ছবি- চীনের ইয়াংসি নদীর স্বচ্ছ জলে পালতোলা নৌকা ভাসছে (Getty Images)।
রোমান্টিক ধাঁচের মানুষ মাত্রই চাঁদ ভালোবাসেন, জ্যোৎস্না রাত পছন্দ করেন, জ্যোৎস্নার কোলে জীবনের রঙিন সময়টাকে সঁপে দিতে চান। আবার পৃথিবীতে এমন মানুষ খুবই বিরল যারা কিনা জ্যোৎস্না ভালোবেসে জ্যোৎস্নার আলিঙ্গনে নিজের মৃত্যু চেয়েছেন। কিন্তু এমন মানুষ কি আছেন যারা জ্যোৎস্না ঝলমল রাতের চাঁদকে চুমু খেতে যেয়ে মৃত্যু সুধা পান করেছেন ? হ্যাঁ, পৃথিবীতে এমনই একজন জ্যোৎস্না প্রেমী মানুষ ছিলেন। আজ তাঁর গল্প শোনাব। বলছি প্রাচীন চৈনিক কবিতার রাজপুত্র লি বাই (৭০১-৭৬২ খ্রিষ্টপূর্ব) এর কথা, যিনি লি বো নামেও পরিচিত। তাঁকে তাঙ সাম্রাজ্যের শ্রেষ্ঠ কবি হিসেবে গণ্য করা হয়। সাহিত্য বিশ্লেষকগণ মনে করেন লি বাইয়ের কবিতা সংখ্যা সহস্রাধিক।
লি বাই জ্যোৎস্না পাগল তো বটেই, তিনি প্রচণ্ড মদ প্রেমীও ছিলেন। তিনি সবসময় মদের পেয়ালায় বুঁদ হয়ে থাকতেন, যাকে কিনা বলে টুপভুজঙ্গ। তাঁর কবিতায় প্রচুর পরিমাণে মদ প্রেমের প্রসঙ্গ এসেছে। কবির জীবনের পরতে পরতে ছিল মদ ও জ্যোৎস্না বিলাস। তিনি চাঁদনী পসর রাতের এমনই পাগল ছিলেন যে, ঠিকরে ঠিকরে পড়া চাঁদের আলো পান করতে করতে তিনি মরতে চেয়েছিলেন। কবির জ্যোৎস্না রাতে মৃত্যুকামনা ও মদ পানের বিষয়ে স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায় তাঁর ‘‘Drinking Alone in the Moonlight’’ কবিতায়। পাঠকদের সুবিধার্থে কবিতাটির ভাবানুবাদ করতে চেষ্টা করেছি, মূলত কবিতার আক্ষরিক অনুবাদ করা প্রায় অসম্ভব।
‘‘জ্যোৎস্নায় একা একা মদ পান’’
ফুল গাছের নিচে এক পেয়ালা মদ,
বন্ধুরা নেই তাই আমি একা একা পান করি।
আমি মদের পেয়ালা তুলে ধরে দীপ্তিমান চাঁদকে
আমার সঙ্গে মদ পান করতে নিমন্ত্রণ জানাই।
সে আমরা দু’জনকে আমার ছায়াসহ তিনজন করে,
হায়! বেচারা চাঁদ তো আর মদ পান করতে জানে না,
কোনো টু শব্দ না করে আমার ছায়া আমার পিছু নেয়,
তবুও চাঁদকে বন্ধু ও আমার ছায়াকে গোলাম বানিয়ে
বসন্ত পুরোবার আগে আমি আহ্লাদে ফেটে পড়বো।
আমি গান গাইলে চাঁদ তাঁর আলোয় ঝিকিমিকি নাচে,
আমি নাচলে আমার ছায়াও আমার সঙ্গে নাচন ধরে।
যখন আমি শান্ত হই তখন আমরা এক সঙ্গে মজা করি,
যখন আমি সুরাসক্ত হই তখন সবাই নিজের মতো থাকি।
আমি কসম কাটি অনুভূতি মুক্ত এক অনন্ত যাত্রার,
মেঘমেদুর নক্ষত্রের নদীতে আমাদের আবার হবে দেখা।
লি বাই প্রায়ই চীনের ইয়াংসি নদীতে জ্যোৎস্না স্নানে বেরুতেন। তেমনই এক জ্যোৎস্না ঝরা রাতে চাঁদের সৌন্দর্য উপভোগ করতে তিনি ইয়াংসি নদীতে নৌকায় ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। নদীর স্বচ্ছ জলরাশিতে জ্যোৎস্নার প্রেম অনাবিল। জ্যোৎস্নায় সাঁতার কাঁটছে নদীর তরঙ্গায়িত জল। চাঁদের আলোকচ্ছটায় যেন নদীর পানি দুধের শুভ্র চাদর গায়ে জড়িয়ে আছে। ভরা জ্যোৎস্নায় যৌবনা চাঁদ নদীর পানিতে বড় রুপোর থালার মতো জ্বলজ্বল করছিল। মদের নেশায় চুর কবি ভেবেছিলেন যে তাঁর আরাধনায় রূপবতী চাঁদ বুঝি সত্যিই নদীতে নেমে এসেছে। তিনি আনন্দে আত্মভোলা হয়ে নদীর পানিতে চাঁদের প্রতিবিম্বকে চুমু খেতে গিয়ে নৌকা উল্টে পড়ে যান, আর সে মুহুর্তেই কবি তাঁর আরাধ্য জ্যোৎস্নার কোলে মৃত্যু সুধা পান করেন।
-জিসান আহমেদ,
১০ মে, ২০২০/চাঁদপুর।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মে, ২০২০ বিকাল ৩:২৭