পেশাগত কাজের ধারাবাহিকতায় যখন অফিসের বাইরে বিশেষকরে ঢাকার বাইরে থাকি তখন ঘড়ির কাঁটার দিকে ব্যাপক মনযোগী হতে হয় আর যদি কোন কর্মশালা সংগঠন বা বিশেষ কারো সাথে বা প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের সাথে দেখাকরা, আলোচনা থাকে তা হলে এই মনযোগের গুরুত্ব আরও কয়েকগুণ বাড়াতে হয়। গতমাসের শেষের দিকে এই রকম অতিগুরুত্বপূর্ণ (প্রকল্পের জন্য) কর্মশালা সংগঠনের কাজে কয়েকদিন সিলেট থাকতে হয়েছিল। উন্নয়ন কাজের সাথে যারা জড়িত তারা নিশ্চয়ই জানেন ২/৩ দিনের একটা আবাসিক কর্মশালা সংগঠন যে কতটা প্যানা মার্কা কাজ... হাজারো বিষয়/সমস্যা নিয়ে একসাথে কাজ করতে হয়! যাই হোক “ধান বানতে শিবের গীত শুরু করছি” আপনেরা আবার মাইন্ড খাইয়েন না ভাইবেননা যে ব্যাটা শিরোনামে কি দিয়েছে আর এইখানে কি লিখতাছে!!!!
ওই যে বললাম হাজারো কাজের সাথে দিন কাটাচ্ছিলাম, সকাল থেকে রাত দুইটা এমন দুই দিন কেটে গেল, চারদিকে এত সুন্দর-সুন্দর যায়গা কিন্তু এদিক ওদিক তাকানোর কোন চিপাই নাই। সকাল ৯ টায় চেয়ারম্যানের সাথে দেখা করার সূচী তো ১১ টায় পাবলিক কন্সালটেশ্নের জন্য দৌড় আবার ১২ টার সময় মাঠকর্মের স্থান নির্বাচনের জন্য ছোটা এই রকম অবস্থা।
এইবার আসল কথায় আসি, ইদানিংকালে পত্র-পত্রিকা আর ব্লগের কল্যাণে সিলেটের “রাতারগুল” জলজ বন (Swamp Forest) বেশ পরিচিত আর আমরা যেখানে ছিলাম সেখানে কাছাকাছি কোথাও এর অবস্থান। এক সময় সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় ব্যাপক দৌড়াদৌড়ির কল্যাণে টাঙ্গুয়ার হাওরের অনেক জলজ বন দেখেছি আর আমার আগের কর্মস্থল সুনামগঞ্জের শনির হাওরে বেশ বড় এলাকা জুড়ে কয়েকটা ক্লাস্টারে এই সকল জলজবন সৃজন করেছে যা ২০০৭ সালের দিকে দেখেছি মোটামুটি প্রাকৃতিক বনের আকার ধারন করেছে। সংগতকারনেই এই বিষয়ে আমার বেশ আগ্রহ আর রাতারগুল তো সবচেয়ে বড় “জলজ বন”। এতো কাছাকাছি এসেও “রাতারগুল” এ যাওয়া হবে না এইটা মানা যাচ্ছিল না আর আমার সহকর্মীরাও আরও অতিমাত্রার আগ্রহী। যাই হোক অনেক হিসাব-কিতাব করে দেখা গেল যে কর্ম দিবসে ২/৩ ঘণ্টার কোন চিপা-চাপা নাই যে ওইখানে একটা ঘুরান্তি মারা যায়। কি আর করা ব্যাপক গবেষণা করে ফলাফলে একটা সময়ের স্লটই বের হল ভোর ৫ টা থেকে সকাল ৯ টা যাতে আমরা ১০ টা থেকে রুটিন কাজ শুরু করতে পারি। সময়সূচী দেখে আমার তো মাঝারী থেকে ভারী মানের একটা ভিমড়ি খাওয়ার দশা, আমার চিন্তা হল ২ টাতে ঘুমিয়ে ৫ টাতে কেমনে উঠবো এই চিন্তায় বাকি ৩ ঘণ্টার ঘুমের ১২টা বাজল। একমাত্র দেখাগেল আমাদের “Com” ভাইর মুখ হাসি হাসি এবং বোঝা গেল সেই একমাত্র এই সময় সূচীতে যেতে ব্যাপক আগ্রহী, পরে অবশ্য তার হাসির রহস্য পরিষ্কার হয়েছিল।
বনের পাশ দিয়ে বয়ে চলা গোয়াইন নদী
সময়সূচী তো ঠিক হল এবার এর অবস্থান জানতে হবে আর কি ভাবে যেতে হবে তা ঠিক করতে হবে এদিকে যারেই জিজ্ঞাসা করি সে বলতে পারেনা, একজন শুধু আরেকজনকে দেখিয়ে দেয় অবশেষে স্থানীয় একজনের কাছ থেকে জানা গেল “রাতারগুল” স্থানীয় ভাবে “সুন্দরবন” নামে পরিচিত তিনি আমাদের বিস্তারিত তেমন কিছু জানাতে পারলেন না শুধু বললেন তামাবিল রোডে কিছুদূর গিয়ে তারপরে ছোট রাস্তায় যেতে হবে। গুগল ম্যাপে একটু ঘাটাঘাটি করে দেখলাম “রাতারগুলের” একটা ল্যান্ডমার্ক দেওয়া আছে যাক কিছুটা ভরসা করা গেল।ভোর ৫টাতে ঘুম থেকে উঠার ব্যাপক টেনশন নিয়ে ঘুমাতে গেলাম, মনে হল মাত্র ১০/১৫ মিনিট ঘুমাইছি এর মধ্যে ফোন এক সাথে ইন্টারকম আর মোবাইল একসাথে বাজার শব্দে ঘুম ভাঙ্গল, কি আর করা ঘড়ীতে দেখি ৫.৩০ আর বাইরেও আলো দেখা যাচ্ছে। কোনমতে তৈরী হয়ে বাইরে এসে দেখি বাহিনী রেডী কিন্তু আমাদের “Com” ভাই নাই, সে ঘোষণা দিয়েছে তাকে ক্রেন বা বুলডেজার দিয়াও উঠান যাবে না, এইবার তার রাতের হাসির ব্যাপারটা বোঝা গেল। সে মোটামুটি আমাদের স্ক্রু-ঢিলার পর্যায়ে ফেলেছে সে নিশ্চয়ই ভেবেছে এই বেটারা সুস্থনা, সুস্থ হইলে ভোর ৫টার সময়ে উঠে ক্যামনে? কি আর করা তার আর বস এর রুমের দরজার সাথে আমারা যুদ্ধ ঘোষণা করেও যখন কোন ফলাফল পেলাম না তখন আমরা বাকি কয়েকজন রণে ভঙ্গ দিয়ে গন্তব্যে রওনা হলাম। রাস্তাতো চিনি না একমাত্র গুগুল মামুই ভরসা, মোবাইলে জিপিএস তা চালাইয়া ইয়ালি বলে রওনা দিলাম। এই সময়ে মনে হইল আর যাই হোক ভূগোলশাস্ত্র পড়াটা বৃথা যায় নাই। জিপিএস আর গুগুল ম্যাপ ট্রাকিং করে অবশেষে কিছু সময় পরে যায়গা মত পৌঁছালাম সাথে হাপ ছেঁড়ে বাচলাম এই ভেবে যে যাই হোক মান-সন্মান রক্ষা পেয়েছে তবে যায়গা চেনার ব্যাপারে আমি বরাবরই আত্মবিশ্বাসী (সুযোগ মত মাইরা দিলাম) ।
বন থেকে একটু দূরে গোয়াইন নদীর পাশে ২/৩ তা দোকান নিয়ে স্থাপিত একটি বাজারের মত যায়গাতে প্রথমে থামলাম, দোকানে সবাই এই সকালে চা আর বিস্কুট খেয়ে বনের দিকে রওনা দিলাম। বেতের ঝাড় আর মুরতার (পাটি পাতা) ঝোপ-ঝাড়ের পাশ দিয়ে বনের দিকে হাটা শুরু করলাম। মিনিট পাঁচেক হাটার পর ছোট কিছু স্থাপনা সহ ঘাসে ছাওয়া একটা মাঠের সামনে পৌছালাম পাশে গোয়াইন নদী একটা ছোট বাঁক নিয়ে বয়ে যাচ্ছে। নদীর পাড়ে একটা বাঁশের বেঞ্চ, সেই সকাল বেলার কমলা রঙের নরম রোদের নদীর পানিতে ঝিঁকিমিকি খেলা অসম্ভব সুন্দর লাগছে। সিলেট অঞ্চলের নদী গুলো আমার কাছে এমনিতেই খুব পছন্দের সুরমা, কুশিয়ারা, পাটলাই, জাদুকাটা প্রতিটা নদীই সুন্দর। শুষ্ক মৌসুমে যখন পানি কম থাকে তখন নদীর পাড় গুলো অনেক উঁচু থাকে। যায়গাটা এতও সুন্দর যে এখানে বসে থেকেই দিন পার করে দেওয়া যাবে।
বনের মধ্যে পায়ে চলা পথ
এর পরে বন বিভাগের অফিসের পিছন দিক দিয়ে বনে ঢুকলাম, বনের মধ্যদিয়ে একটা পায়ে চলা পথ, এই গরমে বাইরে যেখানে সূর্য মামা অকাতরে তার তাপ বিকিরণ করতে শুরু করেছে সেখানে বনের মধ্যে এক ধরনের স্নিগ্ধ শীতলতা বিরাজ করছে। সেই সঙ্গে শহুরে অনাভ্যাস কানে হাজারো পাখির কূজনে কেমন যেন একটু দিশেহারা দিশেহারা লাগা শুরু হল। কিছুক্ষন এই দিশেহারা ভাবে হাটার বনের মাঝে একটা খালের দেখা পেলাম যেখানে এই শুষ্ক মৌসুমেও বেশ পানি রয়েছে। আসলে আমারা যেখান দিয়ে হাটছিলাম আর এক মাস পড়েই এই যায়গা পানিতে থই-থই করবে। খালের কাছে গিয়ে যদিও কয়েকটা ডিঙ্গি নাও ভেড়ানো দেখলাম কিন্তু সবগুলো শেকল আর তালা-চাবি দিয়ে আটকানো। ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল ৭ টার মত বাজে, আসলে আমাদের মত এতও রসিক(!) আর আউলা টাইমের পর্যটক ছাড়া এত সকালে মনে হয় কেউ আসে না।
সুনসান নিরব বন
বনের মাঝে করচ গাছ
করচ গাছের ঝুরি
এই ফাঁকে আপনারা যারা রাতারগুলে কখনও যান নাই অথবা যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন তাদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি "রাতারগুল জলজ বন” সিলেট শহর থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার উত্তরে গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের গোয়াইন নদীর পাড়ে অবস্থিত।সিলেট শহর থেকে তামাবিল রোড দিয়ে তামাবিলের দিকে বেশকিছু দূর গেলে হরিপুর, সেখান থেকে বা দিকে রাতারগুল যাওয়ার রাস্তা চলে গেছে এবং জনসাধারণের সুবিধার্থে রাতারগুল যাওয়ার দিক নির্দেশনা দেওয়া আছে। “রাতারগুল জলজ বন” এর মোট আয়তন ৩,৩২৫.৬১ একর এর মধ্যে ৫০৪ একর ১৯৭৩ সালে বন্য প্রানীর অভয়ারণ্য হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে । এই বনের প্রধান গাছ হ "হিজল" (ইংরেজি নামঃ Indian Oak আর বৈজ্ঞানিক নামঃ Barringtonia acutangula )আর "করচ” (ইংরেজি নামঃ Milletia pinnata আর বৈজ্ঞানিক নামঃ Pangammia pinnata)এই দুই প্রকার গাছই জল-সহিষ্ণু এবং বছরের প্রায় ৬ থেকে ৯ মাস জলের সাথে সহবস্থান করে।
সিলেটের সুন্দরবন
সিলেটের অ্যামাজানও বলা যায়
এই রকম কিছুক্ষন হাঁটাহাঁটির পরে আমরা তালা দেওয়া এই রকম একটা ডিঙ্গি নায়ে উঠে বসলাম, আশা যে মাঝী ভাই হয়তো সহসাই আসবেন।সত্যি সত্যি খানিক পরেই কর্দমাক্ত অবস্থায় জাল আর মাছের খালুই সহ মাঝী ভাই এলো, সে মাছ ধরায় ব্যস্ত ছিল আর এর মাঝেই তার কাছে খবর চলে গেছে যে আমরা তার নায়ে বসে আছি। আমরা বেশ কিছুক্ষন তার নায়ে ভেসে ভেসে বনের চিপা-চাপায় প্রবাহিত খালে ঘুড়ে বেড়ালাম। আসলে এই বনের সৌন্দর্যের বর্ণনা আমার এই দুর্বল লেখনীর (প্রকৃতপক্ষে কীবোর্ডের)মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব নয়।
প্রসঙ্গত আমরা যে সময়ে “রাতারগুল” এ ভ্রমণ করছি তখন এই বনে বন বিভাগ কৃত্বর্ক একটি ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ কাজ চলছিল এবং সেই সাথে বনের মাঝ দিয়ে পায়ে চলা রাস্তাটি পাকা করার পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছিল আর এই নিয়ে দেশব্যাপী পরিবেশ সংগঠন গুলো জনসচেতনতামূলক ও এই নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার দাবীতে আন্দোলন চালাচ্ছিল। আগের দিন বিকালেও সিলেট শহরে এই বিষয়ে মানব্বন্ধন হয়েছে। আমরা চোখের সামনে বাস্তবায়নরত ওয়াচ টাওয়ারের নির্মাণ কাজ দেখলাম, এই নিরন্তর প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে ইট-রড-সিমেন্টের এই স্থাপনা আমদের দিকে ব্যাঙ্গাত্তক ভাবেই তাকিয়ে ছিল যা বার বার আমদের কে মনে করিয়ে দিচ্ছিল পরিবেশের উপড়ে আমাদের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাবে করা নির্মম অত্যাচারের কথা।
সত্যি অসাধারণ
সেই বিতর্কিত ওয়াচ টাওয়ার
ওয়াচ টাওয়ারের কথা না হয় বুঝলাম এই খান থেকে বনের নিরাপত্তা ব্যবাস্থার সুবিধা করা যাবে আবার পর্যটকরা পাখির চোখে বনকে দেখতে পাবে কিন্তু এই বনে পাকা রাস্তার কি প্রয়োজন তা আমার মত স্বল্প বুদ্ধির মানুষের হয়তো মাথায় আসছে না। রাস্তার জন্য কার সুবিধা হবে? যারা এই বনে আসবে তারা বন বা প্রকৃতিকে ভালোবেসেই আসবে তাদের জন্য মনে হয় না যে রাস্তা খুব জরুরী। পর্যটন যে সবসময়ে ব্যপক বা সব ধরনের সুবিধা সম্বলিতই হবে এমন তো নয়, আমরা তো ইদানিং পার্বত্য জেলাগুলোতে ঘুরে বেড়াচ্ছি, সেখানে দুই দিন তিন দিন হাটা রাস্তায় বিভিন্ন যায়গাতে যাচ্ছি, স্থানীয় মানুষ জনের বাড়ীতে স্বল্প পয়সার বিনিময়ে রাত কাটাচ্ছি, এই খানে আমাদের জন্য রাস্তা-ঘাট অথবা আধুনিক সুবিধা কিছুই লাগছে না। আসলে “ইকো ট্যুরিজম” এমনই। পর্যটকরা পরিবেশ ও স্থানীয় সমাজের সাথে মিশবে সব দেখবে কিন্তু উভয় বিষয়ের কোন ক্ষতি করবো না বরং স্থানীয় জনসাধারন কিছুটা লাভবান হবেন সেই সঙ্গে পরিবেশের টেকসই উন্নয়ন হবে। তবে সুখের বিষয় হল এই লেখাটা যখন লিখছি বন বিভাগ ততদিনে উল্লেখিত নির্মাণ কাজ সাময়িক ভাবে বন্ধ করেছে তবে এই বোধদয় হতে বেশ আন্দোলন দরকার হয়েছে।
যাই হোক লিখতেছিলাম “রাতারগুল” জলজবনে আমাদের একটা ঝটিকা ভ্রমণ নিয়ে, এই লেখা লিখতে অনেক প্রাসঙ্গিক বিষয় চলে এসেছে, কি আর করা? এই অন্যরকম সকালে মাত্র যখন ভাবছি... ইস...!! একটা হ্যামক নিয়ে আসলে ভালো হত... দুইটা গাছের সঙ্গে বেঁধে শুয়ে শুয়ে পাখির গান আর এই নির্জনতা উপভোগ করা জেত...... সেই মুহূর্তেই সহকর্মীদের ফেরার তারা আর বেরসিক (!) কাজের কথা মনে করিয়ে দেওয়া... প্রায় নয়টা বাজতে চলল... আমাদের কাজ আছে না। তাই অবশেষে বনের বাইরের দিকে বাধ্য হয়ে হাটা শুরু করতে হল। তবে আমাদের সবারই মনে হল আবার আসতে হবে অবশ্যই বরষায় আর এই আসন্ন বরষায়ই...!!
===============================
পুনশ্চঃ এই পোস্টে ব্যবহৃত ছবি গুলি লেখকের একজন সহকর্মীর তোলা এবং ব্লগে প্রকাশিত হবে জেনে সে খুবই আনন্দের সাথে ছবি গুলি ধার দিয়েছেন!!! লেখক তার এই সহযোগিতা ধন্যবাদের সাথে গ্রহণ করেছে । সেইসঙ্গে লেখকের অন্যান্য সহকর্মীদের, যাদের ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ছাড়া এই ঝটিকা সফর সম্ভব হতনা তাদের সেই উৎসাহ-উদ্দীপনার প্রতি যথাযথ মর্যাদা জানাচ্ছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮