আমার এই ছন্দের ক্লাসে আমি তাদেরকে শিক্ষার্থী হিসাবে আশা করি যারা কবিতার ছন্দ শিখতে চান। আর পাঠকহিসাবে তাদেরকেও আশা করি যারা ইতিমধ্যেই কবিতার ছন্দ ভাল ভাবেই জানেন। অভিজ্ঞরা এই ব্লগে এলে আমার এগোতে সুবিধা হবে। তারা আমাকে পরামর্শ দিয়ে আশা করি অবশ্যই উৎসাহিত করবেন।
বিভিন্ন সময়ে সামুতে অনেক কবিতা প্রকাশিত হয়। দুঃখের বিষয় তার বেশির ভাগই ভুল ছন্দে লেখা। আমি যারপরনাই অবাক হয়ে যাই যখন দেখি সেগুলির মধ্যে অনেকগুলিই আবার নির্বাচিত পাতায় স্থানও পায়। তখন বুঝতে পারি মডারেটররাও ছন্দে কাঁচা।
সুতরাং অনেক দিন থেকেই এই পোস্টটি দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করছি। তৈরি করতে একটু সময় লাগল।
আমার প্রিয় শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলছি, কবিতার ছন্দ পৃথিবীর সহজতম বিষয়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে সহজ। মাত্র তিন/চারটি ক্লাসেই আশা করি আপনারা ছন্দ বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠবেন। আমি ভবিষ্যতের কথা ভেবে এখনি পুলকিত হয়ে উঠছি যে এবার সামুতে আর প্রবোধ চন্দ্র সেনের অভাব বোধ করব না।
পুরো আলোচনাতেই আমি খুব গভীরে যাব না। আমার একমাত্র উদ্দেশ্য কত সহজে এবং সংক্ষেপে বাংলা ছন্দ সম্পর্কে অজ্ঞদেরকে ধারণা দেয়া যায় যাতে আমাদের সামু ছন্দনির্ভুল কবিতায় ভরে ওঠে। যারা মুক্তছন্দে লিখতে চান তারা যেন অবশ্যই জেনে-শুনে-বুঝে ছন্দের প্রাচীর ভেঙ্গে মুক্ত পরিবেশে এগোতে পারেন সেটাও আমার একটি উদ্দেশ্য।
ছন্দ কি তবে কোনো বাধা? না বন্ধুরা ছন্দ বাধা নয় বন্ধন। সম্পর্কের বন্ধন। অর্থাৎ আমি বলতে চাচ্ছি ছন্দ আমাদের কবিতা লিখার পথে বাধা বা অন্তরায় নয়; একটা মধুর বন্ধন। ধরা যাক সেটা বন্ধুত্বের বন্ধন। সাধারণত বন্ধুত্বের বন্ধন আপনি তৈরি করবেন কি করবেন না, কার সাথে করবেন, কখন, কোথায় করবেন এবং কতটা গভীরভাবে করবেন সে সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারে আপনি যেমন স্বাধীন ঠিক তেমনি প্রত্যেক কবিও স্বাধীন তিনি তার কবিতায় ছন্দের বন্ধন মানবেন নাকি মানবেন না; মানলে কতটুকু মানবেন, কিভাবে মানবেন।
আপনি একজন কবি, সৃষ্টিশীল মানুষ।আপনার সৃষ্টির প্রয়োজনে আপনি ইচ্ছা করলে প্রতিটি কবিতাতেই ছন্দকে অস্বীকার করতে পারেন। অর্থাৎ প্রতিটি কবিতাই ছন্দহীন লিখতে পারেন। যেমনটি করেছিলেন সমর সেন। আবার এর উল্টোটাও করতে পারেন। কিংবা চলতে পারেন দুটি পথেই, যখন যে পথ আপনাকে ডাকে বা টানে।
যা হোক উপক্রমনিকা আর লম্বা করতে চাচ্ছি না।
দেখতে পাচ্ছি আমার কচিকাঁচা শিক্ষার্থীরা উসখুস করতে শুরু করেছেন। শুরুতেই কয়েকটি শব্দের অর্থ আপনাদেরকে জানতে হবেঃ-
১) দল: পাঁপড়ি, খণ্ড। Syllable, বাকযন্ত্রের এক প্রয়াসে উচ্চারিত ধ্বনিখণ্ড। অর্থাৎ একটি শব্দ উচ্চারণ করতে গিয়ে এক বারের চেষ্টায় যতটুকু আমরা উচ্চারণ করতে পারি।
শিক্ষার্থীরাঃ শিক্ + খার্ + থী + রা শব্দটিতে মোট চারটি দল। —
দল মোট দুই রকমের যথা –
ক। মুক্তদলঃ থী + রা
খ। রুদ্ধদলঃ শিক্ + খার্
উচ্চারণ ভেদেও দুটি রূপ, যথা –
ক। হ্রস্বদল (short syllable): মুক্ত বা রুদ্ধ দু’প্রকার দলই হ্রস্ব বা অপ্রসারিত বা সংকুচিত রূপে উচ্চারিত হতে পারে। অর্থাৎ অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা।
খ। দীর্ঘদল(long syllable): সাধারণত রুদ্ধদল, যা প্রসারিত রূপে উচ্চারিত হয়।
২) কলাঃ একটি হ্রস্বদলের (মুক্ত/রুদ্ধ) সম পরিমাণ ধ্বনি = এক কলা। একটি দীর্ঘদল = দুই কলা ।
৩) মাত্রা(unit of measure): যে কোনো বস্তু পরিমাপের আদর্শ মান। এখানে ছন্দ মাপের আদর্শ মান বা একক।
৪) পর্বঃ পর্যায়, অংশ
আরেকটা জিনিস যেটা স্পষ্টভাবে সকলের জেনে রাখা উচিত সেটা হচ্ছে অন্তমিল কোনো ছন্দ নয়; ছন্দের উপাদানও নয়। কবিতায় অন্তমিল দেখলেই আমরা অনেকেই মনেকরে বসি এটা বুঝি ছন্দে লেখা কবিতা। না এ ধারণা অজ্ঞতারই পরিচায়ক। সামনের আলোচনায় ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দেব, আমার ক্লাসে যারা হাজির আছেন এতটুকু মনে রাখেন যে অন্তমিল ছন্দ নয়।
বাংলা কবিতার ছন্দ মোট তিন প্রকার।
১) দলবৃত্ত বা স্বরবৃত্ত ছন্দ ২) কলাবৃত্ত বা মাত্রাবৃত্ত ছন্দ ৩) মিশ্রকলাবৃত্ত সংক্ষেপে মিশ্রবৃত্ত ছন্দ।
১) দলবৃত্ত ছন্দঃ আমি এটাকে ভাবি বা দেখি সবচেয়ে সহজ ছন্দ হিসাবে। এবং বলি দলবৃত্ত হচ্ছে স্বাভাবিক ছন্দ। আমাদের স্বভাবের সাথে এই ছন্দটা মিশে আছে। তাই ছন্দ সম্পর্কে কিছু না জেনেই প্রায় সবাই এই ছন্দে দু’চারটি কবিতা প্রায় নির্ভুলভাবে লিখে ফেলেছি। যেহেতু এই ছন্দের চলন-বলন, ঠমক-ঠামকের সাথে আমরা পরিচিত সেহেতু আমি এনাকে দিয়েই শুরু করলাম।
দলবৃত্ত রীতিতে মুক্ত বা রুদ্ধ উভয় দলই সাধারণত এক মাত্রা। অর্থাৎ হ্রস্বদল।
সাধারণত – সা+ধা+র+ণ+ত = ১+১+১+১+১ = ৫ মাত্রা,
উজ্জীবন – উজ্+জী+বন্ = ১+১+১ = ৩ মাত্রা
ঝটপট – ঝট্+পট্ = ১+১ = ২ মাত্রা
উদ্ভট – উদ্+ভট্ = ১+১ = ২ মাত্রা
উজ্জয়িনী – উজ্+জ+য়ি+নী = ১+১+১+১ = ৪ মাত্রা
এবার দলবৃত্ত ছন্দে লেখা কিছু কাব্য উদাহরণ তাহলেই আশা করি পরিষ্কার হয়ে যাবে এই ছন্দের প্রকৃতি।
১)
তুমি মানে আশার প্রদীপ তুমি মানে বাতি
তুমি মানে দিন যাপনের মিষ্টি চড়ুইভাতি।
পর্ব ভেঙে ভেঙে দেখালে –
তুমি মানে/ আশার প্রদীপ/ তুমি মানে/ বাতি ৪+৪+৪+২=১৪-মাত্রা
তুমি মানে/ দিন যাপনের/ মিষ্টি চড়ুই/ভাতি। ৪+৪+৪+২=১৪-মাত্রা
প্রতি পঙক্তির ভাগ করা এক-এক অংশে (এই অংশেরই অন্য নাম পর্ব)চারটি করে মাত্রা রয়েছে আর প্রান্তে রয়েছে দুই মাত্রার ভাঙা পর্ব।
২)
খুব রকমের/ কষ্টে আছি ৪+৪
যেমন কষ্টে/ দুঃখ ঘুমায়/ বুকের ভেতর ৪+৪+৪+=১২-মাত্রা
যেমন কষ্ট/ পথিক যখন/ পথ ভুলে যায় ৪+৪+৪+=১২-মাত্রা
যেমন কষ্টে/ সকল কবিই/ হবেন কাতর। ৪+৪+৪+=১২-মাত্রা
খুব রকমের/ কষ্টে আছি ৪+৪
যেমন কষ্ট/ কাছাকাছি/ আর কারও নেই ৪+৪+৪+=১২-মাত্রা
যেমন কষ্ট/ যায় না পাওয়া/ হাত বাড়ালেই। ৪+৪+৪+=১২-মাত্রা
৩)
জেগে জেগে/ স্বপ্ন দেখি/ আকাশ পাতাল/ ভাবি ৪+৪+৪+২=১৪-মাত্রা
বাস্তবতা/ কঠিন ভারী/ নিত্য খাচ্ছি/ খাবি। ৪+৪+৪+২=১৪-মাত্রা
দুলকি চালে/ কেউ যাচ্ছে/ দিগন্ত ছা/ড়িয়ে ৪+৪+৪+২=১৪-মাত্রা
ফুলকিরা সব/ ফুলের মতো/ যাচ্ছে যে হা/রিয়ে। ৪+৪+৪+২=১৪-মাত্রা
ফুলেরা নেই/ পাখিরা নেই/ শূন্য আমার/ বন ৪+৪+৪+২=১৪-মাত্রা
ফুল পাখিদের/ স্মৃতি আছে/ সুতীব্র রঙ্গন। (সুতীব্র রঙ/ গন) ৪+৪+৪+২=১৪-মাত্রা
* বন এবং গন যদিও ১ মাত্রা করে, কিন্তু রুদ্ধদল প্রান্তে থাকলে সেটা কখনো কখনো দুই মাত্রা দাবি করতে পারে। এখানে আমরা যদি ১ মাত্রা করেও হিসাব করি তাতেও কিন্তু ছন্দের কোনো ক্ষতি-বৃদ্ধি হবে না। বিশুদ্ধবাদীরা অবশ্য ২ মাত্রা হিসাব করতেই পছন্দ করবেন।
প্রিয় মুখের/ প্রিয়ংবদা /সে আজ উড়াল/ পাখি ৪+৪+৪+২=১৪-মাত্রা
বনান্তরে/ খুনোসুটি/ নিবিড় মাখা/মাখি। ৪+৪+৪+২=১৪-মাত্রা
এই কবিতাটা পঙক্তি ভেঙে অন্যভাবেও সাজাতে পারতাম, যেমনঃ
জেগে জেগে/ স্বপ্ন দেখি ৪+৪=৮-মাত্রা
আকাশ পাতাল/ ভাবি ৪+২=৬-মাত্রা
বাস্তবতা/ কঠিন ভারী ৪+৪=৮-মাত্রা
নিত্য খাচ্ছি/ খাবি। ৪+২=৬-মাত্রা
এখানে বোঝার আছে – উপরের কাব্যাংশটুকুতে প্রতি লাইন = একটি পদ এবং প্রতি দুই লাইন বা দুইটি পদ মিলে একটি পঙক্তি।
তাহলে প্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ, আমরা এখন সিদ্ধান্ত নিতে পারি দলবৃত্ত বা স্বরবৃত্ত প্রতি পর্বে ৪-মাত্রার চালে চলে। ৪-মাত্রার চালই তার স্বাভাবিক চাল। প্রান্তে যদি ভাঙা পর্ব রাখি তবে সেটি হবে ৪ এর কম।
৪)
জীবন যদি চলার পথ, চলতে গেলেই স্মৃতি
কিছু ঘৃণা, কিছু দ্রোহ, কিছু কিছু প্রীতি।
মাঝেমাঝেই ভাবায় আমায়
মাঝেমাঝেই ভাসায়
মাঝেমাঝেই কাঁদায় আমায়
মাঝেমাঝেই হাসায়।
মাঝেমাঝেই রবীন্দ্রনাথ কলিংবেলে হাত রাখেন
সেই যে আমার নানান রঙের দিনগুলি---
অজ্ঞাত কে বুকের ভেতর মাঝেমাঝেই টান মারেন
চমকে উঠি, ঐ যে এল গোধূলি।
এটার পর্ব বিভাগ আপনাদের জন্য। আশা করি নিজেরাই পারবেন।
দলবৃত্তের নিয়ম-কানুন জানানো শেষ। এবার সামান্য কিছু ব্যাতিক্রম দেখাই।
১)
আমার তখন বালক বয়স, আমার তখন বারো
কিছু কিছু বুঝতে পারি, জানার ইচ্ছা আরো।
মেয়েদেরকে ভাল লাগে কারণ কিছু বুঝি
বাকিতো সব রহস্যময় ধাঁধাঁর জবাব খুঁজি।
এমন দিনেই অন্যরকম একটি বিকেল এল
আমাকে সে হাতে ধরে খেলায় টেনে নিল।
বলল আমার প্রথম রাণী, "রানা,
গোপন খেলার গোপন কথা বাইরে বলতে মানা"।
উত্তেজনার পারদ তখন এক নিমেষে চূড়ায়
গন্ধমেরই আকর্ষণে ময়ূরপঙ্খী উড়ায়।
আমারও তো ইচ্ছা ছিল ভাঙতে সেসব ধাঁধাঁ
অকাট মূর্খ ছিলাম বলেই শুনতে হলো, "গাধা"।
বলল আমায় ফিসফিসিয়ে, "জড়িয়ে আমায় ধর
বউকে জামাই যেসব করে সেসব আমায় কর"।
বউকে জামাই কি সব করে কি সব করে বল
অবাক মেয়ে সবাক হলো, "না জানলে যাই চল"।
কতদূরে গিয়েছিলাম বলার উপায় নাই
নিষেধ তাহার আজো মানি প্রথম রাণী তাই।
গন্ধম ফল নেশা ধরায় গন্ধম ফল মিষ্টি
গন্ধম ফল রহস্যময় তাতেই সুপ্ত সৃষ্টি।
* বলল আমার/ প্রথম রাণী,/ "রানা, ৪+৪+২=১০ মাত্রা
গোপন খেলার/ গোপন কথা/ বাইরে বলতে/ মানা"। ৪+৪+৪+২=১৪ মাত্রা
উপরের দুই পঙক্তিতে মাত্রার মিল নেই। এক পর্ব কম-বেশি আছে। এতে ছন্দের পতন হয়নি। নিয়মটা হল পূর্ণ পর্বের হ্রাস-বৃদ্ধিতে সমস্যা নেই।
* গন্ধম ফল গুনলে তিন মাত্রা কিন্তু শুনলে চার মাত্রা। এটা আসলে একটা নিয়মও বটে যে, দলবৃত্তে কোনো পর্বে পাশাপাশি তিনটি রুদ্ধদল থাকলে সেটি সব সময় চার মাত্রার মূল্য পায়।
২)
তুমি মানে আশার প্রদীপ
তুমি মানে বাতি
তুমি মানে দিন যাপনের
মিষ্টি চড়ুইভাতি।
* মুখ ঝামটায় অভিমানে (মুখ ঝামটায় - পাশাপাশি তিনটি রুদ্ধদল)
তোমার জুড়ি নাই
* দৈনন্দিন প্রতিপলে (দৈনন্দিন - পাশাপাশি তিনটি রুদ্ধদল)
তোমায় শুধু চাই।
৩)
ভুল নারীকে ভালবাসার পাপে
দণ্ড পেয়ে বন্দী আছি একা মনস্তাপে।
এই কারাগার ভাঙতে হলে মুগ্ধতাবোধ চাই
মনের ভিতর সবই আছে দরকারিটাই নাই।
যেখানে যাই খুঁজতে থাকি সারা বাংলাদেশে
ভুল নারীকে ঘুঁচিয়ে দেবে আমায় ভালবেসে।
* ঘুঁচিয়ে দেবে গুনলে ৫-মাত্রা কিন্তু শুনলে ৪-মাত্রা।
৪)
আমাকে মা,/ যখন তুমি/ ঘুম পাড়িয়ে/ রাখ,
তখন তুমি/ হারিয়ে গিয়ে/ তবু হারাও/ নাক।
#রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
ঘুম পাড়িয়েগুনলেও ৪-মাত্রা শুনলেও ৪-মাত্রা।
হারিয়ে গিয়েগুনলে ৫-মাত্রা কিন্তু শুনলে ৪-মাত্রা।
এভাবে কাঁপিয়ে পাখা, ঘুমিয়ে থাকা, জিরিয়ে নিয়ে বা নেওয়া, কাঁদিয়ে মারা ইত্যাদি দলবৃত্ত ছন্দে চার মাত্রার মূল্য পায়।
৫)
এই যে এখন/ একা আছি /আসছ না কেউ/ কাছে
এই যে হৃদয়/ প্রতীক্ষিত/ বাসছ না কেউ/ ভাল
ঝিঁঝিঁ ডাকার/ দিন ফুরালে,/ জোনাক জ্বলা/ রাত পোহালে
আমি কিন্তু/ উদাস হব,/ বিবাগী এক/ বাউল হব
কামশীতল/ পান্ডা হয়ে/ দিন কাটাব,/ রাত কাটাব
কার কি ক্ষতি?
বুঝতে হলে/ আসতে হবে/ বাসতে হবে/ ভাল
তোমার আমার/রসায়নে/ পৃথিবী জম/কালো।
কামশীতল = কাম+শী+তল = ৩ মাত্রা । প্রতিটি পূর্ণ পর্বে ৪-মাত্রা হলেও এখানে ৩-মাত্রা। আসলে এখানে ৩-মাত্রাই উচ্চারণের নমনীয়তার গুনে ৪-মাত্রার মর্যাদা পেয়েছে।
৬)
দেরি হয়ে যায় বলেই আমি ভুল গাড়িতে উঠি
নামতে নামতে আবার আমি পিছন দিকে ছুটি।
দেরি হয়ে যায় ৫-মাত্রা হলেও উচ্চারণের নমনীয়তার গুনে ৪-মাত্রার মর্যাদা পেয়েছে।
এভাবে কবিরা সৃষ্টির আনন্দে নিয়ম ভাঙতে পছন্দ করেন।তাই পর্বে পর্বে চারটি দলের উপস্থিত রাখার নিয়ম তারা সব সময় মেনে চলেন না। কখনো কমিয়ে দেন কখনো বাড়িয়ে দেন, যদি তার কান সায় দেয়। তাতে ছন্দের কোনো সৌন্দর্যহানী হয় না।
সবচেয়ে আসল কথা হল আপনি নিয়মের ব্যাতিক্রম অবশ্যই ঘটাতে পারেন যদি এবং কেবল যদি আপনার কান আপনাকে সায় দেয়। আপনার কান যদি সায় না দেয় অর্থাৎ বেসুরো লাগে তবে বুঝে নেবেন ‘চুদুর-বুদুর চইলত না’।
শুরুর দিকে বলেছিলাম অন্তমিল কোনো ছন্দ নয়। অন্তমিলবিহীন কবিতাও ছন্দের কবিতা হতে পারে যদি সেটা ছন্দে লেখা হয়। এই নিন তার একটি উদাহরণঃ এই চমৎকার কবিতাটি লিখেছেন ব্লগার বৃতি ।
গোলাপ, তোমার রঙটা ক্যামন?
সাদা হলুদ লাল গোলাপি নীলের ভিড়ে
আসল তোমায় খুঁজতে গিয়ে
বুঝতে শেষে
নিযুতপ্রহর পেরিয়ে গ্যালো;
আয়নাতে মুখ দেখতে গিয়ে
জানতে পেলেম আমার খবর-
মেয়ে-তুই আজ অনেক বড় ।
ষোল'র মানে জানিস কি তুই?
ঝাপসা কিছু, একটি ঘুড়ি,
অশ্রুজলের বাষ্প ছুঁয়ে আকাশ উড়ি
পদ্মফুলের পাঁপড়ি মেলার কষ্ট নিয়ে
ঝিলের বুকে হাওয়ার তুলির
গোপন হরেক ছবি আঁকা ।
ইচ্ছেগুলো লুকিয়ে রাখা,
ইচ্ছেগুলো লুকিয়ে রাখা,
আর কিছু নয়...
শীঘ্রই বাকি দুটি ছন্দ নিয়েও পোস্ট দেয়ার আশা রাখি ইনশাআল্লাহ। তবে যদি আপনাদের সাড়া পাই।
মন্তব্যে আপনারা দুয়েক পঙক্তি কবিতা/ছড়া যদি লিখে দেন তবে বুঝতে পারতাম আপনারা শিখতে পারলেন কিনা।
এই লেখাটা লিখতে সাহায্য নিয়েছি যে দুটি বই থেকেঃ-
১) নূতন ছন্দ পরিক্রমা – প্রবোধচন্দ্র সেন
২) কবিতার ক্লাস – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
## কারও কোনো কিছু বুঝতে অসুবিধা হলে দয়া করে মন্তব্যে জানাবেন।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:০২