হাতটা থেমে যাচ্ছে বার বার সেন্ড বাটনে আঙুল টা ছোঁয়াতে গিয়েও পারছিনা। ইরেজ করে দিচ্ছি।
ভীষণ কষ্ট হচ্ছে, তার চেয়েও হচ্ছে প্রবল তৃষ্ণা জানার কেমন আছে রাতুল?
ঘড়িটাতে টিক টিক করে সেকেন্ডের কাঁটা অবিরাম ঘুরে চলেছে। নিঝুম হয়ে আছে চারপাশ। প্রিয়তি আর একবার চেষ্টা করলো। হচ্ছেনা, কিছুতেই হচ্ছে না!ইগোর দেয়াল টা কিছুতেই প্রিয়তি ভাঙতে পারছেনা। তিন বছরের রিলেশনশিপটা ইগোর ভারী দেয়ালটার নিচে চাপা পড়েছে।
আচ্ছা,রাতুল কি একবার ও পারতনা ওকে আটকাতে? প্রিয়তি না হয়, রাগই করেছিল! ব্লক ও মেরেছিল সবজায়গা থেকে, তাই বলে কি নক করা যায়না?আশ্চর্য ছেলে একটা রাতুল! এত ভালবাসে প্রিয়তিকে অথচ প্রকাশ করতে নারাজ। এই একটা মাস একবার ও কথা বলেনি প্রিয়তি, ভেবেছিল নিজেই রাগ ভাঙাতে আসবে। আসেনি, একবার ও রাতুল আসেনি। দোষ তো রাতুলেরই ছিল। প্রিয়তির উপর রাতুল সবসময় রাগ করে, ইগনোর করে, অবজ্ঞা করে। প্রিয়তি কখনো কিছু বলেনা। চুপ করে সব সহ্য করে। এবার রাতুল ওকে অনেক অপমান করেছে সারা ক্যাম্পাসের মধ্যেই, তাও সবার সামনেই। সবাই অবাক হলেও প্রিয়তি অবাক হয়নি। এমনই তো রাতুল। প্রিয়তি সেদিন ভীষণ কষ্ট পেয়েছিল। সব কিছু থেকে ব্লক করে দিয়েছিল রাতুলকে। আজ একমাস পূর্ণ হয়েছে। রাতুল একবার ফোন করেনি, দেখাও করেনি প্রিয়তির সাথে।
নাহ! যতই যাই হোক, রাতুলকে আমিই বরং মেসেজ দিয়ে সরি বলি। পাগলটারও নিশ্চয়ই খুব কষ্ট হচ্ছে!
আচ্ছা মেসেজ না দিয়ে ওকে পোক দিলে কেমন হয়? প্রিয়তি রাতুলের প্রোফাইলে যায়। প্রোফাইল পিকটা দেখে ভ্রু কুঁচকে যায়। কোন মেয়ের সাথে ছবি দিয়েছ!হয়তো কোন প্রাণের বান্ধবী হবে হয়তো। ছবিটা দেখেও তেমন একটা গা করেনা।
আস্তে আস্তে নিচে নামতে থাকে। একটা জায়গায় এসে থমকে যায় প্রিয়তি। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেনা। রাতুলের টাইমলাইনে ওই মেয়ের ''In a relationship ''. স্ট্যাটাস দেওয়া। তারিখ টা চেক করে দেখে, যেদিন ঝগড়া হয়েছে তার কিছুদিন পরই স্ট্যাটাস দিয়েছে!
আর কিছু দেখতে পায়না প্রিয়তি, মাথাটা কেমন যেন ঘুরে ওঠে, ভীষণ ঝাপসা লাগছে সবকিছুই।
আস্তে আস্তে সব কিছু বুঝতে পারলো প্রিয়তি। সব, সত্যি মেয়েটা নিজে বুঝতে পারলো।
হঠাৎ করেই হেসে উঠলো প্রিয়তি...
ভালোই হয়েছে, জানে খুব কষ্ট হচ্ছে আরও কষ্ট হবে। কিন্তু রাতুলের আসল রূপটা তো দেখতে পেয়েছে!
রাতুল যদি ওকে ওর জীবন থেকে ওকে ইরেজ করে দিতে পারে.. ও কেন পারবেনা?
প্রিয়তি রাতুলের সমস্ত স্মৃতি একসাথে নিয়ে বাড়ির পিছনের এদোঁ ডোবায় ফেলে দিলো।
হু হু করে উঠছে বুকের ভেতর টায়... !!
তবুও মনের কোথায় যেন শান্তি লাগছে।মনে হচ্ছে বুকের উপর থেকে পাষাণ নেমে গেছে...
ইরেজ করে দিয়েছে প্রিয়তি রাতুলকে,সেই সাথে ওর সমস্ত কিছুকে,এমনকি রাতুলের জন্য ওর সেই ভালবাসাকে।
আর একবার প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নিল প্রিয়তি।
#কাল্পনিক_বাস্তবতা
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৩