শত্রুতা অনন্য এক গুণ। এ গুণের শেষ নেই! এ গুণ মানুষের স্বতন্ত্র সত্ত্বা'র জানান দেয়। আমি বড়, তোর কিছু হুনুম না; বলার মতো হিম্মত বুকে এনে দেয়। শত্রুর হাটা দেখে ধীর পা'য়ে উঠে গতি- রোলার কোস্টার। চোখ থাকে দিনরাত্রি সমানভাবে সজাগ। গভীর তীক্ষ্ণতা তৈরি হয় মগজে, চেতনায়। দেহ ঘুমালেও মন ঘুমায় না। সচেতন থাকে অবচেতনভাবে। সামনের খেয়াল, পেছনের খেয়াল, ডান-বাম, ঊর্ধ্ব-অধো সমান্তরালভাবে খেয়ালের আওতাভুক্ত থাকে।
যোগ্যশত্রুর অভাবে সমাজ আজ পিছিয়ে পড়ছে। দেশ-জাতি দিন দিন ক্ষয়ে যাচ্ছে। এ বিমার থেকে মুক্ত হতে হবে। বেশি বেশি শত্রুতা বাড়িয়ে এগিয়ে যেতে হবে সামনের পথে; শত্রুর দু'কদম আগেই লক্ষে পৌঁছতে হবে।
একটি সবল ও যোগ্য শত্রুর মূল্য অমূল্য! সে আপনাকে তা-ই দিবে যা আপনি পাওয়ার চিন্তা করেননি কখনও। সে আপনাকে সেখানেই পৌঁছে দিবে যেখানে আপনি যাওয়ার হিম্মত করেননি কখনও । শত্রুর একতলা আপনাকে এনে দিবে দ্বি'তলায়। অন্তত দেড় তলায়। তার বাগানের ফুল আপনায় দিবে হুলের ব্যথা; যতক্ষণ না উত্তমরূপের আরেকটি হুলের তীর তার দিকে ছুড়ে না দিচ্ছেন ততোক্ষণ সে ব্যথার উপশম হবে না। ফুলের জন্য শত্রুতা; হুলের জন্য শত্রুতা। এই স্লোগানে উদ্দীপ্ত হোক সবার চেতনা!
শত্রুতা পৃথিবীকে যতটুকু দিয়েছে আর কোন কিছুই এতটা দিতে পারেনি। এটোমিক পাওয়ার, হাইড্রোলিক পাওয়ার, দূরন্ত জঙ্গিবিমান, পানির নীচে সাবমেরিন! সবই শত্রুর হাত কামড়ে ধরার মানব তৈরি ধাতব হাতিয়ার। প্রেমের গুনগুন মানুষকে দিয়েছে ভাব; গালে হাত, অশ্রু আর কান্না। শত্রুতা দিয়েছে উন্মাদনা, ক্ষিপ্রতা, গতি, সাহস, সৃষ্টি সহ অগণন। শত্রুতা অর্জন করুন; ক্রিয়েটিভ পাওয়ার বাড়িয়ে নিন।
শত্রুতা একটি কোলাহল; হরেকরকম আওয়াজ, হরেকরকম সাজের অপূর্ব অলঙ্কার! এ অলঙ্কার এতো নিখুঁত যে কোনভাবেই তার খাঁজে অলস্যতা দানা বাঁধে না। সারাদিন-সারারাত সমান উদ্দীপনায় সে আপন শক্তিতে নিজেই লড়ে যায়। যে শত্রুর সাথে তাল মিলাতে পারে না সে হারিয়ে যায় অতল অন্ধকারে। সময় তারে ধরে রাখে না, সমাজ তারে স্থান দেয় না, এ পৃথিবীর নাজ-নেয়ামত তার তকদিরে জোটে না! বোবা'র সভায় কোন আওয়াজ নাই, বোবা'র কোন শত্রু নেই।
একমাত্র শত্রুতাই শত্রুর মসনদে দিতে পারে আগুন। শত্রুতাই দিতে পারে মূটোয় মসনদ। বন্ধুত্ব দেয় অধীনতা; শত্রুতা দেয় শক্তি। বন্ধুত্ব ঝুকায় বন্দনায়; শত্রুতা দেয় গতি। গতির সাথে চলুন; শত্রুর সাথে লড়ুন।
একটি গল্পের শিক্ষা দিয়ে আজকের আয়োজনে যতি!
পাশের বাড়ির শত্রুর সাথে কয়েক যুগের লড়াই চলছে। কিন্তু কোনভাবেই পেরে উঠা যাচ্ছে না। যদিও এর মধ্যে গাড়ি-বাড়িতে টইটম্বুর। কিভাবে শত্রুর হুঙ্কার চিরতরে থামিয়ে দেয়া যায় সে কৌশলে অস্থির এক রাত্রিতে আকাশ হতে হঠাৎ আবির্ভূত হলেন ইয়া সফেদ এক সাধুবাবা। মাথায় হাত বুলিয়ে বাবা বললেন, "তুমায় আমি সব দিতে পারি! আকাশ-বাতাস, মহাকাশ; যা চাইবে তা-ই। কিন্তু একটি শর্তে! তুমাকে যা দেয়া হবে, ও বাড়ীর শত্রুরে দেয়া হবে তার দ্বিগুণ! তোমাকে একটন স্বর্ণ দিলে ও বাড়ীর শত্রুরে দেয়া হবে দু'টন, তোমাকে এক পৃথিবী দিলে ওরে দুই!
হরিষে বিষাদ! ভাড়ায় ছাই! এ অপ্রত্যাশিত প্রস্তাবে সে ভেবে পায় না কী চাইবে? শত্রুরে কোনভাবেই বাড়িয়ে দেয়া যাবে না। কী আর করা। অনেক ভেবেচিন্তে প্রস্তাব;
"বাবা, আমার একচোখ কানা করে দিন!" সাথে সাথে বাবা'র স্পর্শ্বে তার একচোখ হয়ে গেল কানা!
কিন্তু পাশের বাড়ির শত্রুর গেল দু'চোখ! আমি হাফকানা হলেও শালা তুমি ফুলকানা!
জয় জয় জয় চিৎকারে উঠলো চারপাশ!
জয় শত্রুতার জয়!
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মে, ২০১৬ ভোর ৪:১৯