আমাদের দেশে কাজের মেয়ে দেখলেই অনেকেই নাক সিটকোন। মনে করেন এরা আবার মানুষ নাকি! জি হ্যাঁ, এরাও মানুষ। প্রকৃত কাজের মানুষ। আমাদের মত কাজের মানুষ এরা না। আমাদের মত সকালে কর্নফ্লেক্স খেয়ে এদের সকাল শুরু হয়না। এদের সকাল শুরু হয় বাসি পান্তা খেয়ে।
আমাদের মত এত বিলাসিতা এদের সাজেনা। কারণ এরা কাজের লোক। এদের স্বপ্ন থাকতে নেই, এদের ভালোভাবে বেঁচে থাকার অধিকার নেই। আছে শুধু আমাদের। আমাদের মত বিত্তবান দের। যারা এই পচে যাওয়া নষ্ট সমাজের নেতা। নিজের স্বার্থের জন্য যারা এই নিয়মগুলো তৈরি করেছে।
আরে, আমি তো এদের ই একজন। ছি! ছি! নিজের নিন্দা নিজেই করছি।
কোথায় সময় আমার এদের নিয়ে ভাবার সময়? আমি না দেশের ভবিষ্যত! কাজের লোক কি করছে তা দিয়ে আমার কি? এদের জীবনের আবার দাম আছে নাকি? হুহ!
আমার কত কাজ! কোচিং করা,সেখান থেকে মাকে মিথ্যে বলে ৩ নম্বর বিএফ এর সাথে ডেট এ যাওয়া! আবার বাবার পকেট থেকে টাকা চুরি করে খেতে যাওয়া। সেলফি তোলা,সাজগোজ কত কাজ।
সেদিন বসুন্ধরা সিটি থেকে ৯০০০টাকার ড্রেস কিনেছি।টাকা টা নেওয়ার সময় কাজের বজ্জাত মেয়ে টা সামনে ছিল। কত সাহস! আমার মা কে বলে কিনা ওর এই মাসের বেতন নাকি তাড়াতাড়ি দিতে হবে! ওর মা কে নাকি ডাক্তার দেখাবে। হুহ। ওর মা আবার ডাক্তার দেখাতে চায়। যতসব ছোটলোক ইতর। মা তো একটা লাথি দিয়ে বলল হারামজাদী আমার বাসায় কাজ করতে হলে যখন টাকা দেব তখন ই নিবি। এর আগে চাইলে লাথ্থি মেরে বের করে দেব। বলি তোর মা র জীবন আগে না আমার মেয়ের শখ আগে? তোর মা র মতো একটা মরলে দশটা আসবে। আর আমার মেয়ে একটাই।
নাহ আমি বিদায় নেই, এই গল্পটা তো আজ ঘরে ঘরেই আছে। সুবিধাবাদী নেতা থেকে শুরু করে মানবাধিকার এর উচ্চ পদস্থ অফিসারদের ঘরে ও হয়তো একই গল্প। হয়তো এর থেকেও করুণ।
হয়তো সারাদিনের হাড়ভাঙ্গা খাটুনি র পর হয়তো এদের চোখের জল সৃষ্টি কর্তা ছাড়া আর কেউ দেখে না।
নিরব দর্শক হয়ে কেবলই সেখানে আমাদের ভোগ কৃত উচ্ছিষ্ট থাকে।
এই তো জীবন এসব ছোটলোকদের, ইতরদের যাদের ছাড়া আমি আমার মত আধুনিক প্রজন্ম অচল।
তবু ভয় হয়, কবে না জানি বিদ্রোহী হয়ে ওঠে ছোটলোকগুলো। সে ভয় অবশ্য কম। আমরা সুবিধাবাদীরা ভালমতোই শেকড় থেকে মানবতা আর নৈতিকতা শব্দ গুলো উপড়ে ফেলেছি। এদের হয়ে তাই কে কথা বলবে আমাদের বিরুদ্ধে? কে মাথা তুলে দাঁড়াবে এই নিয়মগুলো র বিরুদ্ধে?
পারবেনা।
তবু ভয় হয়। কান পেতে রই সামনে কোন ঝড় আসছে কিনা,কেউ কন্ঠ তুলছে কিনা আমাদের তৈরি হাজার বছরের নিয়মের বিরুদ্ধে!
বলা তো যায়না, কেটে ফেলা শিকড় থেকে কখন কোন শক্তিমান চারাগাছের সূচনা হয়!
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুলাই, ২০১৬ ভোর ৫:১৮