নির্বাচনের আর মাত্র কিছুদিন বাকী। আগামী ৩০ তারিখই নির্ধারিত হবে আগামীর বাংলাদেশ কেমন হবে। রাস্তা-ঘাট, হাঁটবাজার, চায়ের স্টল থেকে শুরু করে সবখানেই নির্বাচনী হাওয়া বিরাজমান। এই নির্বাচন এ দেশের মানুষের ভাগ্যে কতটা পরিবর্তন এনে দিতে পারে তা কে জানে। ড. কামাল হোসেন, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, আ.স.ম আব্দুর রবরা যেখানে এ দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় সেখানে কি বা বলার থাকে।
.
৩০ লক্ষ শহীদ আর দুই লক্ষ মা বোনের রক্তের ওপর দিয়ে ভেসে আসা এ দেশে ধীরে ধীরে মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়েছে রাজনীতিকরা। স্বাধীনতাকামী মানুষগুলো কি এরকম ক্ষমতায় যাওয়ার কামড়া-কামড়ি লড়াইয়ের একটি দেশ চেয়েছিল।
এই ঘুম-হত্যা-আর রাহাজানির রাজনীতি শিখে এ দেশের ভবিষ্যৎ তারুণ্যশক্তি কেমন বাংলাদেশ চালাবে তা নিয়েও সন্দিহান।
.
তবে আশার কথা এগুলোর মধ্য দিয়েও এ দেশটা এগিয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীর বুকে আমরা মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছি ধীরে ধীরে। গত দশ বছরে আওয়ামীলীগ যে উন্নয়নের প্রচেষ্টা করেছে তা বেশ প্রশংসনীয়। জনগণের মাথাপিছু আয়, জীবনযাত্রার মান ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের এই প্রচেষ্টা অব্যাহত নয় আরো বাড়ানো গেলে আমাদের সোনার বাংলা একদিন উন্নত বিশ্বের আদলে সোনায় পরিণত হবে ইনশাআল্লাহ। যে সরকারই ক্ষমতায় যাক না কেন তারা যেন বাংলাদেশকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে আপ্রাণ চেষ্টা করে।
.
কিন্তু এই উন্নয়নের রাজ্যে জনগণ কেমন আছে, এবং জনগণ কেমন সুফল পাচ্ছে তা বলতে গেলে এ কথা নি:সন্দেহে বলা যেতে পারে যে, জনগণ মোটেও সুখে নেই। উচ্চভিত্তরা আরো উচ্চভিত্ত হয়ে সম্পদের পাহাড় গড়ছে, নিম্নভিত্তরা হচ্ছে আরো নিম্নতর।
বাড়ছে বেকারত্বের অভিশাপ। অযোগ্য দলীয় নেতাকর্মীরা পাচ্ছে বড় বড় পদ, মেধাবী শিক্ষিত তরুণরা হচ্ছে বেকার। লুটেপুটে খাচ্ছে সরকারি ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানগুলো । বাড়ছে দিনের পর দিন বিদেশি লোনের অংক । পদ্ধা শেতু, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র সহ বিভিন্ন প্রকল্পে চুক্তির মধ্য দিয়ে সহযোগিতার আদলে ভারতসহ বিদেশীরা প্রতি বছর হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার কোঠি টাকা।
গত দশ বছরে আওয়ামীলীগ যা করেছে এবং এখনো যে পথে এগুচ্ছে তা একটি সৈরাচারি মনোভাবাপন্নেরই লক্ষণ। ক্ষমতাশীনরা এই মুহূর্তে ধীরে ধীরে সুস্থ্য ও গণতান্ত্রিক ধারা থেকে বিচ্যুত হয়ে জনগণের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে । নানান সৈরাচারি কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে এ দেশের বিভিন্ন গোষ্ঠীর কাছে একটি জালিম অত্যাচারী শাসক হিসেবে আখ্যায়িত হচ্ছে। শাপলা চত্ত্বরের আলেম উলামার ওপর নিষ্টুর আক্রমণ করে এ দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের চোখে বেদনার অশ্রু ঝরিয়েছিল। কোটাবিরুধী আন্দোলন কারীদের ওপর অকথ্য নির্যাতন আমাদের তরুণ সমাজকে হতাশ করেছে । নিরাপদ সড়কচাই আন্দোলনের কোমলমতি কিশোরদের ওপর পুলিশি নির্যাতন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে নিজেদের ইমেজ নষ্ট করে দিয়েছে। সর্বশেষ জনগণ একটি সুষ্টু নির্বাচনের প্রত্যাশা করলে নির্বাচন নিয়ে প্রাথমিক কাজগুলো খানিকটা আশা জাগালেও নির্বাচন ঘনিয়ে আসতে না আসতেই এখন বিরোধী মতের নেতাকর্মীদের ওপর যে দমন-পীড়ন, গ্রেফতার ও নির্বাচনি প্রচারণায় বাধা দেয়া শুরু হচ্ছে তা একটি সুষ্টু নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার প্রয়াস নয় বলে লক্ষ্য করা যায়।
.
.
ড. কামাল হোসেন, আ.স.ম আব্দুর রব, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর মত মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকরা দেশের এই ভ্রান্তিকালে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশ রক্ষায় যে এগিয়ে এসেছেন তা এ দেশের মানুষের কাছে আশা জাগানিয়া।
.
আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়ে জনগণের বিজয় হোক। এই প্রত্যাশা আমাদের।