২০১৮-১৯ ফুটবল সিজন শুরু হতে বাকি মাত্র কয়েকটা দিন। চলছে প্রি-সিজন। ইউরোপের বড় বড় ক্লাবগুলো দল গোছাতে ব্যস্ত৷ সেইসাথে আগাম প্রস্তুতির অংশ হিসেবে খেলছে প্রি-সিজন ম্যাচ। আসন্ন ২০১৮-১৯ ফুটবল সিজন যে হতে চলেছে ব্রাজিলময়- তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। দলবদলে ব্রাজিলিয়ানদের জয়জয়কার অবস্থা৷ তাদের দলে পেতে ক্লাবগুলো খরচ করছে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার! আর্থার, ম্যালকম- ফিলিপে এন্ডারসন'দের দলবদলের খুটিনাটি জানাচ্ছি এই আর্টকেলে।
এবারের দলবদলের অন্যতম আকর্ষনীয় নিউজটি ছিলো ব্রাজিলের নাম্বার ওয়ান গোলকিপার এলিসনকে ঘিরে৷ রোমাকে গত সিজনে ইউসিএল সেমিফাইনালে নিয়ে যাওয়া এই গোলকিপারকে পেতে মরিয়া ছিলো স্পেনিশ জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদ। তবে সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে দামি গোলকিপারের তকমা গায়ে লাগিয়ে এলিসন পাড়ি দিয়েছেন ইংলিশ ক্লাব লিভারপুলে!
অলরেডরা তাকে পেতে খরচ করে ৬৬ মিলিয়ন ডলার! ১৭ বছর আগে রেকর্ড ৪৮ মিলিয়ন ডলারে জুভেন্টাসে যোগ দিয়েছিলেন জিয়ানলুইগি বুফন। তবে বুফনের রেকর্ড ভেঙ্গে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে দামি গোলকিপার এখন ব্রাজিলিয়ান এলিসন বেকার৷
এলিসনের সাথে সাথে লিভারপুল সাইন করিয়েছে আরেক ব্রাজিলিয়ান ফ্যাভিনহোকেও। ফরাসি ক্লাব মোনাকো থেকে লিভারপুলে যোগ দিয়েছেন ব্রাজিলিয়ান এই মিডফিল্ডার। এনফিল্ডে এসেই জানিয়ে দিয়েছেন, শিরোপা জিতার জন্য সর্বোচ্চটাই দিবেন তিনি৷ এলিসন এবং ফ্যাভিনহো ক্লাব সতীর্থ হিসেবে পাচ্ছে আরেক ব্রাজিলিয়ান টিমমেট রবার্তো ফিরমিনো'কে৷ গত মৌসুমে অসাধারণ খেলেছেন ববি; দেখার বিষয় এলিসন- ফ্যাভিনহো- ফিরমিনোর ক্লাব এবার নিজেদের যোগ্যতা কতটুকু প্রমান করতে পারে৷।
২০১৮-১৯ মৌসুমে স্পেনিশ জায়ান্ট বার্সালোনার প্রথম সাইনিং ছিলো ব্রাজিলিয়ান আর্থার মেলো। ব্রাজিলিয়ান ক্লাব গ্রেমিও থেকে ২১ বছর বয়সী এই তরুন মিড ফিল্ডারকে সাইন করে বার্সালোনা। ২০১৫ সালে গ্রেমিওর হয়ে কোচ ফিলিপে স্কলারির অধীনে অভিষেক হয় আর্থারের৷ আর্থারের সেরা জিনিস হচ্ছে তার পাস; শতকরা ৯৪.৮% পাস ই সাক্সেস্ফুল! বার্সা লিজেন্ড ডেকো'র মতে, 'তার (আর্থারের কোয়ালিটি অসাধারণ, বেস্ট।'
বার্সালোনা সম্প্রতি আরেক ব্রাজিলিয়ান ইয়াংস্টারকে তাদের দলে ভিড়িয়েছে। ম্যালকম। ব্রোয়েডক্স ক্লাবের হয়ে অসাধারণ একটি সিজন পার করেছে সে৷ ২০১৮-১৯ মৌসুমে তাকে সাইন করানোর একদম শেষ পর্যায়ে ছিলো ইতালিয়ান ক্লাব রোমা৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে হাইজ্যাক করে নেয় কাতালুনিয়ার ক্লাবটি! ৪১ মিলিয়ন ট্রান্সফার ফি'র বিনিময়ে তাকে দলে ভিড়ায় ক্লাবটি।
তবে বিশেষভাবে বলতে হয় ফিলিপে কৌটিনহোর কথা। গত মৌসুমের শেষের দিকে বার্সালোনায় যোগ দেন এই ব্রাজিলিয়ান এটাকিং মিডফিল্ডার। দলবদলের বাজারে যার মূল্য ২য় সর্বোচ্চ! ১৪১ মিলিয়ন ট্রান্সফার ফি'র বিনিময়ে লিভারপুল থেকে তাকে সাইন করায় স্পেনিশ জায়ান্ট বার্সালোনা। নতুন সিজনে সবকিছু নতুনভাবেই শুরু করবে এই লিটল ম্যাজিশিয়ান। বার্সায় বর্তমানে ফিলিপে কৌটিনিয়ো ছাড়াও আছে আরো ৪ ব্রাজিলিয়ান! ম্যালকম, মারলন, রাফিনহা এবং আর্থার মেলো। নতুন সিজনটা বার্সালোনার জন্য ব্রাজিলময় হতে চলেছে- তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।
দলবদলের এখন পর্যন্ত ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার ফ্রেড'কে সাইন করিয়েছে ইংলিশ ক্লাব ম্যাঞ্চেষ্টার ইউনাইটেড। শাখতার দোনেস্ক ক্লাব থেকে ম্যাঞ্চেষ্টারের ঐতিহ্যবাহী ড্রেসিংরুম, ওল্ড ট্রাফোর্ড- বিখ্যাত নগরী.. কেমন হতে চলেছে ফ্রেডের দিনগুলি? ইংল্যান্ডে তার দিনগুলি কেমন কাটবে সে প্রসঙ্গ বাদ দেই। আমার মতে, তাকে পর্যাপ্ত পরিমান প্লেয়িং টাইম দিলে ম্যাঞ্চেষ্টারের জার্সিতে সে সফল হবে। তার খেলার ধরণ প্রতিপক্ষ যেকোনো ক্লাবের জন্যই বিপদজনক। আশা করি নতুন মৌসুমে ফ্রেড তার সেরাটা দিতে পারবে।
ইতালিয়ান ক্লাব লাজিও থেকে ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডের আরেক তরুণ তুর্কি ফিলিপে এন্ডারসনকে সাইন করিয়েছে ইংলিশ ক্লাব ওয়েষ্টহ্যাম৷ অসম্ভব প্রতিভাবান এই তরুন তারকা নিজের জাত ইতিমধ্যেই চিনিয়েছে। ক্লাবের হয়ে ইন্টারন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নস কাপে অভিষেক ম্যাচে নেমেই গোল করেছে এন্ডারসন। নতুন ক্লাবে নতুন মৌসুমটা গোল দিয়েই শুরু হলো এই ব্রাজিলিয়ান ইয়াংস্টারের। পুরো সিজন দূর্দান্ত ভাবে কাটুক এই আশাই করি।
দলবদলের এই মৌসুমে অত্যন্ত নীরব অথচ বেশ আলোচিত ছিলো ওয়ার্টফোর্ডের ২১ বছর বয়সী ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড রিচার্লিসনের এভারটনে যোগ দেয়ার বিষয়টি। ব্রাজিল অনুর্ধ-২০ দলের এই ফুটবলারকে পেতে ৫০ মিলিয়ন খরচ করতে হয়েছে! ব্রাজিলের নোভা ভেনেসিয়া'তে জন্ম নেয়া এই প্রতিভাবান তরুন ফুটবলার ওয়ার্টফোর্ডের জার্সিতে গত সিজনে ৩৮ ম্যাচে ৫ গোলের পাশাপাশি ৪ টি এসিস্টও করেছেন।
গুঞ্জন উঠেছে ব্রাজিলিয়ান ক্লাব ফ্লুমিনেন্সের উঠতি তারকা পেড্রো'র জন্য ৮.৫ মিলিয়ন অফার করেছে ফ্রেঞ্চ ক্লাব ব্রোয়োডক্স। এদিকে উইলিয়ানের জন্য করা বার্সালোনার ৫ম বিডও বাতিল করে দিয়েছে চেলসি। তবে জোর গুঞ্জন উঠছে উইলিয়ানের সম্ভাব্য পরবর্তী গন্তব্য হতে যাচ্ছে ইংলিশ জায়ান্ট ক্লাব ম্যাঞ্চেষ্টার ইউনাইটেডে। ৬৬ মিলিয়ন ট্রান্সফার বিনিময়ে ওল্ড ট্রাফোর্ডের সবুজ ঘাস মাড়াতেও পারেন ব্রাজিলিয়ান এই এটাকিং মিডফিল্ডার। দলবদলের অন্যতম আকর্ষনীয় রিউমারটা এখনো লুকাস পাকুয়েটাকে ঘিরে৷ ২১ বছর বয়সী এই ব্রাজিলিয়ান তরুন তারকাকে পেতে মরিয়া ইতালিয়ান জায়ান্ট এসি মিলান এবং ইংলিশ ক্লাব লিভারপুল। তবে পাকুয়েটাকে সর্বপ্রথম চেয়েছিলো আরেক ইংলিশ ক্লাব চেলসি। ইতালিয়ান রিপোর্টস অনুযায়ী, এসি মিলানে ই হয়তো দেখা যাবে এই রাইজিং স্টার'কে। তবে তাদেরকে অবশ্যই ফাইট করতে হবে লিভারপুলের সাথে৷ পাকুয়েটা যেখানেই যাক, নতুন মৌসুমের জন্য শুভকামনা রইলো।
এদিকে বার্নাব্যুতে অনুষ্টিত হয়ে গেলো বিস্ময় বালক ভিনিসিয়াস জুনিয়রের প্রেজেন্টেশন। ইয়ুথ প্লেয়ার হিসেবে ১৭ বছর বয়সী ভিনিয়াসকে সাইন করিয়েছিলো অবশেষে ১ বছর লোনে ব্রাজিলিয়ান ক্ল্যাব ফ্লামেঙ্গোতে খেলার পর আবারো মাদ্রিদের জার্সি গায়ে দিলো এই ক্ষুদে তারকা। ফ্লামেঙ্গোর জার্সি গায়ে ২০১৭-১৭ সিজনে ১৭ ম্যাচে করেছে ৬ গোল ৩ এসিস্ট। ২০১৮ সালে এই ছেলের বয়স মাত্র ১৮! আর খেলছে বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্লাবে! আসন্ন মৌসুম তথা ক্যারিয়ার শুভ হোক ভিনিসিয়াসের- এই কামনা করি।
ভিনিসিয়াসের পাশাপাশি আরেক ক্ষুদে তারকা রদ্রিগো'কেও সাইন করেছে রিয়াল মাদ্রিদ! মাত্র ১৭ বছর বয়সী এই ব্রাজিলিয়ান রাইজিং স্টার আগামি বছর গায়ে জড়াবে অল হোয়াইটদের জার্সি।
ফরাসি ক্লাব ছেড়ে লুকাস মৌরা এখন হোয়াইট হার্ট লেন স্টেডিয়ামের ড্রেসিংরুমের সদস্য! এই বছরের জানুয়ারিতে ফ্রেঞ্চ ক্লাব পিএসজি থেকে তাকে সাইন করায় টট্যানহাম। স্পার্সদের হয়ে আগামি মৌসুম শুরু করার অপেক্ষায় আছেন মৌরা৷ শুভকামনা রইলো তার জন্য।
দলবদলের খবর গেলো; এবার আসি ভিন্ন প্রসঙ্গে। যথারীতি বরাবরের মতো আগামি মৌসুমেও ইউরোপের বড় বড় ক্লাবে খেলবে ব্রাজিলিয়ান তারকা ফুটবলাররা। পিএসজিতে নেইমার সিলভা মার্কুইনহোস, ম্যাঞ্চেষ্টার সিটিতে গ্যাব্রিয়েল জেসুস, এডারসন, ফার্নান্দিনহো; জুভেন্টাসে ডগলাস কস্তা, বার্সায়- ম্যালকম, আর্থার, মারলন, রাফিনহা, কৌটিনহো, ইন্টার মিলানে মিরান্ডা; রিয়াল মাদ্রিদে মার্সেলো- ক্যাসেমিরো! এছাড়াও ব্রাজিলিয়ান সিরিএ, বুন্দেসলীগা কিংবা চায়না লীগে আছে অসংখ্য ব্রাজিলিয়ান ফুটবলারদের ছড়াছড়ি।
এই এক জায়গায় ব্রাজিলিয়ান ফুটবলাররা অন্য সবার চেয়ে এগিয়ে আছেন। দলবদলের মৌসুম শুরু হলেই ব্রাজিলিয়ানদের নিয়ে শুরু হয় টানাটানি! কার আগে কোন ক্লাব কোন প্লেয়ারকে সাইন করবে- তা নিয়ে শুরু হয়ে যায় প্রতিযোগিতা। ব্রাজিলিয়ান তারকা ফুটবলার থেকে শুরু করে উঠতি বয়সী ফুটবলারদের দলে ভেড়াতে হিড়িক পড়ে যায় বড় বড় ক্লাবগুলোর মধ্য! ব্রাজিলিয়ানদের কদর এমনি এমনি না; মাঠের খেলায় তারা অপ্রতিদ্বন্দ্বী সেটাই বারবার প্রমান হয়। ফুটবল বিশ্বের সবচেয়ে দামি গোলকিপার, মিডফিল্ডার এবং সবচেয়ে দামি ফরোয়ার্ডও ব্রাজিলের ফুটবলার! প্রবাদটি মোটেও ভুল না, ' England invented the football and Brazilians perfected it'- কথাটি যেন বারবার ই নিখুঁতভাবে প্রমানিত হয়ে আসছে। সবসময়ই এক অনন্য উচ্চতায় সবার চেয়ে আলাদা এবং বেশি প্রসংশিত থাকেন ব্রাজিলিয়ান ফুটবলাররা। বিশ্ব ফুটবলে ব্রাজিলিয়ানদের প্রভাব সুদূরপ্রসারী। সারাবিশ্বে ছড়িয়ে ছিড়িয়ে থাকা অসংখ্য তারকা ফুটবলারদের ব্রাজিল দলটা কখনোই পিছনে ফিরে তাকায়নি, তাদের গৌরভ সম্মান এবং সম্মান-ই আলাদা।
© আহমদ আতিকুজ্জামান।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২৭