১।
চারিদিকে ঘন কুয়াশার চাঁদর মুড়ে সাতসকালে আলো উঁকি মারছে।। সকাল ঘুম টা খুব প্রিয়, কিন্তু আজ ঘুমান হবে না।। বের হতে হবে একটু।। ম্যাডামের ইচ্ছা হয়েছে এই সাত সকালে হাঁটবে।। না যেয়ে উপায় নাই, আমাকে মেরে ফেলবে তাহলে।। কোন রকমে জিন্স আর একটা শার্ট গায়ে চাপিয়ে, একটা চাদর জড়িয়ে হয়ে হয়ে পড়ব এক্ষুনি।। ওরে বাবা রে! আবার ফোন, নাহ বেশি দেরী করা যাবে না, নিলীম খুন করে ফেলবে আমাকে।
নিলীম আমার গার্লফ্রেন্ড না, তবে অনেক বেশি কাছের একটা মানুষ।। এমিন একজন বন্ধু যার জন্য যেকন কিছু করতে পারি।। ওর আবদার গুলো খুব এলোমেলো।। এই যেমন আজকের আবদারটা। এমনিই সারারাত ঘুমায় না, এখন উঠে বের হইতে হবে।। উফফ এত জ্বালায় না মেয়েটা! কিচ্ছু করার নাই, যাওয়া লাগবেই।
২।
ফাঁকা রাস্তা।। জন কোলাহল শূন্য।। আমি আর নিলীম হেঁটে যাচ্ছি।। নিলীম এই শীতে চাঁদর ছাড়া, অন্য কোন গরম জামা-কাপড় না নিয়েই বেরিয়ে পড়েছে।।
শর্তানুযায়ী দুজনের কারো কাছেই কোন সেলফোন নেই।। হটাৎ করে নিলীম বলে উঠল, "আবীর দারা , আর হাটতে পারতেসি না।। সামনে একটা চায়ের দোকান, ওইখানে বসি।। চা খাঁয়।। চল"
আমি তারাহুরায় বাসা থেকে মানিব্যাগটাও আনতে ভুলে গেছি।। হায়রে! এখন কি হবে! পকেটে তো একটা দশ টাকার নোট!
আমি কিছু বলার আগেই নিলীম দোকানে যেয়ে পাশের বেঞ্চে বসে পড়ল।।
আমি ভয়ে ভয়ে বলে উঠলাম " নিলীম, ইয়ে মানে আমি ভুল করে মানিব্যাগ রাইখা চলে আসছি।। পকেটে দশ টাকার নোট একটা।। আর কিচ্ছু নাই রে"
নিলীম বলল, সমস্যা নাই যাব তো হেঁটে।।
আমি ভয়ে ভয়ে বললাম, "হ্যা যাব তো ঠিক আছে, তয়, এই দশটাকা দিয়ে দুইকাপ চা খাওয়া কি আদেও যাবে? আর গেলেও এর পর আমার পকেটে কয় টাকা থাকবে? "
নিলীম একটু রাগ নিয়ে আমার দিকে তাকাল।। " ব্যাটা তোরে কে কইসিল এত তারাহুরা করতে? আচ্ছা ঠিক আছে, এক কাপ চা নে।। আমার দরকার"
আমি মনে মনে বললাম, আমি মনে হয় ইচ্ছা করে ভুলে রাইখা আসছি, তুমিই তো এত ঝামেলার কারন ।। মুখে একটা আর্টফিশিয়ার হাঁসি ফুটিয়ে বললাম, "ওকে, তাইলে তুই একায় খা।।"
নিলীম আমার দিকে চোখ বড় করে তাকাল।। বাবা রে! চোখ তো না, অন্য কিছু! আগুন বের হচ্ছে! চিল্লায়ে বলল
" হারামজাদা, আমার সাথে শেয়ার করে খাইতে তোমার প্রবলেম? একলগে বিড়ি শেয়ার করে খাইতে পারিস, আর চা শেয়ার করতে প্রবলেম? তাই না? "
আমি একটু থতমত হয়ে, সুবোধ বালকের মত বললাম "ওকে।। এস ইউ উইশ"
৩।
আমরা এক কাপ চা শেয়ার করে খাচ্ছি, ও এক চুমুক, আমি এক চুমুক।। আমি নিলীমের চোখের দিকে তাকিয়ে আছি।। কাজল দিলে বেশ ভালোয় লাগে ওকে।।
হয়ত আমি আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্ত কাটাচ্ছি এখন।। আর কখনো এটা ফিরে পাব নাকি জানি না।। তবে সারাজীবনের মত মুহূর্তটাকে বন্দী করে রাখার একটা প্রয়াস করতে ক্ষতি কি? মনের কোণে একটা সুপ্ত বাসনা কাজ করছে হয়ত . . .