মধ্যবিত্ত সংসারের বহুবিদ সংসারিক চাপে যখন সুকুমার বৃত্তিগুলো আড়ালে চলে যায় অনেক সময় নিজেকে রোবট মনে হয়। ইচ্ছা করে গরীভ শিশুদের জন্য কিছু করতে কিন্তু করতে পারিনা। নুন আনতে পানতা পুরোয়। ইচ্ছাগুলো ইচ্ছাই হয়ে থাকে। বাস্তবায়ন মনমত হয় না। ছোটবেলা থেকে ইচ্ছা ছিল নিরন্ন শিশুদের পাশে থেকে কাজ করে যাব, কিন্তু আমার সেই শক্তি বা সামর্থ্য কোনটাই হয়নি। দু:খ লাগত। সেদিন হঠাৎ আমার ১০ম শ্রেনীতে পড়ুয়া মেয়ে বলল, “আব্বু তুমি আমাকে ঈদের যে সালামিটা দেবে বলে মনে মনে ঠিক করেছ সেটা অগ্রীম দিয়ে দাও।“ আমি একটু অবাক হলাম ঈদের এখনো কিছু দিন বাকি। ঈদের সালামী দিয়ে এখন কি করবে। তাছাড়া এক সন্তান হেতু তার যুক্তিসঙ্গত চাহিদা মোটামুটি সদ্যমত পুরন করি। আলাদা টাকা লাগবে কেন? মনে খটকা লাগল। জিঞ্জেস করলাম- মা কি দরকার বল আমাকে। তার উত্তরে আমি কিছুটা অবাক হলাম। তার উত্তরের সারাংশটা এই রকম, তারা ৫ জন ক্লাশমেট মিলে একটা সমিতির মত করেছে। তারা প্রতিমাসে ৫০-২০০টাকার মত এক একজন জমা দেয়। অন্যান্য বন্ধুরা ১০-১০০ টাকা যে যা পারে জমা করে আসছে গত তিন মাস যাবত। তারা তাদের সমিতির নাম দিয়েছে। নীতিমালা করেছে। তাদের মূল টার্গেট অসহায় গরীভ শিশুদের ঈদে নতুন জামা দেয়া। তাদের এক সামর্থ্যবান বন্ধু কথা দিয়েছে। সমিতি যদি ৫০ সেট জামা কিনে সে তার বাবাকে দিয়ে তাদের কারখানা থেকে আরো ৫০ সেট জামা দেবে। গরীভ শিশুদের পড়াশুনার জন্য উতসাহিত করা। নৈতিকতা শিক্ষা দেয়া। পরবর্তীতে কর্মমূখী শিক্ষা দেয়া। আমার বুক ফেটে কান্না আসল। দু:খে নয় আনন্দে। আমি আরো অবাক হলাম সে তার রিক্সা ভাড়া বাচিয়েঁ প্রতিমাসে কিছু টাকা ঐ সমিতিতে দিয়ে আসছে। কঠিন রোদে ২/৩ কি.মি হাঁটছে রিক্সা ভাড়া বাঁচাতে। মন থেকে তার প্রতি আমার দোয়া আসল। যদিও আমার স্ত্রীকে দিয়ে ঘটনার সত্যাসত্য যাচাই করেছি। হ্যাঁ আমি পারিনি সে পেরেছে। এটা আমার জন্য বড়ই আনন্দের।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১:০০