মানস চোখের ভ্রমণ রঙ্গঃ পর্ব – ১
ভ্রমণের সময় আমাদের বিভিন্ন ধরনের ঘটন ঘটে, কিছু আছে হাস্যরসাত্মক আবার কিছু আছে বিরক্তি কর আবার কিছু আছে দুঃখ জনক। ভ্রমণে এই রকম মজার মজার ঘটনা বিস্তর ঘটতে থাকে, তবে বেশীরভাগই আমরা ফিরতে না ফিরতে ভূলে যাই। স্মৃতির পাতা থেকে এই ঘটনাগুলি লেখা শুরু করলাম। আজকে এই বিষয়ের দ্বিতীয় পোষ্টঃ
ঘটনা – ৩
এবারের ঘটনাটি হচ্ছে আমার প্রথম হোটলে/গেষ্ট হাউজে রাত কাটানো নিয়ে। ১৯৯৫ সালের কথা, আমি তখন মাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। একদিন দুপুরে ইউনিভার্সিটি থেকে বাড়ীতে রওনা দিলাম। যমুনা সেতু তখন নির্মাণাধীন, আরিচা বাদ দিয়ে সর্ট-কার্ট রুট হিসেবে ঢাকা থেকে টাঙ্গাইলের ভূয়াপুর ঘাট হয়ে লঞ্চে যমুনা পাড় হয়ে সিরাজগঞ্জ শহরে যাব।
শেষ বিকেলে ভূয়াপুর ঘাটে এসে দেখলাম শেষ লঞ্চটা ৩০ মিনিট আগেই ছেড়ে গেছে। আমরা বেশ কিছু লোকজন আটকে গেলাম, সবাই মিলে চেষ্টা করলাম একটা নৌকা ভাড়া করে নদী পার হতে। শীতের শুরুর সময়, তখন নদীতে পানি কম আর অনেক চর ঘুড়ে ঘুড়ে যেতে হবে আর কয়েক দিন আগেই একটা বড়সর ডাকাতির ঘটনা ঘটাতে পুলিশ কিছুতেই আমাদের যেতে দিলনা। ভূয়াপুর ঘাটে থাকার মত তেমন কোন সুবিধা ছিল না শুধু ২/৩ টা চিত-কাইত বোর্ডিং ছিল।
কি আর করা ‘নাজমা বোর্ডিং’ এ গিয়ে আশ্র্য় নিলাম, সিট ভাড়া ১৫ টাকা এক রাত। ঢুকে দেখি ঘড়ের মধ্যে দুই সারিতে দশটা দশটা বিশটার মত চৌকি পাতা আর চৌকি গুলো একটা আরেকটার সাথে লাগানো, এক ধরণের ঢালাও বিছানা। চৌকি ছাড়া আসবাব বলতে একটা কাঠের বড় সিন্দুক। বোর্ডিং এর নিজস্ব কোন শৌচাগার নাই, পাশে মসজিদের গনশৌচাগার এ যেতে হবে। বোর্ডিংওয়ালার কাছে সিট ভাড়া দিলে সে আমাকে ৪ নম্বর চৌকি বরাদ্দ দিল।
পাশের এক টং ঘড়ের ভাতের হোটেলে নদীর টাটকা চিংড়ি মাছ দিয়ে রাতের খাবার খেয়ে শোয়ার প্রস্তুতি নিলাম। একদিনের জন্য বাড়ীতে যাচ্ছি সাথে ব্যাগ-ট্যাগ তেমন কিছুই নাই। বোর্ডিংওয়ালা বর্ডারদের শোয়ার তাগিদ দেয় কারন চার জন করে একটা লেপ। প্যান্ট শার্ট আর মানিব্যাগ মাথার কাছে রেখে শর্টস পরে মাত্র শুতে যাব তখন সে বলতাছে ‘ভাই এগুলোতো এখানে রাখা যাবে না, চুরি হয়ে যেতে পারে’ তাই তার কাছে জমা দিয়ে রাখতে হবে তা না হলে তার কোন দায়িত্ব নাই। আমি পড়লাম মহা ফাঁপরে, সাথে আর জামা কাপড় নাই আর চুরি যদি হয়ে যায় তাহলে তো বিপদের চুরান্ত, শুধু শর্টস পরে খালি গায়ে লঞ্চে উঠতে হবে এই ভয়ে তারাতারি করে জিনিষ গুলো জমা দিয়ে দিলাম, সে কাঠের সিন্দুকে সব ঢুকিয়ে রেখে আর আমাকে একটা জমা দেয়ার রশিদও দিল, সার্ট – ১টা, প্যান্ট – ১টা, মানিব্যাগ – ১ টা, নগদ টাকা ১১৮ টাকা...... এই রকম। দেখলাম, বোর্ডিং চিত-কাইত হইলে কি হবে নিয়ম-কানুন কড়া।
যথারীতি শুয়ে পড়লাম, চার জন করে একটা লেপ, রোল করা লেপ এনে আমাদের উপর দিয়ে বিছিয়ে দিল। লেপের অবস্থা কি আর বিছানার অবস্থা কি ছিল তা নিশ্চয়ই ধারনা করতে পারছেন! জাস্ট একরাত তো কোন মতে পার করা তাই চোখ নাক বন্ধ করে শুয়ে পরলাম। যাই হোক অবশেষে কোনমতে মটকা মেরে রাত পার করলাম। ভোরে বোর্ডিংওয়ালার ডাকে ঘুম ভাঙল। উনি সবাইকে জাগাচ্ছেন আর বলতাছেন ‘ভাই আপ্নেরা জামা কাপড় ঠিক করেন এখন লেপ তোলা হইবো' এই ঘোষনার সাথে সাথেই দেখলাম সবাই বেশ তারাতারি উঠে পড়লো।
এই হল আমার প্রথম হোটেল বলেন আর বোর্ডিং বলেন আর গেষ্ট হাউজ বলেন থাকার অভিজ্ঞতা। অভিজ্ঞতা সত্যিই অসাধারণ, কি বলেন ? এর পরে তো জীবনে চলার পথে দেশে বিদেশে হরেক ধরনের অসংখ্য হোটেল আর গেষ্ট হাউজে থেকেছি আর থাকছি, কিন্তু এই অভিজ্ঞতা আজও ভুলতে পারি নাই।
=============================================
ব্যবহৃত ছবিটি গুগল থেকে নেয়া
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মে, ২০১৬ দুপুর ১:৪৫