অদূর ভবিষ্যতে স্টার্টাপ কিংবা একদম নতুন কনসেপ্ট নিয়ে ব্যবসা করতে আসার পরিকল্পনা যাদের রয়েছে, তাদের আমি একটি গল্প বলতে চাই।
গল্পটা দুই কিশোরের। ওয়াশিংটন স্টেটের সিয়াটলের মনোরম পরিবেশে যাদের বেড়ে উঠা। জিম এবং জর্জ ক্যাসি নামের ওই দুই কিশোরের মন- মন্দিরে তখনো 'কিছু একটা করে ফেলার প্রাণবন্ত চিন্তাভাবনা' আসার কথা না। হাইস্কুলের চৌকাঠ-ই তো এখনো মাড়ালো হলো না; কিশোরেরা দিগন্ত বিস্তৃত সিয়াটলের লেক ধরে বাইসাইকেল চালাতে চালাতে ভাবে।
মৃদু বাতাস বইছিলো আর তাতে জর্জের সোনালী মসৃণ চুলগুলো যেন আকাশ ছুঁইতে চাচ্ছিলো। হঠ্যাৎ স্মিত ব্রেক করে পিছনে বসে থাকা জেমস'কে যা বললো জর্জ, তার জন্য সে প্রস্তুত ছিলো না।
১৯০৭ সালের কথা।
সেদিন বাইসাইকেল ঘুরিয়ে বাসায় ফিরে আসলো কিশোরদ্বয়। জর্জ তার পরিকল্পনার কথা জানালো জেমসকে। বললো, 'আমরা একটা কাজ করতে পারি। দুজন মিলে মানুষের বাসায় বাসায় গিয়ে পার্শ্বেল ডেলিভারি দিতে পারি।' গ্যারেজের পরিত্যাক্ত এক টায়ারে বসে থাকা জেমস হেসে উঠলো! মাথা খারাপ তোমার? বলে উঠলো, আমাদেরকে কে-ই বা ডেলিভারি পৌঁছে দেয়ার কাজ দিবে? তাছাড়া আমাদের তো নিজেদের সাইকেলটুক পর্যন্ত নেই।' থামলো জেমস। জর্জ তৎক্ষণাৎ হাত ঝাঁকিয়ে বলতে লাগলো- সাইকেলের ব্যবস্থা হয়ে যাবে; চলো নতুন কিছু শুরু করা যাক। একদিন আমাদের কোম্পানির নিজস্ব পরিবহণ ব্যবস্থাও থাকবে, তুমি দেখে নিও।
সে থেকেই শুরু। এক বন্ধুর কাছ থেকে ধার করে আনা হলো বাইসাইকেল। কিছু জমানো খুচরো ডলার মিলে দেখা গেলো তা মোটামুটি শয়ের কোটায় পৌঁছে গেছে। ১১৩ বছর আগের কথা; জেমস আর জর্জের সেদিনের এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্তে জন্ম নিলো বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় পার্শ্বেল ডেলিভারি কোম্পানি- ইউপিএস বা ইউনাইটেড পার্শ্বেল সার্ভিস।
ধার করে আনা সাইকেল দিয়ে ডেলিভারি শুরু করা জেমস আর জর্জের সে অদ্ভুত কোম্পানির বর্তমান বাজার মূল্যে ৬০ বিলিয়ন ইউএস ডলার। আর তারা যে গ্রুপের আন্ডারে চলছে, ২০২১ সালের হিসেবে তাদের মোট সম্পদের পরিমান ৫.৬ ট্রিলিয়ন ডলার।
গল্পটি বলার একটা উদ্দেশ্য আছে। সেটি হচ্ছে- স্টার্টাপ শুরুর সময় মোটামুটি বড় অংকের একটা জনগোষ্ঠী ইনভেস্টমেন্ট নিয়ে ভাবেন। যেহেতু নতুন ব্যবসা- সেহেতু এখানে বহুধর্মী রিস্ক থাকেই। পাশাপাশি একদম নতুন যারা শুরু করে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় যে প্রবণতা দেখা যায়, তা হলো চিন্তাভাবনার সংকীর্ণতা। এখানেই এক্সপার্টদের কথা বলা যাক; তারা বলেন- ক্ষুদ্র ব্যবসার সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে তারা ক্ষুদ্র করেই ভাবে।
জেমস- জর্জের ভাবনা ছিলো সুদূরপ্রসারী। তারা শুরু করেছিলেন একদম ছোট থেকে; তবে তারা নিজস্ব পরিবহনেই আজ সীমাবদ্ধ থাকেন নি; বরং বিশ্বের বর্ডারে বর্ডারে পৌঁছে গেছে তাদের নিজস্ব ব্রান্ড, নিজস্ব পতাকা।
ইউপিএস এর নেটওয়ার্কিং আজ বিশ্বের কাছে এক রোল মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে। যারা এখনো কিছু একটা করবেন ভাবছেন, লেগে পড়ুন- আর শেষপর্যন্ত লেগেই থাকুন। একদিন আপনার অবস্থান জেমস জর্জের থেকেও বেশি দৃঢ় হতে পারে।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ২:২০