রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কোথাও বলেছিলেন , আমার গান তোমাদের গাইতেই হবে ।
তাঁর অন্য কোনো সাহিত্যকর্ম দীর্ঘস্থায়ী না হলেও গান যে হবে সে বিষয়ে তিনি নিঃসন্দেহ ছিলেন। তাই বলেছিলেন, “জীবনের আশি বছর অবধি চাষ করেছি অনেক। সব ফসলই যে মরাইতে জমা হবে তা বলতে পারি না। কিছু ইঁদুরে খাবে, তবু বাকি থাকবে কিছু। জোর করে বলা যায় না, যুগ বদলায়, তার সঙ্গে তো সবকিছু বদলায়। তবে সবচেয়ে স্থায়ী আমার গান, এটা জোর করে বলতে পারি। বিশেষ করে বাঙালীরা, শোকে দুঃখে সুখে আনন্দে আমার গান না গেয়ে তাদের উপায় নেই। যুগে যুগে এ গান তাদের গাইতেই হবে। ”
খুব সত্যি বলেছিলেন । বাঙ্গালির মনকে তার মত করে আর কে বুঝেছে ? নিজের গান নিয়ে তাই তার উচ্চাশা ছিল এমন । তাই তো যা ছিল একসময় রবিবাবুর গান , এখন তা স্বতন্ত্র রবীন্দ্রসঙ্গীত ।
রবীন্দ্রনাথ রচিত মোট গানের সংখ্যা ১৯১৫। রবীন্দ্রনাথের গানের বাণীতে উপনিষদ্, হিন্দু পুরাণ ও সংস্কৃত কাব্যনাটক, বৈষ্ণব ও বাউল দর্শনের প্রভাব সুস্পষ্ট। সুরের দিক থেকে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীত (হিন্দুস্তানি ও কর্ণাটকী উভয় প্রকারই), বাংলা লোকসংগীত, কীর্তন ও রামপ্রসাদী এবং পাশ্চাত্য ধ্রুপদি ও লোকসংগীতের "ত্রিবেণীসংগম" ঘটেছে রবীন্দ্রসংগীতে ।
নিজের গান নিয়ে ছিল তার নিজিস্ব চিন্তাভাবনা ,সেটা নিয়ে লিখেছিলেন সঙ্গীত চিন্তা ।নিজের গানের বিশুদ্ধতা নিয়ে ছিল তার নিজিস্ব মতামত ।
"আমার গান যাতে আমার গান ব’লে মনে হয় এইটি তোমরা কোরো। "আরো হাজারো গান হয়তো আছে-তাদের মাটি করে দাও-না, আমার দুঃখ নেই। কিন্তু তোমাদের কাছে আমার মিনতি–তোমাদের গান যেন আমার গানের কাছাকাছি হয়, যেন শুনে আমিও আমার গান বলে চিনতে পারি। এখন এমন হয় যে, আমার গান শুনে নিজের গান কিনা বুঝতে পারি না। মনে হয় কথাটা যেন আমার, সুরটা যেন নয়। নিজে রচনা করলুম, পরের মুখে নষ্ট হচ্ছে, এ যেন অসহ্য। মেয়েকে অপাত্রে দিলে যেমন সব-কিছু সইতে হয়, এও যেন আমার পক্ষে সেই রকম ।"
"আমার গান তাঁর ইচ্ছামত ভঙ্গি দিয়ে গেয়ে থাকেন, তাতে তাদের স্বরূপ নষ্ট হয় সন্দেহ নেই। গায়কের কণ্ঠের উপর রচয়িতার জোর খাটে না, সুতরাং ধৈর্য ধরে থাকা ছাড়া অন্য পথ নেই। আজকালকার অনেক রেডিয়োগায়কও অহংকার করে বলে থাকেন তাঁরা আমার গানের উন্নতি করে থাকেন। মনে মনে বলি পরের গানের উন্নতি সাধনে প্রতিভার অপব্যয় না করে নিজের গানের রচনায় মন দিলে তাঁরা ধন্য হতে পারেন। সংসারে যদি উপদ্রব করতেই হয় তবে হিটলার প্রভৃতির ন্যায় নিজের নামের জোরে করাই ভালো।"
(জানকীনাথ বসুকে লিখিত - শান্তিনিকেতন। ২০ ডিসেম্বর, ১৯৩৮)
" আমাদের শাস্ত্রে বলে দুহিতা কৃপণঃ পরং। গান জিনিসটা তেমনি। কথায় কথায় ওর কপাল ভাঙ্গে। কবিতা রেখে গেল ছাপার অক্ষরে, আজ হোক কাল হোক সে তার নিজের গুণেই তরে যেতে পারে। গান পরের কণ্ঠ নির্ভর করে। যে মানুষ রচনা করে সে তাকে জন্ম দেয় মাত্র, যে মানুষ গায় সে তাকে হয় বাঁচায় নয় মারে। জামাই বাবাজির মত আর কি। এমন দুর্ঘটনা প্রায়ই ঘটে যে কাপড়ে কেরোসিন ঢেলে মরা তার পক্ষে কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়। "
অথচ নিজের গানের ব্যাপক প্রসার নিয়েও তাঁর যথেষ্ট বাসনা ছিল। নিচের উদ্ধৃতি দুটি থেকে সেটা স্পষ্ট।
" সকলেই আমার গান করুক, আমার গান সকলের জন্য, না গাইলে আমার মন খারাপ করে।"
"গান ঘরের মধ্যে মাধুরী পাওয়ার জন্যে, বাইরের মধ্যে হাততালি পাবার জন্যে নয়। ওস্তাদ যাঁরা তাঁদের জন্যে ভাবনা নেই; ভাবনা হচ্ছে যারা গানকে সাদাসিধেরূপে মনের আনন্দের জন্য পেতে চায় তাদের জন্যে। যেমন তোমাদের টি-পার্টি যাকে বলে, সেখানে যারা সাহেবী মেজাজের লোক তাদের কানে কি ভালো লাগবে? এখানে রবীন্দ্রনাথের হালকা গান, সহজ সুর, হয়তো ভালো লাগবে। তাই বলি আমার গান যদি শিখতে চাও, নিরালায়, স্বগত, নাওয়ার ঘরে কিংবা এমনি সব জায়গায়, গলা ছেড়ে গাবে। আমার আকাঙ্ক্ষার দৌড় এই পর্যন্ত–এর ... বেশি ambition মনে নাই রাখলে।"
নিজেও গাইতে পারতেন । কথাচ্ছলে বলতেন “গলা এককালে ছিল বটে ! গাইতেও পারতুম গর্ব করাবার মতন।তখন কোথাও কোন মিটিঙে গেলে সবাই চীৎকার করত রবি ঠাকুরের গান রবি ঠাকুরের গান ” বলে । আজকাল রবি ঠাকুরের গান বলতে বোঝায় তার রচিত গান , গীত নয় । তোমরা আমায় এখন একবার গাইতে বলেও সম্মান দাও না। যখন গাইতুম তখন গান লিখতে শুরু করিনি তেমন, আর যখন লিখলুম তখন গলা নেই । ”
রবীন্দ্রনাথের সমুদয় গান তাঁর গীতবিতান গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত। উক্ত গ্রন্থের প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ডে কবি গানগুলিকে "পূজা", "স্বদেশ", "প্রেম", "প্রকৃতি", "বিচিত্র" "আনুষ্ঠানিক", এই ছয়টি "পর্যায়ে" বিন্যস্ত করেছিলেন । রবীন্দ্রসঙ্গীত প্রিয় গান বাছাই করে একটা পোস্টে দেয়া অসভব ব্যাপার । তবুও পোস্ট দিতে ইচ্ছে হোল, তাই প্লে লিস্ট থেকে প্রেম পর্যায়ের কয়েকটা প্রিয় গান দিলাম ।
১.অবেলায় যদি এসেছ আমার বনে দিনের বিদায়ক্ষণে
গেয়ো না, গেয়ো না চঞ্চল গান ক্লান্ত এ সমীরণে॥
ঘন বকুলের ম্লান বীথিকায়
শীর্ণ যে ফুল ঝ’রে ঝ’রে যায়
তাই দিয়ে হার কেন গাঁথ হায়, লাজ বাসি তায় মনে।
চেয়ো না, চেয়ো না মোর দীনতায় হেলায় নয়নকোণে॥
এসো এসো কাল রজনীর অবসানে প্রভাত-আলোর দ্বারে।
যেয়ো না, যেয়ো না অকালে হানিয়া সকালের কলিকারে।
এসো এসো যদি কভু সুসময়
নিয়ে আসে তার ভরা সঞ্চয়,
চিরনবীনের যদি ঘটে জয়– সাজি ভরা হয় ধনে।
নিয়ো না, নিয়ো না মোর পরিচয়
এ ছায়ার আবরণে॥
(প্রেম ও প্রকৃতি )
খুব প্রচলিত গান না হলেও আমার এই গানটা অনেক প্রিয় ।
শ্রাবণী সেন
শর্মিষ্ঠা পাল
২.অনেক কথা বলেছিলেম কবে তোমার কানে কানে ॥
কত নিশীথ-অন্ধকারে, কত গোপন গানে গানে ॥
সে কি তোমার মনে আছে তাই শুধাতে এলেম কাছে–
রাতের বুকের মাঝে মাঝে তারা মিলিয়ে আছে সকল খানে ॥
ঘুম ভেঙে তাই শুনি যবে দীপ-নেভা মোর বাতায়নে ।
স্বপ্নে-পাওয়া বাদল-হাওয়া ছুটে আসে ক্ষণে ক্ষণে–
বৃষ্টিধারার ঝরোঝরে ঝাউবাগানের মরোমরে
ভিজে মাটির গন্ধে হঠাৎ সেই কথা সব মনে আনে ॥(প্রেম)
অনেক কথা বলেছিলেম
অনেক কথা বলেছিলেম -চিন্ময়
উত্তম কুমার
৩. আজ যেমন ক’রে গাইছে আকাশ তেমনি ক’রে গাও গো ।
আজ যেমন ক’রে চাইছে আকাশ তেমনি ক’রে চাও গো ॥
আজ হাওয়া যেমন পাতায় পাতায় মর্মরিয়া বনকে কাঁদায়,
তেমনি আমার বুকের মাঝে কাঁদিয়া কাঁদাও গো ॥(প্রেম)
প্রিয় বিক্রম সিং
আজ যেমন করে গাইছে আকাশ
আজ যেমন করে -কনিকা
বেশ ভালো লেগেছে এই ভার্শনটা
৪.গোধূলিগগনে মেঘে ঢেকেছিল তারা ।
আমার যা কথা ছিল হয়ে গেল সারা ॥
হয়তো সে তুমি শোন নাই , সহজে বিদায় দিলে তাই –
আকাশ মুখর ছিল যে তখন , ঝরোঝরো বারিধারা ॥
চেয়েছিনু যবে মুখে তোলো নাই আঁখি ,
আঁধারে নীরব ব্যথা দিয়েছিল ঢাকি ।
আর কি কখনো কবে এমন সন্ধ্যা হবে –
জনমের মতো হায় হয়ে গেল হারা ॥(প্রেম)
অসাধারণ দেবব্রত বিশ্বাস এর কণ্ঠে
শ্রীকান্ত আচার্য
একটু অন্য রকম অনিন্দ্য বোস
৫.বিধি ডাগর আঁখি যদি দিয়েছিল
সে কি আমারি পানে ভুলে পড়িবে না॥
দুটি অতুল পদতল রাতুল শতদল
জানি না কী লাগিয়া পরশে ধরাতল,
মাটির ’পরে তার করুণা মাটি হল–সে পদ মোর পথে চলিবে না?।
তব কণ্ঠ-’পরে হয়ে দিশাহারা
বিধি অনেক ঢেলেছিল মধুধারা।
যদি ও মুখ মনোরম শ্রবণে রাখি মম
নীরবে অতিধীরে ভ্রমরগীতিসম
দু কথা বল যদি ‘প্রিয়’ বা ‘প্রিয়তম’ তাহে তো কণা মধু ফুরাবে না।
হাসিতে সুধানদী উছলে নিরবধি,
নয়নে ভরি উঠে অমৃতমহোদধি–
এত সুধা কেন সৃজিল বিধি, যদি আমারি তৃষাটুকু পূরাবে না॥
চিন্ময়
মৃণাল চক্রবর্তী
৬. কতবার ভেবেছিনু আপনা ভুলিয়া
তোমার চরণে দিব হৃদয় খুলিয়া।
চরণে ধরিয়া তব কহিব প্রকাশি
গোপনে তোমারে, সখা, কত ভালোবাসি।
ভেবেছিনু কোথা তুমি স্বর্গের দেবতা,
কেমনে তোমারে কব প্রণয়ের কথা।
ভেবেছিনু মনে মনে দূরে দূরে থাকি
চিরজন্ম সঙ্গোপনে পূজিব একাকী–
কেহ জানিবে না মোর গভীর প্রণয়,
কেহ দেখিবে না মোর অশ্রুবারিচয়।
আপনি আজিকে যবে শুধাইছ আসি,
কেমনে প্রকাশি কব কত ভালোবাসি॥ (প্রেম ও প্রকৃতি )
শুভমিতা
শ্রীকান্ত
স্বাগতালক্ষ্মী দাসগুপ্তা
সাগর সেন
বাবুল সুপ্রিয়
একটু অন্য রকম , সামান্তক সিনহা
৭. বর্ষণমন্দ্রিত অন্ধকারে এসেছি তোমারি দ্বারে ,
পথিকেরে লহো ডাকি তব মন্দিরের এক ধারে ॥
বনপথ হতে , সুন্দরী , এনেছি মল্লিকামঞ্জরী –
তুমি লবে নিজ বেণীবন্ধে মনে রেখেছি এ দুরাশারে ॥
কোনো কথা নাহি বলে ধীরে ধীরে ফিরে যাব চলে ।
ঝিল্লিঝঙ্কৃত নিশীথে পথে যেতে বাঁশরিতে
শেষ গান পাঠাব তোমা-পানে শেষ উপহারে ॥
রূপঙ্কর
৮.জানি তোমার অজানা নাহি গো কী আছে আমার মনে ।
আমি গোপন করিতে চাহি গো, ধরা পড়ে দুনয়নে ॥
কী বলিতে পাছে কী বলি
তাই দূরে চলে যাই কেবলই,
পথপাশে দিন বাহি গো-
তুমি দেখে যাও আঁখিকোণে কী আছে আমার মনে ॥
চির নিশীথতিমিরগহনে আছে মোর পূজাবেদী –
চকিত হাসির দহনে সে তিমির দাও ভেদি ।
বিজন দিবস-রাতিয়া
কাটে ধেয়ানের মালা গাঁথিয়া ,
আনমনে গান গাহি গো –
তুমি শুনে যাও খনে খনে কী আছে আমার মনে ॥
মিতা হক
অনেক প্রিয় হেমন্ত মুখোপাধ্যায়
গজল সম্রাজ্ঞী চিত্রা সিং
অসাধারণ দেবব্রত বিশ্বাস
৯.প্রাণ চায় চক্ষু না চায়, মরি একি তোর দুস্তরলজ্জা ।
সুন্দর এসে ফিরে যায়, তবে কার লাগি মিথ্যা এ সজ্জা ॥
মুখে নাহি নি:সরে ভাষ, দহে অন্তরে নির্বাক্ বহ্নি ।
ওষ্ঠে কী নিষ্ঠুর হাস, তব মর্মে যে ত্রন্দন তন্বী !
মাল্য যে দংশিছে হায়, তব শয্যা যে কন্টকশয্যা–
মিলনসমুদ্রবেলায় চির- বিচ্ছেদজর্জর মজ্জা ॥
শ্রীকান্ত
শান
বাবুল সুপ্রিয়
একটু অন্যরকম সামন্তক / শর্মিষ্ঠা
১০.আমি তোমার প্রেমে হব সবার কলঙ্কভাগী ।
আমি সকল দাগে হব দাগি ॥
তোমার পথের কাঁটা করব চয়ন , যেথা তোমার ধুলায় শয়ন
সেথা আঁচল পাতব আমার – তোমার রাগে অনুরাগী ॥
আমি শুচি-আসন টেনে টেনে বেড়াব না বিধান মেনে ,
যে পঙ্কে ওই চরণ পড়ে তাহারি ছাপ বক্ষে মাগি ॥
চিন্ময়
হেমন্ত মুখোপাধ্যায়
খালি গলায় গাওয়া , চমৎকার
প্রিয় একটা ভার্সন , শর্মিষ্ঠার কণ্ঠে
১১.তোমারেই করিয়াছি জীবনের ধ্রুবতারা,
এ সমুদ্রে আর কভু হব নাকো পথহারা ॥
যেথা আমি যাই নাকো তুমি প্রকাশিত থাকো,
আকুল নয়নজলে ঢালো গো কিরণধারা ॥
তব মুখ সদা মনে জাগিতেছে সংগোপনে,
তিলেক অন্তর হলে না হেরি কূল-কিনারা ।
কখনো বিপথে যদি ভ্রমিতে চাহে এ হৃদি
অমনি ও মুখ হেরি শরমে সে হয় সারা ॥
সাগর সেন
সাহানা
১২.জানি জানি, তুমি এসেছ এ পথে মনের ভুলে ।
তাই হোক তবে তাই হোক, দ্বার দিলেম খুলে ॥
এসেছ তুমি তো বিনা আভরণে, মুখর নূপুর বাজে না চরণে,
তাই হোক তবে তাই হোক, এস সহজ মনে ।
ওই তো মালতী ঝরে পড়ে যায় মোর আঙিনায়,
শিথিল কবরী সাজাতে তোমার লও-না তুলে ॥
কোনো আয়োজন নাই একেবারে, সুর বাঁধা নাই এ বীণার তারে,
তাই হোক তবে, এসো হৃদয়ের মৌনপারে ।
ঝরোঝরো বারি ঝরে বনমাঝে, আমারি মনের সুর ওই বাজে,
উতলা হাওয়ার তালে তালে মন উঠিছে দুলে ॥
সাগর সেন
সুবিনয় রয়
দেবব্রত বিশ্বাস
১৩. নিশীথে কী কয়ে গেল মনে কী জানি, কী জানি ।
সে কি ঘুমে, সে কি জাগরণে কী জানি, কীজানি ॥
নানা কাজে নানা নানা মতে ফিরি ঘরে, ফিরি পথে–
সে কথা কি অগোচরে বাজে ক্ষণে ক্ষণে । কী জানি, কী জানি ॥
সে কথা কি অকারণে ব্যথিছে হৃদয়, একি ভয়, একি জয় ।
সে কথা কি কানে কানে বারে বারে কয় ‘আর নয়’ ‘আর নয়’ ।
সে কথা কি নানা সুরে বলে মোরে ‘চলো দূরে’–
সে কি বাজে বুকে মম, বাজে কি গগনে । কী জানি, কী জানি ॥
হেমন্ত
চিন্ময়
দেবব্রত
১৪. বিরহ মধুর হল আজি মধুরাতে ।
গভীর রাগিণী উঠে বাজি বেদনাতে ॥
ভরি দিয়া পূর্ণিমানিশা অধীর অদর্শনতৃষা
কী করুণ মরীচিকা আনে আঁখিপাতে ॥
সুদূরের সুগন্ধধারা বায়ুভরে
পরানে আমার পথহারা ঘুরে মরে ।
কার বাণী কোন্ সুরে তালে মর্মরে পল্লবজালে,
বাজে মম মঞ্জীররাজি সাথে সাথে ॥
বিক্রম সিং
দেবব্রত
শর্মিষ্ঠা পাল
সামান্তক সিনহা
কবির সুমন
ব্লগার অচিন্ত্যর কণ্ঠে
১৫.এমন দিনে তারে বলা যায়,
এমন ঘনঘোর বরিষায় ।
এমন দিনে মন খোলা যায়–
এমন মেঘস্বরে বদল-ঝরঝরে
তপনহীন ঘন তমসায় ॥
সে কথা শুনিবে না কেহ আর,
নিভৃত নির্জন চারিধার ।
দুজনে মুখোমুখি, গভীর দুখে দুখি,
আকাশে জল ঝরে অনিবার–
জগতে কেহ যেন নাহি আর ॥
সমাজ সংসার মিছে সব,
মিছে এ জীবনের কলরব ।
কেবল আঁখি দিয়ে আঁখির সুধা পিয়ে
হৃদয় দিয়ে হৃদি অনুভব–
আঁধারে মিশে গেছে আর সব ॥
তাহাতে এ জগতে ক্ষতি কার,
নামাতে পারি যদি মনোভার ।
শ্রাবণবরিষনে একদা গৃহকোণে
দু কথা বলি যদি কাছে তার,
তাহাতে আসে যাবে কিবা কার ॥
ব্যাকুল বেগে আজি বহে বায়,
বিজুলি থেকে থেকে চমকায় ।
যে কথা এ জীবনে রহিয়া গেল মনে
সে কথা আজি যেন বলা যায়–
এমন ঘনঘোর বরিষায় ॥
সবচেয়ে অসাধারন লাগে পঙ্কজ মল্লিকের কণ্ঠে
হেমন্ত মুখোপাধ্যায়
রূপঙ্কর
শ্রাবণী সেন
জয়িতা
১৬.দেখো , সখা , ভুল করে ভালোবেসো না।
আমি ভালোবাসি ব'লে কাছে এসো না।
তুমি যাহে সুখী হও তাই করো সখা ,
আমি সুখী হব ব'লে যেন হেসো না।
আপন বিরহ লয়ে আছি আমি ভালো–
কী হবে চির আঁধারে নিমেষের আলো !
আশা ছেড়ে ভেসে যাই , যা হবার হবে তাই–
আমার অদৃষ্টস্রোতে তুমি ভেসো না॥ (মায়ার খেলা)
আমার বেশ ভালো লাগা একটা গান , মায়ার খেলা থেকে ।
দেখো সখা , ভুল করে ভালবেসো না -মায়া সেন
দেখো সখা - খালি গলায়
১৭.দুজনে দেখা হল মধুযামিনী রে–
কেন কথা কহিল না, চলিয়া গেল ধীরে॥
নিকুঞ্জে দখিনাবায় করিছে হায়-হায়,
লতাপাতা দুলে দুলে ডাকিছে ফিরে ফিরে॥
দুজনের আঁখিবারি গোপনে গেল বয়ে,
দুজনের প্রাণের কথা প্রাণেতে গেল রয়ে।
আর তো হল না দেখা, জগতে দোঁহে একা–
চিরদিন ছাড়াছাড়ি যমুনাতীরে॥(প্রেম ও প্রকৃতি)
দুজনে দেখা হল - অন্বেষা দত্ত
সাগর সেন
কনিকা
দুজনে দেখা হল
কবিতা কৃষ্ণমূর্তি
১৮.অনেক কথা যাও যে বলে কোনো কথা না বলি ।
তোমার ভাষা বোঝার আশা দিয়েছি জলাঞ্জলি ॥
যে আছে মম গভীর প্রাণে ভেদিবে তারে হাসির বাণে,
চকিতে চাহ মুখের পানে তুমি যে কুতূহলী ।
তোমারে তাই এড়াতে চাই, ফিরিয়া যাই চলি ॥
আমার চোখে যে চাওয়াখানি ধোওয়া সে আঁখিলোরে–
তোমারে আমি দেখিতে পাই, তুমি না পাও মোরে ।
তোমার মনে কুয়াশা আছে, আপনি ঢাকা আপন-কাছে–
নিজের অগোচরেই পাছে আমারে যাও ছলি
তোমারে তাই এড়াতে চাই, ফিরিয়া যাই চলি ॥(প্রেম/প্রেমবৈচিত্র )
চিন্ময়
মান্না দে
বন্যা বন্যা
১৯. কেন বাজাও কাঁকন কনকন কত ছলভরে ।
ওগো, ঘরে ফিরে চলো কনককলসে জল ভরে ॥
কেন জলে ঢেউ তুলি ছলকি ছলকি কর খেলা ।
কেন চাহ খনে খনে চকিত নয়নে কার তরে কত ছলভরে ॥
হেরো যমুনা-বেলায় আলসে হেলায় গেল বেলা,
যত হাসিভরা ঢেউ করে কানাকানি কলস্বরে কত ছলভরে ।
হেরো নদীপরপারে গগনকিনারে মেঘমেলা,
তারা হাসিয়া হাসিয়া চাহিছে তোমারি মুখ’পরে কত ছলভরে ॥(প্রেম/প্রেমবৈচিত্র )
সূচিত্রা মিত্রা
রাহুল মিত্রা
২০. দীপ নিবে গেছে মম নিশীথসমীরে,
ধীরে ধীরে এসে তুমি যেও না গো ফিরে ॥
এ পথে যখন যাবে আঁধারে চিনিতে পাবে–
রজনীগন্ধার গন্ধ ভরেছে মন্দিরে ॥
আমারে পড়িবে মনে কখন সে লাগি
প্রহরে প্রহরে আমি গান গেয়ে জাগি ।
ভয় পাছে শেষ রাতে ঘুম আসে আঁখিপাতে,
ক্লান্ত কন্ঠে মোর সুর ফুরায় যদি রে ॥
শ্রীকান্ত
সুচিত্রা মিত্র
জয়তি চক্রবর্তী
রবীন্দ্রসঙ্গীত -উইকিপিডিয়া
নিজের গান নিয়ে রবীন্দ্রনাথ
সংগীতচিন্তা