একদিন এক ছোট্ট ছেলে একটি
খেলার মাঠের পাশে দাড়িয়ে
কাঁদছিলো। এক বৃদ্ধলোক
সেখান দিয়ে যাচ্ছিলেন।
তিনি ছেলেটির কান্না শুনতে
পেয়ে ছেলেটির কাছে এগিয়ে
গেলেন।বৃদ্ধ লোকটি তাকে
প্রশ্ন করলেন যে সে কেন
কাঁদছে? উত্তরে ছেলেটি
লোকটিকে জানালো যে তার
অনেকদিনের স্বপ্ন তার একটা
ঘুড়ি থাকবে এবং সেটা সবার
চাইতে উঁচুতে উড়বে,কিন্তু তার
নিকট কোনো টাকা না থাকায়
সে কোন ঘুড়ি কিনতে পারছে
না।বৃদ্ধ লোকটি মৃদ্যু হেসে
ছেলেটিকে বললেন তুমি যদি
কাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে
পারো তবে তোমাকে আমি
একটি ঘুড়ি এনে দিবো।
পরদিন বৃদ্ধ লোকটি তার দেয়া
কথামতো একটি ঘুড়ি উপহার
দিলো ছেলেটিকে।ছেলেটি
.
অন্য সবার সাথে তার ঘুড়িটি
উড়াতে লাগলো।উচ্চতায় এবং
উড়ার দিক থেকে সবার ঘুড়িকে
ছাড়িয়ে গেল ছেলেটির ঘুড়ি।
ছেলেটি খুব উক্তেজিত হয়ে
পড়লো।সে অন্য সবাইকে ডেকে
তার ঘুড়িটি দেখিয়ে বলতে
লাগলো তার ঘুড়ির সঙ্গে
প্রতিযোগীতা করতে।কিন্তু
কেউ ই রাজী হলোনা।ছেলেটি
তার ঘুড়িটি আরো উঁচুতে
উঠানোর জন্য সুতা ছাড়তে
লাগলো।
.
হঠাত্ করেই আকাশটা কালো
হয়ে উঠলো।চারিদিক অন্ধকার
করে ঝড়ো হাওয়া বইতে
লাগলো।অন্য সব ছেলে গুলো
দ্রুত সুতো গুছিয়ে ঘুড়ি নিয়ে
বাসায় চলে গেল।কিন্তু
ছেলেটি এত বেশী পরিমাণে
সুতা ছেড়েছিলো যে তার
তখনো অর্ধেকের ও বেশী সুতাই
গোছানো হয়নি।
.
ধীরে ধীরে বাতাসের বেগের
সাথে পাল্লা দিয়ে ঘুড়ির টান
ও বাড়তে লাগলো।একটা সময়
ছিড়েই গেল সুতা।ঘুড়িটি চলে
যেতে লাগলো ছেলেটির
দৃষ্টিসীমার অন্তরালে।
ছেলেটি হা করে সেদিকে
তাকিয়ে রইলো।
এতক্ষণ বৃদ্ধ লোকটি ছেলেটির
ঘুড়ি ওড়ানো দেখছিলেন।এবার
তিনি ছেলেটিকে ঘুড়িটি
.
ধরে আনতে বললেন।ছেলেটি
জানালো সে পারবেনা কারণ
ঘুড়িটি অনেক দূরে চলে
গিয়েছে।এবার বৃদ্ধ লোকটি
ছেলেটির দিকে রক্তচক্ষু নিয়ে
তাকালেন তারপর বজ্রকন্ঠে
বললেন পৃথিবীতে অসম্ভব বলে
কিছুই নেই।ভয় পেয়ে এবার
ছেলেটি ঘুড়ির পিছনে
দৌড়াতে লাগলো।অনেক
চেষ্টার পরে সে ঘুড়িটি ধরে
নিয়ে আসলো।
এবার লোকটি ছেলেটাকে
একটা গল্প শোনালেন...
.
"আজ থেকে পঞ্চাশ বছর পূর্বের
কথা।দশ বছরের এক ছেলেকে
নিয়ে এই গল্পের শুরু।
ছেলেটার নাম মার্কেস।
মার্কেসের স্বপ্ন ছিলো
জাহাজের নাবিক হওয়া।
সমুদ্রের নীল জলরাশি তাকে
খুব কাছে টানতো।মার্কেসের
বাবা জন্মের পূর্বেই
পরলোকগমন করেছিলেন।দশ বছর
বয়সে যখন মা ও চলে গেলেন
তখন চাচাদের কাছে আশ্রয়
চেয়ে আশ্রয় এর পরিবর্তে
অর্ধচন্দ্র ছাড়া কিছুই জুটলো
না।দীর্ঘদিনের কয়েকটি পুরনো
পোশাক,খাবার রুটি,ফ্রেমে
বাঁধাই করা মা এর একটি ছবি
এবং বাইবেলটা সঙ্গে নিয়ে
বেরিয়ে পড়লো মার্কেস।গন্তব্য
চোখ যেদিক পানে যায়।
সারাদিন হাটলো সে।চেনা
বেশ কয়েকটি গ্রাম ছেড়ে
অচেনা এক শহরে যখন উপস্হিত
হলো তখন সন্ধ্যে হয়ে এসেছে।
পুঁটলি থেকে বের করে গুনে
দেখলো তিনখানা শুকনো রুটি
ছাড়া আর কিছুই নেই।
আধাখানা রুটি খেয়ে দুহাতের
আঁজলা ভরে পানি পান করলো
।হঠাত্ মার্কেসের চোখে
পড়লো বয়সের ভাড়ে নুইয়ে পড়া
এক বৃদ্ধের উপর।লোকটির
মাথায় একটি বড় স্যুটকেস এবং
ডানহাতে একটি ব্যাগ।দেখেই
বোঝা যাচ্ছে খুব কষ্ট হচ্ছে
লোকটার।মার্কেস এগিয়ে
গিয়ে ব্যাগটা নিয়ে লোকটার
সাথে চলতে লাগলো।লোকটা
বেশ খুশি হলো মার্কেসের এই
ব্যবহারে।
.
লোকটা সাউদাম্পটন থেকে
জাহাজে করে নিউইয়র্ক
যাবেন।জাহাজে ওঠার পূর্বে
লোকটি মার্কেসের দিকে কিছু
ডলার বাড়িয়ে দিলো।মার্কেস
তা নিতে অসম্মতি জানালো।
সে বিনীত ভাবে লোকটাকে
অনুরোধ জানালো যে তিনি
যেন তাকে নিউইয়র্ক পর্যন্ত
জাহাজে করে নিয়ে যায়।বৃদ্ধ
লোকটি মার্কেসের অনুরোধ
রাখলেন।
আটলান্টিক মহাসাগড়ে তখন
জলদস্যুরা বেশ সক্রিয়।
পথিমধ্যে জলদস্যুদের কবলে
.
পড়ে যাত্রীরা সর্বস্ব
হারালেন।বাঁধা দিতে গিয়ে
জাহাজের ক্যাপ্টেন সহ
কয়েকজন শ্রমিক নিহত হলেন।
এরপর এক এক করে সবাইকে
মেরে সাগড়ে ফেলে দিলো
জলদস্যুরা।ভবিষ্যত্ এ কাজে
লাগতে পারে বলে মারলো না
শুধু মার্কেস কে।
.
মার্কেস জলদস্যুদের জাহাজে
কাজ পেল।তার কাজ রান্নার
কাজে সাহায্য করা।সামান্য
এই কাজ করতেই হাঁপিয়ে উঠতো
মার্কেস।কাজটা সহজ মনে
হলেও আদতে কাজটা ছিলো
বেশ কঠিন।প্রায় প্রতিদিনই
পনেরো থেকে বিশ কেজি
সিদ্ধ আলু ছিলতে হতো তাকে।
সকলের ফাই ফরমাশ খাটতে
হতো।সকালে খেয়ে তারপর
জাহাজ নিয়ে বেরিয়ে পড়তো
সবাই।উদ্দেশ্য নতুন কোন
জাহাজ শিকার করা।
.
ভালো ব্যবহার দিয়ে খুব অল্প
দিনের মধ্যেই দস্যু সর্দারের
প্রিয় পাত্র হয়ে উঠলো
মার্কেস।একদিন সাহস করে
সর্দার কে বলেই ফেললো
নাবিক হবার কথাটা।সর্দার
অন্যান্য নাবিকদের সাথে
মার্কেসকে থাকতে দিলেন।এক
সময় জাহাজ চালানোয় বেশ
পারদর্শী হয়ে গেল সে।
.
একবার ভুলবশত ব্রিটিশ
রাজপরিবারের জাহাজে
আক্রমণ করে বসলো জলদস্যুরা।
আক্রমণের পরেই বুঝতে পারলো
কি ভুল করে ফেলেছে তারা।
আধুনিক অস্ত্রসজ্জায় সজ্জিত
রাজরক্ষীদের সাথে কিছুতেই
পেরে উঠছিলো না তারা।
উল্টো পাল্টা আক্রমণ ঠেকাতে
ব্যস্ত হয়ে পড়লো।একসময়
জলদস্যু সর্দার আত্মসমর্পণ
করার কথাও ভাবলেন।কিন্তু
মার্কেস বাদ সাধলো।সে
সর্দারকে বলে জাহাজের
নিয়ন্ত্রণ নিলো এবং দ্রুত
গভীর সমুদ্রের দিকে নিয়ে
গিয়ে জাহাজটিকে বাঁচালো।
সেবার মার্কেসের সাহসেই
প্রাণ বাঁচলো অর্ধশতাধিক
দস্যুর।
.
দস্যু সর্দার খুশি হয়ে
মার্কেসকে একটি জাহাজ
উপহার দিলো এবং তাকে যখন
যেখানে যাবার ইচ্ছা যেতে
পারো এমন স্বাধীনতা দিলো॥
এরপর সর্দারকে বলে একদিন
দেশে ফিরে আসলো মার্কেস।
সে নাবিক হতে চেয়েছিলো
সে নাবিক হতে পেরেছে।
জাহাজ চালানোয় চল্লিশ
বছরের বেশী অভিগ্গতা সম্পন্ন
মার্কেস এখন তার দেশের
রাজকীয় নৌ কমান্ডার॥"
.
এই পর্যন্ত বলে ছেলেটির দিকে
তাকালো বৃদ্ধলোকটি।ছেলেটি
এতক্ষণ মুগ্ধ হয়ে শুনছিলো।
লোকটি তখন ছেলেটিকে বললো
কে এই মার্কেস জানো?আমিই
হলাম সেই মার্কেস।আমার
জীবনের গল্প শুনে তুমি কি
শিখলে?
.
ছেলেটি বললোঃ
"জীবনের লক্ষ্যটা ঠিক
আকাশে উড়তে থাকা ঘুড়ির
মতন।সুতাটা লক্ষ্যে পৌছাবার
রাস্তা।জীবনে সফলতা অর্জন
করতে চাইলে একটা নির্দিষ্ট
লক্ষ্যের দিকে আস্তে আস্তে
এগুতে হয়।লক্ষ্যের সুতা টা
মাঝে মাঝে ছিড়ে যাবেই,ঝড়
এসে এলোমেলো করে দিয়ে
যাবে আমার স্বপ্নগুলো ।তাই
বলে থেমে গেলে চলবে না।
নতুন উদ্যমে লক্ষ্যপূরণে
ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।"
.
"হার মেনে নেয়ার নাম জীবন
নয়,স্বপ্ন নিয়ে লড়াই করে
বেঁচে থাকার নামই জীবন"॥