ভালবাসার মানুষের থেকে কিঞ্চিত সুখটা যেমন স্বর্গীয় মনে হয় তেমনী কিঞ্চিত কষ্ঠটাও চাবুকের মত বুকে বিধে।ভূমরে কেঁদে ওঠে মন।ইচ্ছে হয় ডোরটা লক করে, বাতিটা অফ করে প্রাণভরে কাঁদতে। কিন্তু তাও কেনজানি পেরে ওঠা হয় না।
.
.
অবাক চুখে অসহায়ের মত তাকিয়ে থাকে শুধু একটি বাক্যের দিকে ছেলেটা।পৃথিবীতে এর থেকে কষ্ঠধায়ক তার কাছে কোনো বাক্য আছে বলে মনে হয় না ।একটি বাক্য একটি মানুষকে বদলে দিতে পারে অনায়াসে।সমস্থ ব্যস্ততা, আনন্দময়তা ও উল্লাসিকতা পাল্টে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারে থেকে কষ্ঠের গহীণ অরণ্যে।বারবার আনমনে পড়েই যাচ্ছে সে ... """You can't reply to this conversation. """
.
.
এক ফোঠো অশ্রু মোবাইলের স্কিনে পড়তেই স্কিনটা ঝাপসা হয়ে গেলো। টিস্যু পেপারটা বের করে মুছতেও চেষ্টা করলো না।হঠাৎ করে কেউ কালো দুনিয়ায় পাঠিয়ে দেবে কখনো কল্পনাও করেনী।মেয়েটা তো একবারও বলেনী যে সে চলে যাবে দূর থেকে বহুদূরে ওভাবে একাকী রেখে।
.
.
মোবাইলটা পাশে রেখেই ঘুমাতে চেষ্টা করলো।ঘন্টাখানেক এপাশ-ওপাশ হয়েও যখন দেখলো ঘুমানো তো দূরে থাক চোখ দিয়ে জল পড়াটাও বন্দ হলো না তখন ভেজা বালিশটা চেন্জ করে নতুন একটা নিল।
.
.
প্রতিদিন এ সময়টা কতই না আনন্দ চিত্তে কাটে মেয়েটার সাথে তার।কত প্রশ্ন একে অপরকে করে যায়।জীবনের ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ সবকিছুই শেয়ার করে যায় একে অপরকে।মেয়েটা অকাতরে বলে যায় আজ তার কোন আইডিতে কে নক করলো।কে কি বলল। কতটা রিকোয়েস্ট আসলো।কোন পুলা কি টেক্সট করে পটাতে চেষ্টা করলো।ছেলেটাও নির্দ্ধিধায় বলে যায় তার পিছু লেগে থাকা মেয়েটা আজ কতবার ফোন দিল।রিসিভ করার পর মেয়েটা ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করার পর আর কিছু বলতে পারে না। কেটে দিলে আবার একটু পর ফোন দেয়।ওভাবেই চলতে থাকে তাদের ব্যক্তিগত বিষয়গুলো শেয়ার করা।
.
.
অনেকক্ষণ কনভার্সেশনের পর মেয়েটা ছেলেটার মাথায় হাত বুলানো মেসেজ করে ঘুম পাড়িয়ে দেয়।এমন টেক্স্ট করতে না করতেই," মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি, ঘুমাও লক্ষীটি।" ছেলেটা অকাতরে ঘুমিয়ে পড়ে।যেন সে কারো কোলে নিশ্চিন্তে ঘুমুচ্ছে। মেয়েটাও আস্তে করে মোবাইলটা রেখে পড়তে কিংবা কাজ করতে যায়।প্রতিদিনই ওভাবে তার নির্দ্ধিধায় ঘুম হয়।আবার ঠীক দু'ঘন্টা পর মেয়েটা ফোন দিয়ে জাগিয়ে দেয়।
.
.... অনেক ঘুম হয়েছে। এবার ওঠে পড়তে বসো।
.
ছেলেটাও ওঠে বাধ্য প্রেমিকের মত ফ্রেশ হয়ে পড়তে বসে। কিন্তু টেবিলে বসে পড়াশুনা আর হয়ে ওঠা হয় না।খাতাটা টান দিয়ে মেয়েটাকে নিয়ে লিখতে শুরু করে। দিন শেষে তা হয়ে যায় একটি গল্প কিংবা কবিতা।
.
.
কিন্তু আজ ! আজকের দিনটি তার কেন ওমন অগোছালো হয়ে গেলো। কীভাবে পারছে ও তাকে ব্লক মেসেজ দিয়ে তাকতে ? কীভাবে পারছে সবগুলো নাম্বার অফ করে রাখতে ?
.
.
সে বারবার স্বরণ করতে চেষ্টা করলো তার থেকে কি এমন কোনো বিহেব প্রকাশ পেয়েছে যার ধরুন এরকম কিছু করতে বাধ্য হলো মেয়েটা।না ! এমন কিছু মনে হলো না।গত দু-তিন দিনের কনভার্শেসনগুলো চেক করা হলো। প্রতিটি টেক্স্ট পড়েই কেমনজনি ভূমরে কেঁদে ওঠে মন।কিছুক্ষণ পর যখন দেখলো এ বালিশেরও অর্ধেকটুকো ভেজে গেছে।ওঠে ছাদে গিয়ে মেঘে ডাকা আকাশের এক পিন্ড মেঘের দিকে আনমনা হয়ে তাকিয়ে থাকতে চেষ্টা করে ।
.
.
মেঘটা কেমন জানি পুরো শহরটাই অন্ধকার করে রেখেছে।ধীরে ধীরে পিন্ডটা পূবের দিকে যাচ্ছে।তাদের বাসার ছাদের ওপর থেকে চৌরাস্তার মোড়ের ঐ বিল্ডিংটার ওপর চলে গেছে।
বেশিক্ষণ আর দেখা গেলো না পিন্ডটা।মেঘ ছেদ করে সূর্য্যু মামাটা উকি দিচ্ছে পৃথিবীতে।পুরো শহরটা আলোকময় হয়ে ওঠছে ধীরে ধীরে। ছাদ থেকে নামতে তাকেও যেন হাতছানি দিয়ে বিদেয় করতে চাচ্ছে।
.
.
একসময় রোদটা বাড়তে লাগলো। অসহ্য গরম অনুভূত হলো।
আকাশের দিকে তাকিয়ে সেও এ পৃথিবীর মালিকের কাছে আহাজারি শুরু করে দিল .....
" হে সূর্য ও পৃথিবীর মালিক ! মেঘে ডাকা অন্ধকার শহরকে তুমি যেমন আলোকিত করতে পারো। মেঘকে এ শহর থেকে সরিয়ে পাহাড়ের দিকে নিয়ে যেতে পারো, তেমনি আমার ভেতরের সমস্ত কষ্টগুলোকে সরিয়ে আনন্দে ভরপুর করে দাও।আমার সুখটা আবার আমার মাঝে ফিরিয়ে দাও।
.
.
বাসায় এসেই মোবাইলটা হাতে নিতেই বুঝতে পারলো দুটো ফোন এসেছিল। আরো আশ্চর্য হলো মেয়েটার ফোন দেখে।
... হ্যালো ! আজিব !! সেট অফ করে রেখেছিলে কেন? এতক্ষণ কই ছিলে?
.
.... রিয়েলি সরি ! কীভাবে যেন সাইলেন্ট হয়ে গেছিল টের পাইনী।
.
....ব্লক মেসেজ দিছো কেন ?
.... এমনি ! ইচ্ছে করলো দিলাম।ওঠায়ে নিছি তো।
.
.
ছেলেটা দু'রাকাত নামাজ পড়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া আদায় না করে আর পারলো না।এ যাত্রায় তবে বাঁচা গেল।
.
.
মেয়েটাকে সে হয়ত একটু বেশিই ভালবাসে।সে জানে এ ভালবাসা নিছক অর্থহীন। একদিন তা হার মানবে পৃথিবীর নিষ্টুরতম বাস্তবতার কাছে। তবুও সে বেসে যায় ভাল প্রাণ ভরে, হৃদয় উজাড় করে দিয়ে |
সবাইকে ভালবাসা দিবসের শুভেচ্ছা।