আশা করছি আজ দিনটাতে আপনি কাউকে বর্জন করেননি।
বর্জন! নামটা ছোট হলে কি হবে কাজটা অনেক গুরুত্বের।কিভাবে?
আরে; সারাদিনি তো আপনি অনেক বর্জনই করে থাকেন এই ধরুন- পেন, খাতা,শার্ট,ঘড়ি,গাড়ি, কাজ,পড়ালেখা ইত্যাদি জড় থেকে শুরু করে প্রেমিক/প্রেমিকা নামক জীবিত জিনিসের ও দিনে-মাসে-বছরে-যুগে-(না, শতাব্দীতে যাওয়া একটু বেশিই হয়ে যাবে) কয়েকবার বর্জন ঘটান। তাই না ??
হ্যালো হ্যালো মাননীয় পাঠকবৃন্দ ,এতো গম্ভীর হওয়ার দরকার নেই।আপনি ইচ্ছেমতো যা খুশি তাই বর্জন করতে পারেন এমনকি প্রেমিক/প্রেমিকাকে ও বর্জন করুন তাতে আমার কিছুযায় আসে না।(আপনি ছাড়া কারোই কিছু যায় আসে না ঃপ )
আপনার বর্জনের যায়-ই তুলকালাম নীতি থাকুক না কেন এই নীতিটা কেবল আপনারি।তবে আপনি যদি একটু খুচিয়ে খুচিয়ে বর্জন জিনিসটার মর্মাত এমনভাবে নিরুপন করে করতে চান যেখানে ‘ইচ্ছেমতো’ শব্দটার জায়গায় ওই যে ইংরেজীতে বলে “law and Order” আনবেন তবে কিছুটা গৌতম-গম্ভীর হতে হবে।
এই ধরনের এক বর্জন চিন্তা ভাবনায় এক অস্ট্রিয়ান ব্যাক্তির তখন রাতের ঘুম হারাম। ‘থ্যাক, থ্যাক কি করে যে এই জিনিসটা ব্যাখ্যা করি’ এমন ভাবনায় তার দিন বিভোর।
সেই ব্যাক্তি কিন্তু হেলা-ফেলা কোন কিছুর ক্রিয়া নীতি বুঝতে চাচ্ছেন না। তিনি ‘পরমাণু’র গঠন নিয়ে ভাবছেন।(হুমমমম...) কিভাবে এই চিন্তা তার মাথায় এল??
গত ১৯০০ শতাব্দীতে পদার্থজগতে(অপদার্থ জগতগুলো বর্জনই করলাম )তোলপাড় কান্ড ঘটানো দুই জামেলার এক হলো এই পরমাণু বিদ্যা যাকে পদার্থ বিজ্ঞানের জামেলা ভাষায় সাবলিল ভাবে ডাকা হয় ‘কোয়ান্টাম(বিচ্ছিন্ন শক্তির/বস্তুর)বিদ্যা’।
এর শুরু বোর করেছিলেন এক এমন ধারণা দিয়ে যা কিছুটা এমন, ‘ পরমাণু-যা আমি দেখি নাই; জিন্দেগিতে দেখার সৌভাগ্য ও নাই তবু ও আমি বলছি রাদার ভাইয়ের (রাদারফোর্ড, জামেলা বিদ্যায় নোবেল জয়ী জামেলাবিদ যিনি এই পরমাণু বিদ্যা্র ভিত্তি স্থাপক)সৌর নামক উদ্ভট মডেলকে একটু পাল্ঠিয়ে যে, “ হুম, পরমাণু(বৃত্ত) কেন্দ্র ধন চার্জিত নিউক্লিয়াসের চারদিকে ঋণ চার্জিত ইলেক্ট্রন কিছু নির্দিষ্ট কক্ষপথে(বৃত্তের পরিধি বরাবর কল্পনায়) ঘুরতে থাকে এবং তারা এই ঘুর্ণনের সময় কোন শক্তি বিকিরন করে না।তবে প`যাপ্ত শক্তি পেলে এরা এক কক্ষপথ হতে অন্যটাতে লাফাতে পারে। ”
এতে জামেলা হলো ইলেক্ট্রন কি শুধু কেন্দ্রের চারপাশে ঘুরে?
এই ইলেকট্রনের কি অক্ষ বরাবর কোন ঘুর্ণন থাকতে পারে না?
ব্যাস পাউলি (ওই যে ভাবুক অস্ট্রিয়ান )পেয়ে গেলেন রহস্য।
১৯২৫ সালে এই রহস্যময় জিনিসের কথা প্রকাশ করলেন ঠিক শ্রোইংগার(Schrodinger, নামের ১ম o এর উপর দুটা লিগান্ড আছে ) এর তরংগ বলবিদ্যা প্রকাশের আগে(আরে ছাগল কোন জিনিসটার কথা প্রকাশ করেছে তা তো বলো নাই?ওহহ,দুঃখিত (crying) জিনিসটা হল ওই আক্ষিক ঘুর্ণন মানে স্পিনের ধারনা) । এ থেকেই পাউলি পেলেন তার বর্জন নীতি। কেমনে বল?
বলছি দয়া করে শান্ত হন তবে ক্ষান্ত হবেন না। এই নীতির মূল বিষয়ই হল কোয়ান্টাম বিদ্যার জয়জয়কার।আর আইন স্যারের শিরে ভর যদি ও তিনিই পাউলিকে নোবেল এর জন্য মনোনীত করেন!
কারণ এই ঘুর্ণন ক্ল্যাসিক্যালি ব্যাখ্যা করা কখনোই সম্ভব নয়। তবে ওই সময়কার ক্ল্যাসিক্যাল পন্ডিতরা এই ধারনার জমসে সমালোচনা করেন।
লোরেন্টয দাদু তো এত সব ভুল বের করেন যে বেচারারা যারা এই ধারনা মাথায় এনেছিল তারা যেন বেশ বড় ছেলে-খেলা করে ফেলেছিল। তবে ওই যুগটা কোন সাধারণ যুগ নয় ওই কালে দামাল সেনাপতি বোরের নেতৃ্ত্বে যে বিপ্লবী তরুণ জামেলা বাহিনী গড়ে ওঠে তারা এই ক্ল্যাসিক্যাল ধারণাকে একেবারে উধাও করে দিয়ে অনিশ্চয়তার জামেলা মানে কোয়ান্টাম যুগ শুরু করেন।
পাউলির নীতি বলে ‘সকল কোয়ান্টাম বস্তুই(ইলেক্ট্রন,প্রোটন ও নিউট্রন) স্বকীয় গুণের অধিকারী অর্থাৎ কারো সাথে কারো মিল নেই।এবং দুটি ইলেকট্রন তখনি একসাথে এক কক্ষে ঘুরতে পারে যদি তাদের শক্তি অভিন্ন তবে স্পিন বিপরীত হয়।’
এতে বর্জন কোথায়???
বেচারা ইলেকট্রন ভায়েরা একসাথে এক অরবিটালে থাকলে ও তারা শত ইচ্ছায় ও একই দশাই থাকতে পারে না। আর কারণ হল ওই পাউলির নীতি।শুধু ইলেকট্রনই নয় প্রোটন, নিউট্রন ও এই নীতি মেনে চলে।তাই তারা ফারমিওন।
আর না মানলে বোজন যেমন ফোটন (জাস্ট বর্জন থেকে রেফ তুলে ও-কার)
তবে ব্যাপার আছে। যদি আমরা এই বিষয়টাকে একটু ম্যাগনিফাই করে দেখি তবে এর মহাকীর্তির একটা স্বাদ পাওয়া যাবে।
অনেক ভারী বস্তু অস্থিতিশীল হয়ে যখন মহাকর্ষের টানে সংকুচিত হয় তখন তারা প্রোটন-ইলেকট্রনের স্বাভাবিক মডেলের চেহারা বদলে দেয়। দেখি কিভাবে?
ভারী বস্তু বলতে আপনার ভর না আমি নক্ষত্রদের বুঝাচ্ছি(আমরা আগেই বুঝেছি)।আমাদের সানের জীবনাবসান মানে জ্বালানী ফুরানো কালে এর মহাকর্ষিক চাপ একে এমনভাবে ভিতরেরে দিকে চুপসিয়ে ফেলে তখন ঘনত্ব এতই বেড়ে যায় যে এর পরমাণুর ইলেকট্রন গুলো প`যন্ত এই চাপ অনুভব করে ফলে তারা উচ্চতর শক্তির কক্ষে যেতে চায় তবে পাউলি নীতি মেনে তারা সবাই একই দশায় অবস্থান করতে পারে না। ফলে তাদের এক সংকুচিত আয়তনের জায়গায় গাদাগাদি করে অবস্থান করতে হয়। ফলে হাইজেনবার্গ নীতি del x delp>h মতে ইলেকট্রন এর অবস্থান অনিশ্চয়তা অনেক কম হবে তবে ভরবেগ অনেক বেড়ে যাবে। এই অবস্থায় নতুন করে গাদাগাদি করা থাকা ইলেকট্রনগুলো ‘হাইজেনবার্গ বেগ’ এ ঘুরতে থাকবে। এই অবস্থাকে Electron Degeneracy বলে। এটা তখনি ঘটে যখন ঘনত্ব অনেক বেশি হয়।
আর ভর যদি চন্দ্রশেখর সীমা(১.৩৮ সান ভর) অতিক্রম করে তবে তবে পদার্থ এমনভাবে সংকুচিত হবে যে পাউলি নীতি আর ইলেকট্রন-নিউক্লিয়াস সিমেট্রি কোনটাই মানা হবে না।
তখন পরমাণু তার অস্থিত্ব হারাবে এবং e- +H+ = neutron + gama ray
তখন এটা হয়ে উঠবে নিউট্রন তারকা।
আর ভর বাড়ালে অসীম ঘনত্বের সুপার ডেন্স এই পদার্থ এর ক্ষেত্র কোন পদার্থ বিজ্ঞানের নিয়মই খাটে না। মানে Black Hole হয়ে যাবে।
পাউলি নীতি এতেই ক্ষান্ত নয়। এই নীতিই পুরো প`যায় সারণীর মৌলের গঠন ও কা`যনীতি ব্যাখ্যা করে। তাই হয়তো পাউলিকে বলা হত, “ পারমাণবিক দুনিয়ার ভীটা-জমির অফিসার”।
এমন নীতি হয়তো মানব ইতিহাসে আর নাই যা একই সাথে মাইক্রোস্কোপিক ও ম্যাক্রোস্কোপিক(মানে টেলেস্কোপিক আর কি) উভয় বিষয়ে অসাধারণ বর্জনতা বজায় রাখে।