদের স্বাগত জানায়, একে একে উপস্থিত গ্রামের বিশিষ্ট ব্যাক্তিরা আমাদের সাথে পরিচিত হন।




গ্রামের নান্দনিক স্থাপত্য শৈলী

‘বিগ স্টোন ভিলেজ’ চীনের সান-ঝি প্রদেশের রাজধানী শি’আন শহরের উপকন্ঠে অবস্থিত একটি পরিকল্পিত ছোট গ্রাম। গ্রামটি পরিবেশসন্মত ও জ্বালানী সাশ্রয়ী টেকনোলোজী ব্যবহারের একটি রোল-মডেল তাই চীন দেশে গ্রামটি বেশ পরিচিত। জ্বালানী সশ্রয়ী (Energy Efficiency) টার্মটি প্রকৃতপক্ষে একটি কারিগরী বিষয়, স্বল্প জ্বালানী ব্যবহার করে তুলনামূলকভাবে বেশী পরিমান সেবা বা সুবিধা পাওয়ার কারিগরি বিষয়টিই জ্বালানী সাশ্রয়। উধাহরনস্বরূপ বলতে পারি, এখনো পর্যন্ত আমাদের প্রধান জ্বালানীর উৎস হল জ্বালানী তেল (Fossil fuel ) অথবা কয়লা। বিদ্যুৎ উৎপাদন ও প্রধানতঃ এই দুই জ্বালানীর উপরে নির্ভরশীল। এই ক্ষেত্রে যত কম বিদ্যুৎ ব্যবহার হবে ততই এই জ্বালানীর উপরে চাপ কম পরবে। আবার বিকল্প উপায়ে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ও এই জ্বালানীর উপরে কম চাপ ফেলে আবার যত কম জ্বালানী ব্যবহার হবে তত কম কার্বন ডাই অক্সাইড বায়ু মন্ডলে নিঃসরণ হবে। যার ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধিজনিত জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি কমবে আর ধরনির পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকবে। বিষয়টি প্রকৃতপক্ষে আন্তঃসম্পর্কীয় ও চক্রাকারে আবর্তিত।


গ্রামের ডাস্টবিন :) :)


বাচ্চাদের খুনসুটি


বাড়ীর সামনের সুন্দর লন


স্কুল বাস বাচ্চাদের নামিয়ে দিয়ে যচ্ছে

‘বিগ স্টোন ভিলেজে’র জ্বালানী সাশ্রয়ী বিষয়টা আরোও একধাপ এগিয়ে, এখানে দৈনন্দিন জীবনযাপনে জ্বালানী সাশ্রয়ী বিষয়টা তো চলমান রয়েছেই সেইসাথে গ্রামের সকল ঘড়বাড়ী ও অনান্য স্থাপনা নির্মাণে যে প্রযুক্তি ও নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে তাও জ্বালানী সাশ্রয়ী প্রযুক্তিতে তৈরী। যে ইটগুলো দিয়ে এই সকল অবকাঠামো তৈরি হয়েছে তাও জ্বালানী সাশ্রয়ী ও পরিবেশ বান্ধব পদ্ধতিতে তৈরী। ঘড়ে যাতে বিদ্যুতের আলো কম লাগে তাই এমন ভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যে দিনের বেলাতে যাতে কোন আলো জালানোর দরকারই না পরে। শীতকাল বাদ দিয়ে বাকি সময়টাতে লাইনের বিদ্য্যুৎ যথাসম্ভব কম ব্যবহার করে গ্রামবাসীরা যাতে সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার করে প্রতিটি বাড়ীতে সেই সুবিধা রয়েছে। গৃহস্থলী কাজে ব্যবহৃত পানি শোধন করে কৃষিকাজে সেচ দেয়া হচ্ছে সব কিছুতেই যত কম জ্বালানী ব্যবহার করা যায় সবসময়ে সেই চেষ্টা চলছে।

পরিচয় পর্ব ও আগমনী আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে আমারা গ্রাম ঘুড়ে দেখতে বের হলাম। ছোটবেলায় দেখা চীনা ভিউকার্ডে দেখা ছবির মত সাজানো গোছানো গ্রাম। এক একটি স্বতন্ত্র বাড়ী সুন্দর বেড়া দিয়ে ঘেড়া, সামনে সবুজ ঘাসে ছাওয়া লন, যা চীন দেশে এখন মোটামুটি বিরল। একদিকে আবার বাচ্চাদের খেলার যায়গা মনের সুখে বাচ্চারা হুটোপুটি খাচ্ছে। গ্রামের রাস্তার পার্শ্বে নান্দনিক ডাস্টবিন। স্কুলের গাড়ী এসে বাচ্চাদের বাড়ী বাড়ীতে নামিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। যেন ফেসবুকের কোন গেমস এ ঢুকে পড়েছি। গ্রামবাসী দের তৈরি ভিভিন্ন হাতের কাজের প্রদর্শনী দেখলাম, ইচ্ছে করলে পরযটকরা কিনতেও পারে। গ্রামবাসীদের সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে টুকিটাকি কথা বলতে বলতে আমরা গ্রামের নামকরনকৃত ‘বিগ স্টোন’ এর সামনে এসে দাঁড়িয়ে যাই।





গ্রামবাসী দের তৈরি হস্ত শিল্পজাত পণ্য


এই সেই 'বিগ স্টোন' যার নামে এই গ্রামের নামকরন

গ্রাম বাসীদের তথ্য মতে গ্রামের শতভাগ লোকই শিক্ষিত আর বেশীর ভাগ অধিবাসীদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পাশে অবস্থিত শি’আন এয়ারপোর্টের সাথে জড়িত থাকলেও ইদানিং তারা রেস্টুরেন্ট ব্যবসার সাথে জড়িত। ‘বিগ স্টোন ভিলেজে’র জ্বালানী সাশ্রয়ী প্রযুক্তি আর নান্দনিক সৌন্দর্য দেখতে প্রতিদিন প্রচুর পরিমানে আগ্রহী লোকজন, গবেষক আর পর্যটক আসে। এদের আপ্যায়ন আর চাহিদার ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে অনেক রেস্টুরেন্ট যা গ্রামবাসীর একধরনের বিকল্প আয়ের পথ খুলে দিয়েছে। ‘বিগ স্টোন ভিলেজ’ এক দিকে জ্বালানী সাশ্রয় করে পরিবেশ সংরক্ষণের ভূমিকা রাখছে আর সেই সাথে পর্যটক দের আকৃষ্ট করছে যার ফলে গ্রাম বাসী দের বিকল্প আয়ের পথ খুলছে।




গ্রামের রেষ্টুরেন্টগুলোর ছবি





রেষ্টুরেন্টের ইন্টেরিয়র

জাতিসংঘের সহযোগীতা ও চীনা সরকারের যৌথ উদ্যোগে ২০১৩ সালে জ্বালানী সশ্রয়ী বিষয়ে জনসাধারণকে সচেতন করতে এই ডেমোনেশট্রেশন গ্রামটি গড়ে তোলা হয়েছে। গ্রামটি ঘুড়ে দেখে আমাদেরও মনে হয়েছে প্রযুক্তি ব্যবহার করে জ্বালানী সাশ্রয় এখানে সফল হয়েছে এবং এই গ্রামটি জ্বালানী সাশ্রয়ের একটি যথাযথ মডেল।

======================================
ছবিঃ মানস চোখ ও তার একজন ভ্রমন সঙ্গী
ক্যামেরাঃ ক্যানন ১১০০ ডি ও আই-প্যাড
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মে, ২০১৬ সকাল ১১:১২
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কাঁঠালের আমসত্ত্ব

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

কাঁঠালের কি আমসত্ত্ব হয় ? হয় ভাই এ দেশে সবই হয়। কুটিল বুদ্ধি , বাগ্মিতা আর কিছু জারি জুরি জানলে আপনি সহজেই কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানাতে পারবেন।
কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানানের জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। অ্যাকসিডেন্ট আরও বাড়বে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



এরকম সুন্দরী বালিকাকে ট্র্যাফিক দায়িত্বে দিলে চালকদের মাথা ঘুরে আরেক গাড়ির সাথে লাগিয়ে দিয়ে পুরো রাস্তাই বন্দ হয়ে যাবে ।
...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×