ব্যস্ত রাস্তার পাশ দিয়ে বাসায় ফিরছিলাম। হাতে অামার প্রিয় একজন বন্ধুর দেয়া একটা অাইসক্রীম। বিশেষ বন্ধুর দেয়া বলে কথা । রাস্তা-ঘাটে খাওয়া যাবে না। বাসায় গিয়ে ধীরেসুস্থে খাওয়া হবে। যে রাস্তা দিয়ে হাঁঠছি তার ডানপাশে একটি সরকারি মাদ্রাসা। মাদ্রাসার হালচিত্র দেখে যে কেউ বলে দিবে যে একযুগ ধরে সরকারি কোনো বরাদ্ধ পৌছেনি। গাছপালা বেষ্টিত রাস্তাগুলো অনেকটা অরণ্যের মধ্য দিয়ে তৈরি হওয়া পথের মত । ভেতরটা বেশ নিরিবিলি। হঠাৎ চোখে পড়লো এ অরণ্যের মধ্যে গাছতলায় চট বিছিয়ে কিছু ছেলেমেয়েরা বসে অাছে। তাদের সামনে একজন টগবগে তরুণ ব্ল্যাকবোর্ডে কি যেন লিখছে।
.
.
অামি উৎসুক দৃষ্টিতে ভেতরে ঢুকে ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলাম। একজন উৎসুক অাগন্তুক পাশে এসে মুগ্ধ হয়ে দেখছে তাতে তাদের কোনো ভাবনা নেই। এরকম অাগন্তুক তরুণ ছেলেটা ব্ল্যাকবোর্ডে লিখা মাত্র সবাই চিৎকার করে বলছে অ... অা.... ই...
.
.
ব্ল্যাকবোর্ডের ওপরে লিখা "মুক্ত স্কুল " দেখে বুঝতে পারলাম ওঠা অাসলে পথ শিশুদের একটি স্কুল। যিনি পড়াচ্ছেন তিনি একজন শিক্ষক। সামনে এগিয়ে করমর্দন করে পরিচিত হলাম। শিক্ষকের নাম অাবুল কালাম অাজাদ। পলিটেকনিক কলেজের সিভিল ইন্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের ছাত্র। থাকেন শাবির শাহপরাণ হলে। তিনিই এ স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা। সুবিধা বঞ্চিত, নিম্নভিত্ত অশিক্ষিতরা এ স্কুলে ফ্রি পড়াশুনা করতে পারে। শিক্ষা থেকে বঞ্চিত পথ শিশুদের চকলেট ও খাবার দিয়ে এখানে নিয়ে এসে শিক্ষা দেয়া হয়। প্রথমত ছেলে-মেয়েদের খোঁজ নিয়ে অানতে হত। এখন তারা নিজেরাই পড়তে অাসে।
.
মুগ্ধতার সাথে চেয়ে রইলাম। ছেলে- মেয়েদের পোশাকে নিম্নভিত্তের ছাপ স্পস্ট। দু একজনকে বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে ভিক্ষা করতে দেখা যায়। সেখান হতে শিক্ষার মত একটা অদৃশ্য বিষয়ের জন্যে এখানে অানতে নিশ্চই অনেক বেগ পেতে হয়েছে। পড়ালেখা নিয়ে
তাদের ব্যাপক উৎসাহ দেখার মত।
.
.
বেতনবিহীন এরকম স্বেচ্ছায় সমাজের শিক্ষা বঞ্চিত শিশুদের পাশে দাঁড়াবার মানষিকতা দেখে অামি সত্যিই মুগ্ধ না হয়ে পারলাম না। ভাইটাকে স্যালুট জানাতে ইচ্ছে করে। কি দিব কি দিব ভাবতে ভাবতে মনের অজান্তে অাইসক্রিমটা দিয়ে বললাম, ভাই ! দেয়ার
মত এখন হাতে কিছু নেই। অামার এ অাইসক্রিমটা গ্রহণ করলে কৃতার্থ হতাম। হাঁসিমাখা মুখে হয়তো মনের অনিচ্ছায় তিনি গ্রহণ না করে পারলেন না।
.
.
অাজকের এ প্রতিযোগিতার দুনিয়ায় অামরা সকলেই নিজেকে নিয়ে চরমভাবে ব্যস্ত। সমাজ, রাষ্ট্র কিংবা জাতিকে নিয়ে ভাববার সময় কোথায় ? সমাজে প্রতিনিয়ত হাজারো শিশু শিক্ষা গ্রহণ হতে বঞ্চিত হচ্ছে। ছোটবেলা ভিখারি বৃত্তি কিংবা মা বাবার কাছে কোনোভাবেই কাটিয়ে দেয়। কিন্তু বয়সের সাথে সাথে যখন বাইরে উপার্জন করতে এসে বুঝতে পারে এ সমাজে অশিক্ষিতের মূল্য একেবারে ক্ষীণ । তখনই সে উপার্জনের তাগিদে বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।
.
একজন কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র যখন ক্যারিয়ার নিয়ে চরমভাবে ব্যস্ত থাকে ; তখন একজন ছাত্র হয়েও শিক্ষা বঞ্চিত শিশুদের পাশে দাঁড়াবার মত মহৎ কাজ দেখে মুগ্ধ না হয়ে কে বা থাকতে পারে।
.
.
অাজাদ ভাইয়ের মত যদি অামরা সকলেই স্ব-স্থান হতে ওভাবে পথ শিশুদের পাশে দাঁড়াতে পারতাম ; তবে হয়তো এ দেশটা
নিরক্ষরমুক্ত হতে খুব বেশিদিন লাগতো না।