আজ এই ভরদুপুরে খুব করে কাঁদামাটিতে গড়াগড়ি দিতে ইচ্ছে করছে।খুব মন চাইছে শৈশবের সেই ছোটোবড়ো কাঠি দিয়ে কর্দমাক্ত মাটির বুক আঁচড়ে আঁচড়ে নানান রঙের স্বপ্ন আঁকি।তারপর নানির দৌড়ানি খেয়ে কাঁদামাটির জামা গায়ে সারা বাড়ি চষে বেড়াই।অথচ আজ নানি নেই, তিনি কোনো এক শীতের অপরাহ্নে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন।
আজ দুপুরের আকাশ ছাইরঙা।এই বুঝি অঝোর বর্ষণ হবে।যদি ভিজা মাটির মন মাতানো এক গন্ধ নাকে এসে লাগে।আমি বৃষ্টিতে ভিজে দৌড়ে ছুটবো সেই সোঁদা গন্ধের খোঁজে।বৃষ্টি নামার অল্প সময়ের মধ্যেই পুকুরের পানি হালকা উষ্ণ হয়।পুকুরের সেই উষ্ণ পানিতে বৃষ্টি পড়ার টাপুরটুপুর শব্দ শুনতে শুনতে ভেলায় চড়ে আমার বৃষ্টিবিলাস করতে অনেক ইচ্ছে করছে।
আমার খুব ইচ্ছে করছে দুরন্তপনা শৈশবের ধুলো ওড়া রাস্তায় বিয়ারিংয়ের তৈরি ছোট্ট ঠেলাগাড়ি ঠেলতে ঠেলতে আচমকা মুখ থুবড়ে মাটিতে পড়ে যাই।বিয়ারিং ও কাঠ সংগ্রহ করে ঠেলাগাড়ি বানানোর সামর্থ্য আমার ছিলনা।অন্যের গাড়ি দীর্ঘক্ষণ ঠেলা দেওয়ার বিনিময়ে অল্পসময়ের জন্য আমার গাড়িতে ওঠার সুযোগ হতো।একদিন মনের মাঝে প্রচণ্ড জেদ চাপল যে, ঠেলা দেওয়ার বিনিময়ে আর কারো গাড়িতে উঠবো না, নিজে একটা গাড়ি বানিয়ে তবেই গাড়ি চালাবো।কিন্তু গাড়ি বানানোর সেই স্বপ্ন আজও চোখ মেলেনি।
আমার মন চাইছে সাইকেল বা রিক্সার পরিত্যক্ত টায়ার লাঠি দিয়ে পিটাতে পিটাতে ধূসর ধুলো গায়ে মেখে কোনো এক পথের বাঁকে অবিরাম ছুটে চলি।ছেলেবেলায় আমার কাছে টায়ার না থাকায় বাঁশের ফালি দিয়ে টায়ারের মতো গোলাকৃতির চাক বানিয়ে সেটা নিয়েই সারাবেলা ছুটাছুটি করতাম।আব্বার একটা পুরনো সাইকেল ছিল যেটা চালিয়ে উনি প্রতিদিন বাজারে যেতেন।আমি একদিন সেই সাইকেলের একটি টায়ার খুলে ফেলার সময় আব্বা দেখে ফেলে খুব মারেন।সন্ধ্যায় আব্বার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি উনার চোখ মেঘে ঢাকা আকাশের মতো বর্ষণোন্মুখ।পরদিন আব্বা আমাকে সাইকেল থেকে সেই টায়ারটিই খুলে দেন।
~সেই যে আমার নানান রঙের দিনগুলি~
-জিসান আহমেদ,
২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ / মতলব দক্ষিণ, চাঁদপুর।
ছবি- Getty Images.
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুন, ২০২০ দুপুর ১:২১