একদিন এক সুন্দরী রমণী জুয়েলারি থেকে একজোড়া স্বর্ণের চুড়ি কিনলেন।কিন্তু এ কী ! বাসায় ফিরে দেখলেন চুড়িগুলো কিছুতেই হাতে ঢুকছে না।তবুও তিনি অনেক জোরে চুড়িগুলো হাতে ঢুকালেন।কিন্তু এতেই বাঁধলো বিপত্তি।তিনি চুড়িগুলো হাত থেকে অার খুলতে পারছেন না, কোনোভাবেই না।এ নিয়ে সারা গ্রাম হইচই রবে কেঁপে উঠলো।
হাত থেকে চুড়িগুলো খুলার উপায় বের করার লক্ষ্যে গ্রামের সকল জ্ঞানী ব্যক্তিদের নিয়ে একটি পরামর্শসভা ডাকা হলো।একেকজন একেক রকম পরামর্শ দিতে লাগলেন।কিন্তু কারো পরামর্শই ফলপ্রসূ হচ্ছিল না।হঠাৎ এক অাগন্তুক এসে পরামর্শ দিলেন, 'মহিলার হাত দুটো কেটে ফেলুন, চুড়িগুলো অাপনা অাপনিই বেরিয়ে অাসবে'।সবাই এই অদ্ভুত পরামর্শ শুনে বিস্ময়াভিভূত হয়ে গেল, অার হাততালি দিতে দিতে সমস্বরে বলতে লাগলো, 'বাহ! বাহ! কী সুন্দর পরামর্শ! অাপনিই প্রকৃত জ্ঞানী'।তারপর মহিলার হাত দুটো কেটে চুড়িগুলো খুলে ফেলা হলো।
অারেকটি গল্প বলি।কোনো এক গ্রামের একটি পুকুর থেকে মৃত কুকুর পঁচার দুর্গন্ধ বেরিয়ে অাসতে লাগলো।সেই সাথে পুকুরের পানি কুকুর পঁচার কারণে দুর্গন্ধময়, দূষিত ও ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়লো।এই সমস্যা থেকে নিস্তার পাওয়ার লক্ষ্যে গ্রামের লোকজন পুকুরের সব পানি সেঁচে ফেলে দিলো।তারপর নতুন পানি দিয়ে পুকুর ভর্তি করা হলো।কিন্তু হায়! বিধিবাম! পুকুরের পানি থেকে অাগের মতই দুর্গন্ধ বের হচ্ছে।অাবার পানি সেঁচে পুকুরে নতুন করে পানি ভর্তি করা হলো কিন্তু একই অবস্থা, দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছেই।সবাইকে এ বিষয়টা ভাবিয়ে তুললো যে কী করা যায়।
তারপর গ্রামের মুরুব্বীদের নিয়ে পুকুরকে ব্যবহার উপযোগি করার লক্ষ্যে একটি পরামর্শসভার অাহ্বান করা হলো।কিন্তু কারো পরামর্শই কোনো কাজে অাসছিলো না।সবাই বেশ চিন্তিত হয়ে পড়লো।হঠাৎ এক বৃদ্ধ বলে উঠলো, 'অামরা তো পুকুর থেকে মরা কুকুরটিকেই ফেলছি না।তাহলে পুকুর দুর্গন্ধমুক্ত হবে কিভাবে ? পুকুর থেকে মরা কুকুরটিকে ফেলে দিলে পানি এমনিতেই দুর্গন্ধমুক্ত ও পরিষ্কার হয়ে যাবে'।তারপর সবাই হাততালি দিয়ে বৃদ্ধকে অভিবাদন জানালো।অার মরা কুকুরটিকে ফেলে দেওয়ার পর পুকুরের পানি ব্যবহার উপযোগি হয়ে পড়লো।
মূল কথায় অাসা যাক।সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে প্রশ্নফাঁসের মহোৎসব চলছে।শিক্ষা মন্ত্রণালয় কোনোভাবেই প্রশ্নফাঁস রোধে কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না।বরং প্রায়শই প্রশ্নফাঁসের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে খোদ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের দিকে অাঙুল উঠছে।এ যেন সর্ষের মধ্যে ভূত।মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী প্রশ্নফাঁস রোধে কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে না পেরে, অাসন্ন এসএসসি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস রোধে নিজের ব্যর্থতাকে অাড়াল করতে, জনগণের সমালোচনা থেকে রেহাই পেতে গতকাল এসএসসি পরীক্ষা চলাকালীন ফেসবুক বন্ধ রাখার মতো একটি হাস্যকর, ভ্রান্ত ও অবান্তর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন (নিবেন)।এ যেন ঠিক উপরে কথিত গল্পদ্বয়ের মহিলার চুড়ি না কেটে হাত কেটে চুড়ি বের করা অার পুকুর থেকে মৃত পঁচা কুকুর না সরিয়ে পুকুরের পানি পরিষ্কার করার শামিল।বরং এই রকম হাস্যকর সিদ্ধান্ত প্রশ্নফাঁস রোধ নয়, প্রশ্নফাঁসকে উৎসাহিত করে, প্রশ্নফাঁসের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের অাইন করে প্রশ্নফাঁসের বৈধতা দেয়।
মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী অাপনাকে অনুরোধ করছি- চুড়ি খুলে অানতে হাত না কেটে চুড়ি কাটুন, বারবার পুকুরের পানি না সেঁচে মৃত পঁচা কুকুরটিকে পুকুর থেকে অপসারণ করুন, প্রশ্নফাঁসের সাথে জড়িত কুকুরগুলোর হাত কাটুন, কুকুরগুলোকে মন্ত্রণালয় থেকে অপসারণ করুন, তাদেরকে যথোপযুক্ত শাস্তির অাওতায় অানুন, বিজি প্রেসের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন ও পরীক্ষার হলের মনিটরিং ব্যবস্থা অারও জোরদার করুন, প্রশ্নফাঁসের সাথে জড়িত থাকার শাস্তি অারও কঠোর করে অাইন পাসের ব্যবস্থা করুন, অাইনের সফল প্রয়োগ করুন।তাহলেই প্রশ্নফাঁস পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে।ফেসবুক বন্ধের মতো হাস্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করে প্রশ্নফাঁস রোধে ফলপ্রসূ হয় এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করে প্রকৃত জ্ঞানীর পরিচয় দিন।গোটা জাতিকে প্রশ্নফাঁসের মতো এরকম ভয়ঙ্কর মহামারীর হাত থেকে রক্ষা করুন।অামরা অাপনাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানাব।
-জিসান অাহমেদ,
২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৮ খ্রিঃ।