যখন খুব বেড়াতে যেতে ইচ্ছা করে কিন্তু যেতে পারি না তখন মনের কোনে খুব নস্টালজিয়া চেপে যায়। পুরানো কোন বেড়ানোর ছবি দেখতে থাকি অথবা মানস চোখে পুরানো সব বেড়ানোর ঘটনা মনে করে নিজে নিজেই মজা পেতে থাকি, ঠিক যেন “পাগলের সুখ মনে মনে”। অফিসে আসার পথে আজকের এই মেঘলা মেঘলা আবহাওয়ায় ইচ্ছা করেছে অফিসে না ঢুকে কোন এক দিকে চলে যাই । কিন্তু বিধি বাম, কিছুই করার নাই!! নাহ !! করার আছে…… দুই একটা ভ্রমন সাথে জড়িত মজার ঘটনা মনে করি……
ঘটনা – ১
একবার ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাচ্ছি সোহাগ পরিবহনে ২০০৫/৬ সালের দিকের কথা, তখন সোহাগ পরিবহনের ভলবো বাস গুলো নতুন আর ব্যপক হাই-ফাই অবস্থা, সামনে বিজনেস ক্লাস আবার পিছনে ইকোনমি ক্লাস। চট্টগ্রামে যাওয়ার বাস, মালিবাগ থেকে যথাসময়ে বাস ছাড়লো, বাস যাত্রাবাড়ী পাড় হওয়ার পড়েই একজন বেশ উচ্চস্বরে মোবাইলে কথা বলা শুরু করলো।
ঃঃ- হ্যালো স্যা…র ! স্লামালেকুম !!
- জ্বী স্যার ভালো
- জ্বী…জ্বী, স্যার আমি তো সিলেট যাচ্ছি!!
- কোন সমস্যা নাই স্যার আমি অলরেডী সিলেটের পথে……
- জ্বী… জ্বী……
তার কথা শুনেই তো আমার মাথা মোটামুটি খালি, এক সেকেন্ডের মধ্যে চিন্তায় পরে গেলাম, বাস কি ভূল করলাম আমি তো যাবো চট্টগ্রাম আর যেনে শুনেই উঠলাম এখন আবার এই বাস সিলেট যায় ক্যামনে? না-কি এই লোক ভূল করলো? বাসে মধ্যে লক্ষ্য করে দেখি একধরণের মৃদু গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। বিজনেস ক্লাস থেকে বেশ একজন হোম্ড়া-চোমড়া গোছের লোক সুপারভাইজার কে ডেকে কৈফিয়ত শুরু করলো। সুপারভাইজার তো শুনে আকাশ থেকে পড়লো সে বললো বাস তো চট্টগ্রামেই যাচ্ছে। তখন আমরা বললাম ‘মফিজ কট’ এই লোক ধরা খাইছে সে সিলেটের মনে করে চট্টগ্রামের বাসে উঠে বসে আছে। সুপারভাইজার তাকে গিয়ে বলাতে সে শুধু হাসে বলে ‘ভাই আমরা সবাই ঠিক বাসেই উঠছি, আমিও চট্টগ্রাম যাব, কিন্তু আমার বস জানে আমি সিলেট যাচ্ছি, তাই বসকে কনফার্ম করলাম…”। শুনে পুরো বাসে মোটামুটি এক হাসির রোল ঊঠলো।
ঘটনা – ২
প্রথম বার থাইল্যান্ড গিয়েছি, সেই ২০০১ সালে আর আমি মাত্র ফ্রেশ গ্রাজুয়েট, তখন আমাদের দেশ থেকে থাইল্যান্ডে এতও লোক বেড়াতে যেত না। আর আমারও ঐটা ছিল প্রথম বিদেশ যাওয়া। যারা থাইল্যান্ডে আগে গিয়েছে তাদের কাছ থেকে জ্ঞান নিচ্ছি। মোটামুটি সবাই খাবারের ব্যাপারে সাবধান করে দিল, একেতো হালাল খাবার কম তারপর আবার খাবারে গন্ধ। মাংশ-টাংশ যেন না ধরি, ইত্যাদি… ইত্যাদি। যাইহোক, প্রথম রাতের ডিনারেই বিপদে পড়লাম, একটা ইউনিভার্সিটির ক্যাফেটোরিয়াতে রাতে খেতে গেছি, বুফে সিস্টেমের খাওয়া, যথারীতি গন্ধ তো লাগছেই আর নতুন ধরনের খাবারে গন্ধতো অন্য রকম হবেই কিন্তু আমার গন্ধ নিয়ে তেমন কোন বিড়ম্বনা নাই কিন্তু সমস্যা হচ্ছে খাবার চিনি না। একটু দুরের টেবিলে দেখলাম একজন এক বাটি ভাত আর একটা ডাব নিয়ে বসেছে। আমি ডাব দিয়ে ভাত ক্যামনে খাবে তা চিন্তা করতাছি তারপরেও যেহেতু এইটা চেনা খাবার আমিও গিয়া একবাটি ভাত আর একটা ডাব নিয়ে আসলাম। বেশ কষ্ট করে কয়েক চামুচ ভাত আর ডাবের পানি দিয়ে খাওয়া শেষ করলাম। আমার খাওয়া শেষের পরে আমি দেখলাম ঐ ব্যাটা উঠে গিয়ে আরও অনেক কিছু নিয়ে আসলো, তখন বুজলাম এইটা ওর মেইন কোর্স ছিল না জাস্ট এপিটাইজার। আমি আর কি করি এক বোতল জুস কিনে খেতে খেত রুমের দিকে গেলাম। এখনও এই ঘটনা মনে পড়লে একা একা হাসি।
আজকে জন্য এই দুইটাই থাক…… আবার মনে পড়লে শেয়ার করবো !!!!
(……চলমান)
মানস চোখের ভ্রমণ রঙ্গঃ পর্ব – ২
=====================================
ছবিঃ গুগল থেকে নেয়া
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মে, ২০১৬ রাত ১০:২৪