অমাবস্যাতিথির নিকষ অাঁধারে অাজ অবনী নির্জীব,
ইট, কংক্রিট অার লৌহের রাজ্যে অামি এক মুসাফির।
সদরঘাটে দূরপাল্লার ছোটবড় লঞ্চে সাইরেন বাজছে,
বুড়িগঙ্গার প্রতিটি বাঁকে বাঁকে লাল বাতির সংকেত,
মাছ ধরার ছোট নৌকায় মিটমিটিয়ে অালো জ্বলছে।
তিমিরাচ্ছন্ন ব্যস্ত নগরীর বুকে হিমেল বাতাস নেই,
তটিনীর তরঙ্গায়িত জলরাশিতে চাঁদের নৃত্য নেই,
শুধু পচা-দুর্গন্ধযুক্ত বিষাক্ত পবনের উড়াউড়ি খেলা।
হঠাৎ স্থির দাড়িয়ে থাকা চাঁদপুরগামী লঞ্চটির ডেকে
অালোর পরশে নগরীর ঘোর অমানিশা কেটে গেল।
অামি দিশেহারা হয়ে দৌড়ে গিয়ে লঞ্চটির ডেকে উঠি,
ডেকের সব অালো অামার সর্বাঙ্গে অঝোরে ঝরে পড়ে,
চুঁইয়ে চুঁইয়ে অালো গড়ায় অামার চুলে, চোখে ও মুখে,
অামি অালোর ঝর্ণাধারায় তৃষ্ণার্ত কাকের মত দাড়াই।
ডেকে অালোর এমন হাট বসেছে যে অসীম অালোতে
বুড়িগঙ্গার খরস্রোতা প্রবল জোয়ার হঠাৎ থেমে গেছে।
আমি অালোর প্রতিটি লোমকূপের অন্ধকার দেখেছি,
সেখানে এত আলো ছিল যে অামার চোখ ঝলসে যায়।
কাক-ডাকা এক দুপুরে অালো অামায় প্রশ্ন করেছিল,
“তুমি অামাকে কখনো ভুলে যাবে নাতো ?”
অামি সাত-পাঁচ না ভেবেই পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়েছিলাম,
“তুমি অামাকে কখনো ভুলে যেতে দিবে ?”
সেদিন সে ফিচেল হাসি হেসে অামায় উত্তর দিয়েছিল,
“তোমার সাথে পারা যায় না, তুমি অনেক চালাক ।”
এই অালাপের কিছুদিন পরেই বিনম্র এক দ্রোহী ঝড়
অামায় তমসাচ্ছন্ন করে অালোর দরজায় খিল লাগায়।
অামি অাজই প্রথম অালোকে এত কাছ থেকে দেখছি,
বজ্রাহতের মতো দাড়িয়ে দেখছি বিস্ময়ান্বিত চোখে,
তারপর কাঁপা গলায় চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করলাম,
“কেমন অাছো ? অামায় চিনতে পেরেছো ?”
সেদিনের মত সে ফিচেল হাসি হেসে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ল,
“পৃথিবীর সব মুসাফিরকে যায় কি চেনা ?”
ছলছল চোখে সেদিনের মতো পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়লাম,
“লক্ষ তারাদের মাঝে একটি শশীকে যায় কি ভুলা ?”
সে কোনো উত্তর দিল না, শুধু বলল, “ভালো থেকো।”
মৃদু হেসে মন্থর কণ্ঠে বললাম, “বেশ ভাল অাছি।”
অার ফ্যালফ্যাল চোখে হাত নেড়ে বিদায় জানালাম,
ধীরে ধীরে লঞ্চটি সাইরেন বাজিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল।
ঘুমন্ত নগরীর অলিগলি জুড়ে ফের ঘন অাঁধারের ছায়া,
অামি গ্লাস ভর্তি অন্ধকার গিলে প্রেমের সুধা পান করি,
নীলিমার অন্দর জুড়ে সঙ্গীহীন মেঘেদের রোনাজারি।
বারোয়ারি ডাস্টবিনে ঘেঁটেই চলেছে ক্ষুধার্ত পাগলটা,
অামি হেঁটে হেঁটে নৈশপ্রহরীর বাঁশির সুর মুখস্থ করি,
অার মিটমিট জ্বলা সোডিয়ামের অালোর দূরত্ব মাপি।
অামি জানি না সফেদ বরফের বুকে কবে ঠিকরে পড়বে
ভোরের প্রথম সূর্য, কোথায় থাকে শুভ্র শিশিরের কান্না,
কবে অাঁধারের বুক ছিঁড়ে উঁকি দিবে নীল জ্যোৎস্না রাত,
কবে শুনবো বসন্তের শুকনো পাতার গভীর দীর্ঘশ্বাস !
[প্রথম প্রকাশঃ ২২ শে জুলাই, ২০১৭ খ্রিঃ, ফেসবুকে]
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুলাই, ২০১৭ দুপুর ২:০৯