ইংল্যান্ডের দক্ষিন পূর্বাঞ্চলীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের একটি শহর; নাম শেফিল্ড। ৫ টি নদীর মোহনায় গড়ে উঠা শেফিল্ড শহরের আরেক পরিচয়- গ্রিনেষ্ট সিটি অব ইংল্যান্ড! সেই সবুজ শহরে ১৯৮৭ সালের ১১ ই জানুয়ারি এক নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম হয় তার। বাবা ছিলেন একজন ক্রেন ড্রাইবার; আর মা কাজ করতেন 'লিগ্যাল সেক্রেটারি' হিসেবে। দিনের বেশিরভাগ সময় ই ফুটবল নিয়ে পড়ে থাকতো বলে সে পড়াশোনায় খুব বেশি অমনোযোগী ছিলো। ১৬ বছর বয়সের বালকটি চেয়েছিলো শহরতলীর স্থানীয় 'শেফিল্ড উইডন্যসডে' ক্লাবে খেলতে। কিন্তু তাকে রিজেক্ট করে দেয়া হয়; পর্যাপ্ত পরিমান ভালো না থাকার কারণ দেখিয়ে!
বালকের মনোবল ভেঙ্গে গুড়ো করে দেয়ার জন্য এই কারণ'টি যথেষ্ট শক্তিশালী ছিলো। স্ব-কল্পনায় গড়ে তুলা একজন প্রফেশনাল ফুটবলার হওয়ার ইচ্ছাটা তখন টেমস নদীর প্রবাহিত পানির মতোই ভেস্তে গেলো। এবং সে ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন'টাকে অনিচ্ছা স্বত্ত্বেও বাদ দিয়ে দিলো। তখন তার জীবনে নেমে এসেছিলো ভয়াবহ দুঃসময়। বাবা- মা তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন এবং নিজের মতো স্বাধীনভাবে বেচে থাকার জন্য বলেন।
অভিভাবকহীন ছেলেটা তখন নিজের অস্তিত্ব ঠিকিয়ে রাখতে এখানে সেখানে ছোটখাটো চাকরি খুজতে থাকলো। এবং এক সময় একটা ফ্যাক্টরিতে কাজ শুরু করলো। কিন্তু ফুটবল নেশাগ্রস্থ কোনো মানুষ যে ফুটবল ছাড়া বাঁচতে পারেনা- এমন ধারণা সত্যি প্রমাণিত হলো। ছেলেটা কাজের পাশাপাশি সময় পেলেই ফুটবল প্রেক্টিস করতে থাকলো এবং একসময় স্থানীয় 'স্টকব্রীজ পার্ক' দলে খেলার সুযোগ পেলো। তার স্কিলগুলো যথেষ্ট উচ্চমানের ছিলো বলে সবার প্রসংশা কুড়াতে থাকলো সে। তবে, সপ্তাহে ৩০ পাউন্ডের বিনিময়ে; আই রিপিট- মাত্র ৩০ পাউন্ডের বিমিময়ে সে সেখানে খেলা চালিয়ে যেতে থাকলো!
১৫ বছর পরের কথা।
সপ্তাহিক ৩০ পাউন্ড পারিশ্রমিকে খেলা চালিয়ে যাওয়া সে ফুটবলারের বর্তমান মার্কেট ভ্যালু হচ্ছে ২০ মিলিয়ন ডলার! তারচেয়ে বড় ব্যাপার, শেফিল্ডের স্থানীয় ক্লাবে 'নট গুড এনাফ' বলে রিজেক্ট হওয়া ছেলেটা বর্তমানে স্থানীয় কোনো ক্লাবে না, খেলেন জাতীয় দলের জার্সি গায়ে! পাশাপাশি খেলেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগে; মোটামুটি অখ্যাত একটি ক্লাবের জার্সি গায়ে টানা ১১ ম্যাচে গোল দিয়ে ভেঙ্গেছেন ডাচ তারকা রুড ফন নিষ্টোরয়ের টানা ম্যাচে গোল দেয়ার অলটাইম রেকর্ড! ইংল্যান্ডের বাঘা বাঘা ক্লাবগুলোর চোখে আঙ্গুল দিয়ে যথার্থই বিশ্ববাসী'কে চমকে দিয়ে ক্লাবকে জিতিয়েছেন প্রিমিয়ারলীগ টাইটেল! ভাবা যায়?
বলছিলাম ইংলিশ ফুটবলার ভার্ডির কথা৷ জেমি রিচার্ড ভার্ডি! শেফিল্ডের এক নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেয়া ছেলেটা আজ ইংল্যান্ড ফুটবলের এম্বেসেডর; খেলার মাধ্যমে দেশকে রিপ্রেজেন্ট করে। অথচ একসময় 'আমার দ্বারা হবেনা' বলে হাল ছেড়ে দিয়েছিলো এই ভার্ডি! কারখানা শ্রমিক থেকে জেমি ভার্ডির তারকা হওয়ার গল্পটা আরেকটা পিছন থেকে শুরু করা যাক তাহলে
মাত্র ৭ বছর আগেও জেমি ভার্ডি খেলতেন নন- প্রফেশনাল লীগে। 'ফ্রিটউড টাউন' ক্লাবের হয়ে, হাজার পঁচিশেক দর্শকের সামনে!
বর্তমানে আপনি যদি ভার্ডির সেই স্থানীয় ক্লাব 'স্টকব্রীজ পার্ক স্টিলস' এর স্টেডিয়াম ঘুরে আসেন, তাহলে চমকে যাবেন। স্টেডিয়ামের একটা স্ট্যান্ডের নামই তারা ভার্ডির নামে নামকরণ করে ফেলেছে! দ্যা জেমি ভার্ভি স্ট্যান্ড।
২০০৭ সালে জেমি ভার্ডি স্কটব্রীজ পার্ক স্টিলের সিনিয়র দলে খেলার সুযোগ পান। এখানে ভার্ডি ৩ সিজন খেলার পর ২০১০ সালে নর্দান প্রিমিয়ার লীগের ক্লাব এফসি হেলিফেক্সে যোগ দেন। নতুন ক্লাবে প্রথম মৌসুমেই ভার্ডি ২৫ টি গোল করেন। ২০১১ সালের আগষ্ট মাসে দল বদল করে যোগ দেন কনফারেন্স প্রিমিয়ারের ক্লাব ফ্লিটউড টাউন ক্লাবে৷
২০১১-১২ মৌসুমে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেন জেমি ভার্ডি৷ মৌসুমে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৩১ লীগ গোল করে সে৷ সে মৌসুমে ফ্লিটউড টাউন ক্লাব'কে কনফারেন্স টাইটেল জিতানোর স্বীকৃতি স্বরুপ জেমি ভার্ডি ক্লাবের 'প্লেয়ার্স প্লেয়ার অব দ্যা ইয়ার' নির্বাচিত হন৷
২০১২ সালের মে মাসে জেমি ভার্ডির জীবনে ঘটে যায় বিস্ময়কর একটি ঘটনা৷ একজন নন- লীগ ফুটবলার'কে দলে ভেড়ানোর জন্য ইংলিশ ক্লাব লিচেষ্টার সিটি খরচ করে ১ মিলিয়ন ডলার! তখনকার জেমি ভার্ডির জন্য মূল্যেটা তখন মোটেও কম ছিলোনা। কারখানার শ্রমিক থেকে লিচেষ্টারের কিং পাওয়ার স্টেডিয়ামের সবুজ ঘাস- যাত্রাটা তখন কেবল শুরু!
★ লিচেষ্টার সিটির স্বপ্নের সারথিঃ গল্পটা ২০১২ সাল পরবর্তী..
১৭ মে ২০১২ সালে অফিসিয়ালি ঘোষণা আসে যে জেমি ভার্ডি ইংলিশ প্রিমিয়ারলীগের দল লিচেষ্টার সিটির হয়ে ২০১২-১৩ মৌসুমে খেলবেন। এর পরের দিন ই ভার্ডি লিচেষ্টারের হয়ে ৩ বছরের অর্থাৎ ২০১৫ সাল পর্যন্ত চুক্তিবদ্ধ হন। আগষ্টের ১৪ তারিখ লিচেষ্টারের হয়ে লীগ কাপে 'টর্কে ইউনাইটেড' ক্লাবের বিপক্ষে অভিষেক হয় ভার্ডির৷ ৪-০ জয় পাওয়ার সে ম্যাচে হেড থেকে একটি গোলও করেন ভার্ডি৷ ৪ দিন পর কিং পাওয়ার স্টেডিয়ামে লিচেষ্টারের হয়ে প্রিমিয়ারলীগে অভিষেক হয় ভার্ডির৷ সে ম্যাচে ২-০ গোলে জয় পায় তার দল; এন্ডি কিং'কে একটি এসিস্ট করেন জেমি ভার্ডি। লীগে ভার্ডির পা থেকে ১ম গোল আসে ব্ল্যাকবার্ন রোভার্সের বিপক্ষে ম্যাচে ২৫ আগষ্টের ম্যাচে৷
লিচেষ্টারের হয়ে ১ম মৌসুম'টা একদম ই ভালো কাটেনি ভার্ডির৷ পুরো মৌসুমে তার পা থেকে আসে মাত্র ৫ টি গোল! ক্লাব ম্যানেজমেন্ট পুরোপুরি হতাশ হয়ে পড়ে ভার্ডির উপর৷ ক্লাবের ফ্যানরা সোশ্যাল মিডিয়ায় তাকে নিয়ে কটাক্ষ এবং ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করে! বিদ্রুপের পরিমান এতোটাই প্রবল ছিলো যে, ভার্ডি ফুটবল খেলা ছেড়ে দেয়ার কথাও ঠিক করে ফেলেছিলেন। কিন্তু ক্লাবের তৎকালীন ম্যানেজার নাইজেল পিয়ারসন এবং সহকারী ম্যানেজার ক্রেইগ শেক্সসপিয়ার তার পাশে দাড়ান এবং খেলা চালিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করেন।
২০১৩-১৪ মৌসুমে ভার্ডি ক্লাবের নির্ভরযোগ্য একজন ফুটবলারে পরিণত হন। লোকাল রাইভাল দল ডার্বি কাউন্টিকে ৪-১ গোলে হারিয়ে লিচেষ্টার সিটি লীগ টেবিলের শীর্ষে উঠে আসে৷ মৌসুমে ১৬ গোল করে জেমি ভার্ডি তার ক্লাবকে লীগ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে প্রিমিয়ার লীগে প্রমোট করতে সাহায্য করেন। সে মৌসুমে লিচেষ্টারের 'প্লেয়ার্স প্লেয়ার অব দ্যা সিজন' নির্বাচিত হন জেমি ভার্ডি৷
১৪ আগষ্ট ২০১৪ সালে ভার্ডি ক্লাবের সাথে চুক্তি নবায়ন করেন৷ নতুন চুক্তি অনুযায়ী ২০১৮ সালের গ্রীষ্মকালীন সময় পর্যন্ত লিচেষ্টারে থাকার ঘোষণা দেন ভার্ডি। ইঞ্জুরির কারণে সিজনের প্রথম ২টি ম্যাচ খেলতে পারেন নি ভার্ডি৷ অবশেষে ৩১ আগষ্ট ২০১৪ সালে প্রিমিয়ারলীগে অভিষেক হয় জেমি ভার্ডির৷ ২১ সেপ্টেম্বর ম্যাঞ্চেষ্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে লীগ ম্যাচে অসাধারন পার্ফমেন্সে নিজের প্রথম প্রিমিয়ার লীগ গোল করেন ভার্ডি৷ সে ম্যাচে ৩-১ গোলে পিছিয়ে থেকেও ৫-৩ গোলের অসাধারন এক জয় পায় লিচেষ্টার সিটি৷ ম্যান অব দ্যা ম্যাচ নির্বাচিত হন জেমি ভার্ডি।
২০১৫ সালের এপ্রিল মাস। ওয়েষ্ট ব্রমউইচ এলবিওন এবং বার্নলির বিপক্ষে জয় সূচক ২ টি গোল এবং পুরো মাসজুড়ে অসাধারণ পারফর্মেন্সের জন্য এপ্রিল মাসের প্রিমিয়ার লীগ প্লেয়ার অব অব দ্যা মান্থ নির্বাচিত হয় জেমি ভার্ডি। কুইন্স পার্ক রেঞ্জার্সের বিপক্ষে প্রিমিয়ার লীগের সর্বশেষ ম্যাচে ৫-১ গোলের জয় পায় লিচেষ্টার সিটি। এবং ২২ পয়েন্ট নিয়ে ১৪ নাম্বারে ২০১৪-১৫ মৌসুম শেষ করে তার।
৮ আগষ্ট ২০১৫ সালে সান্ডারল্যান্ডের বিপক্ষে গোলের মাধ্যমে নতুন মৌসুম শুরু করেন জেমি ভার্ডি। সে ম্যাচে ৪-২ গোলের জয় পায় লিচেষ্টার সিটি। অত:পর এস্টন ভিলা, আর্সেনাল এবং ক্রিষ্টাল প্যালেসের বিপক্ষে টানা গোল করতে থাকেন ভার্ডি। ৩১ অক্টোবর ওয়েষ্ট ব্রমউইচ এলবিওনের বিপক্ষে গোলের মাধ্যমে টানা ৮ ম্যাচে গোল করেন ভার্ডি। এবং স্পর্শ করেন রুড ভ্যান নিষ্টোরয় এবং ড্যানিয়েল স্টারিজের গড়া টানা ৮ ম্যাচে করা গোলের রেকর্ড৷ সপ্তাহ পরেই ওয়ার্টফোডের বিপক্ষে ম্যাচে গোলের মাধ্যমে আবারো স্পর্শ করেন ভ্যান নিষ্টোরয়ের টানা ৯ গোলের রেকর্ড। যদিও নিষ্টোরয়ের গোলগুলো ছিলো ২০০২-০৩ মৌসুমের শেষের দিকের এবং ২০০৩-০৪ মৌসুমের শুরুর দিকে। ভার্ডিই একমাত্র প্লেয়ার হিসেবে একই মৌসুমে টানা ৯ গোলের রেকর্ড গড়েন। অক্টোবর ২০১৫ সালে ভার্ডি আবারো প্রিমিয়ারলীগের প্লেয়ার অব দ্যা মান্থ নির্বাচিত হন।
নভেম্বরে নিউক্যাসল ইউনাইটেড এবং এক সপ্তাহ পরে ম্যাঞ্চেষ্টারের বিপক্ষে গোল দেয়ার মাধ্যমে টানা ১১ ম্যাচে গোল দেয়ার অসাধারন এক কৃর্তী গড়েন জেমি ভার্ডি৷ ০৫ ডিসেম্বরে সোয়ানসির বিপক্ষে ভার্ডি গোল দিতে ব্যর্থ হলে টানা গোল দেয়ার দৌড় সেখানেই থেমে যায়৷ তবু, নভেম্বর মাসের প্রিমিয়ার লীগ প্লেয়ার অব দ্যা মান্থ নির্বাচিত হন জেমি ভার্ডি। পঞ্চম প্লেয়ার হিসেবে পরপর এই সম্মাননা লাভ করেন ভার্ডি। এবং ২০ মে ২০১৬ সালে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড কর্তৃপক্ষ জেমি ভার্ডিকে টানা গোলের জন্য সার্টিফিকেট প্রদান করে।
২০১৬ সালের জানুয়ারিতে ভার্ডির মার্কেট প্রাইস ২.১ মিলিয়ন থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ মিলিয়নে! এবং লিচেষ্টার কোচ ক্লাউডিও রেনেইরি ভার্ডিকে 'প্রাইসলেস' বলে আখ্যায়িত করেন। ২ ফেব্রুয়ারি লিভারপুলের বিপক্ষে ২-০ গোলে জয় পায় লিচেষ্টার সিটি; দুটি গোল ই আসে ভার্ডির পা থেকে৷ ভলি থেকে করা গোল'টিকে 'ওয়ার্ল্ডক্লাস' বলে বিশেষিতকরণ করেন লিভারপুল ম্যানেজার জার্গেইন ক্লপ।
ফেব্রুয়ারিতে ভার্ডি লিচেষ্টার সিটির হয়ে নতুন চুক্তি করেন যেখানে তার সপ্তাহিক স্যালারি ছিলো £৮০,০০০ ডলার বা $১১৩,০০০ পাউন্ড! সপ্তাহিক ৩০ পাউন্ডে ক্যারিয়ার শুরু করা ভার্ডির সপ্তাহিক আয় তখন আশি হাজার ডলার। ভাবা যায়? নতুন কন্ট্রাক্ট সাইন করার পর লিচেষ্টারের অফিসিয়াল ওয়েভসাইটকে দেয়া এক বিবৃতিতে ভার্ডি বলেন-
'i'm Absolutely delighted to be fighting to achieve something special with this club, as part of this squad. I've never spirit like it- from the owner, to the manager and his staff, the players and the fans.'
নতুন ডিল করার পর উচ্ছ্বসিত জেমি ভার্ডি £১৬৮,০০০ ডলার দামের 'বেন্টলি কন্টিনেন্টাল' সিরিজের একটি গাড়ি ক্রয় করেন। নাম্বারপ্লেটে ছিলো- 'J9 VDY '।
২০১৪-১৫ মৌসুমে ২য় সর্বোচ্চ ২৪ গোল নিয়ে প্রিমিয়ার লীগ শেষ করেন জেমি ভার্ডি। এবং ১ টি মাত্র গোল বেশি স্কোর করে গোল্ডেন বুট জয় করেন হ্যারি কেইন। PFA TEAM OF THE YEAR এর জন্য লিচেষ্টারের ৪ জন ফুটবলার মধ্য একজন ছিলেন ভার্ডি। এবং FWA PLEAYER OF THE YEAR এবং ২০১৫-১৬ সালের 'প্রিমিয়ারলীগ প্লেয়ার অব দ্যা সিজন' নির্বাচিত হন
২০১৫ সালে ভার্ডি নিজস্ব উদ্দ্যেগে শুরু করেন 'V9 Academy', যেখানে বছর ব্যাপী সপ্তাহিক ৬০ জন নন-প্রফেশনাল ফুটবলার ক্যাম্পিং এবং কোচিং গাইডলাইন সুবিধা পেয়ে থাকেন। V9 একাডেমি মূলত নন- প্রফেশনাল ফুটবলারদের নিজেদের টেলেন্ট শো করার একটা মঞ্চ, যেখানে তারা লীগ ক্লাবের স্কাউটস'দের সামনে পার্ফম করতে পারে।
২০১৬-১৭ মৌসুমের জুনে আর্সেনাল ভার্ডির জন্য ২২ মিলিয়ন রিলিজ ক্লজ মূল্যে দলে বেড়ানোর জন্য বিড করে। কিন্তু ভার্ডি আর্সেনালের অফার রিজেক্ট করে দেন; কারণ তার স্বাভাবিক পজিশনে খেলানোর নিশ্চয়তা আর্সেনাল তাকে দেয়নি। এদিকে, লিচেষ্টার সিটিও তাদের চুক্তির টার্মস ইম্প্রুভ করে এবং ভার্ডি ইউরো ২০১৬ থেকে ফিরে এসে আরোও ৪ বছরের জন্য চুক্তি নবায়ন করেন।
১৭ আগস্ট ২০১৭ সালে আর্সেনালের ম্যাচ দিয়ে শুরু হয় লিচেষ্টারে ভার্ডির ৬ষ্ট মৌসুম। ১৬ অক্টোবরে ভার্ডি প্রিমিয়ারলীগের ২০০ ম্যাচ খেলার মাইলফলক স্পর্শ করেন। টটেনহ্যামের বিপক্ষে ৫-৪ গোলে পরাজয়ের ম্যাচে গোলের মাধ্যমে প্রিমিয়ারলীগ ক্যারিয়ারে ২য় বারের মতো ২০ গোল স্কোর করেন জেমি ভার্ডি। সকল প্রতিযোগিতায় ৪২ ম্যাচ খেলে ২৩ গোল করেন জেমি ভার্ডি। ৯ নাম্বারে থেকে লীগ মৌসুম শেষ করে লিচেষ্টার সিটি৷ ওয়েষ্টব্রমের বিপক্ষে ম্যাচে অসাধারন গোলটির জন্য জেমি ভার্ডি 'BBC GOAL OF THE SEASON' এওয়ার্ড লাভ করেন।
রাতারাতি তারকা বনে যাওয়া লিচেষ্টারের এই ফুটবলারকে নিয়ে মেতে ছিলো পুরো দেশ৷ ডিসেম্বরে ইংল্যান্ড জুড়ে ক্রিপস নির্মাতা কোম্পানি 'Walkers' ভার্ডির মুখের স্পেশাল সংস্করণের ৩২০০০ প্যাকেট ক্রিপস মার্কেটে ছাড়ে।
সপ্তাহ প্রতি ৩০ পাউন্ডে ফুটবল খেলা চালিয়ে যাওয়া জেমি ভার্ডির বর্তমানের যাত্রাটা চলছে খুব ভালোভাবেই। কিং পাওয়ার স্টেডিয়ামের সবুজ ঘাস মাড়িয়ে দিনদিন দু'হাত ভরে দিচ্ছেন দ্যা ফক্স'দের৷ লিচেষ্টারে ভার্ডির আগামি দিনগুলোর জন্য শুভকামনা থাকবে সবসময়।
★ ইংল্যান্ডের জার্সি গায়ে ভার্ডিঃ
২০১৫ সালের ৭ জুন কোচ রয় হজসনের অধীনে জাতীয় দলের জার্সিতে অভিষেক হয় জেমি ভার্ডির৷ এখন পর্যন্ত সে ইংলিশদের হয়ে ২৬ ম্যাচ খেলেছে। নামের পাশে আছে ৭ টি মূল্যবান গোল এবং ২ টি এসিস্ট।
★ আসুন এক নজরে দেখে নিই জেমি ভার্ডির ক্লাব ক্যারিয়ার স্ট্যাটস→
• প্রিমিয়ার লীগঃ ১৪২ ম্যাচে ৬২ গোল, ২৫ এসিস্ট।
• চ্যাম্পিয়নশিপঃ ৬৩ ম্যাচে ২০ গোল, ১৪ এসিস্ট।
• ন্যাশনাল লীগঃ ৩৬ ম্যাচে ৩১ গোল, ১৭ এসিস্ট!
• এফএ কাপঃ ১৫ ম্যাচে ৫ গোল।
• চ্যাম্পিয়ন্স লীগঃ ৯ ম্যাচে ২ গোল, ১ এসিস্ট।
• ইএফএল কাপঃ ৮ ম্যাচে ২ গোল ১ এসিস্ট।
• কমিউনিটি শিল্ডঃ ১ ম্যাচে ১ গোল, ১ এসিস্ট।
মোট ২৭৪ ম্যাচে ১২৩ গোল এবং ৬৮ এসিস্ট! অর্থ্যাৎ, প্রত্যেক ২১.০৩৪ মিনিটে একটা গোল/এসিস্ট করেছে ভার্ডি। ন্যাশনাল লীগে প্রতি ৩ মিনিটে একটি গোল/এসিস্টের সাথে জড়িত আছে সে!
★ সিনিয়র ক্লাব স্ট্যাটিস্টিক্স-
• ২০০৭-১০: স্টকসব্রীজ পার্ক স্টিলস।
• ২০১০-১১: এফসি হ্যালিফেক্স টাউন৷ ৩৭ ম্যাচে গোল করেছে ২৬ টি।
• ২০১১-১২: ফ্লিটউড ক্লাব। ৩৬ ম্যাচে ৩১ গোল।
• ২০১২- বর্তমান। লিচেষ্টার সিটি। ২০৬ ম্যাচে ৮৩ গোল।
→ ব্যাক্তিগত জীবনে জেমি ভার্ডিঃ
পিতা রিচার্ড গ্রিল এবং মা লিসা ভার্ডি। স্ত্রী রেবেকা ভার্ডি৷ সোফিয়া এবং ফিনলে জাইডেন ভার্ডি নামে তার দুই কন্যা সন্তান রয়েছে। এবং রেবেকা'র পূর্বের সংসারে তিন সন্তান এলা, টেইলর এবং মেগান রয়েছে।
★ জেমি ভার্ডি সম্পর্কে কিছু অজানা ফ্যাক্ট→
• ৬ অক্টোবর ২০১৬ সালে পাবলিশ হয় জেমি ভার্ডির নিজের লেখা আত্মজীবনীমূলক বই ' JEMIE VARDY: From Nowhere : My story.
• ভার্ডির ফুটবল আইডল হচ্ছেন শেফিল্ড উইন্সডে ক্লাবের স্ট্রাইকার 'David Hirst'.
• কার্বন ফাইভারের ফ্যাক্টরিতে কাজ করা কালীন সময়ে ভার্ডি আর্মিতে যোগ দিতে চেয়েছিলেন।
• ভার্ডির প্রিয় পপ ব্যান্ড হচ্ছে ' Westlife'.
• সম্মাননা •
→ এফসি হ্যালিফেক্স টাউনঃ
• নর্দান প্রিমিয়ারলীগ ডিবিশনঃ ২০১০-১১।
→ ফ্লিটউড টাউনঃ
• কনফারেন্স প্রিমিয়ারঃ ২০১১-১২
→ লিচেষ্টার সিটিঃ
• প্রিমিয়ার লীগঃ ২০১৫-১৬
• ফুটবল লীগ চ্যাম্পিয়নশিপঃ ২০১৩-১৪
• ইংল্যান্ডঃ
• বিশ্বকাপ চতুর্থ স্থানঃ ২০১৮
• ব্যাক্তিগত সম্মাননা •
• Premier League Player of the Season: ২০১৫-১৬।
• FWA Footballer of the Year: ২০১৫-১৬।
• PFA Team of the Year: ২০১৫-১৬ প্রিমিয়ার লীগ।
• FIFPro World XI 5th team: ২০১৬।
• Premier League Player of the Month: অক্টোবর ২০১৫, নভেম্বর ২০১৫।
• Premier League Goal of the Month: মার্চ ২০১৮।
• BBC Goal of the Season: ২০১৭-১৮।
• Conference Premier Player of the Month: নভেম্বর ২০১১।
• Conference Premier Top Goalscorer: ২০১১-১২
• Leicester City Players' Player of the Season: ২০১৩-১৪।
পরিসংখ্যান যখনি যা কিছু বলুক না কেন- ফুটবলের ১২০ গজের পিচে এবং অফপিচে যতই তারকা জ্যোতি ছড়ুক না কেন; ইতিহাসের পাতায় ক্ষুদ্র সংষ্করণে হলেও ফুটবলের প্রতি ডেডিকেশন এবং আত্মত্যাগ, কঠিন পরিশ্রম এবং অধ্যবসায়ের মাধ্যমে তারকা হয়ে উঠার পিছনের গল্পের জন্য জেমি ভার্ডির নামটা ফুটবলে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। আগামির তারকা ফুটবলারদের জন্য জেমি ভার্ডি অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন যুগে যুগে। এবং ভার্ডির জীবনের গল্প থেকে শিক্ষা নেয়া যায়- 'নট গুড এনাফ' শুনেও কনফিডেন্সের অভাবে যেন নিজেকে হারিয়ে না ফেলি। বলা তো যায়না, কারখানার শ্রমিক থেকে লিচেষ্টার চ্যাম্পিয়নের কারিগর ভার্ডির মতো আপনার জীবনেও মিরাকল ঘটে যেতে পারে। ভার্ডির গল্পটা কারখানার ছোট মাঠ থেকে কিং পাওয়ার স্টেডিয়ামের সবুজ মাঠ পর্যন্ত ই; আপনার গল্পটা আরোও বৃহৎ হতে পারে।
© আহমদ আতিকুজ্জামান।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ১০:২২