ক্বওমী অালেমদের শোকরানা মাহফিল, তেতুল হুজুরের প্রধানমন্ত্রীর সাথে হাত মেলানো এ নিয়ে এদেশের সস্তা সোসাল মিডিয়া কিছু এক্টিভিস্ট নানানভাবে ব্যঙ্গ করে যাচ্ছেন। তেতুল
হুজুরকে নিয়ে একটা ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য না করলে যেন এদের পেটের ভাতই হজম হচ্ছে না। কিছুদিন অাগে যুক্তফ্রন্টের সাথে
শেখ হাসিনা সরকারের অালোচনা হওয়ার ধরুনও ওরা ব্যঙ্গ করতে ভুলেনি। নেগেটিভ সেন্সের মানুষেরা সবকিছুকেই নেগেটিভলি নিবে এটাই স্বাভাবিক।
.
.
যে কোনো বিষয়কে পজিটিব ও নেগেটিভ দুই দিক থেকেই নেয়া যায়। ক্বওমী শিক্ষাবোর্ড তাদের নিজস্ব অবস্থান থেকে যুক্তির ওপর দাঁড়িয়ে, অাওয়ামীলীগ তাদের অবস্থান হতে অালেমদের
সহযোগিতা করেছে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় হতে ক্বওমী অালেমরা তাদের শিক্ষা ব্যবস্থার স্বীকৃতির দাবি জানিয়ে অাসছে। দাবি অাদায়ে বিভিন্ন সরকারের সময়ে তারা মাঠেও অান্দোলনে নেমেছিল। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য বিএনপি, এরশাদ, অাওয়ামীলীগ কোনো সরকারই তাদের দাবির যথার্থ মূল্যায়ন দেয়াতো দূরে থাক ক্বওমী মাদ্রাসার স্বীকৃতিটুকোর বাস্তবায়ন করেনি। বিএনপি সরকারের এক শাসনামলে স্বীকৃতি দেয়া হলেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নী। সর্বশেষ তারা ১৩ দফা দাবি নিয়ে ঢাকার শাপলা চত্বরে বিশাল সমাবেশ ও অবস্থান
কর্মসূচিও পালন করেছিল। যদিও ঐ রাতে সরকারি দুটি বাহিনী রাতের অাঁধারে তাদের অবস্থান কর্মসূচির ওপর অতর্কিত
হামলা চালিয়েছিল। হেফাজতের দাবি অনুযায়ী সেখানে ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটে। সরকার তাদের ওপর অাক্রমনাত্বক
হামলা চালালেও পরবর্তীতে তাদের ১৩ দফা দাবি মেনে নিয়ে তা বাস্তবায়নের কার্যক্রম শুরু করে। ক্বওমী মাদ্রাসার সর্বোচ্ছ দাওরায়ে হাদীসকে মাস্টার্সে উন্নীত করে এবং সরকারি চাকুরিতে প্রবেশের পথ খুলে দেয়। দীর্ঘদিন হতে অবহেলিত দেশের একটি জনগোষ্ঠীকে তাদের দীর্ঘদিনের দাবি অনুযায়ী
স্বীকৃতি দিয়ে এই সরকার তাদের হতে কৃতজ্ঞতার দাবিদার হওয়াটাই স্বাভাবিক। তাদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত দাবিটি
মেনে নেয়ার জন্যে সরকার তথা শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে শোকরানা মাহফিল করাটা অস্বাভাবিক কিংবা
অাজগুবি কিছু নয়। তারা এই মাহফিলের অায়োজন করেছে দুটি কারণে,
১. অাল্লাহর কাছে শোকরিয়া অাদায় করতে।
২. যারা এই স্বীকৃতির পেছনে কাজ করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখাতে।
.
কিছু অর্জিত হলে তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার নির্দেশ ইসলাম ধর্মে দেয়া হয়েছে। একটা উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টা অারো ক্লিয়ার করি, ধরুন একটা গ্রামবাসীকে বিশ্বরোডে ওঠতে হলে একটা খাল পার হতে হয়। খালের ওপর কোনো সাঁকো নেই অথবা সাঁকোটা এতটাই ভাঙ্গা ও নড়বড়ে যে গ্রামবাসীর অনেক কষ্টে খালটা পার হতে হয়। দীর্ঘদিন হতে গ্রামবাসীরা বিত্তবানদের কাছে অাবেদন জানালেও কেউ সাঁকোটি তৈরি করে দিচ্ছে না। হঠাৎ একজন বিত্তবান মানুষ এসে যদি তাদের সাঁকোটি পাকা করে বানিয়ে দেয় তবে গ্রামবাসীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত নয় কি? উক্ত বিত্তবান ব্যক্তিকে সংবর্ধনা দিয়ে
ধন্যবাদ জানানো তাদের জন্যে যেমন স্বাভাবিক, ক্বওমীর অালেমদের শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ
করাটাও স্বাভাবিক। এখানে রাজনীতিকে টেনে অানা নিতান্ত বোকামী এবং নিজের দলকানা মানষিকতারই বহি:প্রকাশ।
.
.
এই শোকরানা মাহফিল মানে শাপলা চত্বরের ঘটনা ভুলে যাওয়া নয়। অামরা দেখেছি ঐ শোকরানা মাহফিলে বিশদলীয়
জোটের অনেক ইসলামী দলের নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন। অাওয়ামীলীগ যদি মনে করে এই শোকরানা মাহফিল মানেই
শাপলা চত্বরের ঘটনা ভুলিয়ে হেফাজতের পূর্ণ সমর্থন পেয়ে যাবে অাগামী নির্বাচনে তা হবে তাদের জন্যে নিতান্ত ভুল ভাবনা।
.
.
এই শোকরানা মাহফিলের অায়োজন করেছে তাদের ক্বওমী মাদ্রাসার শিক্ষা বোর্ড, হেফজতে ইসলাম নয়। অতএব এখানে
রাজনীতিকে টেনে নিজের নেগেটিব সেন্সের পরিচয় দেয়াটা যৌক্তিক কি না ভেবে দেখবার বিষয়। দেশের একটি বিশাল
জনগোষ্ঠীকে স্বীকৃতি দেয়ায় অাপনার অামার খুশি হওয়া উচিত। অথচ মনে হচ্ছে অামাদের অাশপাশে কিছু কূপমন্ডুক রুচিহীন মানুষের খুবই হিংসে হচ্ছে। এই স্বীকৃতিতে মনে হচ্ছে হিংসের দাবানল তাদের হৃদয়ে দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠছে।
.
.
যে কোনো কিছু দেখার পর অামাদের উচিত তা ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে জেনেশুনে মন্তব্য করা। অাপনি চাইলেই খুব সহজে একজন হুজুরকে গালি দিতে, ব্যঙ্গ করতে পারেন কিন্তু এই গালি এবং ব্যঙ্গই প্রমাণ করে অাপনার রুচিবোধ, বংশ পরিচয় ও মানষিকতার।