অনেক দিন যাবত কুয়াকাটা যাব বলে ভাবছিলাম। সময় করে উঠতে পারছিলাম না। মে এর ১, ২ তারিখ বন্ধ পেয়ে গেলাম। চোখ বন্ধ করে সিন্ধান্ত নিয়ে নিলাম যাবই যাব। দুই বন্ধু মিলে সাকুরার টিকেট কাটলাম, কুয়াকাটা পর্যন্ত। সাধারনত ভাড়া ৬০০ হতে ৬৫০টাকা। কিন্তু চাপ থাকাতে নিল ৭০০ টাকা করে। এসি ৮৫০ টাকা করে। যাবার পথে আরিচা ফেরি ঘাটে কিছু সময় লাইনে থাকতে হল। ফেরিতে উঠার পর, ফেরির উপরের তলায় উঠে রাতের দৃশ্য দেখতে দেখতে ফেরি ঘাটে চলে আসল। আবার যাত্রা শুরু করল। পথে গৌরনদী হাইওয়ে থানার সামনে ১০ মিনিটের জন্য থামল। নেমে হালকা নাস্তা পানি খেলাম। বরিশালের রাতের ভিউ দেখতে ভালই লাগছিল। শহরের রাস্তাগুলো পরিকল্পিত লাগছিল। লেবুখালী ফেরী ঘাটে গাড়ী থামল, ফেরী পার হলাম। নদীটা শান্তই মনে হল তবে প্রস্থ অনেক। লেবু খালীর ওপার থেকে পটুয়াখালী শুরু। কালাপাড়া বা খেপুপাড়া ফেরী ঘাটে গিয়ে ফেরীতে উঠলাম ভোর ৪টার সময় কিন্তু ফেরীতে পর্যাপ্ত গাড়ী না থাকাতে ফেরী ছাড়ল ৫:৪৫ মিনিটে। বিরক্ত লাগছিল। কিন্তু এর মাঝেই জেলে নৌকার পাশে মাছের লাফালাফি মনটা ভাল করে দিল। খুব অল্প দুরত্বে আরো দুটো ফেরী পার হলাম যতাক্রমে হাজীপুর, মহিপুর। সকাল ৭ টায় পৌঁছলাম কুয়াকাটা সৈকতের কাছে সাকুরার কাউন্টারে। নেমেই ফিরতি টিকেট কাটলাম। পাশে পর্যটন হোটেল তার বিপরীত দিকে হোটেল কুয়াকাটা ইন। হোটেলগুলোতে অফসিজনে ডিসকাউন্ট চলছে। দরদাম করে আরো কিছু কমানো যায়। সৈকতের কাছাকাছি হোটেলে থাকা ভাল। হোটেল কুয়াকাটা ইনে উঠেই ফ্রেশ হয়ে, ভ্রমনের ব্যাগ ঘুছিয়ে নাস্তা করতে বের হলাম। নাস্তা করে বের হতেই মনির নামক একজন গাইডের সাথে পরিচয়। তার মোটর সাইকেলে ঘুরার অফার করল। আমি তার অফার বিবেচনায় রেখে তাকে পরে ফোন দিব বলে তার ফোন নম্বর রেখে বীচে চলে গেলাম। কিছুক্ষন বীচে ঘুরাঘুরি করে সিদ্ধান্ত নিলাম এলাকাটা ঘুরে দেখব। ফোন দেয়াতে মুনিরের মোটর সাইকেলে চলে আসল। আমরা ঝাউবন, গঙ্গামতি, কাঁকড়াচর, সীমা বৌদ্ধ মূর্তি, পবিত্র কূপ, রাখাইন পল্লী ঘুরে দেখলাম। রাখাইন পল্লীতে কিছু কেনা কাটা করলাম। রাখাইন মহিলা মার্কেটে একই জিনিস একই দামে পাবেন। মনিরকে সময়িক বিদায় দিয়ে হোটেলে গিয়ে গোসল করে রেডি হয়ে আবার বের হলাম।
এবার মনিরকে সাথে নিয়ে লেবুবন যাত্রা করলাম। সেখানেই দুপুরের খাবার খাব। কূয়াকাটা বীচ থেকে লেবুবন মনিরের হিসাবে ৭ কি:মি। লেবুবন গিয়ে দেখি সুন্দরবনের ফাতরা বনের এক্সটেনশন বন এটা। লেম্বুবন শুনে মনে করেছিলাম লেবুগাছ আছে কিন্তু লেবুগাছ দেখলাম না। টং দোকানের আকারে কয়েকটি দোকান। গাছের নিচে সামিয়ানা টানানো। চেয়ার টেবিল পাতা রয়েছে। গিয়ে কবিরের দোকানে তাজা মাছ বাছাই করলাম। দরদাম ঠিক করে একটা মিডিয়াম আকারের ইলিশ কেটে ফ্রাই, ভাত আর ডাল রেডি করতে বললাম। কোরাল, টাইগার চিংড়ি, রূপচাঁদা, কাঁকড়া তার সংগ্রহে আছে। আমরা লেবুবন কিছুক্ষন ঘুরে দেখলাম। খুবই ভাল লাগল। ক্ষুদা অনুভূত হতেই কবিরের দোকানে আবার চলে আসলাম। দেখি রান্না প্রায় রেডি।
(যুবা আর প্রঢ়ৌয়ের কুর্দন)
সামিয়ানার নিচে বসে আছি; সামনে বিশাল সমুদ্র। জোযারের পানি কবিরের দোকানের সামিয়ানার নীচ পর্যন্ত এসেছিল, তার সাক্ষী ভিজা বালু। এই গরমে ঠান্ডা বাতাস আমাকে যারপর নাই মোহিত করল। কবির টেবিলে খাবার দিল। আমরা তিনজন পেটপুরে তৃপ্তি সহকারে খেলাম। এই বনে ঠান্ডা মিনারেল ওয়াটার আছে তার কাছে। অনেক্ষন তার দোকানে সময় কাটালাম। তিনজনের বিল আসল মাত্র ৫৫০টাকা।
( বন্ধু লিটন, পিছনে লেবুবন এবং কবিরের খাবারের দোকান)
আবার মোটর সাইকেলে করে কুয়াকাটা বীচে চলে আসলাম। মনিরকে ১২টি স্পট দেখানো এবং লেম্বুবন যাতায়ত বাবদ দিলাম মোট ৭০০টাকা।
(মিশ্রিপাড়া সীমা বৌদ্ধ মূর্তি)
বীচে বসে আছি এই সময় মোটর সাইকেল চালানেরর অফার দিলো কয়েকজন। প্রতি কি:মি ১০টাকা। সাইকেল চালানো জানা থাকলেই নাকি হবে। আমার তো ছোট বেলা থেকে কিছু অভিজ্ঞতা আছে তাই চাপাচাপিতে রাজি হয়ে গেলাম। ওমা ওরা লেম্বুবনের আরো দু/তিন কিলো বাকী থাকতেই বলে ১০ কিলো। আমি তো মনিরের কাছে আগেই শুনেছি লেম্বুবন মাত্র ৭ কিলো। যাক বিতর্কে ঝড়ালাম না। বাইক ঘুরিয়ে আবার বীচে আসলাম। ১০ কিলো চালিয়ে ২০ কিলোর টাকা দিলাম ২০০ টাকা। আনন্দটাই আসল। পরে বীচে বসে আরো কয়েকজনকে একই অভিযোগ করতে শুনলাম। এড়িয়ে গেলাম।
হোটেলে ফিরে কিছুক্ষন বিশ্রাম নিয়ে ৬টায় আবার বের হলাম। জোয়ারের সময় বীচে বসে আছি, ৯টার দিকে আলো আঁধারে মন্দিরার টুনটুন শব্দ শুনে এগুলাম। গিয়ে দেখি এক বাউল সাধক তার ৫ম শ্রেনী পড়ৃযা মেয়েকে নিয়ে গান গাইছে। লালন সঙ্গীত। আমার কাছে মনে হল এই ছোট্ট মেয়েটার গলায় সৃষ্টিকর্তা সব সুর ঢেলে দিয়েছে। আমি এবং আমরা সুরের মূর্ছনার আভিষ্ট হলাম। অনেকক্ষন জোয়ারের শব্দ, মন্দিরা, বেহালা আর ছোট মেয়েটির মিষ্টি সুর উপভোগ করলাম। হোটেলে ফিরার আগে রাতের খাবার খেলাম। এখানে পানির কারনে খাবারের স্বাদ তেমন ভাল হয় না। তবে বীচের কাছে রাজধানী হোটেলে খেলাম খারাপ লাগেনি। দাম সহনীয়।
পরদিন সকাল হতেই বীচে গেলাম, জোয়ার শুরু হয়েছে। সাঁতার জানি তারপরও বাড়তি নিরপত্তা হিসাবে টিউব নিলাম। দাফিয়ে সাঁতার কাটলাম। ঢেউয়ের সাথে লড়াই সে বৃথা আস্ফালন। তবু মনে সাধ মিটিয়ে সাঁতার কাটলাম। পানি ঘোলা এবং বালুময়। তবু আনন্দে বাধা হতে পারলনা। দুপুরের পরে হোটেল ছেড়ে দিলাম। শুটকি মার্কেট থেকে বাসার অর্ডারি শুটকী কিনলাম। ভাল করে প্যাকেট করে শেষ বিকালে ঢাকার গাড়ীতে ছড়লাম। সকালে নিরাপদে ঢাকা পৌঁছলাম। উল্লেখ্য আসা যাওয়া, থাকা, খাওয়া, ঘুরাঘুরি আমাদের দু'জনের গড়ে ৩০০০ টাকা মত লেগেছে। আমরা বোটে যেসব স্থানে যেতে হয় সেসব স্থানে যাইনি। কেনাকাটা বাদ।
**বানান, ভুলক্রটি মার্জনা করবেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মে, ২০১৪ বিকাল ৩:৫৯