পৃথীবিতে মা শব্দটা সব থেকে ছোট শব্দ কিন্তু ভালবাসার গভীরতায়, তাৎপর্যতায় সেরা শব্দ। মায়ের ভালবাসা এত তুচ্ছ নয় যে বছরের বিশেষ কোন একদিন পালন করলেই মায়ের ঋণ শোধ হয়ে যাবে। কোন ভাবেই মায়ের কষ্টের প্রতিদান দেওয়া সম্ভব নয়। মায়ের কাছে যেমন কোন সন্তানের দোয়া চাওয়া লাগে না। মা সব সময় সন্তানের জন্য দোয়া করেন। নিজে না খেয়ে সন্তানের মুখে খাবার তুলে দেন। তেমনইভাবে মা কোন সন্তানকে মুখ ফেুটে অভিশাপও করেন না।মায়ের মনে কষ্ট দিলে , মা যদি সন্তানের কথায় মনে কষ্ট পান সেই কষ্ট আপনা আপনিই অভিশাপে পরিণত হয়ে যায়।
একশ্রেণীর বুদ্ধিজীবীরা বলেন ইসলাম নারী তথা মাকে ঠকিয়েছেন। তাদের যুক্তি সম্পত্তিতে মেয়েরা ছেলেদের অর্ধেক অংশ পান। তাদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণেই তারা এমন কথা বলেন। তারা ইসলামে নারীর অধিকার সম্পর্কে খুব কমই ধারণা রাখেন বলে মনে হয়।
ইসলাম একাধারে পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সব ক্ষেত্রেই নারীর নায্য অধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছে।
কন্যা হিসেবে ইসলামে নারীর মর্যাদা-
“ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত; তিনি বলেন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন; যে ব্যক্তির একটি মেয়ে আছে আর সে তাকে তুচ্ছ মনে করে নাই, অপমানিত করে নাই এবং ছেলেদের উপর প্রাদান্য দেয় নাই। আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।” (সুনানে আবু দাউদ)
আরো ইরশাদ হয়েছে,
“আনাস ইবনে মালেক রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন; যে ব্যক্তি দুটি কন্যা সন্তান সাবালক হওয়া পর্যন্ত লালন-পালন করল সে কেয়ামতের দিবসে আমার সাথে থাকবে।” (সহীহ মুসলিম)
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে,
“আবু সাঈদ খুদরী হতে বর্ণিত: তিনি বলেল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন; যে ব্যক্তির তিনটি কন্যা সন্তান আছে, সে তাদেরকে আদব শিক্ষা দিয়েছে এবং বিবাহ দিয়েছে এবং তাদের সাথে সদাচরন করেছে, তার জন্য রয়েছে জান্নাত।” (সুনানে আবু দাউদ)
স্ত্রী হিসাবে ইসলামে নারীর মর্যাদা -
পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে- তারা তোমাদের পরিচ্ছেদ এবং তোমরাও তাদের পরিচ্ছেদ। (সূরা বাকারাহ-১৮৭)
পবিত্র কুরআনে স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক মনিব দাসীর মতো নয়, বরং অত্যন্ত গভীর বন্ধুত্ব ও ভালবাসায় পরিপূর্ণ। (সূরা রুম: ২১)
মা হিসাবে ইসলামে নারীর মর্যাদা -
ইসলাম অন্য সবার থেকে মাকে বেশি মর্যাদা দিয়েছে। এত মর্যাদা অন্য কাউকে দেয়া হয়নি। “মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত”
একজন সাহাবী রসূল পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকটে এসে প্রশ্ন করলেন আমার নিকট খেদমত পাওয়ার বেশী হকদার কে? জবাবে রসূল পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- তোমার মা, দ্বিতীয়ত তোমার মা, তৃতীয়ত তোমার মা, অত:পর পিতা। (সহীহ বুখারী)
ইসলাম নারীদের অর্থনৈতিক মর্যাদা-
নারী তার স্বামীর কাছ থেকে দেনমোহর পেয়ে থাকে। পক্ষান্তরে পুরুষকে দেনমোহর পরিশোধ করতে হয় এবং এটা স্বামীর ওপর ফরয। তাছাড়া স্ত্রীর ভরণপোষণ, বাসস্থান, চিকিৎসা, সন্তানদের যাবতীয় ব্যয়ভার বহন, বাবা মা ও ভাইবোনদের দায়িত্ব বাধ্যতামূলকভাবে পালন করতে হয়। অর্থাত্ স্ত্রীকে কোন প্রকার আর্থিক দায়িত্ব পালন করতে হয় না। একজন নারী তার পিতার পরিত্যক্ত সম্পদ থেকে তার ভাইয়ের তুলনায় অর্ধেক পেলেও দাদা, স্বামী বৈপিত্রেয় ভাই ও সন্তানের থেকে সম্পদ লাভ করে থাকে, যা একত্র করলে ভাইয়ের তুলনায় অনেক বেশী হয়। কাজেই ইসলাম নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করেছে এ অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও অমূলক।
ইসলামে নারীর চলাফেরা ও কর্মে স্বাধীনতা-
নারীবাদীদের অভিযোগ ইসলামে নারীর স্বাধীনতা নাই। নারী স্বাধীনতায় ইসলাম বিশ্বাস করে না। ইসলাম মানেই অন্ধ বিশ্বাস , ধর্মীয় গোড়ামী আর বদ্ধ ঘরে নারীকে আবদ্ধ রাখা।
নারীর স্বাধীনতা বলতে স্বেচ্ছাচারিতাকে বোঝায় না, বরং নারীর স্বাধীনতা হচ্ছে_নারীর বাকস্বাধীনতা, সৎ শিক্ষাগ্রহণ ও সৎকর্মের স্বাধীনতা, ইজ্জত-সম্মান ও যাবতীয় অধিকার বজায় রেখে সুন্দর ও নিরাপদ জীবনযাপনের পূর্ণ নিশ্চয়তা
হজরত যোবায়ের (রা.)-এর স্ত্রী, হজরত আবু বকর (রা.)-এর কন্যা আসমা (রা.)-এর সপর্দায় ঘোড়ার ঘাস সংগ্রহ করা, খেজুর বাগানের পরিচর্যা, খেজুরের আঁটি বহন করে বাড়ি আনা থেকে সংসারের যাবতীয় দায়িত্ব পালন করতেন। জাবের ইবনে আবদুল্লাহ খালা তালাকপ্রাপ্ত হলে তিনি খেজুর বাগান থেকে খেজুর সংগ্রহ করতেন। রাসুল (সা.) এটা জানলে বললেন, এতে কোনো ক্ষতি নেই। (রাসুলের যুগে নারী স্বাধীনতা, ২য় খণ্ড)।
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-এর স্ত্রী ঘরে বসে শিল্পকর্ম করতেন এবং তা বাজারে বিক্রি করে সংসার চালাতেন। ওহুদের যুদ্ধে উম্মে আম্মারা (রা.) শত্রুদের তরবারির ডজনখানেক আঘাত সহ্য করেও বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করে রাসুল (সা.)-এর ওপর আক্রমণকারী শত্রুদের প্রতিহত করেছিলেন। ওমর (রা.)-এর সময় উম্মে শিফা নামক মহিলা বাজারের পরিদর্শক (আল হিসবাহ্) হিসেবে নিয়োজিত হন। রুফায়দা আল-আসলামিয়া প্রথম মহিলা ডাক্তার ছিলেন। রাসুল (সা.) খন্দকের যুদ্ধের সময় তাঁকে মদিনার মসজিদের পাশে তাঁবু টানিয়ে দিয়েছিলেন এবং সেখানে তিনি যুদ্ধাহত মুসলিম সেনাদের শুশ্রূষা করতেন। আশশিফা বিনতে আবদুল্লাহ মুসলিম মহিলাদের লেখাপড়া শেখানোর জন্য বের হতেন।
একশ্রেণীর জ্ঞানপাপীরা শুধু পিতার সম্পত্তির অংশটুকুই উল্লেখ করেন। বাকি অধিকারগুলো তারা জানেন না অথবা জেনেও উল্লেখ করেন না।কারণ তারা মূলত মেয়েদেরকে বিনোদনের সামগ্রী হিসেবে ব্যবহার করতে ইচ্ছুক। মূলত ইসলাম নারীকে দিয়েছে সকল অধিকার তবে তা হতে হবে সম্মানজনক পন্থায় নিজের ইজ্জত আব্রু রক্ষার জন্য যথাযথ পর্দার মাধ্যমে।
তথাকথিত সভ্য সমাজের নৈতিক স্খলনজনিত দৃশ্যমান বিপর্যয় হতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের রক্ষা করুন- এ হোক আমাদের কামনা।
যে সকল বই থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছি তাদের প্রতি রইল আমার কৃতজ্ঞতা এবং তাদের জন্য দোয়া করি আল্লাহ তাদেরকে মুমিন-মুসলিম হিসেবে গ্রহণ করুন।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২৪