দু’দিন আগে এক সেমিনারে অংশগ্রহন করতে গিয়েছিলাম,দেশের অন্যতম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় “ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি,বাংলাদেশ (আইইউবি)”-তে।সেখানের ছাত্রছাত্রী এবং নিজের পরিদর্শন শেষে আমি নিঃসন্দেহে বলেতে পারি, বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় এখন দেশে! কেমন ছিল আমার অভিজ্ঞতা?তা জানাতেই আজকের আয়োজন।
গেটের সামেন দাঁড়াতেই আমার দৃষ্টি কেড়ে নিলো বিশ্ববিদ্যালয়ের অসাধারণ স্থাপনা। চারদিকে ঢাকা ক্যাম্পাসের মাঝের ফাঁকা অংশটা সবুজ ঘাস আর টাইলসের মিশ্রনে তৈরি হয়েছে মনোমুগ্ধকর গ্রাউন্ড।ক্লাসের ফাঁকে শিক্ষার্থীরা এখানে অবসর সময় কাটায়।
আইইউবি তার একাডেমীক কারিকুলাম এবং সেমিস্টার সিস্টেম সম্পূর্ণরুপে আমেরিকান মান অনুসরণ করে।উন্নত অধ্যাপনার জন্য রয়েছে দেশি-বিদেশী মেধাবী শিক্ষক,যার এক বড় অংশ বিদেশের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচ.ডি ডিগ্রীধারী।
শিক্ষার্থীদের সহযোগিতার জন্য রয়েছে বিশহাজারের বেশি বই নিয়ে একটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরী।যেখানে আরো আছে ই-লাইব্রেরীর সুযোগ।
ডিজিটাল পড়াশুনার জন্য রয়েছে, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমসহ সার্বক্ষণিক ইন্টারনেট ও ওয়াইফাই।শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ক্লাসমুখী করা জন্য আছে অনলাইন এটেনডেঞ্ছের ব্যবস্থা।যেখানে ৭৫ শতাংশ উপস্থিতি না থাকলে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতে পারে না।এছাড়াও হাতে কলমে শিক্ষার জন্য রয়েছে প্রতিটি বিভাগের আলাদা আলাদা প্রয়োজনীয় ল্যাব।
ক্যাম্পাস ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ থমকে দাঁড়ালাম ইকো ক্যাফের সামনে।এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় এবং শিক্ষার্থীদের প্রিয় ক্যান্টিন।কাঠের সিঁড়ি দিয়ে ওঠা যায় ক্যান্টিনের উপরিভাগে।সেখানেও আছে পর্যাপ্ত বসার টেবিল।আইইউবি-তে ইকো ক্যাফে ছাড়াও রয়েছে আর একটি ক্যান্টিন।সেটা হ্যালো নামে পরিচিত।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ সবচে’ আকর্ষণীয় বলে মনে হয়েছে। প্রতিটি শিক্ষার্থীর মাঝে সহযোগিতা ও সহমর্মিতামূলক আচরণ বেশ লক্ষণীয়। আড্ডায় পাওয়া গেল মুক্তবাকের ঘ্রাণ।
শিক্ষার্থীদের শুধু পড়াশোনায় আবন্ধ না রেখে তাদের সুযোগ দেয়া হয়েছে পাঠবহির্ভূত কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহনের।এখানে রয়েছে বিভিন্ন ক্লাব।“আইইউবি থিয়েটার” সুযোগ দিচ্ছে মঞ্চে অভিনয় করা ও শিখার। “ডিবেট ক্যাব”-এ রয়েছে সুযোগ্য ও যুক্তিনির্ভর বক্তা হবার ব্যবস্থা।শরীর চর্চার জন্য হয়েছে “জিম”।জিমে সঠিক শরীর চর্চার জন্য রয়েছে অভিজ্ঞ ট্রেইনার। এছাড়াও আরো আছে, মিউজিক ক্লাব, আর্থ ক্লাব, ক্রিকেট ক্লাব ইত্যাদি।
“এলএফই”(লাইভ ফিল্ড এক্সপেরিয়েন্স)আইইউবি-কে সবচে’ ব্যতিক্রম করেছে।এই কোর্সে শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুমের বাহিরে সম্পূর্ণ হাতে কলমে শিক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।কোর্সে ছাত্রছাত্রীদের বারো দিনের জন্য দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তারা গ্রামীণ সংস্কৃতি জানার পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে জরিপ করে থাকে।
মেধাবী ও উপার্জনইচ্ছুক শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে ক্যাম্পাসেই কর্মসংস্থান।“এসওডি” (স্টুডেন্ট অন ডিউটি) হয়ে শিক্ষার্থীরা এখানে কাজ করেতে পারেন। লাইব্রেরী, রেজিস্ট্রার অফিস এবং শিক্ষকের সহকারী হিসেবে আছে তাদের কর্মক্ষেত্র।
দেশীয় সংস্কৃতি উজ্জাপনেও এ বিশ্ববিদ্যালয় পিছিয়ে নেই।“বিজয় দিবস”,“আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস”, “বসন্ত উৎসব”, “শীতকালীন পিঠা উৎসব” পালনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থাকে সবসময় মুখোরিত।
পুরো ক্যাম্পাস ঘুরে আমি যখন ক্লান্ত, তখন দাঁড়িয়ে ছিলাম দশতালার বারান্দায়। বিকেলের শেষ আলো উকি দিয়ে আছে দেয়ালে দেয়ালে। মৃদু বাতাসে আমার গা জুড়িয়ে যাচ্ছিলো। বারান্দা থেকে আমি নিচের গ্রাউন্ডে তাকিয়ে ভাবলাম, কি স্বাধীনতার শৃঙ্খলায় ঢেকে আছে এই বিশ্ববিদ্যালয়! যেন দেশের মাটিতে, বিদেশের ঘ্রাণ!
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:২২