ভূমিকম্প আতঙ্কে ভূগছে পুরো দেশ।তার মধ্যে সিলেটটা একটু বেশীই ঝুকিপূর্ণ। আরএ সিলেটবাসীর মধ্যে আমিই সবচেয়ে বেশি ভয়ের মধ্যে আছি বলে মনে হয়।
ভূতাত্বিকদের মতে এপ্রিলের মধ্যেই একটি বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানতে যাচ্ছে দেশে। তারমধ্যে সবচেয়ে ঝুকিপূর্ণ ও ভয়ানক অাঘাত অাসতে পারে সিলেটে। সিলেট ও ভারতের অাসামরাজ্য যে প্লেটের ওপর সে প্লেটটা নাকি গত দেড়শত বৎসর থেকে শক্তি সঞ্চয়
করেছে বড় ধরনের অাঘাতের জন্যে।তাদের মতে এ ধরনের ভূমিকম্পে শতকরা শত্তুর ভাগ দালান ভূপাতিত হবে। অনেকের মুখে এও
শুনতে পাচ্ছি পৃথিবীর মানচিত্র থেকে সিলেট নিশ্চিহ্নও হতে চলেছে।
অামার অাতঙ্ক ও ভীতির কারণ একমাত্র তারাই অনুভব করতে সক্ষম যারা দশতলায় কিংবা পাঁচতলার ওপরে থাকেন।গত ক'দিন অাগের ভূমিকম্পে অাল্লাহ মালুম মসজিদে একটি প্রোগ্রামের অডিটে ছিলাম। ভূমিকম্প অাঁচ করতে পেরে ঈমাম সাহেব অস্তিরতায় জোরে-শুরে অাযান দিতে বললেন। ভূমিকম্পে মুসলিমদের শুধু চিৎকার করে অাল্লাহু অাকবার বলা উচিত হলেও জান কোরবান করার মত করে অাযান দিতে শুরু করলাম।শেষ পর্যন্ত থামলো।মনে হলো ভূমিকম্প থাকাকালীন অবস্থার মত যদি সর্বদা অাল্লাহকে ভয় করে ওভাবে ডাকতে পারতাম। তবে হয়ত পাপের পাল্লা এতটা ভারী হত না।
মাঝেমধ্যে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে কিংবা কিচেনের জানলার গ্লাসটা খুলে নিচের দিকে থাকিয়ে চিন্তা করি; দশতলাটা কোথায় গিয়ে পড়বে ! পূব না পশ্চিম দিকে কে জানে।তবে কেনজানি একটু বেশিই মনে হয় পূব দিকের ঐ রাস্তার দোকানটার ওপর উপুড় হওয়া ছাড়া কোনো গত্যন্তর নেই।
ভূমিকম্প অাতঙ্কে পাশের ফ্লাটের সামাদ ভাই তার কিউট বউটাকে চট্রগ্রাম গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিছে।যাওয়ার সময় বেচারী অন্যান্য ফ্লাটের প্রায় সবারই গলায় ধরে কতইনা কান্না করে গেল। স্বামীকে ছাড়া, পরিচিত অাড্ডাবাজ এ মানুষগুলোকে ছাড়া নিভৃত পল্লীতে
থাকাটা তার কতইনা কষ্টকর হবে কে জানে।বউটাকে ওভাবে গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়ার কারণ জানতে চাইলে সামাদ ভাই যা বললেন তাতে অয়ৌক্তিকতার লেশ খোঁজে পাওয়া ভার।
.... ভাইরে ! অার বলিস না।ভূমিকম্পে নিজে মরলে না হয় মরলাম। গুষ্টিশুদ্ধ মরতে চাচ্ছিনে।যদি কোনোভাবে নিজে বেঁচে যাই অার বউটা মরে যায় তবে কি করে বাঁচব।তাকে ছাড়া একটা মূহুর্তও অামার অকল্পনীয়। অার ওর পেঠে থাকা অামাদের সোনামনিটার কথা ভেবেছো ! অামি মরে গেলেও সে অন্তত বাচোক।কমপক্ষে মাঝেমধ্যে বাবার নামটাও তো মুখে নেবে।
.
.
সামাদ ভাইয়ের কথা যতটা না যৌক্তিক তার থেকে বেশি লিজেনডারি।নিজের প্রাণের চেয়ে বউ অার সন্তানের প্রতি ভালবাসার মূল্য তার কাছে বেশি।এরকম স্কেরি সিচুয়েশনে পড়া একজন মানুষের থেকে এর চেয়ে ভালো কিছু অাশা করা নিতান্ত অমূলক।
.
.
বেডে শুতে গেলে হঠাৎ লাফ দিয়ে ওঠি। মনে হয় বেডটা নড়ছে, বিল্ডিংটা কাঁপছে, ভূমিকম্প এসে গেছে। গত পরশু তো রাত তিনটের দিকে ওভাবে ওঠে ভাইয়াকে প্রায় ডাকতেই চলে যাচ্ছিলাম।পরে যখন বুঝতে পারলাম না ভূমিকম্পের মত তেমন কিছু না। কল্পনায় সবসময় ভয় কাজ করছে বলে ওমন হচ্ছে ; তখন নিজের কাছেই নিজের কেমন জানি লজ্জা লাগলো।
.
মহসিন ভাই তো ফ্ল্যাট থেকে ভয়ে না স্বত:স্ফূর্তে কে জানে কয়েকদিনের জন্যে চলেই গেছে।বিপদের সময় সবাই কেঠে পড়ে।
.
.
" ভূমিকম্পের সময় করণীয় কাজ"র অনেকগুলো টিপস গুগলে সার্চ দিয়ে গতকাল পড়লাম। কিন্তু অপ্রীয় হলেও সত্য,এমন কোনো টিপস
চোখে পড়েনী যা অামাকে বাঁচিয়ে রাখতে পারবে এ করাল গ্রাস থেকে।
.
.
মৃত্যুর জন্যে একটুও প্রস্তুতি নেয়া হয়নী এখনো।অথচ মৃত্যু হয়ত অচিরেই অামায় গ্রাস করতে চলেছে।