-আচ্ছা আমি ঘুমাই
টিসি(টেক কেয়ার)
-শোনো আমাকে কখনো ভবিষ্যতে টেক কেয়ার, কেমন আছো, এসব আজাইরা কেয়ার দেখাবেনা
- ওকে
ওকে?!
রাগ হয়ে গেল নীলার! আশ্চর্য একবার ও বললো না যে একশোবার কেয়ার নেবো। বুক চিরে একটা দ্বীর্ঘনিঃশ্বাস বেরিয়ে এলো নীলার। আর বলবেই বা কেন, মানুষটাই তো আর তার নেই।
-হুম বাই
নীলাও রাগ করে বাই দিয়ে দিলো রাতুলকে।
চুপ করে জানলার পাশটায় এসে বসলো, কত উঁচুতে এপার্টমেন্টটা!নিচে মানুষ গুলো কে ছোট ছোট মনে হয়।
দেড় বছরেও এই শহরকে দূরের শহরই মনে হয়, আপন করে নিতে পারলো না এখোনো।
একটু আগেই ক্লাস থেকে ফিরেছে নীলা। এসেই রাতুলকে মেসেজ দিলো, কাল রাতুলের জীবনের এতো বড় একটা দিন।
অভিনন্দন জানাতে ইচ্ছে করছে, দাঁতে দাঁত পিষে বললো
'কনগ্রাচুলেশন'!
উত্তর আসলো একঘন্টা পর
ধন্যবাদ
হঠাৎ করে নীলার খারাপ লাগছে, খুব লাগছে। দাঁতে দাঁত চেপে উথলে ওঠা রাগ অথবা অভিমান কোনভাবেই সামলানো যাচ্ছেনা
দেড় বছরেও ভালবাসাটা কমেনি একটুও,আরো বনসাই থেকে বিশা্য বটগাছের মতো ডাল পালা মেলেছে। প্রতি কোণায় কোণায় ডাল গুলো গেথে গেছে।
ভার্সিটির দিন গুলো কি দ্রুতই না চলে গেছে,ভাল জিনিস গুলো এভাবেই বুঝি চলে যায়।
রাতুলের হাতে হাত রেখে দেড় বছরে তিনশো আশিটি সূর্যাাস্ত পার করেছে নীলা।
কোন কোন প্রেমে কাওকে দেখলেই এই কথা মনে হয়
You are my destiny!!!
নীলার ব্যাপারটা ছিলো তাই, রাতুলকে দেখেই মনে হয়েছে, এর সাথেই ওর ভাগ্য বাধা। এর জন্যই জন্ম হয়েছে ওর।
কিন্তু দেড় বছরে তিনশো আশিটি সূর্যাস্তে সূর্য তার অবস্থান ঠিক রাখলো, কিন্তু সাথে থাকা মানুষটাই বদলে গেলো ।চোখের সামনে মোম গলে শেষ হয়ে যাওয়ার মতো একটু একটু করে পুড়তে লাগলো নীলা।
কানাঘুষোয় শুনতে পেলো নীলা রাতুলের কুমিল্লাতে মানে ওর নানু বাড়িতেই একটা রিলেশন আছে।
একদিন রাতুলকে কাঠগড়ায় দাড় করিয়ে, সব সত্যি জানতে চাইলো নীলা।
সবই বললো,
বললো সেই প্রেমিকার সাথে পরিচয়, প্রেম শারিরীক,সম্পর্কের কথা..
সব
এতো বছরের প্রেম, তাসের ঘরের মতো ভেঙ্গে গেলো।
নীলা শক্ত মেয়ে কাদলো না,কিছু বললোও না
চলে আসলো
ভার্সিটি থেকে, চলে আসলো পুরো বাংলাদেশ থেকে,
সোজা কানাডা।
পাঁচ বছর কেটে গেছে,
এখোনো দেশে যায়না নীলা। দরকার হয়না, ইচ্ছেও করে না।
রাতুলকে এক পুরোনো আইডিতে পেয়েছে,সেখানেই শুনলো বিয়ে করছে রাতুল।
নীলা রাতুলকে এখন আর ভালবাসেনা, অন্তত এতোদিন তাই জানতো।এখন মনে হচ্ছে সব হিসাব উল্টে পাল্টে গেছে।
খুব অসহায় লাগছে নীলার। রাতুল অনলাইনে নেই, অনেকবার মেসেজ দিলো। এই দূর দেশে একা একা এই প্রথম এতো এরকম কনফিউজড লাগছে।
ইচ্ছা করছে বলে রাতুলকে বলে তোমায় এখোনো ভালবাসি, কিভাবে কি জানিনা
এখোনো তবু মনের কোণে এইটুকু জায়গা তোমার জন্যই রাখা আছে। জীবন একটাই তোমার একটা ভুলের জন্য তোমাকে হারাতে পারবো না ।
এমন সময় রাতুল রিপ্লাই দিলো,
-কি হয়েছে,
ঘুমায় গেছি এতো গুলা মেসেজ
-কিছুনা,মুখের কথা চুপ মনের কথা গলায় আটকা প্রবল অভিমানে
আবার অফলাইন
সবকিছু মেসেজে লিখেই দিলো..
টুং করে নোটিফিকেশন আসলো
রাতুল আপডেটেড হিজ স্টাটাস.
রাতুল গট ম্যারিড টু সাবা..
ওর আর হবু বউয়ের ছবি দেওয়া ,হাসিমুখে ছবিটা তোলা। আচ্ছা এই মেয়েটাও নিশ্চয়ই রাতুলকে খুব ভালবাসে। নীলারথেকেও
ব্যাকস্পেস বাটনটা ঝাপসা চোখে খুঁজে বের নীলা করলো,সব মুছে দিলো
পাচ বছরের জমে থাকা অভিমান কষ্ট ভালবাসা
সব
আবার রাতুলের রিপ্লাই
-আচ্ছা আবার ঘুমাই
-শোনো, না
কিছুনা গুড নাইট
আইডি ডিলিট করে দিলো নীলা
গ্যালারিতে রাতুলের লুকিয়ে রাখা ছবিটা দেখে পাগলের মতো কাঁদতে লাগলো নীলা,বুকে জড়িয়ে ফোনটা হাউমাউ করে একা কাঁদছে নীলা...
কিছু কিছু আবেগ ফিরে আসার নয়,ব্যকস্পেসের বাটনে ডিলিট হবার গল্প
নীলা জানে সব দেখতে জানে চুপচাপ কিভাবে ভালবাসার মানুষটা মাত্র তিনশব্দে, অন্যের রেজিস্টার্ড পার্টনার হয়ে যায়....
নীলারা চুপ থাকতে জানে, বেদনায় নীল হয়েও..
ভালবাসাটা ব্যাকস্পেসই আটকে থাকে
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ৮:০১